skip to Main Content

টেকসহি I যন্ত্রতন্ত্র

কোন পোশাকে মানাবে আপনাকে? ইন্টারনেটে এত এত অপশন দেখে হিমশিম খাচ্ছেন? চিন্তা নেই। রোবট হাজির! সে-ই বেছে দেবে

শালীনতা রক্ষা এবং ভিন্ন তাপমাত্রায় শরীরকে আরাম দেওয়ার জন্য পোশাকের আবির্ভাব হলেও কালের পরিক্রমায় তা হয়ে উঠছে রুচি, সমাজচিত্র ও ফ্যাশনের প্রতীক। মানুষ এখন মুড, ট্রেন্ড, ফেস্টিভ্যাল—এসব মাথায় রেখে পোশাক বেছে নেন। বিশ্বব্যাপী কয়েক হাজার ডিজাইনার প্রতিবছর বিভিন্ন ঋতুতে নানা পোশাকের ডিজাইন তৈরি করেন এবং স্টাইলাররা ফ্যাশন ট্রেন্ড তৈরি করে দেন। তরুণ-তরুণী তথা ফ্যাশনসচেতন নারী-পুরুষ সেই ট্রেন্ড ফলো করেন।
ইন্টারনেটের আগে প্রিন্ট মিডিয়াই ছিল নতুন স্টাইল সম্পর্কে জানার প্রধান মাধ্যম। বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও পত্রিকা শোভা পেত অনেকে গৃহে। সব ফ্যাশনপ্রেমীর জন্য স্টাইলিংয়ের সর্বোচ্চ তথ্যভান্ডারের দ্বার খুলে দিয়েছে ইন্টারনেট। লক্ষাধিক স্টাইল ও ডিজাইনের ছবি নিমেষে চলে আসে চোখের সামনে। তবে এতেও কিছুটা ঝক্কিতে পড়তে হয়। কোন ধরনের পোশাক নির্বাচন করতে চান স্টাইলিংয়ে, সে জন্য জানা চাই চলমান ট্রেন্ড, পোশাকের ধরন, কালার প্যালেট, ওয়েদার ফোরকাস্ট ইত্যাদি। এর পুরো প্রক্রিয়া করতে হবে আপনাকে, অর্থাৎ নিজের।
মানবসভ্যতার এমন ব্যস্ততম সময়ে অনেকে এই সার্চিং প্রক্রিয়াকেও স্লোমো অর্থাৎ ধীরগতিতে চলা প্রক্রিয়া ভাবছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, শিগগির সবার সামনে এমন একটি প্রযুক্তি আসতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পেয়ে যাবেন ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন স্টাইলিংয়ের মধ্যে বেস্ট স্টাইলিং সাজেশন! আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মুহূর্তের মধ্যে লাখ লাখ বিকল্প স্টাইল চেক দেখাতে পারে। আগে সার্চ করা অপশন থেকে মুড, রুচি, ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী উপস্থাপন করে বেস্ট অপশন। পিন্টারেস্ট এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের মতামত ও অভিজ্ঞতা মিলে যেতে পারে এই তথ্যের সঙ্গে। যেমন ধরুন, পিন্টারেস্টকে এর যৌক্তিক উদাহরণ হিসেবে ধরলে দেখতে পাবেন, আগে সার্চ করা সব তথ্য অনুসারে এটি তার হোম পেজ সাজেশন দেবে। এ ছাড়া ডেটা অনুসারে রেট্রো ও ট্রেন্ডি অপশন সাজিয়ে দেবে। নিমেষে বেছে নিতে পারবেন পছন্দসই অপশন।
বহু বছর ধরে এইচঅ্যান্ডএম এবং লেভিসের মতো ব্র্যান্ডগুলোর অনলাইন সেবাদানকারী স্টাইলিং প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল পারসোনালাইজেশন প্ল্যাটফর্ম’-এর চিফ কাস্টমার অফিসার জেসিলা মারফে জানান, প্রতিনিয়ত তারা তাদের সফটওয়্যারে নতুন নতুন আইডিয়া ইনপুট দিতে থাকেন, যেন কাস্টমাররা সব সময় পছন্দসই ও নতুন ধারণা পেতে সক্ষম হন। পোশাকের মাপ ও ফ্যাব্রিক থেকে শুরু করে স্ট্রেচিং কোয়ালিটিও আপডেট করা হয় দ্রুততার সঙ্গে। অবশ্য, এআই কখনোই স্টাইলিং ও ডিজাইনের মতো সফিস্টিকেটেড শিল্পের বিকল্প হয়ে উঠবে না, বরং ক্রেতা ও ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য সহজ করে তুলবে সবকিছু। তবু বিভিন্ন বয়স, ভৌগোলিক অবস্থান ও সংস্কৃতি এবং চলমান সময়ের পোশাকের সব অপশনই নিমেষে হাতের নাগালে চলে এসেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে।
এ তো গেল বর্তমান সময়ের ফ্যাশনে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সার্চ ইঞ্জিনের উন্নতির প্রভাব, এবার আসা যাক এআইয়ের ভিন্ন এক দিকে। এমআইটির শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি এমন এক রোবট তৈরি করেছেন, শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জড ব্যক্তিদের পোশাক পরিধান করতে যেটি সাহায্য করবে। এর অ্যালগরিদম এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে এটি ব্যবহারকারীর উপকারে আসতে পারে। এমআইটি তাদের প্রজেক্ট শো করার জন্য ব্যবহৃত ইউটিউব পেজে এই রোবটের কার্যকলাপের একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। চাইলে চোখ বুলিয়ে আসুন এই চমৎকার আবিষ্কারের ওপর। বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ এবং শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জড মানুষদের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এমন ব্যবহার নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও কার্যকর। এ ছাড়া ফ্যাশনের জন্যও এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন। স্টাইলারের কমান্ড অনুসারে ম্যানিকিনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কয়েকভাবে পোশাক পরিয়ে ফেলতে সক্ষম এই রোবট। বিভিন্ন ফ্যাশন শোর ব্যাকস্টেজেও মডেলদের ড্রেস চেঞ্জে সময় বাঁচাতে ব্যবহৃত হতে পারে এটি।
এ ছাড়া বিভিন্ন অ্যাপ রয়েছে ইন্টারনেটে, যেখানে দেখে নিতে পারেন কেমন পোশাকে নিজেকে মানাবে, কিংবা স্ক্রিনে সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার মডেলকে, ঠিক যেমনটি বাচ্চাদের বিভিন্ন ড্রেসিং গেমে পুতুলকে সাজানো যায়।
নতুনের কেতনে এবার রোবট এসেছে। ওয়্যারড্রোব সিলেকশনে সাহায্যকারীর ভূমিকাকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছে ফ্যাশন টেক দুনিয়া। সেই আশার বিস্তার কতটা ঘটে, কতটুকুই-বা পাওয়া যায় সুফল, তা অবশ্য সময়ই বলে দেবে।

 নাঈমা তাসনিম
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top