skip to Main Content

ঘরেবাইরে I পুষ্পনৈবেদ্য

ফুল ছাড়া পূজা অকল্পনীয়। আর এ দিয়েই যদি সাজিয়ে তোলা যায় নিজস্ব অন্দর, তাহলে বসবাসের স্থানটিতে মন্দিরের সৌন্দর্য ও পবিত্রতা সঞ্চারিত হয়। লিখেছেন পীযূষ কান্তি সরকার

বেল পাতা, ফুল ও দূর্বাঘাস পূজার প্রধান উপকরণ। মাটি কিংবা ধাতুর তৈরি ঘটও ব্যবহৃত হয়। তা বহমান জল দিয়ে পূর্ণ করা হয়। একে মঙ্গলঘটও বলে। এর মুখে আম্রপল্লব এবং তার উপর একটি ডাব স্থাপন করা হয়। মনে করা হয়, এটি সজীবতার সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেকে ঘরের সৌন্দর্যের জন্য এই ঘট রেখে দেন। আম্রপল্লবের উপর সিঁদুরে ফোঁটা দিয়ে সৌন্দর্য আরও বাড়ানো হয়ে থাকে। পূজার আরেকটি উপকরণ হলো প্রদীপ। প্রদীপের আলো সব অন্ধকার দূর করে বলে একে জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। শুধু ফুল নয়, এর মালাও দেব-দেবীকে সম্মানিত ও সজ্জিত করার মাঙ্গলিক উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের প্রথা রয়েছে। দেবতার আসন সজ্জায় ফুলের সঙ্গে পানও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পানের মধ্যে বিভিন্ন দেবদেবীর অধিষ্ঠান কল্পনা করা হয়। সুপারির কঠিন অংশ আমাদের অলংকারের প্রতীক, যা পূজা শেষে দেবীর উদ্দেশে সমর্পণের প্রথা রয়েছে।
বিভিন্ন উৎসবে অতিথিদের সমাগম ঘটে। বাড়ির শুদ্ধতা বজায় রেখে পূজায় আমরা যে উপকরণগুলো ব্যবহার করি, সেসব দিয়েই ঘর সাজাতে পারি। এতে আমাদের বাড়ির অন্দরে আরও বেশি পূজার আবহ সৃষ্টি হবে।
দক্ষিণ ভারতীয় নারীরা খোঁপায় বেলি ফুল গুঁজে তাদের দিন শুরু করে। ফুল সেখানে কেবল শুধু সাজগোজের উপাদান নয়, প্রাত্যহিক জীবনের অনুষঙ্গও বটে। বেগুনি, লাল, হলুদ রঙের দক্ষিণী শাড়ির সঙ্গে মাথায় সাদা কিংবা কমলা ফুলের মালার সাজই তাদের পরিপূর্ণ করে তোলে। এমনকি নিজেদের বাড়ির প্রাঙ্গণ ও অভ্যন্তর তারা ফুল দিয়ে সাজায়।
পূজায় বিদেশি ফুলের ব্যবহার হয় না, এমনকি গোলাপও নয়। বাড়ির কাছেই পাওয়া যায় মল্লিকা, মালতী, শিউলি। সকালবেলায় কোনো মাটির পাত্রে রেখে দিলে পবিত্রভাবের সৃষ্টি হয়- এমন ধারণা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রচলিত। তা ছাড়া সরু ফুলদানিতে এক গোছা রজনীগন্ধা রাখা যেতে পারে।
দেবদেবীরা যেমন বিভিন্ন ফুলে তুষ্ট থাকেন, তেমনি বিভিন্ন পার্বণভেদে নানা ফুল দিয়ে ঘর সাজানো যায়। ঘরের কয়েকটা জায়গা ফুল সাজানোর জন্য আদর্শ। সদর দরজা দিয়ে ঢুকে সামনের জায়গাজুড়ে বসার স্থানে, ডাইনিংয়ে জায়গায় ফুলের ব্যবহার করা যেতে পারে।
শুদ্ধতা পূজার প্রধান নীতি, ঠিক তেমনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঘর সাজানোর প্রথম শর্ত। অনেকেই ঘুম থেকে উঠে চা হাতে নিয়ে বসে পড়েন। টেবিলের উপরে রাখতে পারেন দুটি মালতী বা শিউলি। ফুল না থাকলে রাখতে পারেন দূর্বা কিংবা বেল পাতা।
আসলে কী সাজাবেন, কোনভাবে সাজাবেন, তার তো কোনো ব্যাকরণ হয় না। আপনার মনের খুশিমতো সাজান। পূজাতে যেমন পুরোহিত মহাশয় কিংবা মা-কাকিমারা মনের মাধুরী মিশিয়ে দেবতাকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করেন, তেমনি নিজের রুচি অনুযায়ী ঘর সাজাতে পারেন।
জ্বলন্ত প্রদীপে সুবিন্যস্ত ফুলে আলোকিত ও সুরভিত অন্দর। বসার ঘরে বহুদিনের পুরোনো ও অব্যবহৃত একটা তামার গ্লাস। এটিতে বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুল ও আমপাতা দিয়ে ঠাকুরঘর কিংবা সিটিং রুমের এক কোণে রেখে দিতে পারেন।
উৎসবের সাজসজ্জার আরেকটি উপাদান হচ্ছে আলপনা। পূজায়ও এটি অপরিহার্য। নানা রকমের নকশা দিয়ে আলপনা করা হয়।
পূজার উপকরণগুলো আমাদের জীবনচর্চা ও সৌন্দর্যবোধের একেকটি প্রতীকরূপে উদ্ভাসিত। এগুলোই যদি আমাদের বাড়ির অন্দরসজ্জায় ব্যবহৃত হয়, তাহলে প্রশান্তিকর ও পবিত্র আবহের মধ্যে বসবাস সম্ভব হয়ে ওঠে।

ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top