skip to Main Content

মনোজাল I লম্বা নখের মনোবিজ্ঞান

নখের দৈর্ঘ্যের সঙ্গে মনোজগতের যোগসূত্র। কখনো বাহাদুরির খাতিরে, কখনো স্রেফ সৌন্দর্যের বারতায়

আপনার নখ কি বড়? কতটা? মাঝামাঝি নাকি নখের লেবেল থেকে জাস্ট কিছুটা বাড়ানো? ভাবছেন, নখ নিয়ে হঠাৎ এত প্রশ্নের কারণ কী? কারণ আছে। আপনি হয়তো জানেন না, নখ বড় হলে তার পেছনে যে গভীর মনোবিজ্ঞান আছে, তা রীতিমতো ভাবিয়ে তোলার মতো। অধিকাংশ মেয়ে সাধারণত হাত-পায়ের নখ কিছুটা বাড়িয়ে রাখতে পছন্দ করেন। তাতে হাত-পায়ের সৌন্দর্যে আলাদা মাত্রা যোগ হয়। নেইলপলিশ পরলে বেশি সুন্দর লাগে। এর পেছনে তেমন কোনো রহস্য নেই আসলে। তবে অনেকেই আছেন, যারা নখের দৈর্ঘ্য বেশ বাড়াতে পছন্দ করেন। আপাতদৃষ্টে একে সহজ মনে হলেও বড় নখ রাখতে পারা, ঠিকমতো এর যত্ন নেওয়া এবং নখের দৈর্ঘ্য মেইনটেইন করা—কোনোটাই সহজ নয়; বরং অনেক কষ্টসাধ্য ও পরিশ্রমের ব্যাপার। বড় নখ সহজে ভেঙে যায়। তা ছাড়া বড় নখযুক্ত হাতে কোনো কিছু ঠিকমতো ধরা বা কাজ করা যায় না। তবু তারা বড় নখ রাখেন। সৌন্দর্যবিশ্বে এর চাহিদাও কম নয়।
দীর্ঘ নখের এই প্রবণতা কয়েক দশক ধরেই জনপ্রিয়। সৌন্দর্যপিয়াসী নারীরা তাদের নখগুলোকে চিত্তাকর্ষক দৈর্ঘ্যে বাড়ানোর জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন বললেও অত্যুক্তি হবে না! তাদের জন্য লম্বা নখ একটি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট কিংবা আত্মপ্রকাশের রূপ হতে পারে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে এই ধরে নেওয়াই শেষ কথা নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীর লম্বা নখের আকাঙ্ক্ষার পেছনে একটি গূঢ় মনোবিজ্ঞানও রয়েছে। সেই বিজ্ঞানের প্রথম তত্ত্ব হলো, লম্বা নখ নিয়ন্ত্রণের একটি ফর্ম উপস্থাপনা। খটকা লাগছে? সহজ করে বলি। নখ লম্বা রাখতে পছন্দ যাদের, তারা মনে করেন, এর ফলে তাদের চেহারা এবং অন্যরা কীভাবে তাদের উপলব্ধি করে, তার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে তারা সক্ষম হন। আবার লম্বা নখগুলোকে নিজের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার উপায় হিসেবেও দেখা যেতে পারে। কারণ, তারা মনে করেন, এতে তাদের সৌন্দর্য কয়েক গুণ বেড়ে যায়। লং নেইল মানেই নারীত্ব ও সৌন্দর্যের প্রতীক—এই বিশ্বাস যাদের, সেই সংখ্যা নেহাত কম নয়।
এবার আসা যাক দ্বিতীয় তত্ত্বে। তাতে বলা হয়েছে, অনেকেই লম্বা নখ রাখেন অন্যদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখার একটি উপায় হিসেবে। লম্বা নখধারীর জন্য সাধারণত দৈনন্দিন কাজ বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। টাইপ করা বা কায়িক শ্রমযুক্ত কাজেও তিনি স্বচ্ছন্দ নন। ফলে এটি মনমেজাজে অন্যদের কাছ থেকে তার একরকম বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি তৈরি করে। তার মনে হয়, তিনি অন্যদের মতো নন; অন্যরা যা করছে, তা তাকেও করতে বা পারতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।
তবে লম্বা নখের পেছনে মনোবিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বটি হলো, ক্ষমতা ও আধিপত্যের সঙ্গে সম্পর্ক। বিশ্বের অনেক সংস্কৃতিতেই লম্বা নখকে সামাজিক মর্যাদা এবং সম্পদের চিহ্ন হিসেবে ভাবা হয়। কারণ, এটি নির্দেশ করে, উল্লেখিত ব্যক্তির কায়িক শ্রম করার প্রয়োজন নেই। এটি অন্যদের ওপর তার শ্রেষ্ঠত্ব ও ক্ষমতার সুস্পষ্ট ছাপ রাখে বলে মেনে নেওয়া হয়। তবে সাধারণ নারী, যিনি কেবল তার হাত-পায়ের সৌন্দর্য বাড়াতে নখ লম্বা রাখেন, মনোযোগ দিয়ে এর যত্ন করেন, তার পেছনের মানসিকতা এত নিগূঢ় বা জটিল ভাবার কারণ নেই। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নেইলপলিশের মতো বিশেষ আসক্তিও কাউকে কাউকে নখ লম্বা রাখতে উৎসাহ দেয়। নেইলপলিশের চকচকে মোহনীয় সব রং এবং তাতে নিজেকে রাঙানোর লোভে নখ লম্বা করেন তারা। কারণ যা-ই হোক, ছোট নখে নেইলপলিশ মোটেই এত মোহময় হয়ে ওঠে না, যতটা হয় বড় নখে।
কারণ অনেক হতে পারে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, শেষ পর্যন্ত, দীর্ঘ নখের আকাঙ্ক্ষা আসলে এই সব কটি কারণের সংমিশ্রণে চালিত হয়। সেখানে কারও কারও ক্ষেত্রে লম্বা নখ আত্মপ্রকাশ এবং ফ্যাশন স্টেটমেন্টের একটি রূপ। আবার কারও ক্ষেত্রে অন্যকে নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা। যেখানে তারা বিশ্বাস করেন, লম্বা নখ ভয়ংকরভাবে স্বাধীন ও শক্তিশালী রূপ নির্দেশ করে। পুরুষ সঙ্গ নয়, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের সঙ্গী হিসেবে যথেষ্ট বলে অনুভব করেন। সেলফ লাভে বিশ্বাসী নারীরা সাধারণত লম্বা নখ রাখেন; কারণ, তারা সব সময়ই নিজেকে সেরা মনে করেন, নিজের প্রতি তুষ্ট থাকতে ভালোবাসেন।
আবার নখ লম্বা হওয়া মানে আপনি ঝুঁকি গ্রহণকারী, সাহসী—এই ভাবনাও কাজ করে কারও কারও মনে। যেমন কাইলি জেনার। আমেরিকান এই মিডিয়া পারসোনালিটি নেইল এক্সটেনশন করার মাধ্যমে সব সময় নখ লম্বা রাখেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন, এতে তার নির্ভীকতা প্রমাণিত হয়। তিনি সাহসী; কখনোই ঝুঁকি নিতে ভয় পান না। পাশাপাশি এতে খুব সহজেই মনোযোগের কেন্দ্রও হয়ে ওঠা যায়।
আবার এমন তত্ত্বও আছে, লম্বা নখ মানেই আপনি সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী। যেসব নারী আদর্শের বাইরে যেতে এবং নতুন জিনিস চেষ্টা করতে ভয় পান না, তারা নখ লম্বা রাখেন। নিজের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন উপভোগ করেন। নিজের মূল্য জানেন এবং নিজেকে সেবা করার পেছনে ব্যয় করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না।
যাহোক, অনেক তাত্ত্বিক কথা বলা হলো। এবার হাত মেলে দেখুন, আপনার নখের আকার কেমন? ছোট হলে কথা নেই; তবে লম্বা হলে মনোযোগ দিয়ে ভাবতে শুরু করুন, এর পেছনে আসলে আপনার কোন মানসিকতা কাজ করছে? নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা, অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্নতা, ক্ষমতা ও আধিপত্যের অনুভূতি নাকি অন্য কিছু? বলা যায় না, এ গভীর মনোবিজ্ঞান থেকে আপনি নিজেও নিজের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেয়ে যেতে পারেন।

 রত্না রহিমা
মডেল: প্রমা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top