skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I প্যারিস ডিজিটাল ফ্যাশন উইক ২০২০

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ফ্যাশনের বড় বড় আয়োজন বাতিলের খবর আসছিল। সেই তালিকায় উঠেছিল প্যারিস ওত কতুর ও মেনস ফ্যাশন উইকের নামও। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে মে মাসের শেষের দিকে ফেদারেশন দে লা ওত কতুর এত দে লা মোদ ঘোষণা করল, বরাবরের মতো নির্দিষ্ট সময়েই অনুষ্ঠিত হবে এ দুটি আয়োজন। তবে সম্পূর্ণ ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে। সে অনুযায়ী ৬ থেকে ৮ জুলাই প্যারিস ওত কতুর উইক এবং ৯ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত আয়োজিত হলো প্যারিস মেনস ফ্যাশন উইক। ডিজিটাল হওয়ার জন্য বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এই ইভেন্ট উপভোগ করতে পারবেন।

ডিজিটাল ওত কতুর উইক
এটি নিয়ে সবার ভেতরই একটা চাপা উত্তেজনা ছিল। ওত কতুর ফরাসিদের গর্ব। এর রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। এটি ধরে রাখতে ফ্যাশন হাউসগুলো বছরের পর বছর প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করে লোকসান গুনেও পোশাক তৈরি করে থাকে। আর কোভিড-১৯ মহামারির এই সময়ে হাই ফ্যাশনেবল জমকালো পোশাকের প্রদর্শনীকে অনেক সমালোচক বিলাসিতা হিসেবে দেখেছেন। তবু বেশ ভালোভাবেই আয়োজিত হলো ফ্যাশন ইতিহাসের প্রথম ডিজিটাল ওত কতুর উইকের। অংশগ্রহণ করেছিল ডিওর, শ্যানেল, গিয়ামবাতিস্তা ভালি, বালমেইন, ডলশে অ্যান্ড গ্যাবানার মতো ব্র্যান্ড।
ডিওর এবার তাদের ‘কতুর ২০২০’ কালেকশনটি প্রদর্শনের জন্য বেছে নিয়েছে ভিডিও স্টোরিটেলিং ফরম্যাট। শর্ট সুররিয়ালিস্ট ফ্যাশন ফিল্ম ‘লে মিথ ডিওর’-এ ফ্যাশন হাউসের তৈরি নতুন ৩৭টি নয়নাভিরাম কতুর কালেকশনের মিনিয়েচার ভার্সন দেখানো হয়। ছবিটি পরিচালনা করেন বিখ্যাত ইতালিয়ান পরিচালক মাতেও গাররোনে। এই ফিল্মের মাধ্যমে ডিওর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছে ‘তিয়াটর দে লা মোদ’ নামের একটি ইভেন্টকে, যা ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আয়োজিত হয়। সারা বিশ্বে ফ্রেঞ্চ কতুরের প্রচারণা বাড়ানোর জন্য সেখানে প্যারিসের বিখ্যাত সব কতুর নিজেদের তৈরি পোশাকের মিনিয়েচার পুতুল ভার্সনের প্রদর্শন করেছিলেন।
অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় বালমেইন নিজেদের কতুর শোর প্লাটিনাম জুবিলি উদ্্যাপন করল। ডিজাইনার অলিভিয়ের রোস্টেন সিন নদীর উপরে একটি নৌকায় প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। মডেলরা কতুর আর্কাইভ থেকে পোশাক পরেছিল। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ৫০ জনের একটি শক্তিশালী ড্যান্স ট্রুপ এবং ফরাসি সংগীতশিল্পী ইজিল্ট। পুরো অনুষ্ঠানটি এক্সক্লুসিভলি লাইভস্ট্রিমিং করা হয় বালমেইনের অফিশিয়াল টিকটক অ্যাকাউন্টে।
তবে বিশেষভাবে বলতে হবে অ্যালেক্সিস মেবিলের কতুর কালেকশনের কথা। ফুসিয়া পিঙ্ক রঙের রানওয়েতে মাত্র একজন মডেল দিয়ে পুরো কালেকশনটি শোকেস করেন। মহামারির জন্য মেবিল নতুন কোনো ফ্যাব্রিক সংগ্রহ করতে পারছিলেন না। নিরুপায় হয়ে নিজের আরটেলিয়েরে যা ছিল, তা-ই দিয়ে বানিয়েছেন চোখধাঁধানো সব পোশাক। কী বানাননি তিনি! বোল্ড কালারের গাউন, জার্সি ড্রেস, স্টেটমেন্ট জাম্পস্যুট, শোস্টপার কোটÑ সবই ছিল কালেকশনটিতে। মেবিল তার এই স্মরণীয় সংগ্রহটির নাম দিয়েছেন ‘অ্যাটিটুড’।
ডলশে অ্যান্ড গ্যাবানা এবার একই সঙ্গে ওমেন্স ও মেনস কতুর কালেকশন নিয়ে হাজির হয়। প্রাণবন্ত ও পরিশীলিত পোশাকগুলোতে ছিল বাহারি রঙের প্রিন্টের সমারোহ। ডিজাইনার স্টেফানো গ্যাবানা একটি ইন্টারভিউতে বলেন, এবারের কতুর সিরিজটি উৎসর্গ করা হয়েছে তাদের সব কাস্টমার এবং ইতালিয়ান গ্রীষ্মকে।
ভার্জিনি ভিয়ারদ শ্যানেলের নতুন এজি এবং এলিগেন্ট কতুর কালেকশনের জন্য অনুপ্রেরণা নিয়েছেন তারই পূর্বসূরি কার্ল লেগারফেল্ডের ১৮ শতকের ডিজাইন ফেজ থেকে। সাদা, কালো, ম্যাজেন্টা ও মেটালিক রঙের পোশাকগুলোতে ছিল উজ্জ্বল টুইড ও রাফল এবং ভারী অলংকারের সমারোহ।
মাল্টিলেয়ার টুইল, ড্রেপ, শিপন এবং বিশাল বোÑ এ সবকিছুই হলো গিয়ামবাতিস্তা ভালির বৈশিষ্ট্য। এবারও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। সম্পূর্ণ প্যারিসের নান্দনিক রূপ থেকে অনুপ্রাণিত তার কালেকশনের প্রতিটি গাউন উৎসর্গ করা হয়েছে কতুরের বিশাল জগৎকে।

মেনস উইক
প্যারিস মেনস ফ্যাশন উইকে ডিজাইনাররা শুধু পোশাকে নয়, সৃজনশীলতা দেখিয়েছেন অনলাইন প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রেও। প্যানারমিক ফ্যাশন ফিল্ম ও ভার্চ্যুয়াল গ্যালারির মাধ্যমে দর্শকেরা কখনো হারিয়ে যায় এক ডাইমেনশন থেকে অন্য ডাইমেনশনে। আবার কখনো ডিজাইনাররা তাদের অতিবাস্তব কালেকশনগুলো টেলিপোর্ট করে নিয়ে যায় প্যারিসের রাস্তা থেকে কাল্পনিক কোনো প্রাসাদের চূড়ায়। মোট কথা, ডিজিটাল ফ্যাশন প্রদর্শনী কতটা অভিনব হতে পারে, তার একটি ভালো ধারণা এই ফ্যাশন উইক থেকে পাওয়া যায়।
হারমিস ব্র্যান্ড তাদের কালেকশন প্রদর্শনের জন্য প্রেরণা নিয়েছে বিখ্যাত মুভি ‘বার্ডম্যান’ থেকে। একটি ফ্যাশন শোর ব্যাকস্টেজের রূপ এই মুভির মতো ওয়ানশট টেকনিক দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এবারে তাদের কালেকশনে প্রাধান্য পেয়েছে টেইলরিং ক্যাজুয়াল ওয়্যার।
রিক ওয়েনের ফ্যাশন উইকের জন্য একটি মেটা ফিল্ম তৈরি করেছেন। যেখানে দেখা গেছে, ওয়েন তার একজন মিউজের স্টাইলিং এবং ফিটিং করছেন। এই পুরো ইন্টিমেট সেশনটিতে কেবল ডিজাইনারের মিউজিক টেস্টই না, অফ কিল্টার ভিশনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রকাশ পাওয়া যায়।
ওয়াল্টার ভন বেইরেনডক ডিওরের কতুর কালেকশনের মতোই ‘তিয়াটর দে লা মোদ’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মিনিয়েচার পুতুল ব্যবহার করেছেন মডেল হিসেবে। তাকে সাহায্য করেছেন আর্টিস্ট এলি এফেনবারজার। বেইরেনডক তার কালেকশনের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছেন, একটি ক্ষুদ্রাকৃতি সংগ্রহ সম্পূর্ণ আকারের মতো আকর্ষণীয় হতে পারে।
ইয়োজি ইয়ামামোতোর সংগ্রহগুলো ছিল বরাবরের মতো গম্ভীর-অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং কাব্যিক বিন্যাসসংবলিত। তবে তাদেরকে ফ্যাশন ফটোগ্রাফার টাকায়ের লেন্সের নিচে একটি সিনেমাটিক কোয়ালিটি দেওয়া হয়। কিছু কিছু পোশাকে ছিল সুররিয়ালিজমের ছোঁয়া।
এবারে সব ডিজাইনার প্রাধান্য দিয়েছেন টেইলারিং ক্যাজুয়াল আউটফিটের ওপর। নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা যাচ্ছে না এটাই আসছে বছরের ট্রেন্ড হবে কি না। তবে এটা নিশ্চিত, এ বছর কিংবা আসছে বছরগুলোর সবচেয়ে বড় ট্রেন্ড হতে যাচ্ছে ভার্চ্যুয়াল বা ডিজিটাল ফ্যাশন উইক।
❙ ফাহমিদা শিকদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top