skip to Main Content

মনোজাল I গ্রে হেয়ার ডোন্ট কেয়ার

পুরুষের মাথায় এর উপস্থিতি মানেই প্রাপ্তবয়স্কের প্রতীক আর নারীর মাথায় উঁকি দিলেই পাকনা বুড়ির তকমা—নট ফেয়ার! নতুন করে বিউটি স্ট্যান্ডার্ড সেট করার সময় চলছে কিন্তু

ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘আই ডোন্ট হ্যাভ গ্রে হেয়ার, আই হ্যাভ উইসডম হাইলাইটস’। যার অর্থ অনেকটা এমন, ‘আমার ধূসর চুল নেই, এগুলো আসলে আমার প্রজ্ঞার নিশানা’। মন্দ নয় কিন্তু। পাকা চুল নিয়ে কেউ কটাক্ষ করলে তার উপযুক্ত জবাব। একসময় চুল পাকতে শুরু করলে সেটিকে বয়সের লক্ষণ বলে মনে করা হতো। সে সময় গত হয়েছে অনেক আগে। পরিবেশ, খাদ্য ইত্যাদি নানা কিছুর প্রভাবে আজকাল ত্রিশের পর থেকে অনেকের চুলের রং ধূসর হতে শুরু করে। তাতে কি। নিত্যনতুন হেয়ার কালার, কেয়ার টেকনিক আর হেয়ার প্যাকের কল্যাণে আবার সত্তরেও চুলে বয়সের কোনো ছাপ দেখা যাবে না; তার ব্যবস্থাও হাতের নাগালেই রয়েছে। আসলে বিষয়টা হচ্ছে, এই যে চুলের রং ধূসর হতে শুরু করলেই অনেকে বিব্রতবোধ করেন বা হেয়ার কালার দিয়ে সেটিকে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা চালান, তার কি আসলে কোনো মানে আছে?
সারা বিশ্বে চুল পেকে যাওয়া মানে ফুরিয়ে যাওয়া বা বুড়ো হতে শুরু করা—এই কনসেপ্ট আমূল বদলে গেছে; বরং সেখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গ্রে হেয়ার ডোন্ট কেয়ার নীতি। আমেরিকান সুপারমডেল ক্রিস্টেন ম্যাকমেনামির কথা মনে আছে? ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যিনি তার দর্শনীয় সাদা চুল দেখিয়ে বছরের সেরা মডেল নির্বাচিত হয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু #grayhair টাইপ করলেই দেখা যাবে, টিকটকে সেটির প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন ভিউ ছাড়িয়ে গেছে। আর #grayhairdontcare এর ভিউ এরই মধ্যে পৌঁছেছে দেড় শ মিলিয়নে। তার মানে, মানুষ এই কনসেপ্টকে দারুণভাবে গ্রহণ করেছে। আর এর কল্যাণেই ধূসর চুল তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও হট শেড হিসেবে আকর্ষণীয় ও পছন্দসই হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাদামি, সোনালি, লাল বা কালো চুলকে রুপালি টোনে রূপান্তর করে নেওয়া এখন রীতিমতো স্টেটমেন্ট। একসময় বিউটি ফো পা হিসেবে সমালোচিত ধূসর চুল এখন তার উপযুক্ত সম্মান পাচ্ছে; কিংবা বলা যায়, এক অর্থে সেই সমালোচনার প্রতিশোধ নিচ্ছে। কারণ, কিছুদিন আগেও যখন একজন নারী খোলাখুলিভাবে তার চুল ধূসর হতে দিতেন বা দেখিয়ে বেড়াতেন, তখন এটিকে অশোভনতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। অন্যথায়, হাল ছেড়ে দেওয়ার লক্ষণ বলেও মনে করা হতো। অর্থাৎ তিনি তার লুকের ব্যাপারে একেবারেই সচেতন নন। পুরো ব্যাপারটি যেন উল্টে গেছে এখন। কারণ, ট্রেড-সেটার সেলিব্রিটিরাও ইদানীং চুলের প্রাকৃতিক রংকেই সমর্থন করছেন। চুলের রং নিয়ে মাথাব্যথা, লজ্জা বা ইতস্ততবোধ করছেন না একদমই। পাকা চুল পাত্তা পাচ্ছে না আরকি! বরং সেটিকে প্রকাশ করেই প্রদর্শিত হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। তাই একসময় যেটিকে যেকোনো মূল্যে দমনের চেষ্টা করা হতো, যত্নের অভাব বা বার্ধক্যের সাধারণ সত্যের সমার্থক বলে মনে করা হতো, সেটি এখন হয়ে উঠেছে সত্যবাদিতা আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
এই পরিবর্তন আসলে মহামারি চলাকালীন শুরু হয়েছিল। বলা বাহুল্য নয়, এটি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে মূলত সেলিব্রিটিদের কল্যাণে। পরবর্তীকালেও তাদের উৎসাহ অব্যাহত রয়েছে; কারণ, তারা তাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্যে আর দ্বিধান্বিত নন। কয়েক দশক ধরে একই রকম চেহারা ধরে রাখার কিছু অলিখিত নিয়ম থেকে মুক্ত হতে শুরু করেছেন সৌন্দর্যসচেতনেরা। এর কারণ হিসেবে গবেষকেরা ২০২০ সালের প্রথম লকডাউনের সময় হেয়ার সেলুনগুলো বন্ধ হওয়ার কারণে সৃষ্ট আতঙ্ককে দায়ী করছেন। তখন সবচেয়ে ভাগ্যবানকেও একটি অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য সম্ভবত চার বা পাঁচ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতো। তখনই সেলিব্রিটিরা বুঝতে শুরু করেন, চেহারায় যৎসামান্য বার্ধক্যের ছাপে সমাজের তো আর কোনো ক্ষতি হচ্ছে না; বরং প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক নিয়মকে মেনে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। তার পরপরই অনেকে তাদের ধূসর চুলকে নিজেদের অংশ হিসেবে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। যথারীতি তারকামুগ্ধ সমাজও তাদের সঙ্গ ধরে সেই পথে হাঁটতে শুরু করে।
গত কয়েক বছরে তাই ধূসর চুল সৌন্দর্যের শত্রু থেকে সত্যিকারের মিত্রে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত সেলিব্রিটিরা লালগালিচা আর টেলিভিশনের পর্দা মাতাচ্ছেন চুলের এই শেড নিয়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় হ্যালি বেরি, সারা জেসিকা পার্কার, অ্যান্ডি ম্যাকডোয়েলের কথা। ২০২১ সালের জুলাই মাসে ল’রিয়েল প্যারিসের মুখপাত্র অ্যান্ডি ম্যাকডোয়েল কান চলচ্চিত্র উৎসবে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন। সেখানে রেড কার্পেটে ধূসর কার্ল হেয়ারের একটি দর্শনীয় ক্যাসকেড পরনে দেখা যায় তাকে। তার কল্যাণেই এই সামান্য ব্যাপারটি রীতিমতো একটি ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। বিখ্যাত সব নারীভিত্তিক পত্রিকা শিরোনাম পর্যন্ত করেছে এ নিয়ে। এর আগে মাত্র কয়েকজন নারী সেলিব্রিটিকে লালগালিচায় তাদের সাদা চুল দেখানোর মতো ‘সাহসী’ ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছিল। প্রতিবারই মিডিয়ার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়েছে তাদের ঘিরে। যা পরবর্তীকালে অনুসরণীয় উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। ধীরে হলেও কিন্তু সুনিশ্চিতভাবে, ধূসর চুল সমাজের মধ্যে এমন একটি স্থান দখল করতে শুরু করে, যা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নারীর প্রতি বাড়তি সম্মান বা মনোযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তাই পাকা চুল মানেই যৌবন ফুরিয়ে যাওয়ার লক্ষণ, সেটি এখন আর আদতে সত্য নয়। মনে রাখা চাই, যেকোনো বয়সে স্বাভাবিকভাবে ধূসর চুল দেখা দিতে পারে। সেটি একজন সাধারণ গৃহিণী থেকে শুরু করে টেলিভিশনে এবং মিডিয়ার উদ্যমী, পেশাদার, সক্রিয়, আড়ম্বরপূর্ণ অতি আবেদনময়ী নারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেখানে হ্যালি বেরি, সারাহ জেসিকা পার্কার থেকে জেন ফন্ডা, গুইনেথ প্যালট্রো এবং জোডি ফস্টারের মতো বহুপরিচিত ব্যক্তিত্ব তাদের ধূসর চুলকে রীতিমতো ভালোবেসে গ্রহণ করছেন সেখানে আর কেন পিছিয়ে থাকা? চুলের ধূসরতা ঢেকে বয়স না কমিয়ে বরং তাকে গ্রহণ করার মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হচ্ছে প্রজ্ঞা আর আত্মাভিমান।

 রত্না রহিমা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top