skip to Main Content

ত্বকতত্ত্ব I মেকআপ মেরিনেশন

রান্নার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় একেবারেই; বরং কৌশল থেকে অনুপ্রাণিত বলা যায়। দিনভর মেকআপ টিকিয়ে রাখবে, ফেশিয়াল ফিচারকে করে তুলবে আরও সুন্দর

মেকআপ প্রডাক্টের তালিকায় কনসিলার না থাকলে সেটা অনেকটা অসম্পূর্ণই। চোখের চারপাশের কালো দাগছোপ, ক্লান্তিই শুধু নয়; ত্বকের যেকোনো খুঁত আর দাগছোপ ঢাকতে কনসিলার চাই-ই। সম্প্রতি কনসিলারই হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ভাইরাল বিষয়। কারণ, এটি রান্না করার প্রক্রিয়া শেখাচ্ছেন বিউটি ইনফ্লুয়েন্সাররা! ‘কুকিং ইওর কনসিলার’ নিয়ে যে রব উঠেছে টিকটক আর ইনস্টাগ্রাম ফিড জুড়ে, প্রথমে শুনলে এমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। আদতে মূল ব্যাপারটা মোটেই তেমন নয়। রান্না করতে হবে না কনসিলার। শুধু নতুন একটা কৌশল খাটাতে হবে। যাতে এর কার্যকারিতা বাড়বে বহুগুণে।
মেরিনেশন মানে?
রান্নার আগে মাছ, মাংস বা সবজিকে মসলা দিয়ে মেখে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রেখে দেওয়া হয়। এতে করে মসলা ভালোভাবে মাছ-মাংসের মধ্যে ঢোকে। পরে রান্না করলে বাড়ে স্বাদ। এই প্রক্রিয়া পরিচিত মেরিনেশন নামে। মেকআপ মেরিনেশনের কৌশলটাও প্রায় একই রকম। ত্বকের নির্দিষ্ট জায়গায় কনসিলার মাখিয়ে রেখে দেওয়া হয় দশ থেকে বিশ মিনিট অব্দি। তারপর ব্লেন্ড করে নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় মুখত্বকে অনেক বেশি কনসিলার মাখিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। সঠিক প্রক্রিয়া জানা থাকলে অল্পতেই সেরে নেওয়া যাবে কাজ। আর এ ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রো হওয়ারও প্রয়োজন নেই, মেকআপ সম্পর্কে একদম বেসিক জ্ঞান থাকলেই চলবে। একদমই কঠিন নয় প্রক্রিয়াটি। টিকটক কুইন মিকেলা নিগোরিয়া প্রথম আলোতে আনেন এই ম্যাজিক টেকনিক। ইউটিউবের একটি ভিডিওতে তাকে অ্যাকনের দাগ ঢাকতে দেখা যায় কনসিলার দিয়ে। তবে তার কনসিলার ব্যবহারের প্রক্রিয়াটি ঠিকই নজরে পড়ে সৌন্দর্যপ্রেমীদের। কনসিলার ত্বকে মাখানোর পর সঙ্গে সঙ্গেই সেটা ব্লেন্ড করেননি মিকেলা, বরং ২-৩ মিনিট অপেক্ষা করে তারপর ব্লেন্ডিং শুরু করেন। এর ওপর দেন ফাউন্ডেশন। যার ফলাফল ছিল দারুণ। তবে কনসিলার কুকিংয়ের চল শুরু অনেক আগে থেকেই। ড্র্যাগ কুইনদের কল্যাণে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই কনসিলার মুখে মেখে অপেক্ষা করেন ২০-৩০ মিনিট অব্দি। তবে এর চেয়ে কম সময় রাখলেও কনসিলারের কার্যকারিতা বাড়বে। এ ক্ষেত্রে টাইমিং ইজ এভরিথিং। মনে রাখতে হবে, মেরিনেশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কনসিলারকে ত্বকে রেখে সেমি ড্রাই করে নেওয়া। তারপর ব্লেন্ড করলেই মিলবে ফ্ললেস ফিনিশ।

মেরিনেশন কেন?
তাড়াহুড়ায় মেকআপ করার সময় মেরিনেশনের জন্য বাড়তি সময় বের করা বেশ কষ্টসাধ্যই বটে। তবে মেরিনেশনে যে ফল মিলবে, তা আকাঙ্ক্ষিত। তাই ব্লেন্ডিংয়ের আগে বাড়তি পাঁচ থেকে দশ মিনিট যদি বের করা যায়, তা নিয়ে খেদ থাকবে না এটা সুনিশ্চিত। চোখের নিচে সঠিকভাবে কনসিলার প্রয়োগ না করলে তা আলাদা হয়ে ফুটে উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মেরিনেশনের ফলে কনসিলার যে বাড়তি সময় ত্বকে রাখা হয়, সে সময় দেহের উত্তাপে তা সুন্দরভাবে গলে যাবে এবং নিখুঁতভাবে মিশে যাবে ত্বকে। শুধু তা-ই নয়, বাড়তি এ সময় বাতাসের সংস্পর্শে কনসিলারের ঘনত্ব বাড়বে, পিগমেন্টেশন বেড়ে দেবে বাড়তি কাভারেজের নিশ্চয়তা। সেটও হবে সুন্দরভাবে। শুধু লিকুইড আর ক্রিম কনসিলারের ক্ষেত্রেই মেকআপ মেরিনেশন কার্যকর। এতে করে নিখুঁত, ক্রিজ প্রুফ লুকও পাওয়া যায় বলে মত মেকআপ আর্টিস্টদের। গরমের সময় তেলতেলে ত্বকে কনসিলার প্রয়োগের এর চেয়ে ভালো উপায় আর হয় না। এর জন্য যে ফুল কাভারেজ কনসিলার প্রয়োজন হবে, ব্যাপারটা একদমই তেমন নয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, লাইট কাভারেজ কনসিলার দিয়েই অনায়াসে সেরে নেওয়া যাবে মেরিনেশনের পুরো প্রক্রিয়া। ব্লেন্ড করে নেওয়া যাবে সহজে, বসবেও মসৃণভাবে। যারা ফুল ফেস মেকআপ করে অভ্যস্ত এবং চান তা দিনভর স্মাজ প্রুফ ও ট্রান্সফার প্রুফ হয়ে টিকে থাকবে, তাদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর প্রক্রিয়া এটি।
মেরিনেশন ম্যানুয়াল
শুষ্ক ত্বকে কনসিলার প্রয়োগ করলেই বাধবে বিপত্তি। কনসিলার প্যাচপ্যাচে দেখাবে। পরবর্তীকালে এর ওপর ফাউন্ডেশন মাখলে কেকি হয়ে উঠবে ত্বক। তাই ময়শ্চারাইজেশন মাস্ট। চোখের নিচের অংশেও ভালো করে ময়শ্চারাইজার মাখিয়ে নিতে হবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য এটা খুব জরুরি। তৈলাক্ত ত্বকে লাইটওয়েট ময়শ্চারাইজার মাখলেই চলবে। তারপর মেখে নিতে হবে প্রাইমার। এ ক্ষেত্রে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ম্যাটিফায়িং প্রাইমার আর শুষ্ক ত্বকের জন্য হাইড্রেটিং প্রাইমার ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো। আর ত্বক যদি ম্যাচিউর অথবা লার্জ পোরযুক্ত হয়, সে ক্ষেত্রে সিলিকন বেসড প্রাইমার ঢেকে দেবে বলিরেখা, সূক্ষ্মরেখা আর লোমকূপ। তবে খেয়াল রাখা চাই, প্রাইমার যেন ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সুন্দরভাবে মিলে যায়। তারপর চাইলে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে নেওয়া যায়। অথবা কনসিলার ব্যবহারের পরও মেখে নেওয়া যায় ফাউন্ডেশন। সেটা ব্যক্তিপছন্দের ব্যাপার। তারপর অ্যাপ্লিকেটর বা আঙুলের সাহায্যে কনসিলার মাখিয়ে নিতে হবে চোখের নিচে এবং দাগছোপযুক্ত স্থানে। এ ক্ষেত্রে ত্বক রঙের সঙ্গে মানানসই হওয়া চাই কনসিলারের শেড। তারপর ১০ থেকে ২০ মিনিটের জন্য কনসিলার রেখে দিতে হবে। দেহ তাপের সংস্পর্শে কনসিলার গলতে শুরু করবে। শুরু হবে কনসিলার কুকিং।
মেরিনেশনের সময়টা ব্যক্তিপছন্দ অনুযায়ী নির্ধারণ করে নিলেই চলবে। এই সময়টা লিপ লাইন করে, হেয়ারস্টাইল করে অথবা আইব্রো সাজিয়ে নেওয়া যাবে। নির্দিষ্ট সময় পর ব্লেন্ড করে নিতে হবে ভালোভাবে। এ ক্ষেত্রে ব্রাশ বা আঙুল—দুটোই ব্যবহার করা যাবে। আবার অনেক মেকআপ আর্টিস্টের মতে এ ক্ষেত্রে ড্যাম্প স্পঞ্জ ভালো কাজ করে। অতিরিক্ত প্রডাক্ট শুষে নেয়। কেকি দেখায় না একদমই। তারপর এটি পাউডার দিয়ে সেট করে নিলেই চলবে।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: অ্যানি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top