skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I পিচ ফাজ

বহু পুরোনো মিথ মেনে বারবার বিব্রত হবার বদলে নিয়ম মেনে এর অপসারণই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে

মুখত্বক অনেকটা ক্যানভাসের মতো। ছবির রং, রেখাবিন্যাস ঠিকমতো ফুটিয়ে তোলার জন্য যেমন একটা ভালো ক্যানভাস চাই, ঠিক তেমনি সুন্দর, স্বাভাবিক মেকআপের প্রথম ভিত্তি হলো মসৃণ ত্বক। আর এ ক্ষেত্রে পিচ ফাজ বা বেবি হেয়ারকে কিন্তু প্রতিবন্ধকতাই বলা চলে। মুখত্বকে এর উপস্থিতির ফলে বেজ মেকআপটা সুন্দরভাবে না-ও বসতে পারে। এইচডি ক্যামেরা আর সেলফির এ যুগে তা লুকানোও দুঃসাধ্য। সে ক্ষেত্রে জানতে হবে সমস্যা সমাধানের উপায়। পিচ ফাজ থেকে পরিত্রাণের সব কৌশল।
পিচ ফাজ কী
পিচ ফাজ হলো অনেকটা পিচ ফলের ওপরের পাতলা আবরণের মতো, যা মুখের বা শরীরের অন্যান্য অংশের লোমের তুলনায় খাটো, টেক্সচারে নরম এবং রঙে হালকা। সাধারণত ২ মিমি লম্বা হয়ে থাকে এগুলো। এই নরম লোমগুলো মূলত নাকের নিচে, চিবুকের ওপর বা কখনো কখনো গালে দেখা যায়। খোলা চোখে পিচ ফাজ দৃশ্যমান না হলেও মেকআপ করার পর দেখা যায়। তাই মেকআপের পরও ত্বকের মসৃণতা বজায় রাখতে পিচ ফাজ অপসারণ করা যেতে পারে। পিচ ফাজ তোলার আগে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া ভালো। এতে বোঝা যায়, কোন পদ্ধতি ত্বকের জন্য ভালো বা কোন উপায়ে পিচ ফাজগুলো তুললে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না। বিশেষ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
ওয়াক্সিং
শরীরের যেকোনো অংশের লোম অপসারণের জন্য সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতিগুলোর একটি হচ্ছে ওয়াক্সিং। মুখে পিচ ফাজ তোলার জন্যও ওয়াক্সিং কার্যকর। এ ক্ষেত্রে অ্যাট-হোম কিট ব্যবহার করা অথবা স্যালনের শরণাপন্নও হওয়া যায়।
প্রথমে ওয়াক্স বিন গলিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনমতো নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। তারপর ওয়াক্সের আস্তর ঠান্ডা এবং শক্ত হয়ে ওঠার জন্য সময় দিতে হবে। এর পরে, একটি ফ্যাব্রিকের ওপরে বসিয়ে ওয়াক্স নেওয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ফেশিয়াল ওয়াক্সিং কিট ব্যবহার করা চাই। যেদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল, তার বিপরীত দিকে টেনে গোড়া থেকে পিচ ফাজ অপসারণ করুন।
ড্রাই শেভিং
সবচেয়ে সহজ এবং সহজলভ্য উপায়। যেহেতু শেভ করার সময় লোম গোড়া থেকে উঠে আসে না, বরং ওপর থেকে লোমগুলো ছেঁটে নেওয়া হয়, তাই চাইলে প্রতিদিন শেভ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক রেজর অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এবং এটি পিচ ফাজ অপসারণের দ্রুত উপায়। এমন একটি ছোট ডিভাইসের সন্ধান করতে হবে, যা বিশেষভাবে মুখের কথা ভেবেই ডিজাইন করা হয়েছে। তবে খেয়াল রাখা চাই, প্রতিদিন শেভিংয়ে মুখে আঁচড়ের মতো দাগ হতে পারে এবং নতুন করে লোম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডিপিলেটরিস
এটি একটি রাসায়নিক জেল বা ক্রিম, যা লোমের কেরাটিন ফাইবারগুলোর কার্যকারিতা ব্যাহত এবং লোম অপসারণ করে। এতে থাকে থায়োগ্লাইকোলেট নামের একধরনের উপাদান, যা চুলের প্রোটিনকে ভেঙে দেয়। ফলাফল—পিচ ফাজহীন ত্বক। এটি ত্বকে মেখে কয়েক মিনিটের জন্য রেখে দেওয়া হয়। তারপর কিছুক্ষণ পর তা ধুয়ে বা মুছে ফেলতে হয়। তবে মুখের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা ডিপিলেটরিস ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
সংবেদনশীল ত্বকে ডিপিলেটরিস ব্যবহার করা উচিত নয়। ফেস ডিপিলেটরিস ব্যবহার করার আগে যে জায়গায় এটি ব্যবহার করা দরকার, সেই জায়গায় ত্বকের একটি ছোট অংশে একটি প্যাচ পরীক্ষা করে নিতে হবে। পণ্যের উপাদানগুলো ব্যবহারের ফলে অ্যালার্জি হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এটি করা জরুরি। প্যাকেজিংয়ে নির্দেশিত সময় ক্রিম ত্বকে মেখে রাখতে হবে। এর হেরফের হলে কিন্তু বিপদ!
থ্রেডিং
ভ্রু থ্রেডিংয়ের সঙ্গে সবাই কমবেশি পরিচিত। ঠিক একই উপায়ে পিচ ফাজও তুলে ফেলা যেতে পারে। চটজলদি উপায়ে। এর ফলাফল ৫ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে অভিজ্ঞ কারও হাতে থ্রেডিং করানোই ভালো। এ প্রক্রিয়ায় ব্যথা, জ্বালা, চুলকানির মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কম।
ডার্মাপ্ল্যানিং
দীর্ঘদিন ধরে ব্রণের দাগ চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে এ প্রক্রিয়া। কিন্তু পিচ ফাজ অপসারণ করার ক্ষেত্রে বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা এর পরামর্শ দিচ্ছেন। একজন অভিজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্ট দিয়ে করানো হলে ডার্মাপ্ল্যানিং সব ধরনের ত্বকের জন্য নিরাপদ মনে করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যেতে পারে। যেমন: ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, অথবা জ্বালা অনুভূত হওয়া।
লেজার থেরাপি
আরও দীর্ঘমেয়াদি ফল চাইলে লেজার থেরাপি করা যেতে পারে। অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে। এই প্রক্রিয়ায় সাময়িকভাবে লোম গজানো বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। লেজার থেরাপির ফলে ত্বকে লাল বা পোড়া ভাব কিংবা হাইপারপিগমেন্টেশন হতে পারে।
যা মানা
মুখ ও শরীরের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণের পণ্য কিন্তু আলাদা। পিচ ফাজ অপসারণের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, মুখের জন্য তৈরি পণ্যই কেনা হচ্ছে। কারণ, বডি ডিপিলেটরিস মুখের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। পিচ ফাজ অপসারণের জন্য প্লাকিং কার্যকর নয়। অনেকে পিজ ফাজ ব্লিচ করে নেন। তবে এতে ভালোর চেয়ে ক্ষতিটাই বেশি হতে পারে। অনেকের মনেই শঙ্কা থাকে, পিচ ফাজ অপসারণে তা আরও ঘন হয়ে ওঠে। তবে সুসংবাদ হচ্ছে, এর কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা মেলেনি এখনো।

 স্বর্ণা রায়
মডেল: শর্মি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top