skip to Main Content

ফিচার I ফলে সুফল

ফলের কার্যকারিতা বহুমুখী। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে এটি শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে। তবে তা খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ আয়শা আনিকা

দৈনিক খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত শাকসবজি ও ফলমূল থাকা প্রয়োজন। এগুলো ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবারের উৎকৃষ্ট উৎস; যা আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। তাজা ফল সরাসরি দেহে কিছু পুষ্টি উপাদানের জোগান দেয়, কিন্তু রান্না করলে নষ্ট হয়ে যায়। ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট আকারে বাজারে পাওয়া যায়। তবে ফল থেকে এসব উপাদান গ্রহণ করা বেশি ভালো।
ডব্লিউএইচও (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) দেহের সার্বিক সুরক্ষার জন্য দৈনিক খাদ্যতালিকায় ৪০০ গ্রাম ফল রাখার কথা বলেছে। ফলের আঁশ হৃদরোগ ও ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। কেননা এটি শরীরের বর্জ্য পদার্থ, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, ক্যানসার সৃষ্টিকারী দূষিত উপাদান ইত্যাদি অপসারণে কাজ করে।
শাকসবজি ও ফলে ভিটামিন ও মিনারেলের মতো কিছু ফাইটোকেমিক্যাল আছে। যেমন—লাইকোপিন, অ্যান্থোসায়ানিন পাওয়া যায় লাল রঙের ফল থেকে, ক্যারোটিনয়েডস আছে কমলা ও হলুদ রঙের ফলে, ক্লোরোফিল আছে সবুজ রঙের ফলত্বকে, অ্যান্থোসায়ানিন পাওয়া যায় নীল ও বেগুনি রঙের ফলে, এমনকি সাদা রঙের ফলের শাঁসে আছে অ্যান্থোসায়ানিন। এই ফাইটো কেমিক্যালগুলোর প্রয়োজন সামান্যই কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকা জরুরি। এগুলো ইমিউন সেল গঠনে কাজ করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে ক্রিয়াশীল। এসবে আছে অ্যান্টি-এজিং ফ্যাক্টর, যা দেহের রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের, যেমন—ত্বক, চুল, চোখের সুরক্ষা দেয়। ছোটবেলা থেকে নিয়মিত ফল খাওয়ার অভ্যাস প্রয়োজন। অনেকে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কায় ফল খেতে চায় না। কিন্তু ফল কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য। এতে খাদ্য-আঁশ ও পানি বেশি থাকে। তাই অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা প্রতিরোধ করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। সে জন্য অন্যান্য খাবারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফল খাওয়া প্রয়োজন।
ফলের অনেক গুণ। তাই বলে কি আমরা ইচ্ছামতো যখন খুশি তখন, যত খুশি তত, যেভাবে খুশি সেভাবে ফল খেতে পারব? ফলের সুফল পেতে হলে খাদ্য গ্রহণে কিছু নিয়ম মানতে হবে। যাতে সঠিকভাবে পরিপাক পরিশোধন হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতিদিন কমপক্ষে দুটি মৌসুমি ফল গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন—একটি চাঁপা কলা ও একটি আমড়া খাওয়া যেতে পারে। খাদ্য গ্রহণের পরপর আয়রনের পরিশোষণ বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, যেমন—আমলকী, আমড়া, জাম্বুরা, পাকা আম ইত্যাদি গ্রহণ করা প্রয়োজন। তা ছাড়া খাদ্য গ্রহণের সময় শসা, টমেটো, গাজর ইত্যাদি আনন্দ করে খাওয়া যেতে পারে।
অর্থাৎ প্রতিদিন একাধিক রকমের ফল গ্রহণ করা চাই। বিভিন্ন বর্ণ ও নানা স্বাদের ফল থাকতে হবে খাদ্যতালিকায়।
মৌসুমি ও দেশি ফলগুলো বেশি পুষ্টিকর। কারণ, গাছ থেকে পাড়ার পর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্নভাবে ফলে পুষ্টি উপাদানের অপচয় হতে থাকে।
খাবারের সঙ্গে ফল খেলে কারও কারও ঢেকুর, অস্বস্তি, বদহজমের সমস্যা হতে পারে। তাই ভোজনের আধঘণ্টা পর ফল খাওয়া নিরাপদ। কাটার পর বাতাসের সংস্পর্শে এর পুষ্টি উপাদান নষ্ট হতে থাকে এবং রঙ বদলে যায়। তাই কাটার সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে। তবে কাটার পর শুধু ক্যারায়েল দিয়ে বর্ণ পরিবর্তন রোধ করা যায়। ফল কাঁচা অবস্থায় খাওয়া ভালো। রান্না করলে এর পুষ্টি উপাদানের অপচয় হয়। জুস বা স্মুদিতে চিনি, সিরাপ ইত্যাদি যোগ করলে ক্যালরি বেড়ে যায়। তাই ওজন কমাতে চাইলে চিনি, মধু ছাড়া ফলের জুস বা স্মুদি খেতে হবে। দিনের যেকোনো সময় ফল খাওয়া যেতে পারে। এতে খাদ্য পরিশোষণের কোনো সমস্যা হয় না। বেলা ১১টা বা বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফল খাওয়া যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে পাকা পেঁপে বা খেজুর খেলে পেটের হজম ক্রিয়া ভালো হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর প্রাতরাশ করা যায়।
শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সের মানুষের প্রতিদিন ফল খাওয়া প্রয়োজন। তবে কিছু শারীরিক সমস্যায় তা নিষেধ বা পরিমিত খেতে হয়। যেমন আই এম হলে বা উচ্চ আঁশযুক্ত খাদ্য হজমে সমস্যা থাকলে সব সময় খাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে হজমে সমস্যা হয় না, এমন ফল পরিমিত খাওয়া যেতে পারে। খুব বেশি অ্যাসিডিটি থাকলে চিকিৎসক ফল খেতে নিষেধ করেন। খেজুর, কিশমিশ অল্প পরিমাণে খাওয়া যায়। এতে অ্যাসিডিটির সমস্যা হয় না। কিডনির সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ফল খাওয়া ভালো। ডায়াবেটিক রোগীদের আম, কাঁঠালজাতীয় মিষ্টি ফল গ্রহণে সতর্ক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণমতো ফল গ্রহণ করা যাবে। তাই প্রতিদিন অবশ্যই ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কর্মব্যস্ত জীবনে শরীরের যত্নে এটি কঠিন কিছু নয়।
লেখক: পুষ্টিবিদ
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top