skip to Main Content

ফুড বেনিফিটস I পনির

এই খাদ্য রোগবালাই যেমন ঠেকিয়ে দেয়, তেমনি তা সারায়ও। ত্বক বাঁচায় বুড়িয়ে যাওয়া থেকে। চুল রাখে মজবুত

পঞ্চামৃতর একটি হচ্ছে দুধ। এর থেকে তৈরি হয় দই, ঘোল, ঘি ও পনির। এগুলোর আলাদা ইতিহাস আছে। পনির আবিষ্কার মানুষের ইচ্ছাকৃত নয়। আকস্মিক। ধারণা করা হয়, কৃষিবিপ্লবের কিছু সময় পরপরই মানুষ পনির আবিষ্কার করে। অর্থাৎ, ৮ থেকে ১০ হাজার বছর আগে। কৃষিবিপ্লব-যুগের মানুষ একসময় ভেড়া, গরু ও উটকে পোষে আনে। গবাদিপশুর দুধ সংগ্রহের জন্য জাবর কাটা প্রাণীর পাকস্থলী দিয়ে তারা একধরনের থলে বানাত। সেই পাকস্থলী থেকে রেনেট নামক একধরনের অ্যানজাইম বা রস নিঃসৃত হয়। একবার একটি থলেতে কিছুটা রেনেট থেকে যায়। তাতে রাখা দুধের আণবিক গঠন ভেঙে পৃথক হয়ে গেল। তখন নতুন এক খাবারের হদিস পেল মানুষ। এর নামই পনির। স্বাদে ও পুষ্টিতে ভরপুর এ খাদ্য। প্রাচীন গ্রিসে চার হাজার বছর আগে এবং মিসরে ৩২০০ বছর আগে পনির খাওয়া হতো বলে প্রমাণ মিলেছে। কালের প্রবাহে পনিরের আরও অনেক পদ তৈরি হয়েছে।

জুলিয়াস সিজারের আমলেই রোমে ১০০ প্রকার পনির ছিল। এটি আরও কত রকমের হতে পারে, সেই চেষ্টা চলছে বিশ্বজুড়ে। এই তৎপরতা নিয়ে ফ্রান্স আর ব্রিটেন তো প্রায় রেষারেষি করেই এগিয়ে চলেছে। ফ্রান্সে বর্তমানে ৪০০ রকম পনির পাওয়া যায়। ব্রিটেনে তা ৭০০। লবণের উপস্থিতির ভিত্তিতে পনিরকে দুভাগে ভাগ করা যায়। লবণাক্ত ও অলবণাক্ত। এ দুইকে আবার কিছু উপশাখায় বিভক্ত করা যায়। ফ্রেশ চিজ, ন্যাচারাল রাইন্ড, সফট হোয়াইট চিজ, সেমি সফট, হার্ড চিজ, ব্লুচিজ ও ফ্লেভার্ড। প্রতিটি ভাগেই আছে একাধিক পনিরের উপস্থিতি। বহুল প্রচলিত পনিরগুলো হচ্ছে মোজারেলা, শেডার, গৌডা, ফেটা, পারমিজান, হ্যালৌমি, কটেজ, ব্লুচিজ ইত্যাদি। এ পনিরগুলো বেশ লবণাক্ত। প্রতি ১০০ গ্রাম হ্যালৌমি পনিরে লবণের পরিমাণ ২.৭১ গ্রাম। ব্লুচিজেও তাই। কটেজে ৪০৫ মিলিগ্রাম, শেডারে ১৯০ মিলিগ্রাম। মানুষের শরীরে দৈনিক ৩ গ্রাম লবণ দরকার। তবে ৫ গ্রামের চেয়ে বেশি খাওয়া অস্বাস্থ্যকর। সল্টেড চিজ আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় লবণের জোগান দিতে পারে। পনিরের লবণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হত্যা করে এবং বংশবিস্তার প্রতিহত করে। সোডিয়াম ক্লোরাইড তথা খাদ্যলবণ ছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম পনিরে ১৮.৩ গ্রাম প্রোটিন, ২০.৮ গ্রাম উপকারী ফ্যাট, ২.৬ গ্রাম খনিজ, ১.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২৬৫ কেসিএল এনার্জি, ২০৮ এমজিএস ক্যালসিয়াম এবং ১৩৮ মিলিগ্রাম ফসফরাসসহ আরও অনেক উপকারী উপাদান আছে। এসব উপাদান শরীরের নানা ধরনের বালাই সারাইয়ের কাজে আসে।
নিয়মিত পনির খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর হয়। মানুষের শরীরে দৈনন্দিন চাহিদার ৮ শতাংশ ক্যালসিয়ামের জোগান দিতে পারে দুধজাত এই খাদ্য। মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে পারে পনিরের ক্যালসিয়াম। এটি হাড় শক্তিশালী করে। এর ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড হাড়ের রোগ দূর করে, হাড় ক্ষয় রোধ করে এবং অস্থিসন্ধির সচলতা বৃদ্ধি করে। খুব দ্রুত এ কাজ করে পনিরের এই উপাদানদ্বয়। আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের প্রকোপও কমায়। প্রসূতিদের জন্য পনির খাওয়া জরুরি। এতে গর্ভের শিশুর হাড় মজবুত হয়। দাঁতের সুস্থতা ও ক্ষয় রোধ নিশ্চিত করে পনিরের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। চোখের জন্যও এটি ভালো। এর আরেক কাজ হলো পাকস্থলীতে হজম সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়ানো। একটানা ১৪ দিন পনির খেলে পাকস্থলীতে খাদ্য হজম করার ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে কটেজ পনির বেশি উপযোগী।
শরীরের শক্তি বাড়ায় পনির। প্রোটিন সরবরাহ করে, যা অনেকক্ষণ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এই প্রোটিন মানুষের শরীরের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। একই কাজ করে পনিরে থাকা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, থিয়ামিন, নিয়াসিন ও ফলেট। ফলেট গর্ভের ভ্রূণের বিকাশে সাহায্য করে। তা ছাড়া লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন করে। এ কাজটি করে ফলেটের বি কমপ্লেক্স ভিটামিন। লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি ছাড়াও পনিরের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং রিবোফ্লোভিন মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে। পনিরের ওমেগা থ্রি এবং ফ্যাটি অ্যাসিডও মগজের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
এতে আছে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া, যা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। নিয়মিত পরিমাণমতো পনির খেলে খারাপ কোলেস্টেরল দূর হয়। কোলেস্টেরল কমার সুফল পায় হৃদপি-। হার্ট ভালো থাকে। পনিরে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট হার্টের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। এটি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে হলুদ পনির।
পনিরের লিনোলিক অ্যাসিড ও স্ফিনগোলিপিডস উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধে ভীষণ কার্যকর। লিনোলিক ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পনিরও ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। পনির খেলে লিভার ক্যানসার ও ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমে। এর সংযুক্ত লিনোলিক অ্যাসিড চর্বি গলিয়ে শরীরের বাড়তি মেদ ঝরায়। ফলে ওজন কমে।
পনিরে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এ মৌলও হার্ট সুস্থ রাখে। তা ছাড়া এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এতে থাকা ভিটামিন বি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পটাশিয়াম রক্তরসের ভারসাম্য বজায় রাখে। এ ছাড়া আমেরিকান জার্নাল অব নিউট্রিশনের গবেষণা থেকে জানা গেছে, দৈনিক ৫০ গ্রাম পনির খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
এটি ইনসোমনিয়া সারায়। পনিরে ট্রিপটোফেন ও অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা স্ট্রেস কমায়। ফলে ভালো ঘুম হয়।
পনির ত্বক উজ্জ্বল করে। এ কাজ করে পনিরে থাকা ভিটামিন বি। চুলের যত্নেও এটি বিশেষ কার্যকর। বিশেষ করে লো-ফ্যাট কটেজ চিজ। প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে ডিম ও কিছু ফলের সঙ্গে পনির খেলে চুল সতেজ থাকে। মূলত পনিরের ক্যালসিয়ামই চুলকে সুগঠিত করে।
যারা নিয়মিত পনির খাচ্ছেন, এর সংরক্ষণে তাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। প্লাস্টিক র‌্যাপ দিয়ে পনির মুড়িয়ে রাখা উচিত নয়, এতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। সেই পনির খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অমসৃণ কাগজে মুড়িয়ে রাখলেই পনির ভালো থাকবে।

 শিবলী আহমেদ
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top