skip to Main Content

ফিচার I বহুমাত্রিক

দেশীয় বাড়িঘরের লে-আউট মেনে ফার্নিচার তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। জুতসই উপাদান ব্যবহার করে নির্মিত আসবাবগুলো দৃষ্টিসুখকর। আরামদায়কও বটে

ঘরের শোভা ফার্নিচার। আসবাবের সৌন্দর্য নিয়ে গৃহস্থরা বরাবরই আগ্রহী। কালের আবর্তে রুচির পরিবর্তন ঘটে। বর্তমানে স্থাপত্যশিল্পে আমূল পরিবর্তন এসেছে। তা প্রভাব ফেলেছে মানুষের রুচিতে। ঘরবাড়ির আকারও ছোট হয়ে এসেছে। অন্দরের স্থান, রঙ, পরিবারের সদস্যসংখ্যা, শিশুর উপস্থিতি— এসবের দিকে খেয়াল রেখে ফার্নিচার নকশা করা হয় আজকাল। যাতে প্রয়োজনীয় আসবাব রাখার পরও চলাফেরার জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে। লক্ষ রাখতে হয় দেশের জলবায়ু ও মানুষের আকৃতির দিকেও। যেমন ইউরোপের ফার্নিচারগুলো আমাদের দেশেরগুলোর তুলনায় বড়। কারণ, সেই স্থানের মানুষের গড়ন বেশ সুঠাম। তাই, ওসব অঞ্চল থেকে আমদানি করা ফার্নিচার দেখতে যতই আকর্ষণীয় হোক, আমাদের দেশের স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে খাপ খায় না। আসবাবের এসব বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল ফার্নিচার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘বহু’র দুই কর্ণধারের একজন নাবিলা নওরিনের সঙ্গে। আরেকজন হচ্ছেন নাহিদ শারমিন। দেশের আবহাওয়া, মানুষের আকৃতি, ঘরবাড়ির লে-আউটের ওপর ভিত্তি করে ফার্নিচার নকশা ও ব্যবসা করে যাচ্ছেন তারা। এই উদ্যোগ নেন ২০১৫ সালে। সক্রিয় হন ২০১৭-তে। উভয়েই আর্কিটেক্ট হওয়ায় এ কাজে তাদের বেগ পেতে হয়নি। গড়ে তুলেছেন ‘বহু বাংলাদেশ লিমিটেড’।
পাঁচ ক্যাটাগরির ফার্নিচার মিলবে বহু-তে। যেমন মেট্রো কালেকশন। এই সমারোহে শহুরে বাসাবাড়ির জন্য উপযোগী আসবাব আছে। শিশুদের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা ফার্নিচারের ক্যাটাগরির নাম ‘ফানিচার’। এ ছাড়া আছে বারান্দা কালেকশন। ক্যাবিনেট ক্যাটাগরিতেও আছে বাহারি সব আসবাব। ‘আট কুঠুরি নয় দরজা’ নামের বিশেষ ফার্নিচার মিলবে বহুর ক্যাটাগরিতে। এ জন্যই নিজেদের বহুমাত্রিক বলে পরিচয় দেন প্রতিষ্ঠানের দুই কর্ণধার। ‘বহুমাত্রিক’ শব্দটি থেকেই প্রতিষ্ঠানের নাম হয়েছে বহু।
ফার্নিচার তৈরিতে সেগুন কাঠ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি। সোফার কাভারে পাট ও কটন মিশ্রিত ফেব্রিক। কুশন পাতলা করে বানানো হয়। যাতে ধুলাবালি পরিষ্কার করা যায় সহজে। ফার্নিচার তৈরিতে লেদার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বহু। আসবাবের নকশা, রিসার্চ ও ব্র্যান্ডিংয়ের দায়িত্বে থাকা নাবিলা নওরিন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া চামড়া আঁটা ফার্নিচার ব্যবহারের উপযোগী নয়। যদিও লেদারই এখনকার ট্রেন্ড ও স্ট্যাটাস। দেশের আবহাওয়া আর্দ্র হওয়ায় এই উপাদানে নির্মিত ফার্নিচারে ফাটল ধরে। এ ছাড়া লেদারের আসবাব বেশ বড়সড় হয়, যা ছোট ঘরে চলাচলের অসুবিধা সৃষ্টি করে। চামড়ার সোফায় বসলে গরমও লাগে। তাই ‘বহু’ চেষ্টা করে ফার্নিচারগুলোতে কাঠ ব্যবহার করতে এবং ছোট মাপে বানাতে। বাড়ির লে-আউট ও মানুষের যাপনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আসবাবের নকশা করেন তারা। একটি ফার্নিচার যেন স্বচ্ছন্দে ৮ থেকে ১০ বছর ব্যবহার করা যায়, সেটি নিশ্চিতের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বিদেশ থেকে আমদানি করা ফার্নিচারে বাজার সয়লাব। প্রতিযোগিতায় বহু টিকবে কীভাবে— নাবিলা এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি। দেশের মানুষের জন্য ফার্নিচার নকশা করি। “ফার্নিচার ফর বাংলাদেশ” প্রত্যয়ই আমাদের টিকিয়ে রাখবে। আমাদের ক্রেতারা দেশপ্রেমী।’
দেশের বিলুপ্ত আসবাব ফিরিয়ে আনার প্রয়াস আছে প্রতিষ্ঠানটির। যেমন তাকিয়া কিংবা আলনা। সেসবের মডেল হুবহু ফিরিয়ে আনলে বর্তমান জীবনধারার সঙ্গে বেমানান হতে পারে। তাই কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে ফার্নিচারগুলো তৈরি করছে বহু। এ ছাড়া প্রযুক্তির উৎকর্ষে নিত্যনতুন পণ্য সঙ্গী হচ্ছে মানুষের। সেগুলো ঘরে রাখার জন্য চাই বিশেষ নকশার আসবাব। নিজেদের সৃজনক্ষমতা খাটিয়ে নতুন নতুন সব ফার্নিচার তৈরি করে বহু। যেমন ‘স্টো’। এটি তাদের পরিকল্পিত উদ্ভাবন। ল্যাপটপ, সেলফোন, পাওয়ার ব্যাংক ও চার্জারের মতো গ্যাজেটগুলো ঘরের কোনো একটি জায়গায় একসঙ্গে রাখার জন্য তা তৈরি করা হয়েছে; যাতে সকালে অফিসে যাওয়ার সময় এগুলো খুঁজে পেতে সমস্যা না হয়।
কিছুদিন আগেও বনানীতে শোরুম ছিল বহুর। কিন্তু স্পেস ছোট হওয়ায় সেটি বন্ধ করে নগরীর তেজগাঁওয়ে তিন হাজার বর্গফুটের শোরুম নেওয়া হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের পরিধি অনলাইনেই বেশি।

অন্তর্জালে তাদের ঠিকানা: নড়যঁনফ.পড়স। বহুর ফ্যাক্টরি ও ওয়্যারহাউস বাড্ডায়। সেখান থেকেই হোম ডেলিভারি করা হয়। পণ্য দেখার পর পছন্দ না হলে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে। এমনকি এক সপ্তাহ পরও যদি ফার্নিচারে কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে, তা-ও রিপ্লেস করার সুবিধা আছে। অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না। এ সময়ের মধ্যে কেউ যদি পণ্য ফিরিয়ে দিয়ে টাকা ফেরত নিতে চান, সেটাও সম্ভব। ক্রেতার চাওয়া পূরণের পাশাপাশি ফার্নিচারগুলোর যত্নআত্তি কীভাবে করতে হবে, সেই বিষয়েও পরামর্শ দেয় বহু।
বিভিন্ন রঙের ফার্নিচার তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে কোনো ধরনের সমস্যা হলে, যেমন আস্তরণ ফেটে গেলে বদলে নেওয়ার সুযোগ আছে। বহুর আসবাবের নকশাগুলো ইন্টারনেট থেকে গৃহীত নয়, বরং সবই প্রতিষ্ঠানটির নকশাকারদের সৃজনশীলতার ফল। ডিজাইনকে বাস্তব রূপ দিতে ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন ২৪ জন প্রশিক্ষিত কর্মী। উদ্যোক্তা নাহিদ ও নাবিলা সপ্তাহে চার দিন ফ্যাক্টরিতে উপস্থিত থেকে তদারক করেন। এ ছাড়া আছে টেকনিক্যাল টিম। দলটি ফার্নিচারের ছবি ও ভিডিও তৈরি করে বহুর অনলাইনে আপ করে। সব মিলিয়ে ৫০ ব্যক্তির শ্রম ও মেধায় চলছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনলাইনের পণ্যের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের একটি সাধারণ অভিযোগ হচ্ছে, ছবিতে পণ্য যেমন আকর্ষণীয় দেখা যায়, বাস্তবে তার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় না। কিন্তু বহু সেই কাজটি এড়িয়ে চলে। তারা পণ্যের অনুরূপ ছবি ও ভিডিও আপ করে।
শুধু বাসাবাড়িই নয়, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্যও কাস্টমাইজড ফার্নিচার তৈরি করে বহু। বিশেষ করে কফি শপ ও রেস্তোরাঁর। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ অর্ডার করতে হয়। এ ছাড়া কোনো স্থপতি যদি তার প্রজেক্টের থিম অনুযায়ী ফার্নিচার তৈরি করতে আগ্রহী হন, তা-ও করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
নিজেদের পণ্যের দামের বিষয়ে নাবিলা জানিয়েছেন, বহু একটি ব্র্যান্ড। একেকটি ফার্নিচারের পেছনে অনেক কর্মী শ্রম দেন। বহুর সেবাও ক্রেতাকে শতভাগ সন্তুষ্ট করে। ফার্নিচারগুলো দীর্ঘদিন টেকার নিশ্চয়তাও আছে। এসব মিলিয়েই দাম নির্ধারণ করা হয়। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়েছেন, যে পাঁচটি ক্যাটাগরি ধরে ফার্নিচার তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলোতে নিত্যনতুন ও দরকারি আসবাব যোগ করাই বহুর পরিকল্পনা।

 স্টাফ রিপোর্টার
ছবি: বহু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top