skip to Main Content

ই-শপ I জলপান

বাস্তবতার চাপে রান্না শিখতে হয়েছিল আশরাফকে। যেদিন নিজের তৈরি ডাল তারই এক রুমমেট ময়লা পানি ভেবে ফেলে দেয়, সেদিন থেকেই মনস্থির করেন- ভালো রান্না তাকে শিখতেই হবে। দ্রুতই তিনি তা শিখে ফেললেন যথাযথভাবে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা তার সহধর্মিণীর। দূরে চাকরিরত থাকায় তিনি ফোনে বলে দিতেন, আর আশরাফ সেভাবেই চেষ্টা করতেন। শুধু রান্না শিখেই ক্ষান্ত হননি তিনি, পরিবার ও বন্ধুদের রেঁধে খাওয়ালেন এবং বেশ প্রশংসাও পেলেন। চাকরি করতে করতে ভাবলেন নিজেই কিছু করার কথা। তবে সেটা কী? আর ব্যবসার মূলধনেরই-বা জোগান হবে কোত্থেকে? এমন শত চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে একদিন তারই এক বড় ভাই একটা ফুডকোর্ট দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন। তিনিও খুব ভালো রান্না করতেন। এই ফুডকোর্টের প্রস্তুতি নিতে নিতে আবার ঢাকা কমার্স কলেজের সামনে একটা জুতসই দোকানও পেয়ে গেলেন তারা। দুজনেই নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে শুরু করলেন দোকান আর ফুডকোর্ট। কিন্তু তিন মাস পর দুটোই বন্ধ হয়ে গেল। কারণ, ব্যবসা আর চাকরি একসঙ্গে খুব ভালোভাবে করা সম্ভব নয়। তাই আশরাফ পুরোপুরি চাকরিতে ফিরে গেলেন। এটা ২০১৩ সালের ঘটনা। পার হয়ে গেল দুটি বছর। এদিকে তিনি যেখানে চাকরি করতেন, সেখানে তারই তত্ত্বাবধায়নে ওই কোম্পানির ফেসবুক পেজ ও ই-কমার্স সাইট তৈরি করা হলো এবং বেশ ভালোভাবেই প্রচার ও পণ্য বিক্রয় হতে থাকল। হঠাৎ একদিন তার মাথায় এলো, তিনিও তো রান্না করা খাবার ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারেন। ভাবতে শুরু করলেন নতুন করে। তার কাছে এটি ছিল আরেকটি সন্তান ঘরে আসার মতন। যার নাম তিনি রাখলেন ‘জলপান’। তখন থেকে শুরু, মানে ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর। সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করল ই-শপ জলপান ক্যাটারিং সার্ভিস।
জলপানের শাহিখানা সবচেয়ে জনপ্রিয়। শাহি কাচ্চি বিরিয়ানি, শাহি মোরগ পোলাও, শাহি পোলাও, তেহারি, মোরগ রোস্ট, রেজালা, কালা ভুনা, শাহি জর্দা, শাহি জাফরানি ফিরনি, শাহি টুকরা, মালাই জর্দা, মালাই বুন্দিয়া, বাটার নান, চিকেন তন্দুরি, বোরহানিসহ রয়েছে অনেক আইটেম। নিয়মিত অফিস লাঞ্চেরও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। সপ্তাহে দুদিন গরু, মুরগি, মাছ ও এক দিন ডিম। এক দিন গরুর সঙ্গে খিচুড়ি, মোরগ রোস্টের সঙ্গে পোলাও এবং জর্দা; সঙ্গে প্রতিদিন সবজি/শাক/ভর্তা ও ডাল তো থাকছেই। এমনকি বেকারি আইটেমও রয়েছে। তাতে থাকছে সব ধরনের ফাস্ট ফুড এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য কেক। সঙ্গে কফি। রমজান মাসে জলপানে থাকে ইফতারের সব ধরনের ব্যবস্থা। তাতে জিলাপির পাশাপাশি তিনটি ভিন্ন রকমের হালিমও পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে বিভিন্ন রকমের চা আর জুস নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে প্রতিষ্ঠানটির। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাজারের শ্রেষ্ঠ উপাদান দিয়েই জলপানে তৈরি করা হয় প্রতিটা খাবার। দাম হাতের নাগালে। ২৫০ থেকে ১২৫০ টাকার মধ্যে। রেগুলার লাঞ্চ জনপ্রতি ১১৫ থেকে ১৩০ টাকা। ফাস্ট ফুড ১২ থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা। ৩০ থেকে ৩০০ জনের খাবার অর্ডার করতে হবে কমপক্ষে দুদিন আগে। এর বেশি হলে হাতে রাখতে হবে অন্তত ৫ দিন। শাহিখানার ক্ষেত্রে জলপান ৫০০০ পর্যন্ত মানুষের খাবারের অর্ডার নিয়ে থাকে। লাঞ্চ কিংবা ফাস্ট ফুডের বেলায় এই হিসাব আলোচনাসাপেক্ষ এবং এলাকা অনুযায়ী বিবেচ্য। ঢাকার বাইরে আপাতত শুধু বিয়ের কাজই করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
পেজ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আশরাফুল হায়দার জানান, আপাতত ফুড ফটোগ্রাফি, লাইভ টেলিকাস্ট কিংবা লাইভ রিভিউ নিয়ে ভাবছেন তারা। কোনো রেস্টুরেন্ট দেওয়ার ইচ্ছা এখনই নেই। তিনি আরও জানান, জলপানের শুরু থেকেই বেশ ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিলেন। তিনি আর তার সহধর্মিণী মিলে বাসায় রান্না করে তা মানুষের বাড়ি পৌঁছে দিতেন। তিনি বলেন, জলপানের প্রথম বড় অর্ডার ছিল ১০০ জনের, মেনু ছিল ২ পিস লুচি, সবজি, স্যালাড আর মিষ্টি। মিষ্টিটা ছোট বোন করে দিল। আমি সবজি রান্না করলাম, সারা রাত আমার স্ত্রী বেলুন-পিঁড়িতে লুচি বানাল আর আমি ভাজলাম। ভোর ৫টায় ডেলিভারি দিলাম, তারপর দুই দিন দুজনেরই সারা শরীর ব্যথা ছিল, তাতে কী, ওটাতেই মহা আনন্দিত। এভাবেই ‘জলপান’ বড় হতে লাগল। অনেক চড়াই-উতরাই পার করে এটি আজ একটি বিশাল পরিবার। পাঁচ খাবারের আইটেম নিয়ে শুরু করা জলপানের খাবারের সংখ্যা এখন দুই শর বেশি। নিজস্ব কিচেন আছে তিনটি। আশরাফের কাছে মানুষের ভালোবাসা ও আস্থাই বড় প্রাপ্তি। জলপানের ফেসবুক পেজ: https://www.facebook.com/jolpancatering/

 শিরীন অন্যা
ছবি: জলপান ও ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top