skip to Main Content

ফিচার I পাতে পরিচয়

সামাজিক উৎসবে খাদ্য গ্রহণের ধরন দেখে ভিড়ের মধ্যেও বোঝা যায় কোন মানুষটি কেমন। কী তাদের স্বভাব, মনস্তত্ত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি

অনুষ্ঠানের রসিক অংশ খাওয়াদাওয়া। হালের ভাষায় যাকে বলে রিফ্রেশমেন্ট। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি ‘সেলফ সার্ভিস’ কায়দায় চলে। অর্থাৎ, আমন্ত্রিতরাই পাতে খাবার তুলে নেয়। এসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের মানুষের উপস্থিতি থাকতে পারে। সবার চোখের সামনে খাবার তুলে নেওয়ায় আদবকেতার পরিচয় দিতে হয়। যদিও তাতে নির্দিষ্ট কোনো নিয়মকানুন নেই। তবে পাতে খাবার রাখার ধরন দেখে ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যেমন অনেকেই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নিয়ে ফেলে। দেখে মনে হয় খাবার যেন থালা উপচে এখনই পড়বে! কেউ আবার প্লেটে ভাগ ভাগ করে নেয়। যাতে একটি পদের সঙ্গে অপরটি লেগে না যায়। কারও আবার আলাদা পাতের তোয়াক্কা নেই। স্যালাডের বাটিতেই সব তুলে নেয়। কেউ কেউ টেবিলে বসে বন্ধুর থালার খাবারে ভাগ বসাতে সংকোচ করে না। একটি প্লেটে কেবল এক পদের খাবারই তুলে নেয়, এমন ভোজনরসিকও আছে। কেউ খাবার তোলে থরে থরে। ডেজার্ট আর মেইন ডিশের পাত্র আলাদা হলেও এক থালায় সব নিয়ে খেতে বসে, এই অভ্যাসও আছে কারও কারও। খাবার নেওয়ার এমন ধরন ব্যক্তির অভিরুচির পাশাপাশি মানসিক সৌন্দর্য কিংবা সংকীর্ণতা প্রকাশ করে। বোঝা যায় ব্যক্তিত্বও।
কেউ কেউ থালায় গাদাগাদি করে খাবার নেয়। রাইস, চিকেন, কারি, স্যালাড—সব মাখামাখি হয়ে যায়! এতে অভ্যস্ত মানুষ মূলত স্বাধীনচেতা হয়ে থাকে। কিছুটা স্বেচ্ছাচারীও। বাস্তব জীবনে একাধিক কাজ একই সঙ্গে পরিচালনায় দক্ষ। কোনো কিছুতেই ঘাবড়ে না গিয়ে নিজের দিকে আসা যেকোনো প্রতিকূলতাই সামাল দিতে সিদ্ধহস্ত তারা। সব কাজ সমানতালে করায় পটু। তাতে সময় সংকুলান হোক কিংবা নয়। অনেক কাজে যুক্ত থাকায় জীবনের কোনো আঙ্গিকেই পরিপূর্ণতার দেখা পান না তারা। এমন ব্যক্তিত্বের মানুষ বরাবরই হাল থেকে কিছুটা পিছিয়ে। তাই বলে সময়ের গুরুত্ব বোঝে না, তা নয়। মানুষের সঙ্গে মেশার অনন্য দক্ষতার অধিকারী হয়ে থাকে তারা।
কেউ কেউ থালায় এমনভাবে খাবার নেয়, যাতে একটি পদ অন্যটির সঙ্গে মিশে না যায়। দুটি আইটেমের মধ্যে কিছুটা ফাঁকা রাখে। এই অভ্যাস যাদের রপ্ত, তারা নিয়ম মেনে চলতে পছন্দ করে। জীবনের সব বিষয়ে। তাদের লক্ষ্য স্থির। সেখান থেকে কখনোই বিচ্যুত হয় না। বাধাগুলোকে সুকৌশলে সরিয়ে দেয়। নিজের ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্বে গুরুত্ব দিতে পারে। অভিজ্ঞতা তাদের কাছে মূল্যবান। নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই যে কাজ করতে সক্ষম নয়, সেটির দায়িত্ব নেয় না। তবে দায় একবার নিয়ে নিলে সেটির ভালো ফল বের করার দারুণ পরিকল্পনা করতে পারে। এই গুণের জন্য চাকরি কিংবা ব্যবসার ক্ষেত্রে তারা বেশ দ্রুত উন্নতি করে।
খাবারস্থলে আলাদা আলাদা পদের জন্য থালা নির্দিষ্ট থাকে। অনেকেই আছে যারা পাত্র নির্ধারণে বেখেয়ালি। স্যালাডের বাটিতেই মেইন ডিশের খাবার তুলে নেয়। তারা মূলত সৃজনশীল। গন্ডির বাইরে চিন্তা করাই তাদের স্বভাব। অন্য সবার থেকে নিজেকে আলাদা করে উপস্থাপন করাতে আনন্দ খুঁজে পায়। এমন ব্যক্তিত্বের মানুষ বন্ধু ও স্বজনদের কাছে বেশ প্রিয়। সবাই তার সান্নিধ্যে ধন্য হয়। অতি সাধারণ বিষয়টিও তার চমৎকার উপস্থাপনের কারণে অনন্য হয়ে ওঠে। সৃজনক্ষমতা প্রখর হওয়ায় বাড়ি কিংবা কর্মক্ষেত্রে সফলতা ধরা দেয় সহজেই। অন্যরা নিমেষেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এদের দেখা যায়। যে কাজটি অনুভূতিকে বেশি নাড়া দেয়, সেটিই তাদের কাছে বেশি প্রাধান্য পায়।
পাশে বসে থাকা বন্ধুর পাত থেকে খাবার তুলে খেতে অনেকেরই সংকোচ হয়। কিন্তু কিছু মানুষ বেশ প্রফুল্ল চিত্তেই তা করে। এমন ব্যক্তিত্ববানেরা বেশ বন্ধুসুলভ হয়। অন্যের মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। ব্যক্তিত্বও ইস্পাতকঠিন। নিজের ও কাছের মানুষদের গোপন বিষয়গুলো জনসম্মুখে আনে না। প্রেম ও দাম্পত্যের ক্ষেত্রে সঙ্গীর কাছে স্বচ্ছ থাকে। মনেপ্রাণে ভালোবাসতে জানে। সততাই তাদের সম্পদ। মানুষের কাছে নিজের প্রয়োজনের কথা মুখ ফুটে বলতে ইতস্তত বোধ করে না। ইগো সমস্যা কম। তবে মানসিক কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। যে কারণে মাঝেমধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে দোটানায় পড়ে।
একটি থালায় একটিমাত্র পদ তুলে নিচ্ছে কেউ। সেটি খাওয়া শেষ করে পরেরটা। এমন ব্যক্তিও চোখে পড়তে পারে কোনো অনুষ্ঠানে। এ ধরনের মানুষ সুশৃঙ্খল হয়। জীবনকে একটি ছাঁচে ফেলে যাপন করতে চায়। বাহুল্য থেকে নিজেকে দূরে রাখে। জীবনের চড়াই-উতরাই মেনে নেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে এই ব্যক্তিত্বের মানুষ। সম্পর্কের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল। একই সময়ে একাধিকের সঙ্গে প্রণয়ে আবদ্ধ হওয়া তাদের স্বভাব পরিপন্থী। অন্যের কাছে নিজেকে কখনোই হালকাভাবে উপস্থাপন করে না। তাদের ব্যক্তিত্বের প্রধান দিকটি হচ্ছে, তারা খুব ফ্যাশনেবল ও স্টাইলিশ।
থরে থরে খাবার নেওয়া একটি অভ্যাস। মানে একটার ওপর আরেকটা। এমন ব্যক্তিত্বের মানুষ বহুমাত্রিক গুণসম্পন্ন। তাদের অভিজ্ঞতার ঝোলা সমৃদ্ধ হয়। পরিচিত মহলে বেশ কদর পায়। নিজ দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি তারা যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। এ বিষয়ে আবেগপ্রবণ। নিজের ভুল বা দোষ স্বীকার করে অকপটে। স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়। কোনো ঘটনার দিনক্ষণ মনে রাখতে তারা পটু। তাই যুক্তিতর্কে তাদের হারানো কঠিন। সহজে ধোঁকার কবলে পড়ে না। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়ায় ভবিষ্যৎ আঁচ করতে পারে। তারা খুব রোমাঞ্চপ্রিয়। সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে চড়া মূল্য দিতেও রাজি থাকে। যদিও তাদের ভদ্রতাকে অন্যরা দুর্বলতা মনে করে। সঙ্গীর প্রতি যতœবান হয়ে থাকে বলে যেকোনো সম্পর্কের নিয়ন্ত্রণ তাদের আওতায় চলে আসে। কেনাকাটা, বিশেষ করে পরিধেয়র ক্ষেত্রে নিজের পছন্দকে বেশি প্রাধান্য দেয়। ফ্যাশন-সচেতনতা তাদের স্বভাবের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
শেষ পাতে ডেজার্ট। কিন্তু সেটাও মেইন প্লেটে তুলে নিয়ে একবারে খেতে বসে কেউ কেউ। এ স্বভাবের ব্যক্তিরা সুযোগসন্ধানী। সামান্য সুবিধাও হাতছাড়া করতে চায় না। কথা দিয়ে কথা রাখা তাদের একটি গুণ। শুধু এ কারণেই অনেক সুযোগ ধরা দেয় না জীবনে। তারা বেশ সংবেদনশীল হয়ে থাকে। দুহাত খুলে খরচ করে বলে শেষ বয়সে সঞ্চয় থাকে না।
 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top