skip to Main Content

অর্গানিক I মনসুন ফেসপ্যাক

হঠাৎ বৃষ্টি আর আচমকা রোদের দিনগুলোয় ত্বক চায় অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে ভিন্ন যত্নআত্তি। তেমন কিছু ফেসপ্যাকে এই চাহিদা পূরণ হতে পারে

বর্ষার শুরু থেকেই গরম আর রোদের প্রভাব কমতে থাকে বলে ত্বকের যত্ন না নিলেও চলবে, এমনটা ভাবা ভুল। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে যায় রূপচর্চার ধরনও। ত্বকের যত্নে তাই প্রয়োজন বর্ষায় মানানসই ফেসপ্যাক।
গরম কিংবা শীতকালে আমরা ত্বকের প্রতি যতটা যত্নশীল, তার অনেকটাই বর্ষাকালে বজায় রাখি না। কিন্তু এই মৌসুমে আমাদের ত্বক ধরনভেদে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। ত্বকের স্যাঁতসেঁতে ভাব, ঘেমে যাওয়া কিংবা ময়লা আটকে থাকা— সব ধরনের ত্বকেই এ সমস্যাগুলো দেখা যায় এই ঋতুতে। আচমকা বৃষ্টিতে ঠান্ডা নয়তো হঠাৎ দুপুরের রোদ বা গরম ঋতুটির প্রধান একটা বৈশিষ্ট্য। এমন অবস্থায় ত্বকের জন্য চাই অতিরিক্ত যত্ন। এমনকি ত্বকের ফোলা ভাব, অ্যালার্জি কিংবা অন্য যেকোনো সমস্যা সমাধানের দিকে খেয়াল রেখে ঠিক করতে হবে জুতসই স্কিনকেয়ার রুটিন আর ফেসপ্যাক।
ব্যানানা ফেসপ্যাক
কলা খুবই উপকারী, বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য। একটা পাকা কলার সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবু এবং এক টেবিল চামচ মধু খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এই ফেসপ্যাক মুখে আর গলায় লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এরপর ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এটা হাত কিংবা পায়েও ব্যবহার করতে পারেন। এই ফেসপ্যাক ত্বকের পোর খুলতে সাহায্য করবে আর স্কিন এক্সফোলিয়েট করবে। এ ছাড়া ত্বক থেকে মরা কোষ সরিয়ে দিতেও এই প্যাক বেশ কার্যকর।
হলুদ-চন্দনের ফেসপ্যাক
কাঁচা হলুদ আর চন্দনের সঙ্গে গোলাপজলের তৈরি এই ফেসপ্যাক কমবেশি সব স্কিনেই মানিয়ে যায়। চন্দনের গুণাগুণ প্রাকৃতিকভাবে অ্যাকনের সমস্যা সমাধানের একটি বড় উৎস। আর ত্বকের জ্বালাপোড়া কিংবা অন্যান্য সমস্যার জন্য কাঁচা হলুদ কাজ করে অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে। গোলাপজল ত্বকের নিষ্প্রাণ ভাব দূর করে। কাঁচা হলুদ বেটে এর সঙ্গে পরিমাণমতো চন্দন আর গোলাপজল মিশিয়ে নিতে হবে, যাতে ক্রিমের রূপ নেয়। মুখে লাগানোর পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
পেঁপের স্ক্রাব
প্রাকৃতিকভাবে স্কিন এক্সফোলিয়েটের কাজে ব্যবহার করুন পেঁপের স্ক্রাব। পাকা পেঁপের সঙ্গে ব্রাউন সুগার আর ওটমিল মিশিয়ে বানিয়ে নিন স্ক্রাব। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে চিনি গলে না যাওয়া পর্যন্ত ঘষে নিন। ব্রাউন সুগার আপনার ত্বককে দেবে সঠিক এক্সফোলিয়েশন আর পেঁপের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট করবে পরিষ্কার আর কোমল।
বেসনের ফেসপ্যাক
শুষ্ক ত্বকের জন্য বেসনের প্যাক খুব উপকারী। তিন টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর ১-২ চামচ গ্রিন টি মিশিয়ে নিন পরিমিত ঘনত্ব বজায় রেখে। মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ বর্ষার স্যাঁতসেঁতে ভাব থেকে সৃষ্টি হওয়া ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করে। এই প্যাকের সঙ্গে ৪-৫ ফোঁটা রোজ অয়েল মিশিয়ে তা মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। তারপর একটু ভিজিয়ে ঘষে ঘষে তুলে ফেলতে হবে।
আলুর প্যাক
এই মৌসুমে ত্বক যদি অ্যাকনের সমস্যায় ভুগতে থাকে, তবে এই প্যাক সহজ সমাধান। আলু কুচি করে এর রস নিন। ২ টেবিল চামচ গোলাপজল আর ১ টেবিল চামচ লেবুর রস এতে মিশিয়ে নিন। আলুর রস ত্বকের দাগ ত্রুটি আর চুলকানো ভাব দূর করে। লেবুর রসের গুণাগুণ অ্যাকনে রোধে সহায়ক। আর গোলাপজল ত্বক ঠান্ডা রেখে লালচে ভাব দূর করে। এই মিশ্রণ ৩০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
ওটমিল আর ডিমের প্যাক
তিন টেবিল চামচ ওটমিলের সঙ্গে একটা ডিমের সাদা অংশ, এক টেবিল চামচ টক দই আর মধু মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এরপর ভালোভাবে মুখমন্ডল পরিষ্কার করে এই পেস্ট তাতে লাগিয়ে নিন। আধা ঘণ্টা পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সঠিক ফল পেতে সপ্তাহে দুবার এই প্যাক ব্যবহার করুন। ডিমের সাদা অংশের পরিবর্তে গোলাপজল দিয়েও চলবে। একই মিশ্রণ মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
মুলতানি মাটির প্যাক
একটা পাত্রে তিন টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সঙ্গে পরিমাণমতো গোলাপজল মিশিয়ে নিন। খুব ভালোভাবে মিশিয়ে একটা ঘন প্যাক বানিয়ে নিন, যাতে দানা-দানা না থাকে। এটা সপ্তাহে এক দিন ২০ মিনিটের জন্য মুখে লাগিয়ে রাখুন এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত আর মিশ্র ত্বকে এই প্যাক উপকারী। যাদের ত্বক শুষ্ক, এই প্যাক তাদের জন্য নয়। তবে চাইলে অবশ্যই মুখ ধোয়ার পর ভালো কোনো ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নেবেন।
ফ্রুট মাস্ক
একটা পাত্রে এক ইঞ্চি সমান কলা, আপেল, পিচ এবং স্ট্রবেরির টুকরা নিন। সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু ঢেলে নিন। এরপর সব একটা কাঁটাচামচ দিয়ে মিশিয়ে নিন। অথবা একসঙ্গে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে পারেন। পছন্দের যেকোনো ফল যোগ করে দিতে পারেন এই মিশ্রণে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যে ফলগুলো ব্যবহার করছেন, সবই যেন ফ্রেশ হয়। এই প্যাক মুখত্বকে আধা ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে হালকা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভেতর থেকে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে ত্বক। শুষ্কতা কমবে।
ক্লিনজিং প্যাক
এই মৌসুমে ত্বক একটু সংবেদনশীল থাকে। তাই কেমিক্যালযুক্ত সাবান কিংবা ফেসওয়াশ ব্যবহার না করে বানিয়ে নিতে পারেন ক্লিনজিং পাউডার। সে জন্য বেসন এবং এর অর্ধেক পরিমাণে মেথি গুঁড়া মিশিয়ে নিন। তারপর এতে গোলাপজল মিশিয়ে পুরো শরীরে লাগিয়ে নিন। এই পাউডার একটা পাত্রে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন ৪-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত। এটা ত্বক পরিষ্কার করার পাশাপাশি একটা সতেজ ভাব এনে দেবে।
বৃষ্টির দিনে এই ফেসপ্যাকের প্রভাব ধরে রাখতে এবং ত্বকের সুস্থতায় কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে:
 রোদের ব্যাপকতা এই সময়ে কম থাকে বলে সানস্ক্রিনের ব্যবহার পরিহার করলে চলবে না।
 প্রচুর পানি খেতে হবে, যেহেতু এই আবহাওয়ায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে।
 প্রতিদিন কমপক্ষে ২ থেকে ৩ বার মুখ ধোয়ার চেষ্টা করুন। না হয় ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে।
 বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রডাক্ট ব্যবহার না করে ত্বকবান্ধব প্রাকৃতিক উপাদান ত্বকে ব্যবহার করুন।
 এই মৌসুমে খুব ভারী মেকআপ ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, আর্দ্র আবহাওয়ায় অতিরিক্ত মেকআপ ত্বকের পোরগুলো আটকে দিতে পারে, যা ব্রণের উপদ্রব ঘটাতে পারে।
 বৃষ্টির দিনে ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি ব্রণের একটি বড় উৎস।

 শিরিন অন্যা
মডেল: অন্তরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top