skip to Main Content

তনুরাগ I বাম্প টু ব্লিস

কনসিভের পর থেকে সন্তানের জন্ম অবধি—পেটের পাল্টে যাওয়াটাই চোখে পড়ে বেশি। আগাম মানসিক প্রস্তুতির পাশাপাশি তাই থাকা চাই বেসিক বাম্প কেয়ার প্ল্যানও। ত্বকের সৌন্দর্য পুনরুদ্ধারে

গর্ভকাল। নারীর জীবনের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ পর্ব। যার পুরোটা সময় অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। দেহের ভেতরে নতুন জীবনের বেড়ে ওঠার মতো কঠিন কাজকে সম্ভব করার জন্য পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শরীর ও মনকে প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হয়। তবে এত সব পরিবর্তনের মাঝে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে পেটের পাল্টে যাওয়া।
পরিবারে নতুন সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তুতি যখন পুরোদমে—বিশেষ এ মুহূর্তে হবু মায়েদের নিজের শারীরিক পরিবর্তনগুলোকেও সাদরে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকা চাই। গর্ভকালের শুরু থেকেই একজন নারীর সব ধরনের জল্পনাকল্পনা যেন নিজের বেবি বাম্প ঘিরে। ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের নড়াচড়া বাড়তে থাকে, সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কও তত গভীর হতে থাকে। বেবি বাম্পে হাত বোলানো কিংবা বাম্পের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারটা থাকলেও বাহ্যিক পরিবর্তনগুলোর যত্ন নিতে একদম ভুলে যান অনেকে। গর্ভাবস্থায় পেটের ত্বকে স্ট্রেচ মার্ক কিংবা অন্যান্য দাগের পাশাপাশি চামড়া ঝুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ খুবই স্বাভাবিক। তবে গর্ভকালীন থেকে একটু সতর্ক থাকলে এবং বাচ্চা হওয়ার পরেও কিছু খুঁটিনাটি মেনে চললে পেটের ত্বক ঠিক আগের মতোই ফিরে পাওয়া সম্ভব।
গর্ভাবস্থায় পেটের বাড়ার ব্যাপারটা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। এই সময় গড়ে একজন নারীর ৩০ পাউন্ড অব্দি ওজন বাড়তে পারে। বাড়তি ওজনের সঙ্গে বাড়ে পেটও। আর সম্ভাব্যভাবেই তার চিহ্নগুলো পষ্ট হয়ে ওঠে। এ ছাড়া প্রেগন্যান্সিতে প্রায় সব নারীরই পেটের মাঝ বরাবর একটি কালো রেখা তৈরি হয়, যা লিনিয়া নিগ্রা নামে পরিচিত। প্রেগন্যান্সির অন্যান্য চিহ্নের পাশাপাশি এই রেখাও খুব স্বাভাবিক। যা রয়ে যেতে পারে বহুদিন। আর সন্তান প্রসব যদি সি সেকশন হয়, তবে এসবের সঙ্গে যুক্ত হয় সার্জারির দাগ। তাই অনেকের ধারণা, যেহেতু জরায়ু ও পেটের ত্বক প্রসারিত হচ্ছে, এই পরিবর্তনগুলো শুধু গর্ভাবস্থাতেই সীমাবদ্ধ। তবে শিশু জন্ম দেওয়ার পরেও এসব অংশে পরিবর্তন হতে থাকে। তাই প্রয়োজন অনুসারে যত্ন নিতে হবে। প্রেগন্যান্সি চলাকালীন এবং এর পরেও।
গর্ভাবস্থায় প্রায় সব নারীই নানা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তবু অনাগত শিশুর সঙ্গে বাড়তি কিছু সময় কাটানো, সম্পর্কটা আরও গভীর করে তোলার ক্ষেত্রে বেবি বাম্প কেয়ার হতে পারে একটি দুর্দান্ত প্রক্রিয়া। তবে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে শরীর ও ত্বকের কিছু উপাদান নিয়ন্ত্রণের বাইরে। স্ট্রেচ মার্কগুলো অনেকের ক্ষেত্রে জেনেটিক হতে পারে, তাই সব ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও অনেক সময় কিছুটা হলেও দাগ পড়ে যেতে পারে। তখন মনে হতে পারে, স্ট্রেচমার্ক প্রতিরোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কিংবা কোথাও ভুল হয়েছে, যা হয়তো ঠিক নয়।
যাদের ত্বক স্ট্রেচমার্কপ্রবণ, তারা দুনিয়ার তাবৎ ত্বকযত্নের কৌশল এক করে ফেললেও এ থেকে রেহাই মিলবে না। যদি আগেভাগে ত্বককে প্রস্তুত করে নেওয়া যায়, এগুলো সারাইয়ের ভালো সুযোগ থাকবে। তাই একটি যথাযথ বাম্প কেয়ার রুটিনের বিকল্প নেই।
এক্সফোলিয়েট
যেকোনো ধরনের স্কিন কেয়ার রুটিনের প্রথম দিককার ধাপ হলো এক্সফোলিয়েশন। যেন ত্বকে জমে থাকা মৃতকোষ, ময়লা কিংবা ব্যাকটেরিয়া দূর হয়ে যায়। পাশাপাশি পরবর্তী সব ধাপের জন্য ত্বক প্রস্তুত হয়ে ওঠে। গর্ভাবস্থায় পেটের ত্বক এমনিতেই খুব সংবেদনশীল থাকে, তাই এক্সফোলিয়েশনের নামে খুব বেশি ঘষামাজা করা ঠিক হবে না; বেছে নেওয়া চাই খুবই মৃদু কোনো এক্সফোলিয়েটর। এ ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন গোমাজ পিলিং প্রক্রিয়া। এনজাইম বা ফলের অ্যাসিড দিয়ে তৈরি মৃদু এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করা হয় এ ক্ষেত্রে, যা ত্বকের জন্য কোমল। এ ছাড়া ব্যবহার করা যেতে পারে কনজ্যাক স্পঞ্জ বা আলফা-হাইড্রক্সি অ্যাসিডযুক্ত যেকোনো এক্সফোলিয়েটর। পেটের ত্বক এক্সফোলিয়েশন সপ্তাহে একবারই যথেষ্ট। যেহেতু বিশেষ এ সময়ে এ অংশের ত্বক নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়, এমন অবস্থায় সপ্তাহে একবারের বেশি এক্সফোলিয়েট করা ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
ময়শ্চারের সঞ্চার
বেবি বাম্প কেয়ারের পরবর্তী ধাপ পেটের ত্বকে পর্যাপ্ত আর্দ্রতার জোগান। যেন ব্যবহৃত অন্য যেকোনো উপাদান খুব সহজে শুষে নেয় ত্বক। প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্রতা তৈরি করার কিছু উপায় রয়েছে। গোসলের পর শাওয়ার থেকে বেরিয়ে আসার আগে কিছুক্ষণ বেশি তাপমাত্রায় শাওয়ার চালিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে বাথরুমে বাড়তি কিছুটা বাষ্প তৈরি হবে, যা ত্বকে আর্দ্রতা জোগাবে। একটি পরিষ্কার পাতলা কাপড় গরম পানিতে ডুবিয়ে খুব ভালো করে চিপে নিয়ে তা আলতোভাবে পেটে বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এই উপায়েও ত্বকে আর্দ্রতার সঞ্চার হবে। প্রক্রিয়া যা-ই হোক না কেন, বেবি বাম্পে ব্যবহৃত যেকোনো প্রডাক্ট যেন ত্বক ভালোভাবে শুষে নেয় এবং পরবর্তীকালে সেই ময়শ্চার ধরে রাখতে পারে, এটা নিশ্চিত করাই মূল উদ্দেশ্য।
হাইড্রেটিং
বেবি বাম্পের হাইড্রেশন এর যত্নের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ধাপ। পেটের ত্বককে পুষ্ট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা ক্রিম কিংবা বা তেল, যা দিয়েই হোক। হাইড্রেশনের জোগান ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ও মসৃণতা বাড়াতে পারে। হায়ালুরনিক অ্যাসিডের মতো হিউমেক্ট্যান্ট রয়েছে এমন পণ্য ব্যবহার করেও ত্বককে হাইড্রেটেড করে তোলা যেতে পারে। এ ধরনের প্রোডাক্ট ত্বকের প্রাকৃতিক ময়শ্চার লেভেলের সংস্পর্শে এসে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা সংগ্রহ করতে পারে। তাই পেটে স্টিম কিংবা গরম কাপড় দিয়ে ভাপ নেওয়ার পরপরই হাইড্রেশনের জন্য ভালো পণ্য ব্যবহার জরুরি। টোনার, এসেন্স, সেরাম বা অন্য যেকোনো হালকা তরল রূপে এগুলো মিলবে বাজারে। এমনকি হায়ালুরনিক অ্যাসিডযুক্ত ফেস মিস্টও ব্যবহার করা যায় এ সময় বেবি বাম্পে। এটি খুব সহজ উপায়ে এবং দ্রুততম সময়ে এই অংশকে হাইড্রেটেড করে তুলতে পারে।
ময়শ্চার লকিং
বেবি বাম্পের যত্নের শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ময়শ্চার লক করা। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং ত্বক কোমল রাখতে ভালো মানের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতেই হবে। এটি হতে পারে তেল, ক্রিম, বাম কিংবা এমলিয়েন্ট রূপে। লিপিড কিংবা সিরামাইডযুক্ত ময়শ্চারাইজার বেছে নিতে পারলে আরও ভালো। ওয়াটার বেসড ময়শ্চারাইজার এড়িয়ে বেছে নেওয়া যেতে পারে অয়েল বেসড ময়শ্চারাইজার। কেননা ওয়াটার বেসড ময়শ্চারাইজার ত্বকের ওপরে একই প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করতে পারে না। ময়শ্চারাইজার হাতে নিয়ে খুব আলতোভাবে পুরো পেটে মাসাজ করতে হবে। ওপর দিকে ব্রেস্টের নিচ, এবং নিচের দিকে হিপ এরিয়ার ওপর পর্যন্ত। মনে রাখা জরুরি, গর্ভাবস্থায় পেটের ত্বকের পাশাপাশি অনেক লিগামেন্টও প্রসারিত হতে শুরু করে। এই মাসাজের মাধ্যমে লিগামেন্টে বাড়তি আরাম পৌঁছাবে। কোকোয়া বাটারযুক্ত পণ্য বেবি বাম্পের জন্য বেশ কার্যকরী।
মাঝে মাঝে পেটে শিট মাস্কের ব্যবহার পেটের ত্বককে অতিরিক্ত হাইড্রেশন জোগাতে কাজ করতে পারে। এটি পেটে একটি সতেজ অনুভূতিও দেবে। এর ব্যবহার দুই মাসে একবার করাই যথেষ্ট। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়! বেবি বাম্প যত বড় হয়, ত্বক তত প্রসারিত হতে থাকে। তাই অনেক সময় বেবি বাম্পে চুলকানি হতে পারে। চেষ্টা করতে হবে এ সময় কোনোভাবেই যেন নখের আঁচড় না লাগে। এতে স্ট্রেচ মার্ক বেড়ে যেতে পারে। বাচ্চা হওয়ার পর এই স্কিন কেয়ার রুটিন ছেড়ে দিলে চলবে না; বরং এর সঙ্গে যোগ করতে হবে নিয়মিত এবং পরিমিত ব্যায়াম, যা পেটের ঝুলে যাওয়া ত্বক থেকে মুক্তি দেবে।

 শিরীন অন্যা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস আর্কাইভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top