skip to Main Content

ফিচার I রূপ রত্নে

দুষ্প্রাপ্য ধাতু আর দামি রত্ন জায়গা করে নিচ্ছে সৌন্দর্যসচেতনদের বিউটি বক্সে। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, সুন্দর ত্বকের সুনিশ্চয়তায়

সৌন্দর্যের সঙ্গে ধাতুরত্নের সম্পর্ক খুব পুরোনো। যা কখনো শেষ হওয়ার নয়; বরং নিঃশব্দেই ঘটছে বিপ্লব। নিত্যনতুন নিয়ম মেনে, স্বতন্ত্র সব কায়দায় ভেঙেচুরে সমকালীন রূপচর্চার সম্ভার সমৃদ্ধ হচ্ছে দুষ্প্রাপ্য ধাতু আর দামি রত্নের ঐশ্বর্যময় উপস্থিতিতে।
সোনায় সোহাগা
প্রাচীনকাল থেকেই সৌন্দর্যচর্চায় জাপানিজ, রোমান ও পার্সিয়ানদের মধ্যে সোনার ব্যবহার জনপ্রিয়। সম্প্রতি শীর্ষে এসেছে এর অবস্থান। ত্বকের যত্নে সোনার এমন চাহিদার কারণ দুটি। প্রথমত, এটি অসামান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। দ্বিতীয়ত, সবার বাজেটের সঙ্গে মানিয়ে যায়। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট নতুন ত্বককোষ উৎপাদনের হার ত্বরান্বিত করে। বাড়ায় ত্বকের ইলাস্টিসিটি। ফলে কমে বলিরেখা, সূক্ষ্মরেখা আর দাগছোপের মতো ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার উপসর্গ। কমায় অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। তাই স্কিনকেয়ার প্রডাক্টগুলোতে শক্তিশালী অ্যান্টি-এজিং উপাদান হিসেবে দারুণ সমাদৃত সোনা। এতে থাকা আয়ন ত্বককোষকে উদ্দীপ্ত করে, বাড়ায় রক্তসঞ্চালনের হার। ত্বককোষ উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটা ত্বকের দূষণকে ভেতর থেকে দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ক্লিওপেট্রাও ব্যবহার করতেন স্বর্ণে তৈরি মাস্ক। এর ক্ষুদ্র পার্টিকেলগুলো ত্বক সহজেই শোষণ করে নেয়। দেয় ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা। স্বর্ণের রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেশন প্রোপার্টি। যা ত্বকে অক্সিজেন প্রবেশের পথ সুগম করে দেয়। ফলে ত্বক বেশ জীবন্ত দেখায়।
ডায়মন্ড ডিমান্ড
সোনায় খায়েশ না মিটলে আরও দামি রত্ন রয়েছে। এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে ব্ল্যাক ডায়মন্ড বা কালো হীরা। সার্জারি ছাড়াই মুখের ত্বক টানটান করায় জুড়ি নেই এর। মাইক্রোডার্মাব্রেশন আর অ্যান্টি-এজিংয়ের ক্ষমতার কারণে কালো হীরা থেকে তৈরি হয় একাধিক দারুণ বিউটি মাস্ক। বিউটি ল্যাব ব্র্যান্ডের ব্ল্যাক ডায়মন্ড এনার্জাইজিং সেরাম এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে প্রডাক্টটি হাতে পেতে ওয়েটিং লিস্টে নাম লিখিয়েছিলেন প্রায় চার হাজার মানুষ। হীরা ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ডায়মন্ড ইনফিউজড স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সবচেয়ে কার্যকর। এক্সফোলিয়েশনেও। ত্বকের মৃতকোষ সারাইয়ের সঙ্গে, সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে হীরা। দেয় দাগছোপমুক্ত মসৃণ মুখত্বক।
নীলায় নজরকাড়া
নাম নীলা হলেও এর বেগুনি বর্ণটাই চোখ বেশি টানে। স্টোন অব মেডিটেশন হিসেবে এর ব্যবহার বহু পুরোনো। যা দেহ ও মন প্রশান্ত রাখতে কার্যকর। কিন্তু অনেকেরই হয়তো অজানা, নেগেটিভ আয়নে পরিপূর্ণ এ রত্নখন্ড পরিচিত এর প্রদাহ নিবারক এবং আরামদায়ক প্রভাবকের কারণে। নীলা থেকে নির্গত জাদুকরী ফার ইনফ্রারেড রে (এফআইআর) ত্বকের উপরিভাগের তাপমাত্রাকে উসকে দেয়। ফলে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। ত্বক পায় প্রয়োজনীয় অক্সিজেন। ফ্রি র‌্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। ত্বকের গভীরে পুষ্টি পৌঁছে দিতে সাহায্য করে এই রশ্মি। সে ক্ষেত্রে ফেশিয়ালের সময় ত্বকের আকুপ্রেসার পয়েন্টগুলোতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। নীলা থেকে নির্গত ফার ইনফ্রারেড রে ত্বকের ফাইব্রোব্লাস্ট কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়ে, যা সারিয়ে তোলে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককোষ। অ্যামেথিস্ট বা নীলা ঋণাত্মক আয়নযুক্ত; যা ধনাত্মকতায় পরিপূর্ণ টক্সিন, ফ্রি র‌্যাডিকেল আর দূষণকে দ্রুত আকর্ষণ করে। করে দূরীভূত। আর এই ডিটক্সিফিকেশনের ফলে ত্বক দেখায় দূষণমুক্ত, পরিষ্কার ও সতেজ। নীলায় তৈরি ফেস মিস্ট কিংবা ক্লে ডিটক্স মাস্ক এ ক্ষেত্রে রাখা যেতে পারে প্রতিদিনকার পরিচর্যায়।
রোজ কোয়ার্টজ রুল
সেলফ লাভ স্টোন হিসেবে এটি পরিচিত। ত্বকচর্চায় ব্যবহৃত রত্নগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজে ব্যবহার করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সব ধরনের ত্বকের উপযোগী এ রত্ন ব্যবহারের পর ত্বক নিমেষেই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখায়। এমনকি অনেক নামকরা ফেশিয়ালিস্ট ফেশিয়ালে ব্যবহৃত উপাদানগুলো রোজ কোয়ার্টজে তৈরি প্লেটে রেখে দেন। এতে প্রডাক্টগুলোর মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয় রত্নের গুণাগুণ। এ ছাড়া রোজ কোয়ার্টজ দিয়ে তৈরি ফেশিয়াল রোলারের নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ায়। লোমকূপকে দৃঢ় করে করে খানিকটা আড়াল। দাগছোপ এবং চোখের চারপাশের ফোলা ভাব কমায়। দূর করে চোখের চারপাশের কালো দাগ। বলিরেখাও। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে, উজ্জ্বলতা বাড়ায় বহুগুণে। এ ছাড়া কোয়ার্টজ এসেন্স যদি মিনারেল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে এর কার্যকারিতা বাড়ে বহুগুণে। রোজ কোয়ার্টজ ইনফিউজড ফেশিয়াল স্প্রে প্রাইমার হিসেবে দারুণ।
রুবি রাইজিং
উষ্ণ লাল এ রত্নে রয়েছে স্কিন ডিটক্সিফায়িং এবং পিউরিফায়িং ইফেক্ট। এতে তৈরি পণ্য মুখত্বককে প্রয়োজনীয় পরিপুষ্টির জোগান দেয়। শক্তিশালী করে তোলে ত্বককোষ। সংক্রমণ রোধ করতেও দারুণ রুবি। ত্বকে মাইক্রোসার্কুলেশনেও সক্ষম, যা রক্তের ক্ষুদ্র নালিগুলোতে বাড়ায় রক্তের সঞ্চালন। সুস্থ নতুন ত্বককোষ উৎপাদনে সহায়তা করে। ত্বকের তাপমাত্রা বাড়ায়, করে তোলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। স্কিনকেয়ার প্রডাক্টে রুবি চূর্ণের সংযুক্তি এর আর্দ্রতা আটকে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বকে দেয় দারুণ গোলাপি আভা। ফেস মাস্কে এই রত্ন ব্যবহৃত হয় ওয়ার্মিং প্রোপার্টি হিসেবে। যার ব্যবহার ত্বকের বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখা সারাইয়ে সাহায্য করে। রুবি ইনফিউজড ফেশিয়াল সেরাম যদি জোজোবা অয়েল আর ভিটামিন সি-র সঙ্গে ব্যবহার করা যায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে বহুগুণে।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: রিফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top