skip to Main Content

ফিচার I কালিরার কালান্তর

পাঞ্জাবের বিয়ের প্রথায় আবশ্যকীয় এ অনুষঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে উপমহাদেশের বিস্তৃত ভূখন্ডে। রিচুয়লের আবেদন থেকে সরে গিয়ে যার পুরোদস্তুর গয়না হয়ে ওঠার গল্প বলছেন রুম্পা ফারজানা

এই উপমহাদেশীয় অঞ্চলের মানুষ যখন মিউজিক ভিডিওতে আকৃষ্ট, তখনই পাঞ্জাবি ঘরানার শিল্পী, তাদের গান এবং ঐতিহ্য সবার সামনে চলে আসে। এমনকি ভাষাও! সেটা নব্বই দশকের কথা। ছাইয়া ছাইয়া গানখ্যাত অভিনেত্রী মালাইকা অরোরা তখন সবার নজরে পড়েন পাঞ্জাবি এক মিউজিক ভিডিওর মডেল হয়ে। ‘কুড়ি নাল ইশক মিঠা’ গানে মালাইকাকে দেখা যায় বিদেশফেরত তরুণী হিসেবে। যে আসে পাঞ্জাবি এক বিয়েতে অংশ নিতে। গানের শেষাংশে দেখা যায়, কনে অবিবাহিত সব মেয়ের মাথার উপর তার চুড়ির সঙ্গে ঝুলন্ত ঝুমকাসদৃশ অংশটি নাচাচ্ছেন। যার মাথার উপর পড়বে, সেই হবে পরের কনে। নায়িকার মাথার উপরেই পড়ল সেই কনে হওয়ার সৌভাগ্যের ঝুনঝুনি। যাকে বলা হয় কালিরা। এই গান দিয়ে মালাইকার পাশাপাশি অন্য যে বিষয়টি মাথায় আসে, তা হলো সেই চুড়ি বা বালা। দেখতে ঝুমকার মতো। পাঞ্জাবি ঐতিহ্যের গয়না এই কালিরা। যা এখন উপমহাদেশের বিয়ে উৎসবেরও একটা অংশ হয়ে গেছে। অবস্থানের কারণেই হোক কিংবা সংস্কৃতির জন্য, কালিরার সঙ্গে বাংলাদেশ কমবেশি পরিচিত। প্রায় দুই দশক ধরে এ দেশের বেশির ভাগ কনে গয়নার বাক্সেও কালিরা রাখছেন। এর ইতিহাসটাও জানা জরুরি।
পাঞ্জাবি ঐতিহ্যে শুধু পরবর্তী কনে নির্ধারণের জন্যই এর ব্যবহার হয় না, এতে জড়িয়ে রয়েছে বিদ্যমান কনেরও ভাগ্য। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান, উন্নতি, প্রগতি- সবকিছুই এক-একটা ঝুলন্ত ঝুমকায় বহন করে কনে। ভারতীয় মিডিয়ায় পাঞ্জাবিদের বিশাল প্রভাবের কারণে এই ঐতিহ্য ছড়িয়ে গেছে ভারত পেরিয়ে পুরো উপমহাদেশে।
বিশেষ করে বিয়েতে উপস্থিত মেয়েদের মাথার উপর হাত ঝাঁকিয়ে ভবিষ্যৎ কনে নির্বাচনের আচার এখন এ দেশেও জনপ্রিয়। এ-ও যেন আরেক মজার উপলক্ষ। তাই নানা রকমের পোশাকের সঙ্গে নববধূর হাতে উঠে আসছে বাহারি চুড়ি ও কালিরা।
বিচিত্র রূপে
যেমন দেশ তেমন বেশ- প্রচলিত এই প্রবাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কালিরাও বদলেছে তার রূপ। অবিবাহিত কনেদের ভাগ্য নির্ধারণের পাশাপাশি অনুষঙ্গটি এখন বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রায় অপরিহার্য। অনলাইন ব্যবসায়ী সায়কা নিজের হলুদসন্ধ্যার বালা বানিয়েছিলেন মূল বালার সঙ্গে বাড়তি ঝুমকা ঝুলিয়ে। রাখি পরার যে ঐতিহ্য বাঙালিদের আছে, সেটার সঙ্গেও কালিরার প্রথা মিলে যায়। তাই এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে পাঞ্জাবি রীতির মিলনে আর সময় লাগল না। এখন ফুলের গয়নাতেও বাড়তি অংশ হিসেবে একটা ফুল ঝুলিয়ে দেওয়া হয় কালিরার মতো করে। ইমিটেশনের মালায় অনেকেই যুক্ত করে দেন বাড়তি ঝুমকা। সায়কা বলেন, ‘অনেকেই এমন গয়না বানিয়ে নিতে চান। আমরাও কাস্টমাইজড করে, পছন্দ আর প্রাপ্যতার নিরিখে বালা গড়ে দিই।’
শুধু ফুল নয়, ইমিটেশনের কালিরাও বাংলাদেশে দুষ্প্রাপ্য নয়। নিউমার্কেটসহ স্থানীয় শপিং প্লেসে চুড়ি আর বালার সঙ্গে মিলছে ট্রেন্ডি কালিরা। গয়নার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অর্ডারের ভিত্তিতে কালিরা তৈরি করে দেন স্বর্ণালংকার কারিগরেরা। অনলাইনেও আজ জমজমাট এই গয়নার কেনাবেচা। আছে সিক্স ইয়ার্ড স্টোরি, গ্লুড টুগেদারের মতো অনলাইন কারিগর, যারা নিজেদের রুচিশীল প্রডাক্টের পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী এটা তৈরি করে দিতে পারে।
তবু চাই
বাদ যাবে না একটি অনুষঙ্গও- এ যেন কনেদের পণ। যদিও অনেক ভারতীয়র অভিযোগ, কালিরা তার আসল কৃষ্টি থেকে অনেকটাই দূরে সরে গেছে। এটি এখন শুধুই গয়না। কিন্তু পাঞ্জাবি নিয়ম অনুযায়ী কালিরার ভূমিকা গয়নার থেকে অনেক বেশি। অন্যদিকে আধুনিকমনস্করা মনে করছেন, শুধু গয়না হিসেবে হলেও যদি এটি টিকে থাকে, মন্দ কী!

মডেল: মোহিনি
ওয়্যারড্রোব : সাহার রহমান কতুর
কালিরা: জ্যু’নস্ক বাই বিভা
জুয়েলারি: স্পার্কেল
মেকওভার : পারসোনা
ছবি : সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top