skip to Main Content

টেকসহি I সুলভে সাসটেইনেবিলিটি

পরিবেশ সুরক্ষিত রাখবে, পকেটের ওপর বাড়তি চাপ না ফেলেই। এমন অদলবদল গেম চেঞ্জিংই বটে

একটু খেয়াল করলে দেখা যায় ঋতুবদলের সৌন্দর্যে স্বস্তির ছিটেফোঁটা নেই। চেনা রোদ, বৃষ্টি, শীত কিংবা গরম, কেমন যেন রূপ পাল্টেছে। কেমন যেন রুক্ষ, রূঢ় আচরণ। এর পেছনে সৌন্দর্যবিশ্বের দায়ভার এড়ানোর উপায় নেই। ঠিক তেমনি সৌন্দর্যসচেতনেরাও কিন্তু অনেকাংশে দায়ী। কেমন হয় যদি প্রকৃতি সংরক্ষণে অবদান রাখে সৌন্দর্য রক্ষার রুটিন? ছোট ছোট পরিবেশবান্ধব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শুধু সৌন্দর্য নয়, ধরণীর সবুজতা কীভাবে সুরক্ষিত থাকে, জানতে পারলে মন্দ হয় না।
ব্যাম্বু টুথব্রাশ
সায়েন্টিফিক রিসার্চ বলে, ভালোভাবে খুঁজলে পৃথিবীতে প্রথম তৈরি টুথব্রাশ এখনো কোথাও না কোথাও পাওয়া যাবে। প্লাস্টিক যে অপচনশীল, তার হয়তো ভয়াবহ প্রভাবের উদাহরণ মেলে এতেই! এই অবস্থার পরিবর্তনে সৌন্দর্যবিশ্ব কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে? সাধারণ টুথব্রাশ যেখানে শুধু প্লাস্টিকের পাল্লা ভারী করে, সেখানে প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি টুথব্রাশ কয়েক বছরের মধ্যে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। সার হিসেবে মাটিকে সাহায্যও করে। শুধু তা-ই নয়; মাড়ি স্পর্শকাতর যাদের, তাদের জন্য বাঁশে বানানো ব্রাশ একরকম লাইফ সেভার। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবেও ব্যাম্বু টুথব্রাশ ম্যাজিকের মতো কাজ করে। ঘুম থেকে জেগেই যারা ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি পেতে চান, তা-ও আবার সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে, তাদের জন্য এটি হতে পারে দারুণ সমাধান।
বায়োডিগ্রেডেবল ফ্লস
হাসির সৌন্দর্য অনেকাংশেই নির্ভর করে সুন্দর দাঁতের ওপর। নিয়মিত ফ্লসিং দাঁতের সৌন্দর্য রক্ষার অন্যতম উপায়। তবে অনেকে হয়তো জানেন না প্লাস্টিক ফ্লস মাটিতে মিশতে শত বছরের বেশি সময় লাগে। মেরিন লাইফের জন্য এ যেন এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি! তাই পৃথিবীতে অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের পাল্লা আর ভারী না করে নিঃসন্দেহে বেছে নেওয়া যেতে পারে বায়োডিগ্রেডেবল ফ্লস।
কাচের কনটেইনারে রাখা সিল্কের তৈরি ফ্লস পরিবেশবান্ধব; দাঁতের পাশাপাশি ভ্যালু অ্যাড করে পরিবেশের সৌন্দর্যেও। এ ছাড়া কাচের কনটেইনারটিও পুনর্ব্যবহার উপযোগী। ট্র্যাডিশনাল ডেন্টাল ফ্লসগুলো যেখানে কেমিক্যাল আর ক্যানসারের আস্তানা, সেখানে প্রাকৃতিক ফ্লস যেন আশার আলো দেখায়।
বার সোপ
শুধুই কি বডি ওয়াশের পরিপূরক? না, সৌন্দর্যচর্চার পরিবেশবান্ধব বিকল্পও বটে। প্যাকেজিংয়ে দামের সাশ্রয়, প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ করা ছাড়াও বার সোপ ত্বকের প্রাকৃতিক ময়শ্চারকে ধরে রাখে। এ ছাড়া কেমিক্যালযুক্ত সাবানের চেয়ে এই সোপে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষার থাকায় এটি যেকোনো ধরনের ত্বকে মানিয়ে যায় সহজে। যারা সাবান বা বডি ওয়াশ থেকে প্রাকৃতিক সুগন্ধি চান, তাদের জন্য বার সোপ হতে পারে অনন্য সমাধান। পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিংয়ে মোড়ানো থাকে, তাই ক্ষতিকর নয়।
বার সোপ ব্যবহারে শুধু যে পরিবেশের উপকার হচ্ছে, তা কিন্তু নয়; বরং পছন্দের তালিকায় যোগ হচ্ছে পরিবেশবান্ধব দেশীয় উদ্যোক্তাদের পণ্য, যা ক্রয়ের মাধ্যমে অবদান রাখা যাচ্ছে সর্বোপরি দেশের উন্নয়নে।
মাইক্রোফাইবার ফেশিয়াল ক্লথ
টিস্যু আর স্কিন ওয়াইপসের ভিড়ে, প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে এগুলো। বিউটি রুটিনে বায়োডিগ্রেডেবল এই সামগ্রী যোগ করার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে রোজকার রূপচর্চায়।
মাইক্রোফাইবার ক্লিনিং ক্লদসের গুণাগুণের আসলে শেষ নেই। ফেশিয়াল ক্লিনজার হিসেবে, বডি ক্লিনিং লুফা হিসেবে, ল্যাপটপ ক্লিনিংয়ে, কিংবা শুধু টয়লেট পেপার হিসেবেও ব্যবহার করা যায় একে। অর্থাৎ এক প্রোডাক্টে সেরে নেওয়া যাবে নানা ধরনের ডেইলি ক্লিনজিং।
মাইক্রোফাইবার ফেশিয়াল ক্লদ ত্বকে ক্লিনজিংয়ের সঙ্গে এক্সফোলিয়েটর হিসেবেও কাজ করে। এ ছাড়া অ্যাকনের সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগে থাকলে কিন্তু এই ফেশিয়াল ক্লদ এক্সিলেন্ট সল্যুশন হতে পারে।
রিইউজেবল মেকআপ ওয়াইপ
মাইক্রোফাইবার ক্লদিংয়ের সঙ্গে যোগ হচ্ছে পরিবেশবান্ধব আরও একটি বিউটি প্রোডাক্ট। ২০২৪ সালে এই রিইউজেবল প্রোডাক্ট হতে পারে এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি গেম চেঞ্জার।
ব্যাম্বু ফাইবার এবং অর্গানিক কটন থেকে তৈরি এই ওয়াইপ রেগুলার কটন প্যাড থেকে বেশি কার্যকরী হতে পারে। শুধু জানতে হবে সঠিক উপায়ে এর ব্যবহার। এ ছাড়া রেগুলার কটন প্যাডের তুলনায় এই ওয়াইপ দেখতে কিছুটা ফ্যান্সি। চাইলে ওয়াশরুমের ডেকর এবং বিউটি প্রোডাক্টগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চাহিদা অনুযায়ী কাস্টম মেইডও করে দেওয়া যাবে।
শ্যাম্পু এবং হ্যান্ড ওয়াশ রিফিল
রেস্টুরেন্টগুলোতে নিজের মগ সঙ্গে নিয়ে যেভাবে কফি রিফিল করা যায়, ঠিক তেমনি অনেক বিউটি শপ এখন পরিবেশবান্ধব এই আইডিয়াকে সাদর গ্রহণ করতে শুরু করেছে। ওয়াশরুমের বাড়তি প্লাস্টিক ব্যবহার কমাতে যোগ দেওয়া যায় এই দলে। সেলার হয়ে থাকলে ব্যবসার ক্ষেত্রে এই দারুণ উপায়কে প্রমোট করা যেতে পারে। অর্থাৎ ক্রেতাকে অনুপ্রাণিত করা যায় যেন অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার না করেন, কিংবা নতুন পণ্য কেনার সময় তিনি যেন রিফিলের বিষয়টি প্রাধান্য দেন। এটি যে শুধু পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে তা নয়, বরং পছন্দের প্রোডাক্টের ক্লোনিং হওয়া থেকেও বাঁচাবে।
সৌন্দর্য রক্ষায় পরিবেশের সঙ্গে তালমিল রাখতে চাইলে পরিবর্তন প্রয়োজন আমাদের রেগুলার লাইফস্টাইলেও। তাই বলে ঘরে থাকা সবকিছু ছুড়ে ফেলতে হবে, ব্যাপারটি তেমন নয়। প্রকৃতিবান্ধব প্রোডাক্ট ব্যবহারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়াই ভালো। নেচার-ফ্রেন্ডলি লোকাল শপগুলোকে প্রমোট করা যেতে পারে, যা উৎসাহিত করবে নতুন উদ্যোক্তাদের। ক্রেতার পকেটের জন্যও সহনীয় হবে।

 বিদিশা শরাফ
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top