skip to Main Content

ফরহিম I পুরোনোতেই প্রতিকার

ফ্রিজের দিকে চোখ ফেরালেই মিলবে রূপচর্চার হরেক রকম রসদ। দিন দুয়েকের পুরোনো হলেও ক্ষতি নেই। ঝামেলামুক্ত এবং সহজ সব বিউটি রেসিপির জন্য

প্রাকৃতিক উপাদানে রূপচর্চার পুরো প্রক্রিয়া একটু ঝামেলারই বটে। তবে সহজ সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে ঘরে বেঁচে যাওয়া খাবার। যা দিয়ে তৈরি হবে মুখের মুশকিল আসান প্যাক কিংবা চুলচর্চার চমৎকার সব মাস্ক। সময় তো বাঁচবেই, অপচয়ও রোধ হবে অনেকখানি।
কফি গ্রাউন্ড
কফি গ্রাউন্ড পুরোনো এবং শুকনো হয়ে গেলে তা পুনর্ব্যবহারের নানা উপায় রয়েছে। এর সঙ্গে প্রাকৃতিক তেল বা অন্যান্য উপাদান যোগ করে ত্বক, চুল কিংবা শরীরের স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
টি ব্যাগ
চা খাওয়া শেষে টি ব্যাগের জায়গা হয় ডাস্টবিনে। এখন থেকে সেগুলো না হয় সংরক্ষিত হলো ফ্রিজে। চোখের ক্লান্তি দূর করতে, কালো দাগ এবং ফোলা দাগ কমাতে ১৫ মিনিটের জন্য এই ঠান্ডা ব্যবহৃত টি ব্যাগগুলো দুচোখে রাখলে খুব অল্প দিনেই কার্যকর ফল মিলবে। এ ছাড়া ব্যবহৃত টি ব্যাগ হোয়াইটহেডস নিরাময়েও জাদুকরি।
অতিরিক্ত পাকা কলা
কলা অতিরিক্ত পেকে কালচে হয়ে গেলে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ থাকে না। তখন ট্র্যাশে ফেলার পরিবর্তে ম্যাশ করে চুলের জন্য প্রাকৃতিক কন্ডিশনিং মাস্ক তৈরি যায়; যা চুলে মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে নিতে হবে। মুখে দাগ থাকলে পাকা কলার খোসার সঙ্গে একটু মুলতানি মাটি, কয়েক ফোঁটা কমলার রস ও শসার রস মিশিয়ে মাখলে দাগ গায়েব হয়ে যাবে। অতিরিক্ত পাকা অ্যাভোকাডো দিয়েও একই কাজ করা যেতে পারে।
নষ্ট দুধ
দুগ্ধজাত দ্রব্য একবার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলে কোনো কাজে লাগে না। তবে চুল ও মুখে ব্যবহারের জন্য এগুলো কিন্তু দারুণ রসদ। চুলের প্যাক বা স্কিনকেয়ার মাস্কের জন্য দুধ ও দইয়ের মতো নষ্ট কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ দুগ্ধজাত পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে অনায়াসে।
বাসি রুটি
আগের দিনের বেঁচে যাওয়া রুটিও হতে পারে রূপচর্চার উপাদান। বাসি রুটির কয়েকটি ছেঁড়া টুকরো, তিন চামচ কাঁচা দুধ এবং এক চামচ চিনি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে মুখে, হাতে, গলায় মেখে কিছুক্ষণ পরে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে কয়েক দিনের মধ্যে তফাত বোঝা যাবে। শুধু আটার রুটি নয়, বাড়িতে থাকা পুরোনো পাউরুটি দিয়েও রূপচর্চা করা যায় নির্দ্বিধায়। এক টুকরো পাউরুটি দুধে ভিজিয়ে চটকে নিয়ে এতে মেশাতে হবে দুই চামচ পেঁপেবাটা, এক চামচ আপেলবাটা, এক চামচ গোলাপজল, এক চামচ মধু। মিশ্রণটি মুখে দেওয়ার পর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ভাতের মাড়
চুলের নানান সমস্যা দূর করতে এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। ড্যামেজ গার্ড হিসেবেও দারুণ কার্যকর। এতে আছে ইনোসিটল নামে এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট, যা চুলের রুক্ষতা, দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলা ছাড়াও চুল বৃদ্ধিতে, শক্ত, মজবুত, ঝলমলে এবং মসৃণ চুল পেতে ট্রাই করা যায় ভাতের মাড়। প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবেও জুড়ি নেই এর। চুলে ব্যবহারের আগে এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার বা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে। দশ মিনিট পর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিলে ফল পেতে বেশি দেরি হবে না।
চালের গুঁড়া
চালের গুঁড়া চেলে নেওয়ার পর নিচের চালনাটুকু সাধারণত সবাই ফেলেই দেন। তবে চাইলে এটাও কাজে লাগানো যায়। চালের গুঁড়ার এই অংশটুকু স্ক্রাবার হিসেবে ভালো কাজ করে। এর সঙ্গে একটু টক দই, কাঁচা হলুদ, দুধের সর ও গাজরের রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কারের পাশাপাশি মুখ উজ্জ্বল হবে।
ফলের খোসা
ব্রণ নিরাময়ে কমলার খোসা পিষে এর সঙ্গে দই যোগ করতে হবে। শুষ্কতা কমাতে মুখে কলার খোসা ঘষে নেওয়া যায়। একইভাবে তরমুজ খাওয়ার পর এর খোসা ফেলে না দিয়ে সাদা অংশটুকু রেখে তা ব্লেন্ড করে ত্বকে মেখে নেওয়া যেতে পারে। এটি ত্বকের পানিশূন্যতা দূরের পাশাপাশি একটা ঠান্ডা অনুভূতি দেবে। বাঙ্গির খোসাও খুব উপকারী। ত্বকের ভাঁজ পড়া কমাতে ও কালচে ভাব দূর করতে বাঙ্গির খোসার সঙ্গে মটর ডাল বাটা, ডিমের কুসুম, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত মুখে লাগিয়ে রেখে এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ক্লিনজিং, স্ক্রাবিংয়ের পর নিয়মিত এই মাস্ক ব্যবহারে ধীরে ধীরে ভাঁজ পড়া ভাব কমে ত্বক হয়ে উঠবে সতেজ।
শসার বিচি
এটা গভীরভাবে ত্বক পরিষ্কার করে। ত্বক তৈলাক্ত হলে শসার বিচি হালকা ভেঙে নিয়ে তার সঙ্গে ওটমিল মিশিয়ে নিতে হবে। এটা খুব ভালো স্ক্রাবারের কাজ করবে। তবে ত্বক যদি শুষ্ক হয়, সে ক্ষেত্রে শসার বিচির সঙ্গে দুধের সর ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডিমের খোসা
রূপচর্চায় ডিমের ব্যবহারের কথা অনেকের জানা। শুধু ডিম নয়, ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যেতে পারে ডিমের খোসাও। ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে দুটি ডিমের খোসা গুঁড়া করে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে। সপ্তাহে দুবার এটি ত্বকে লাগালে উপহার মিলবে উজ্জ্বল ত্বক।
কাঁঠালের বিচি
চুলের যত্নে কাঁঠালের বিচি খুব কার্যকর। কাঁঠালের বিচি প্রথমে পানিতে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর ওপরের সাদা খোসাটি ফেলে দিয়ে তা দুধে ভেজাতে হবে কিছুক্ষণ। কাঁঠালের বিচি নরম হয়ে এলে দুধের সঙ্গে ব্লেন্ডারে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এ মিশ্রণ মাথার ত্বকে ভালোভাবে মাখিয়ে আধঘণ্টা রেখে দিতে হবে। তারপর শ্যাম্পু করে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে দুদিন এই মাস্ক ব্যবহার করলে উপকার মিলবে।

 সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
মডেল: জামি
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top