skip to Main Content

ফুড বেনিফিটস I রূপচাঁদা

জটিল কিছু রোগের পথ্য এই সামুদ্রিক মাছ। পুষ্টিকর তো বটেই; স্নায়ু, ত্বক ও চোখের সুরক্ষায় এর জুড়ি নেই। লিখেছেন শিবলী আহমেদ

সামুদ্রিক মাছ পুষ্টির আধার। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, তাই বাংলাদেশিদের পাতে সহজেই মেলে। ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর হওয়ায় গর্ভাবস্থা থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় এসব মাছের জুড়ি নেই। রূপচাঁদা তেমনই একটি। এর প্রতি ১০০ গ্রামে এনার্জি থাকে ৯৯ কিলোক্যালরি, পানি ৭৭.৫ গ্রাম, নাইট্রোজেন ৩ গ্রাম, প্রোটিন ১৮.৮ গ্রাম, থায়ামিন ০.০২ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.০৯ মিলিগ্রাম, নিয়েসিন ২.১ মিলিগ্রাম, ট্রিপটোফেন ৩.৫ মিলিগ্রাম। ফ্যাট আছে ১.২২ গ্রাম। যার মধ্যে স্যাচুরেটেড ০.৩০২ গ্রাম, মনোস্যাচুরেটেড ০.২৩৬ গ্রাম, পলিআনস্যাচুরেটেড ০.৩৯৯ গ্রাম। এ ছাড়া কোলেস্টেরল আছে ৬২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১১০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম, ৪৩০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৫০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.৯০ মিলিগ্রাম। খানিকটা আয়োডিন ও সেলেনিয়ামও থাকে। সম্প্রতি জাপানি গবেষণায় এ মাছে ওমেগা থ্রি পাওয়া গেছে। মিলেছে ভিটামিন এ, বি ও ডি। এসব উপাদান আমাদের শরীরের নানাবিধ রোগ সারায়। যেমন রূপচাঁদা মাছের তেল শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক। এতে ডেকোসেহেক্সনইয়িক ও আইকোসেপেনটেনয়িক আছে। এ দুটিই হচ্ছে অ্যাসিড। স্নায়ুর বিকাশ ঘটায় এ অম্লজোড়া। শিশুদের আরেকটি রোগ অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভ ডিজঅর্ডার। মনোযোগহীনতার এ ব্যাধি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে পারে। এর থেকে সুরক্ষা দিতে পারে রূপচাঁদা। বর্তমানে বাবা-মায়েরা সন্তানের উচ্চতা বাড়াতে বাজারের বিভিন্ন পণ্যের ওপর নির্ভর করেন। অনেকেই তাতে পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারেন না। সেসব এড়িয়ে শিশুর বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে খাওয়াতে পারেন রূপচাঁদা। এর ভিটামিন ডি শরীর সুগঠিত করতে পারে।
হার্টের সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। রক্তচাপের হেরফের ও হৃদ্রোগ এখন ঘরে ঘরে। হৃদ্‌পিণ্ডের যেকোনো বালাই কমাতে খাওয়া যেতে পারে রূপচাঁদা। এ মাছ নিয়মিত খেলে হার্টের সমস্যা ৫০ শতাংশ কমতে পারে। ওমেগা থ্রি থাকায় রূপচাঁদা খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এ উপাদান মস্তিষ্কের কোষ বিকাশেও ভূমিকা রাখে। স্নায়ুর প্রদাহ কমায়। রক্তসঞ্চালনের মাত্রা ঠিক রাখতে খাওয়া যেতে পারে মাছটি। এটি এন্ডোথেলিয়ান ফাংশন উন্নত করে। নিম্ন রক্তচাপে ভোগা রোগীদের জন্য রূপচাঁদা উপকারী। খারাপ কোলেস্টেরলের প্রভাব থেকে শরীরকে সুরক্ষিত করে। পারে ওজন কমাতেও। কোনো কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি না থাকায় মাছটি ডায়েটে রাখা যেতে পারে। স্থূলতা কমবে। এতে থাকা আয়োডিন থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের উন্নতি ঘটায়। আমিষ পেশির ক্ষয়রোধ করে।
শারীরিক পরিশ্রমের কারণে অনেকের শরীর ব্যথা হয়। তা ছাড়া ব্যায়ামের ফলে পেশিতে অস্বস্তি বোধ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে রূপচাঁদা খেলে আরামবোধ হয়। মাছটি অস্টিওম্যালাসিইয়াও প্রতিরোধ করে। এটি টিস্যুর একটি রোগ। এতে হাড়ে খনিজ সরবরাহের সময় আশপাশের টিস্যুগুলো অস্বাভাবিক আচরণ করে। অস্থি এতটাই নরম হয়ে পড়ে যে অল্প আঘাতেই ভেঙে যেতে পারে। রূপচাঁদায় থাকা ভিটামিন ডি দূরে রাখে এ রোগ। হাড়ের আরেকটি বালাই রেচিটিক। শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। মূলত ভিটামিন ডি এবং খনিজের অভাবে হয় রোগটি। এটি হলে হাড়ের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এ বালাই থেকে দূরে থাকতে চাইলে শিশুদের খাবারে নিয়মিত রূপচাঁদা রাখা যেতে পারে। এ মাছের আয়রন অ্যানেমিয়া সারায়। মৌলটি রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। সর্দি-কাশি ও মাথাব্যথার পথ্য হিসেবে কাজ করে মাছটি।
সাধারণ রোগের পাশাপাশি মরণব্যাধির দাওয়াই হতে পারে রূপচাঁদা। যেমন ব্রেস্ট ক্যানসার রোধে এর ভূমিকা আছে। এ মাছে থাকা সেলেনিয়াম যে এনজাইম উৎপন্ন করে, তা ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়ে। কিছু ক্ষেত্রে কোলোরেক্টাল, পেনক্রিয়েটিক ও প্রোস্টেট ক্যানসারও প্রতিরোধ করে। কর্কট রোগের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে ক্রনিক ইনফেকশন। রূপচাঁদা খেলে তা থেকে নিরাপদ থাকা যায়। ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতেও বাধা দেয়।
সুস্থ ফুসফুসের নিশ্চয়তা দিতে পারে রূপচাঁদা। অ্যাজমাও সারায়। ডিমেনশিয়া রোগের ঝুঁকি থেকে রেহাই দেয়। এ রোগ হলে মস্তিষ্কের কোষের আয়ু কমে যায়। ফলে রোগী স্মৃতিভ্রষ্ট হতে পারে। রূপচাঁদা মাছের ওমেগা থ্রি এ ঝুঁকি সামলায়। পাশাপাশি মগজের কোষের উন্নতি ঘটায়। হতাশাও দূর করতে পারে খাবারটি। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। স্নায়বিক এ কাজ করে রূপচাঁদা মাছে থাকা ডেকোসেহেক্সনইয়িক অ্যাসিড। পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে মাছটি। শুক্রাণু সবল করে। মেনোপজকালীন রোগ ‘হট ফ্ল্যাশ’ কমাতে পারে। বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি নামে নারীদের একধরনের রোগ সারাইয়ে কাজে আসে এ মাছ।
গর্ভের শিশুর মগজ ও চোখের বৃদ্ধিতে খাওয়া যেতে পারে রূপচাঁদা। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে। এমনকি প্রসব-পরবর্তী মায়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উপাদেয় খাবার এটি। প্রিটার্ম শিশু জন্ম নেওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এ ধরনের জন্মে শিশুর স্বাস্থ্য অরক্ষিত থাকে। সতর্ক থাকতে চাইলে গর্ভবতীদের খাদ্যতালিকায় রূপচাঁদা রাখা যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরে দৈনিক ৬০০ থেকে ৮০০ মিলিগ্রাম ডেকোসেহেক্সনইয়িক অ্যাসিড নিশ্চিত করা গেলে প্রিটার্ম শিশু জন্মের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে রূপচাঁদা মাছ। বার্ধক্যজনিত কারণে যারা চোখের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য মাছটি উপকারী। বিশেষ করে রেটিনার রোগে যাদের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। এ ছাড়া অন্ধকারে তীক্ষè দৃষ্টির প্রত্যাশা পূরণে নিয়মিত রূপচাঁদা খাওয়া যেতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে চোখে যে সমস্যা হয়, তা থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারে চোখের যে ক্ষতি হয়, তা পূরণ করতে পারে এই সামুদ্রিক খাবার। গ্লুকোমা থেকেও রেহাই দেয়। অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ দূর করতে এ মাছের জুড়ি নেই। আলসারেটিভ কোলাইটিসের পথ্য হিসেবে কাজ করে। শরীরে কোনো প্রকার সার্জারি হলে সেই ক্ষত দ্রুত সারাই হবে রূপচাঁদা মাছ খেলে।
এসব তো গেল শরীরের ভেতরের সুরক্ষার কথা। ত্বকের সুস্থতা নিশ্চিত করতেও রূপচাঁদা মাছ খাওয়া যেতে পারে। চেহারায় তারুণ্য টিকিয়ে রাখতে খাবারটি কার্যকর। নিয়মিত খেলে ত্বকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি সরবরাহ হয়। ভিটামিন ডি২ ও ডি৩ ত্বকের সোরিয়াসিস প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া চামড়ায় আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির ক্ষতি সারাই করতে পারে রূপচাঁদা মাছ।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top