ইভেন্ট I জন্টার শতবর্ষ
সংস্থাটির ১০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠিত হলো উৎসবের আমেজে। চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। তাতে ছিল সফল নারীদের পদচারনা
বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে ‘জন্টা ইন্টারন্যাশনাল’। প্রতিষ্ঠানটি আয়োজন করেছে শতবর্ষপূর্তি উদযাপনের। প্রথম পর্যায়ে ১৫ নভেম্বর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে হয় জমকালো অনুষ্ঠান। তত্ত্বাবধানে ছিলেন আহমেদ নেওয়াজ। মেকওভার পার্টনার পারসোনা। সন্ধ্যা থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনার, ফ্যাশনবোদ্ধা, সাংবাদিকসহ অন্যদের পদচারণে চিটাগাং ক্লাব ছিল সরগরম।
জন্টার সাবেক সভাপতি ফারাহ নাজ কাইয়ুম ও মেহবুবা আহসান সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন। শুরুতেই বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জন্টা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দিলরুবা আহমেদসহ ইয়াসমিন খান, শারমিন হুসাইন, গুলশান চৌধুরী, ফারাহ নাজ কাইয়ুম, মাহবুবা আহসান। সাবেক সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন চট্টগ্রামসহ দেশের সফল নারী উদ্যোক্তারা। বর্ষপূর্তির এই সন্ধ্যার অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল বিশিষ্টজনদের নিয়ে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক আয়োজন ও ফ্যাশন শো। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর শুভেচ্ছা জানান অতিথিরা। প্রদীপ জ্বালিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় জন্টার শতবর্ষের কার্যক্রম। মঞ্চে ছিল নৃত্যজগতের পরিচিত মুখ সঞ্চিতা দত্ত ও স্বপন বড়ুয়ার পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অংশ হিসেবে জন্টা ইন্টারন্যাশনালের চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশের প্রথম ইংলিশ মিডিয়াম বিদ্যালয় লিটল জুয়েলের প্রতিষ্ঠাতা দিলরুবা আহমেদকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে অবদানের জন্য কানিজ আলমাস খান, ফ্যাশনে ডিজাইনার আহমেদ নেওয়াজ এবং কোরিওগ্রাফিতে সালেহ রবি জনকে সম্মাননা দেওয়া হয়। নিজেদের কাজে বিশেষ সাফল্যের অংশ হিসেবে এলমা পারু, বান্দরবানের বুমাং রাজার মেয়ে ডু নেয়লি প্রু, বাংলাদেশের পতাকা হাতে শতাধিক দেশ ঘুরে বেড়ানো নাজমুন নাহারকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। সফল ডিজাইনার হিসেবে আমিনা রহমান, ফারজানা মালিক, আইভি হাসান, নাসরিন মেঘলা, নূর এ জান্নাত, নুজহাত কৃষ্টি এবং সুলতানা রজিকে দেওয়া হয় শুভেচ্ছা সম্মাননা।
সবশেষে আয়োজন করা হয় ফ্যাশন শোর। ‘সম্মান এবং ক্ষমতায়ন’ থিমে আয়োজিত এই ফ্যাশন শোতে অংশ নেন ৭ ডিজাইনারসহ ফ্যাশন হাউস ‘লেববাস’।
শতবর্ষপূর্তির এই অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয় ঢাকায়ও। ২৩ নভেম্বর শনিবার ভাটারার একটি পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে জন্টা সেন্টানিয়েল ইভেন্ট। এতে অংশ নেয় জনটা ক্লাবের ঢাকা ১, ২, ৩, ৪ এবং গ্রেটার ঢাকা সংগঠনগুলো। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। অনারেবল গেস্ট ছিলেন বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট রুবানা হক এবং সেন্টানিয়েল অ্যানিভার্সারি অ্যান্ডোমেন্ট ক্যাম্পিংয়ের রিজিওনাল রিপ্রেজেন্টেটিভ দিলরুবা আহমেদ। এ ছাড়া জন্টার সঙ্গে যুক্ত সফল নারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যার শুরুতে বিশিষ্ট অতিথিরা মঞ্চে উঠে মোমবাতি জ্বালিয়ে ১০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানকে দীপ্তিময় করে তোলেন। ওড়ানো হয় বেলুন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে জন্টা ক্লাবের সদস্যরা সংস্থাটির পতাকা তুলে ধরেন। স্বাগত বক্তব্য দেন ফ্যাশন ডিজাইনার এবং ইভেন্ট প্ল্যানার তুতলী রহমান। তিনিই এই অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক। একে একে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট অতিথিরা। প্রধান ও অন্যান্য অতিথির বক্তব্য শেষে কেক কাটা হয়। সেন্টানিয়েল ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে সেদিন। এরপর নিজ নিজ ক্ষেত্রে কৃতী নারীদের অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। পড়ে শোনানো হয় পুরস্কৃতদের জীবনবৃত্তান্ত।
অনুষ্ঠানে ‘আ ভিন্টেজ অ্যাফেয়ার’ নামে একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল। তাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন রচনায় ফুটে ওঠা নারী চরিত্রকে বাস্তব রূপ দিয়ে মঞ্চে প্রদর্শন হয়। চরিত্রগুলো হচ্ছে আশালতা, চপলা, কাদম্বরী, শ্যামা, কেতকী, কমলা ও মনিহারা। এ সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে রবীন্দ্রসংগীত চলছিল। চরিত্রগুলোর রূপসজ্জার দায়িত্বে ছিল পারসোনা। পরে ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’ আয়োজনে মডেলরা পুরোনো জনপ্রিয় গানের সঙ্গে নেচে দর্শক মাতিয়ে তোলেন। অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় অংশ ছিল জন্টার সূচনাকালীন সদস্যদের ঐতিহ্যবাহী জামদানি ও মোগল আমলের পরিধেয়র অনুকরণে তৈরি পোশাক পরে র্যাম্পে হাঁটা। তাদের শো দেখে করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। এভাবেই সমাপ্ত হয় জন্টার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান।
কৌশিক
ছবি: শাহরিয়ার আহমেদ সোহান ও নিলয় দেবনাথ