skip to Main Content

সাক্ষাৎকার I দেশি জুয়েলারি ব্র্যান্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক দরবারে পৌঁছাতে চাই—সোহানা রউফ চৌধুরী

চলতি পথের নানা বাধা পেরিয়ে, দৃপ্ত পায়ে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন এ দেশের অনেক নারী। নিজ নিজ সেক্টরে ইতিমধ্যে অনেকেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে। এমনই ১০ জন প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতা…
দেশি জুয়েলারি ব্র্যান্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক দরবারে পৌঁছাতে চাই
—সোহানা রউফ চৌধুরী
ম্যানেজিং ডিরেক্টর, আমিসে

ক্যানভাস: দেশি জুয়েলারি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার আইডিয়া পেলেন কীভাবে?
সোহানা রউফ চৌধুরী: আমাদের দেশে রুচিসম্মত এবং ভ্যারাইটি অব কালেকশন প্রোডাক্টের অভাব ছিল। তাই ভাবলাম, দেশেই এমন একটা জুয়েলারি ব্র্যান্ড হোক, যেখানে নারীদের পছন্দ ও রুচির কথা মাথায় রেখে দেশি-বিদেশি জুয়েলারি তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে। এই ভাবনা থেকেই ‘আমিসে’ প্রতিষ্ঠার আইডিয়া মাথায় এসেছিল।
ক্যানভাস: ‘আমিসে’ প্রতিষ্ঠার গল্পটি কেমন? এর শুরুটা কীভাবে?
সোহানা: জুয়েলারির প্রতি আমার আগ্রহ আগে থেকেই ছিল। সেই আগ্রহের কারণেই আন্তর্জাতিক জুয়েলারি ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছি। সেখানে কাজ করতে করতেই ভাবলাম, আমাদের দেশেও এমন একটা ব্র্যান্ড দরকার, যেখানে প্রিমিয়াম এবং ইউনিক ডিজাইনের জুয়েলারি পাওয়া যাবে। এই চিন্তা থেকেই ‘আমিসে’র পথচলা শুরু।
ক্যানভাস: ‘আমিসে’ গড়তে গিয়ে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে? সেগুলো কীভাবে সামলেছেন?
সোহানা: প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রেই অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। ‘আমিসে’ গড়ার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমি মনে করি, ‘আমিসে’র জন্য সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন আমাদের দক্ষ কর্মীরা। একটি জুয়েলারি ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে প্রয়োজন কোয়ালিটি এনসিওর করা। আমাদের দক্ষ কর্মীরা অত্যন্ত বিচক্ষতার সঙ্গে এই কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে গ্রাহকেরা বেস্ট জুয়েলারি পেয়ে থাকেন। প্রিমিয়াম জুয়েলারি বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা নানান সোর্স থেকে সেরা জুয়েলারি সংগ্রহ করে থাকি, যা করতে অনেক সময় নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়। কিন্তু গ্রাহকদের বেস্ট কোয়ালিটি ও ডিজাইনের জুয়েলারি দিতে এসব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি।
ক্যানভাস: অন্যান্য জুয়েলারি ব্র্যান্ডের সঙ্গে ‘আমিসে’র পার্থক্য কোথায়?
সোহানা: অন্যান্য জুয়েলারি ব্র্যান্ডের সঙ্গে ‘আমিসে’র প্রথম ও প্রধান পার্থক্য হলো, আমরা কখনো আমাদের জুয়েলারির কোয়ালিটি নিয়ে কম্প্রোমাইজ করি না। গ্রাহকেরা যেন সব সময় সেরা ও প্রিমিয়াম জুয়েলারি পান, সে জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দ্বিতীয়ত, ডিজাইনের দিকে আমরা সব সময় একটু বেশি মনোযোগী। আমাদের ডিজাইন করা জুয়েলারি অন্যান্য জুয়েলারি ব্র্যান্ডের কাছে পাওয়া অসম্ভব। এককথায়, সব সময় গ্রাহকদের ইউনিক জুয়েলারি দিয়ে থাকি। তৃতীয়ত, দামের ব্যাপারে আমরা অনেক সচেতন। গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে প্রতিটি জুয়েলারির দাম নির্ধারণ করি। ইতিমধ্যে সার্ভিসের জন্য বেশ সুনাম অর্জন করেছি। প্রত্যেক গ্রাহককে সব সময় বেস্ট ও প্রিমিয়াম সার্ভিস দিয়ে থাকি। গ্রাহকের সুবিধার্থে হোম ডেলিভারি সার্ভিসেরও ব্যবস্থা রেখেছি। গ্রাহকের টেস্ট বুঝে তার স্টাইলের জন্য বেস্ট জুয়েলারি সিলেকশনে সহায়তা করে থাকি, যা আমাদের অন্যান্য জুয়েলারি ব্র্যান্ডের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে।
ক্যানভাস: ‘আমিসে’ ব্র্যান্ডের নামকরণের নেপথ্য গল্প কী?
সোহানা: এই নামকরণ করা হয়েছে মূলত ‘আমি সে’, অর্থাৎ ‘I am she’ কথাটি থেকে। আমরা চাই, গ্রাহকেরা যেন আমাদের ব্র্যান্ডের মাধ্যমে নিজেকে দেখতে পান এবং নিজেকে চিনতে পারেন। আমরা চাই, প্রত্যেক গ্রাহক যেন আমাদের কাছে এসে নিজের প্রতিচ্ছবির দেখা পান। তা ছাড়া ‘আমিসে’ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। ব্র্যান্ডের নামকরণে সেই ছাপও রয়েছে।
ক্যানভাস: ‘আমিসে’ নিয়ে আপনার বিশেষ বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সোহানা: ‘আমিসে’ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম সারির জুয়েলারি ব্র্যান্ডগুলোর একটি। এবার আন্তর্জাতিক দরবারে পৌঁছাতে চাই। সেই প্রচেষ্টায় বর্তমানে আমাদের বিজনেস সিঙ্গাপুরে সম্প্রসারণ করেছি। আমরা ইন্টারন্যাশনাল জুয়েলারি এক্সিবিশনে অংশ নিয়ে থাকি। আমরা চাই, মানুষ যখনই আন্তর্জাতিক মানের জুয়েলারি ব্র্যান্ডের কথা চিন্তা করবে, তখনই যেন ‘আমিসে’ নামটি সবার আগে চলে আসে।
ক্যানভাস: বাংলাদেশে বিজনেস সেক্টর কতটা নারীবান্ধব বলে মনে করেন? কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে? উত্তরণের উপায় কী?
সোহানা: নারী হিসেবে আমি বাংলাদেশে জুয়েলারি বিজনেসে নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে দায়িত্ব পরিচালনা করছি। কারণ, এ দেশে জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আগে কোনো নারী উদ্যোক্তা সংযুক্ত ছিলেন না, যাকে আমি অনুসরণ করতে কিংবা যার দেখানো পথে এগোতে পারতাম। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসে একজন নারী হিসেবে আমাকে নানান বাধার মুখে পড়ে শিক্ষা নিতে হয়েছে। সেই সব বাধা পেরোনোর ক্ষেত্রে আমি নিজের আগ্রহ ও আগের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেক নারীই তার শিক্ষা, দক্ষতা, সততা, কঠোর পরিশ্রম ও আগ্রহের মাধ্যমে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারেন।
ক্যানভাস: আপনার ক্যারিয়ার জার্নি নিয়ে সংক্ষেপে বলুন।
সোহানা: র‌্যাংগস গ্রুপের একজন ডিরেক্টর এবং র‌্যাংগস মোটরস ও র‌্যাংকস কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএএমএ) জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করছি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ক্যানসার এইড ট্রাস্টের ফাউন্ডিং মেম্বার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, উইমেন ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বোর্ড মেম্বার এবং এন্ট্রাপ্রেনারস অর্গানাইজেশন বাংলাদেশের বোর্ড মেম্বার ও মার্কেটিং কমিউনিকেশন চেয়ারপারসন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top