skip to Main Content

ফিচার I নিদ্রাসুন্দর

ত্বকের সৌন্দর্য অনেকখানি সুনিদ্রার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব? লিখেছেন তাসমিন আহমেদ

ঘুমের ক্ষতি মোটেই ভালো নয়। এক রাত নির্ঘুম কাটালে চেহারায় তা দৃশ্যমান প্রভাব ফেলে। এই তথ্য জানিয়েছেন ফেশিয়ালিস্ট অ্যাবিগেল জেমস। ত্বকের সুস্থতার জন্য তিনি প্রথমেই ভালো ও নিশ্ছিদ্র ঘুমের ব্যবহারিক পরামর্শ দিয়েছেন। নিদ্রার সময় ত্বকে ঠিক কী ঘটে, তিনি তারই ব্যাখ্যা করেছেন।
মুখত্বকে নানান ফেস প্যাক মাখলে বা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেলেই যে ত্বক সুন্দর হয়ে উঠবে, এমন নয়। ত্বককে দিতে হবে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও রিকভারের সুযোগ। এ জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ভালো ঘুম। এতে চেহারার জেল্লা প্রকাশ পাবে। অন্যদিকে নির্ঘুম রাতের ক্লান্তিও ত্বক জানান দেবে। রাতের পর রাত ঘুমের বেঘাত ঘটলে চেহারা ম্লান তো দেখাবেই, সঙ্গে ত্বক স্থায়ীভাবে খারাপ হতে পারে। কেননা ঘুমের সময় শরীরের অন্যান্য অংশের মতো ত্বকও তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজ করে, বিশ্রাম পায়। এতে ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখায় প্রাকৃতিকভাবেই। চেহারার স্বাভাবিক সৌন্দর্য প্রকাশ পায় ভেতর থেকে।
পৃথিবীব্যাপী মহামারি শুধু দৈনন্দিন রুটিনেই হস্তক্ষেপ করেনি, ঘুমের ধরনেও পরিবর্তন এনেছে। সুস্থ থাকার লড়াই থেকে অর্থনৈতিক সংকট শুধু মানসিক চাপের মাত্রাকেই আকাশচুম্বী করে তোলেনি, ভোগ করতে হয়েছে নির্ঘুম রাত।
প্রথমত, এটি কার্ডিওভাসকুলার হেলথের উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে এবং হৃদ্্রোগের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা তো রয়েছেই। তবে ঘুম না হলে প্রথমেই যে বাহ্যিক প্রভাবটি দেখা যায়, তা হলো চোখের চারপাশে ক্লান্তির ছাপ ও মলিন মুখত্বক। এখন বদলে যাওয়া অভ্যাস এবং এর বাজে প্রভাব পড়া ক্ষতিগ্রস্ত মুখত্বক ঠিকঠাক করে নেওয়ার সময়। কীভাবে তা করে নেওয়া যায়, তারও রয়েছে কিছু কার্যকর উপায়। এ জন্য ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে, এমনকি মেকআপ দেওয়া না থাকলেও। বৃদ্ধি পাওয়া পলিউশন, ঘাম ও সারা দিনের অবসন্নতা দূর করে ত্বক প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য এটি জরুরি।
তৈলাক্ত হতে হবে। একটি ফেস অয়েল হাতের কাছে রাখতে হবে। এই তেল দিয়ে পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করতে হয়। আকুপ্রেশার পয়েন্টগুলোতে ম্যাসাজ করলে চমৎকার ফল পাওয়া যায়। এটি শুধু রাতভর ত্বকে পুষ্টিরই জোগান দেয় না, মনকে রিল্যাক্সড রাখতে সহায়ক। চিত হয়ে শুয়ে ঘুমাতে হবে। এটি বলিরেখা প্রতিরোধে সাহায্য করবে। পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমালে বালিশে চাপ লেগে মুখ সংকুচিত হয়ে যায়। আর এমনটা যদি রাতের পর রাত ঘটতে থাকে, তবে ক্ষণস্থায়ী ভাঁজগুলো স্থায়ী রেখায় পরিণত হবে।
আই মাস্ক পরে ঘুমানো দরকার। এটি শুধু চোখের চারপাশের দুর্বল ত্বককে সুরক্ষা দেয় না, স্বাচ্ছন্দ্যও দেয়।
ঘুমানোর একটি রুটিন তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। বাইরে হালকা হাঁটাহাঁটি বা পাঁচ মিনিটের একটি মেডিটেশন করা যেতে পারে। ঘুম না এলে তিন শ থেকে ত্রিশ- পেছনের দিকে গুনতে হবে। জানালায় টানিয়ে দেওয়া যায় গাঢ় বা কালো রঙের পর্দা। যাতে বাইরের আলো ঘুমের বেঘাত ঘটাতে না পারে। সব ধরনের স্ক্রিন ও শব্দ বন্ধ রাখতে হবে। কেননা, কম্পিউটার, ফোন ও টেলিভিশনের নীল আলো এবং আওয়াজ মস্তিষ্কে সংকেত দেয় যে এখন ঘুম থেকে ওঠার সময়।
শরীরের তাপমাত্রায় ভারসাম্য তৈরির চেষ্টা করতে হবে। অতিরিক্ত গরম শরীরকে জাগিয়ে রাখতে পারে, তাই জানালা খোলা রেখে ঘুমানো জরুরি। ডুয়েটের নিচে একটি পাতলা সুতির শিট নিলে আরেকটি স্তর তৈরি হবে। এতে রাতে গরম বেশি লাগলে বা প্রয়োজন হলে একটি ফেলে দেওয়া যায়। নিজেকে শীতল রাখতে বিছানার পাশে একটি স্যাঁতসেঁতে ফ্ল্যানেল বা ওয়াটার স্প্রিটজ রাখা যেতে পারে। বেড শকস আনন্দদায়ক না-ও হতে পারে, তবে পা উষ্ণ থাকলে শরীরের বাকি অংশেও তা অনুভূত হবে।
হারবাল চা পান করলে প্রশান্তির ঘুম হতে পারে। ক্যামোমিল কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর শান্ত প্রভাব ফেলে। এক চা-চামচ মধু দিয়ে এক কাপ চা অথবা হপস ও ভ্যালেরিয়ানের মিশ্রণে তৈরি একটি স্লিপ টি, ‘এখন সুইচ অফ করার সময়’- কথাটি শরীরকে জানান দেওয়ার জন্য একেবারে পারফেক্ট। ভ্যালেরিয়ান ন্যাচারাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যালকালয়েডস ও গামা-অ্যামিনোবোটেরিক সমৃদ্ধ, যা একটি স্বাস্থ্যকর স্লিপ সাইকেল প্রমোট করে। ব্যবহার করা যেতে পারে কিছুটা অ্যারোমাথেরাপি অয়েল। ল্যাভেন্ডার, ক্যামোমিল, ভ্যালেরিয়ান বা মারজোরাম অয়েল কানের পেছনে অথবা পালস পয়েন্টগুলোর ওপর ম্যাসাজ করে নিতে হবে, যাতে শরীরে শান্ত অনুভূতি আনবে। কিংবা শুধু বালিশে কয়েক ফোঁটা ছিটিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া ব্যবহার করা যেতে পারে স্লিপ স্প্রে, এতে প্রয়োজনীয় এসেনশিয়াল অয়েল থাকে, যা ভালো ঘুমকে উৎসাহিত করে। এটি মস্তিষ্ক শান্ত করার জন্য স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থাটিকে ট্রিগার করে।
ভালো ঘুমের জন্য বেডটাইম স্ন্যাক কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহায়ক। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্রাজিল নাট বা আখরোট খেয়ে নিলে তা উপকারী প্রভাব ফেলতে পারে। উভয়ই প্রোটিন, পটাশিয়াম ও সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ। এগুলো স্লিপ হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে।

মডেল: মাহি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top