skip to Main Content

ফিচার I রিফিলেবল

পরিবেশ বাঁচানোর তাগিদে বিউটি ইন্ডাস্ট্রির নতুন এক প্রত্যয়। ফেলে দেওয়া কনটেইনার পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে

প্রতিবছর সমুদ্রে ফেলে দেওয়া আট মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্যরে একটি বড় অংশ বিউটি ইন্ডাস্ট্রি থেকেই আসে। ফ্লস, অ্যাপ্লিকেটরের মতো ছোট্ট থেকে শুরু করে বিউটি কেয়ারের বিগ-জায়ান্ট সাইজের প্লাস্টিক জার—সবই আছে এই তালিকায়। ‘জিরো ওয়েস্ট ইউরোপে’র তথ্যমতে অন্তত ১২০ বিলিয়ন প্লাস্টিক বর্জ্য আসে বিউটি ইন্ডাস্ট্রি থেকে।
রিসাইক্লিংয়ের বিষয়টি এখন পরিচিত হয়ে উঠছে। যদিও খুব সহজ নয় এই প্রক্রিয়া। বিনে যেকোনো পণ্যের খালি বোতল ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরে আসে জটিল রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া। মাত্র ৭ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিং হয়ে থাকে প্রতিবছর। এটি করার যতটুকু ক্ষমতা পৃথিবীর রয়েছে, প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। বিশ্বের কিছু দেশ এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে কাজটি শুরু করতে পারেনি। তাই প্রতিদিন বাড়ছে ক্ষতিকর বর্জ্যরে পরিমাণ।
বিউটি প্রডাক্টস রিফিলযোগ্য হলে বর্জ্যরে পরিমাণ কমবে, তা অনুমান করা যায়। বারবার ব্যবহারযোগ্য কফি কাপ হতে পারে এই কনসেপ্টের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। বডি শপ, ডিপটিকিউ ব্র্যান্ড তাদের কিপ ফরএভার প্রডাক্টস তৈরির মাধ্যমে প্রকৃতি ও পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখার এই কনসেপ্টে কাজ শুরু করেছে। বিউটি প্রডাক্টস জার রিইউজেবলের ধারা তৈরিতে জার হতে হবে টেকসই। সেটির ম্যাটেরিয়ালও উন্নত করা করা যেতে পারে। সে জন্য রিফিল প্যাকের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। ক্রেতা যেন সহজেই তার কাঙ্ক্ষিত প্রডাক্টের রিফিল প্যাক পান এবং জারের সংরক্ষণে গুণগত মান যেন অক্ষুণ্ন থাকে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কেয়ারওয়াইস এবং লকসিটান ব্র্যান্ড গেল বছর থেকে রিফিলযোগ্য পণ্য তৈরি করছে। ক্রেতারা গ্রহণ করছে। ছাব্বিশটি রিফিলযোগ্য পণ্য বাজারে নিয়ে আসার মাধ্যমে তারা ৯০ শতাংশ কম প্লাস্টিক ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়। ডিপটিকিউ এনেছে রিফিলযোগ্য হ্যান্ডওয়াশ এবং শাওয়ার জেল। প্রথমবার গ্লাস জারে এই পণ্য যতবার খুশি পাউচ কিনে নিয়ে রিফিল করে নেওয়া যায়।
সুগন্ধির দুনিয়াতে দারুণ সব বটল ও জার দেখা যায়। বেশির ভাগই সহজে নষ্ট হওয়ার নয়। কাচের তৈরি নান্দনিক নকশার এসব বোতল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই তৈরি। মলটন ব্রাউন, লে লাবো এবং কিলিয়ান পারফিউম ব্র্যান্ড ইতিমধ্যে রিফিলের সেবা চালু করেছে। উদ্দেশ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য কমিয়ে আনা। ভেরনিকা গাবাই নিয়ে এসেছে গোল্ড প্লেটেড পারফিউম পেনডেন্ট। সোনায় মোড়ানো এই পণ্য যে ব্যবহারের পরে রেখে দেওয়ার ইচ্ছা হবে, সে তো সবাই জানেন। তাই এসব ক্ষেত্রে রিফিল একটি কার্যকর পদ্ধতি। ক্রেতার স্বাধীনতা থাকবে তার প্রিয় সুগন্ধির বটল বারবার ব্যবহার করার। বডি শপ তাদের বন্ড স্ট্রিট শপে একটি রিফিল স্টেশন বানিয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রমের পরিকল্পনা হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে এ ব্র্যান্ড কাজ শুরু করেছিল ১৯৯০ সালে। এই শপ থেকে অ্যালুমিনিয়াম বটল কিনে ক্রেতা ক্রিম এবং শাওয়ার জেল নিতে পারবেন। এতে ২০ শতাংশ দাম কম পড়বে। ব্র্যান্ড ফেইথ ইন নেচারেরও রয়েছে রিফিল স্টেশন। তাদের শ্যাম্পু থেকে শুরু করে হ্যান্ড ওয়াশ রিফিল করে নেওয়া যাবে। কনসাস বিউটি কো নিজেদের পণ্য বিক্রির জন্য ব্যবহার করছে সার্কুলার রিফিল ফিলোসফি। ব্র্যান্ড বিউটি কিচেনের রয়েছে রিটার্ন-রিইউজ-রিফিল পলিসি। আই ক্রিম থেকে বডি ওয়াশ—সব পণ্যের ক্ষেত্রেই তারা অনুসরণ করছে এই পরিকল্পনা। হেয়ার লাইন ব্র্যান্ড ব্লিচ লন্ডন তাদের স্থানীয় শোরুমে রেখেছে পণ্য রিফিল করার সুযোগ।
বিউটি ট্রেন্ড ফোরকাস্টিং এজেন্সি ডব্লিউজিএএনের ডিরেক্টর জেনি মিডেলটন বিউটি প্রডাক্ট রিফিলে জেনারেশন জেড আগ্রহী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, যেহেতু এই জেনারেশন পরিবেশ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন এবং তা রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয়, তাই তাদের কাছে রিফিল পণ্য জনপ্রিয়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, বিউটি প্রডাক্ট রিফিল করার মাধ্যমে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহারের পরিমাণ অনেক কমে আসবে। প্লাস্টিক বর্জ্য যত কমবে, প্রকৃতি ততটাই ভালো থাকবে। এই জেনারেশনের জন্য মিডেলটন নতুন একটি শব্দ বলেন ‘প্রিসাইক্লেয়ারস’। তিনি মনে করেন, এরা উৎসাহী হয়ে নিজ নিজ বিউটি প্রডাক্ট কনটেইনার নিয়ে হাজির হয়ে যাবেন প্রিয় পণ্যের রিফিল শোরুমে।
মেকআপ প্রডাক্টের রিফিলের বিষয়ে স্যানিটাইজেশনের ব্যাপারে ভাবতে হবে। ফেশিয়াল ক্রিম এবং সেরামের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে জীবাণু নিরোধে। মেকআপ ব্র্যান্ড নোবেল প্যানাসিয়া সিলড রিসাইকেলেবল স্যাশে ব্যবহারের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করছে। এই স্যাশে রাখা হচ্ছে কিপসেক আউটার বক্সে। ক্রেতা তাই স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারবেন এই ব্র্যান্ডের রিফিলেবল প্রডাক্ট। ব্র্যান্ড টাটা হারপারও তৈরি করেছে তাদের প্রথম রিফিলেবল স্কিন কেয়ার পণ্য। ওয়াটার লক ময়শ্চারাইজার।
রিফিলেবল পণ্যের ক্ষেত্রে সব উপাদানের সতেজতা এবং গুণগত মান সম্পূর্ণ সঠিক থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অনেক পণ্য তৈরিতেই প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের উপকরণের মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে সব সতর্কতা মেনে নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষার ব্যাপারেও লক্ষ রাখা জরুরি। হাইজিন, স্যানিটাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই।
যেকোনো নতুন ধারা তৈরিতেই বেশ খানিকটা সময় দরকার হয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা নতুন পণ্য কেনার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে এসে রিফিল প্যাক ব্যবহারে ক্রেতা অভ্যস্ত হতে সময় নেবে। রিফিলযোগ্য পণ্যের ইতিবাচক দিক বিস্তারিত জানিয়ে তাদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। একই সঙ্গে পণ্যের মূল্য যুক্তিযুক্ত হতে হবে। রিফিল পাউচে মূল্য সাশ্রয় হলে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে দ্রুত। লা মের লুমিনাস লিফটিং কুশন কম্প্যাক্ট রিফিল করে নিলে অর্ধেক দামে পাওয়া যায়। মোলটন ব্রাউন ব্র্যান্ডের সুগন্ধির ক্ষেত্রেও তাই। পঁয়ত্রিশ ডলার সাশ্রয় সম্ভব।
রিফিলযোগ্য পণ্যের প্যাকেজিংয়ে দিতে হবে মনোযোগ। কাচের জার ব্যবহারে পণ্য রাসায়নিকভাবে প্রভাবিত হয় না, একই সঙ্গে এটি টেকসই। আর রিফিল পাউচের ক্ষেত্রে জিরো ওয়েস্ট প্যাকেজিং নিশ্চিত করতে হবে।
বিউটি প্রডাক্টের শূন্য বোতল সংগ্রহে কাজ করে যাচ্ছে লুপ নামের একটি ওয়েবসাইট। জার খালি হলে এখানে জানাতে হবে, সেটি সংগ্রহ এবং জীবাণুমুক্ত করেই পুনরায় ব্যবহার-উপযোগী হবে। আমাদের দেশেও এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণে পরিবেশদূষণ কমিয়ে আনা যাবে অনেকটাই।
মহামারি পরিবেশ নিয়ে নতুন করে ভাবিয়েছে। প্রকৃতিকে সঠিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার নানান রকম উপায় খুঁজছে মানুষ। পরিবেশবাদ পৃথিবীতে নতুন যুগের সম্ভাবনা তৈরি করছে। বিউটি ইন্ডাস্ট্রিরও রয়েছে দায়িত্ব পালনের সুযোগ। সবাই আন্তরিক উদ্যোগ নিলে তবেই বাঁচবে পৃথিবী। এই কার্যক্রমের পদক্ষেপ হিসেবে জেনারেশন জেড ইকো সেভিংয়ে আগ্রহী হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
 সারাহ্ দীনা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top