skip to Main Content

ফিচার I বেলি বাটন অয়েলিং

ত্বক ও চুলের পরিচর্যায় ন্যাভেল থেরাপি চমৎকার এক উপায়। মানে, নাভিতে বিভিন্ন অয়েল ম্যাসাজ

শরীরের কেন্দ্র হলো নাভি, যার সঙ্গে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের, এমনকি চুলেরও সম্পর্ক রয়েছে। নানান রোগবালাই সারাতে ন্যাভেল থেরাপি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একে নাভি চিকিৎসা, নাভি পুরাণ বা নাভি বাস্তিও বলা হয়। এই চিকিৎসার মূল ধারণাটাই হলো, নাভির ভেতরে তেল দেওয়া হলে তা সহজেই শোষিত হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতবর্ষে এর চল বহু পুরোনো। ইডিয়ট’স গাইড টু আয়ুর্বেদ বইয়ের লেখক সাহারা রোজ বলেন, ‘১৫ শতাব্দীতে লেখা “ভবপ্রকাশা”- নামের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের একটি বই পাওয়া যায়। সেখানে এমন এক চর্চার কথা বলা হয়, যেখানে নাভির চারদিকে আমলকী পেস্টের ঘেরাও দিয়ে তা আদার রস দিয়ে পূর্ণ করা হয়।’ আয়ুর্বেদের অনুসারীরা নাভিকে শক্তির গুরুত্বপূর্ণ উৎস ‘মহামনি’ বা ‘মহান মর্ম’ বলে মনে করে। সোজা কথায়, অত্যাশ্চর্য এই নাভি আপনার শরীর ও ত্বকের অনেক সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা রাখে। এখন পশ্চিমে অনেকেই নিজেদের বিউটি রুটিনে যোগ করতে শুরু করেছে এই প্রাচীন এই পদ্ধতি।
জেনে নেওয়া যাক নাভিতে তেল ম্যাসাজ করার উপকারিতা—
হজম ক্ষমতা বাড়ায়
সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের আশায় আমরা প্রতিদিন কত কিছু করে থাকি। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের আসল রহস্য লুকিয়ে আছে আমাদের পেটে। পরিপাকতন্ত্রের কাজ নিয়ে ভাবলে বিষয়টা অনেকটাই পরিষ্কার হবে। খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ প্রক্রিয়ার প্রায় পুরোটা এখানে হয়ে থাকে। আবার আমাদের শরীরে ইনফ্ল্যামেশন বা স্কিনের দুর্দশার উৎসও এটি। একটি সুস্থ পরিপাকতন্ত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য হেলদি ফ্লোরা (ভালো ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট) থাকে। এগুলো খাবার হজমে সাহায্য করে এবং ইনফ্ল্যামেশন প্রতিরোধ করে। নানা কারণে হেলদি ফ্লোরাগুলোর জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। যেমন ব্যাকটেরিয়াল বা প্যারাসাইটিক ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়ার অত্যধিক বৃদ্ধি (ডিবায়োসিস), ফুড সেনসিটিভিটির জন্য হওয়া ইনফ্ল্যামেশন ইত্যাদি। এগুলো হলে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, গ্যাস্ট্রিক, ইরিটেবল ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ, কোষ্ঠকাঠিন্য, ব্লোটিং-এর মতো হজমজনিত সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, গাট হেলথের সঙ্গে স্কিনের সংযোগ রয়েছে। সাধারণত হজমজনিত অসুবিধায় যারা ভোগে তাদের ত্বকে অ্যাকনে, র‌্যাশ, ড্রাইনেস, একজিমাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, যাদের স্মল ইনটেস্টিনাল ব্যাকটেরিয়াল ওভারগ্রোথ (SIBO) আছে, তাদের চর্মরোগ রোজেশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। আবার এটিও দেখা গেছে, শুধু SIBO-এর চিকিৎসা করে ত্বকের অনেক জটিল সমস্যার সমাধান হয়েছে। অনেক সময় ওষুধ খেয়ে এসব রোগ সারাতে গেলে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। এ ধরনের হজমজনিত সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে নাভিতে তেল ম্যাসাজ করা যেতে পারে। প্রতিদিন নাভিতে সরিষার তেলের মালিশ, যকৃৎ এবং প্লীহা থেকে গ্যাস্ট্রিক ও পিত্তরস বের করতে সাহায্য করে। এটি হজমের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া বমি বমি ভাব বা অন্ত্রের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে নাভিতে পেপারমিন্ট বা আদার তেল লাগানো যেতে পারে।
মানসিক প্রশান্তি দেয়
মানসিক চাপ এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। আর এর বাজে প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বক ও চুলের ওপর। অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে ত্বকে একজিমা, রোজেশিয়া, ব্রণ, পিগমেন্টেশন, ডার্ক সার্কেল, রিঙ্কেলের মতো সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া চুল পড়া বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। প্রাকৃতিকভাবে মানসিক চাপ কমাতে অ্যারোমাথেরাপির চল রয়েছে। সঙ্গে যোগ হতে পারে ন্যাভেল থেরাপি।
চক্রাকারে নাভির চারপাশের স্নায়ুগুলোকে উদ্দীপিত করা হলে তা মানসিক চাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমে সাড়া জাগানোর মাধ্যমে আবেগের ভারসাম্য রক্ষা করতে আর মনোযোগ বাড়াতে পারে এই ন্যাভেল থেরাপি। এতে সাধারণত যে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করা হয়, তা নাভিতেও মালিশ করা যায়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো এবং সহজলভ্য হলো ল্যাভেন্ডার অয়েল। এ ছাড়া স্যান্ডালউড (চন্দন), লেমন, অরেঞ্জ, ক্যামোমাইল, ক্ল্যারি সেইজ ইত্যাদির তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
ত্বকের পুষ্টি জোগাতে
মসৃণ, স্নিগ্ধ ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে প্রতিদিন নাভিতে অয়েল ম্যাসাজ চাই। ঠিক সেই তেল, যা ত্বকের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। উল্লেখ্য, ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করলে যত তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায়, ন্যাভেল থেরাপিতে সেটা হতে একটু বেশি সময় নেয়। তবে ফল হয় দীর্ঘস্থায়ী। ত্বকের যত্নে নাভিতে ব্যবহার করা যেতে পারে অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল, আমন্ড অয়েল। এসব তেলের ন্যাচারাল ফ্যাটি অ্যাসিড আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্কিনের ইনফ্ল্যামেশন, সংক্রমণসহ অন্যান্য সমস্যা দূর করে ময়শ্চার ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। ন্যাভেল থেরাপির মাধ্যমে নাভি থেকে ত্বকের মধ্য দিয়ে সবখানে—এমনকি যেখানে তেল দেওয়া হয়নি, সেখানেও প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছে যায়। আর এভাবেই নাভি চিকিৎসা উজ্জ্বল ও পরিপুষ্ট ত্বক নিশ্চিত করে। অনেকের সারা বছরই ঠোঁট শুষ্ক থাকে। নাভিতে তেল মালিশ করলে এই শুষ্কতা কমার সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁটের কালো ছোপগুলোও দূর হয়ে যায়। এমনকি চোখের ক্লান্তি ও ফোলাভাব এবং ডার্ক সার্কেল কমাতেও পারে এই নাভি চিকিৎসা।
চুলের সমস্যা রোধে
নাভির সঙ্গে মানবদেহের ৭২ হাজার শিরার সংযোগ আছে। তাই চুলের গ্রোথ আর ভলিউমের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ শরীরে শোষিত হতে সহায়তা করে এটি। চুল পেকে যাওয়ার পেছনে দায়ী শিরাগুলোতে পুষ্টি পৌঁছালে অসময়ে চুল পাকা বন্ধের পাশাপাশি এর গোড়া মজবুত হবে। চুল পড়া ঠেকানো এবং এর প্রাণ ফেরাতে নারকেল তেল হলো সবচেয়ে কাজের। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, ভিটামিন সি, বি, ই, কপার ও জিংক। স্ক্যাল্প ও চুলের শুষ্কতা দূর করতে নাভিতে অলিভ অয়েল বা জোজোবা অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।

 ফাহমিদা শিকদার
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top