skip to Main Content

কভারস্টোরি I রাইড ইন স্টাইল

শুধু রোড ট্রিপেই নয়, জুতসই রেড কার্পেট ইভেন্টেও। ফ্যাশন ক্যাপিটালগুলোর র‌্যাম্প থেকেই মিলছে আভাস। অদম্য সাহস, দৃঢ়তা আর কুলনেসের পষ্ট পরিচায়ক এসব পোশাক দিয়ে স্টাইল স্টেটমেন্টেও আনা যায় লক্ষণীয় পরিবর্তন। বার্লিন ইন্সপায়ারড বাইককোর যেন ক্ল্যাসিক বাইকার ফ্যাশনের কনটেম্পরারি ভার্সন। তাতেই মজেছেন দেশি আর ভিনদেশি তারকা থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা। #বাইকারঅ্যাসথেটিক অথবা #বাইকারস্টাইল দিয়ে সার্চ দিলেই মিলছে বাইকার বয় আর মোটোমামি গার্ল হয়ে ওঠার সহজ সব সূত্র। বাকিটা জাহেরা শিরীনের লেখায়

এ বছরের শুরুতে ‘দ্য ব্যাটম্যান’ রিলিজ হওয়ার পর থেকেই যেন ব্ল্যাক গথিক আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যাশনের প্রতি আগ্রহ উসকে ওঠে ফ্যাশনিস্তাদের। হোক তা জুলিয়া ফক্সের ল্যাটেক্স ক্রেজ কিংবা ডোনাটেলা ভারসাচের শাইনি ল্যাটেক্স পরিহিত ভোগ ম্যাগাজিনের কাভার। রিহানাও প্যারিস ফ্যাশন শো মাতিয়েছিলেন পিচরঙা পিভিসি ড্রেসে। আর কানিয়ে ওয়েস্টকে ম্যাকডোনাল্ডস কমার্শিয়ালে দেখা গেছে ব্যালেন্সিয়াগা বুটস-এ। যেন সবার ফ্যাশন অবসেশনে পিভিসিই এগিয়ে। তাই ধারণা করাই যায়, ফ্যাশনে ২০২২ সালের হটেস্ট টেক্সচার ল্যাটেক্স। এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল লুক বছরজুড়েই যে প্রভাবিত করবে ফ্যাশনবিশ্বকে, তার প্রমাণ বার্লিনপ্রাণিত ‘বাইককোর’ ফ্যাশনের উত্থান। বিশ্ববিখ্যাত সব ফ্যাশন হাউসের ডিসপ্লে তো বটেই, ফ্যাশন ক্যাপিটালগুলোর রানওয়েজুড়ে এই ট্রেন্ডের নজরকাড়া প্রদর্শন।
প্রচলিত ফ্যাশন টেক্সচারের চেয়ে একদমই আলাদা এটি। পরলে বিদ্রোহী কিংবা ব্যাডঅ্যাস দেখাতে বাধ্য। হাঁটার সময় শব্দ সৃষ্টি করবে। পরার পর গরম লাগবে। তবে ছবিতে কিন্তু দারুণ দেখায়, লিকুইড গ্লসের মতো। দারুণ টেকসইও বটে। শতভাগ পানিরোধী ও স্টাইলিশ, আলট্রা শাইনি পিভিসি। জিভাঁশির ফল ২০২২-এর রেডি টু ওয়্যার কালেকশনে অ্যাঙ্গুলার, আর্কিটেকচারাল কাটের দেখা মিলেছে, যার প্রকৃতি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ধাঁচের। প্যারিস ফ্যাশন উইকের ব্যালেন্সিয়াগার শো ছাড়াও হেলিয়ট এমিলের প্রদর্শনীতেও এর উপস্থাপনকে রানওয়েতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলিগেন্সের সঙ্গে তুলনা করেছে ভোগ ম্যাগাজিন।
‘দ্য ব্যাটম্যান’-এর কস্টিউম তৈরি করা হয়েছিল মুডি গথাম সিটির সঙ্গে মানিয়ে। আপাদমস্তক কালো বডিস্যুটেই। সঙ্গে ক্যাটওমেনের কালো ক্যাটস্যুটও ছিল নজরকাড়া। যাকে তকমা দেওয়া হয়েছে বছরের সেরা ‘স্টাইল প্রোটাগনিস্ট’ হিসেবে। দুয়া লিপা, কার্ডি বি আর আসানটির পরার কারণে। রিয়ানার ক্যাটস্যুটও দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। আমিনা মুয়াদ্দি আর উলফোর্ডের কোলাবরেশনে তৈরি ক্যাটস্যুটটি বিল্ট ইন শু যুক্ত, যা বিকিয়েছে পাঁচ হাজার ডলারে। আর এবারের ব্যাটম্যানের পোশাকও ছিল অন্য ব্যাটম্যানদের থেকে আলাদা। টেক স্যাভি আরমার আর মাসল পপিং চেস্ট পিসের বাড়াবাড়ি ছিল না; বরং অনেক বেশি বাস্তবসম্মতভাবে তৈরি করা হয়েছে এবারের পোশাক। কস্টিউম টিম ডেভ ক্রসম্যান এবং গ্লিন ডিলনের বিশেষ ট্রেডমার্ক এবার এটাই ছিল। রণক্ষেত্রের জন্য তো বটেই, সঙ্গে মোটরসাইকেল রাইডের জন্য স্টাইলিশ অপশন হিসেবেও বেছে নেওয়া যাবে।
ব্যাটম্যান অনুপ্রাণিত করছে ফ্যাশন হাউসগুলোকেও। ওমেনওয়্যার ব্র্যান্ড হাচ ডিজাইন তৈরি করেছে রুমার টপ। মেনজওয়্যার ব্র্যান্ডে টড প্যাট্রিকের ব্ল্যাক লেদার প্যান্টও থাকবে এ তালিকায়। ফ্যাশনে সাই ফাই শিক পছন্দ যাদের, তাদের জন্য দারুণ অপশন। ফ্র্যান জ্যাকেট বাই অল মাই লাভও থাকবে এ তালিকায়। জ্যাকেটটি তৈরি হয়েছে শাইনি প্যাটেন্ট ফখ লেদারে; যার লাইনিং সিল্কের। অল মাই লাভের সিইও জর্জ ডর্ফম্যানের মতে, পিভিসি হচ্ছে শিক এবং টাইমলেস। এতে তৈরি জ্যাকেট যেকোনো লুকে অন্যতর আভিজাত্য যোগে যথেষ্ট। এগুলোর সবই কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যাশনের উত্থানের ফল, যা কয়েক দশক ধরেই বার্লিন ফ্যাশন উইকে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ফলে ফ্যাশনসচেতনেরাও ঝুঁকছেন বাইককোর ফ্যাশনে।
ফ্রিডম, এসকেপিজম আর কুলনেস—প্রতিটি অনুভূতিই মোটরসাইকেলের সঙ্গে জড়িত। শুধু ব্যাটম্যানেই তা উপস্থাপিত হয়েছে এমনটা কিন্তু নয়। টম হার্ডি আর চার্লিজ থ্যারনের ম্যাড ম্যাক্স: ফারি রোডের কথা মনে পড়ে? ভয়ংকর সব কলাকৌশলে দর্শকহৃদয় কেড়েছিলেন। অথবা দ্য প্লেস বিয়ন্ড দ্য পাইনসে রায়ান গসলিং বা বার্ব ওয়্যারে পামেলা এন্ডারসনকে? সে যেন অন্যতর আকর্ষণ। তারই প্রতিফলন যেন দেখা গেল বছরের শুরুর প্যারিস ফ্যাশন উইকের অটাম উইন্টার ২০২২-এর আসরে। যেখানে ওমেনওয়্যার ডিজাইনাররা দেখিয়েছেন বাইককোরের অভিনব সব উপস্থাপনা।
ফ্যাশনে বাইকার আর মোটো মোটিফের বিস্তৃতির পেছনের ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। নিতান্তই ভদ্রলোকের পরিচায়ক থেকে হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে ওঠার ট্রেডমার্ক—মোটরসাইক্লিংয়ের বৈপ্লবিক প্রভাব রয়েছে বিশ্বসংস্কৃতি তথা ফ্যাশনে। শুরুর দিকে মোটরসাইক্লিং ছিল ব্যয়বহুল কর্মকাণ্ডের তালিকাভুক্ত। বিত্তশালী পুরুষদের মধ্যেই এর জনপ্রিয়তা ছিল বেশি। কিন্তু যানবাহন হিসেবে নয়, বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে পার্কে ঘুরে বেড়ানোর জন্য। আর তাই তার পোশাকও হতে হতো একদম মানানসই। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে স্ট্যান্ডার্ড কান্ট্রিসাইড ইউনিফর্ম ছিল টুইড স্যুট। তাই মোটরসাইক্লিস্টদের জন্যও অন্যতম পোশাক হয়ে ওঠে এটি। সঙ্গে ফুল লেন্থ বুট, পা নিরাপদে রাখার জন্য। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পুলিশ আর মিলিটারি রাইডারদের প্রথম মোটরসাইক্লিং ইউনিফর্ম দেওয়া হয়। তত দিনে আরও দ্রুতগামী হয়ে ওঠে এ যান। সুরক্ষার জন্য তখন পরা শুরু হয় গন্টলেট গ্লাভস। আর ফুল লেন্থ বুট তো ছিলই। তখন মোটরসাইক্লিস্টরা পরতে শুরু করেন ফ্ল্যাটক্যাপ। সে সময় মোটরসাইকেল রেসিং দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে ক্ষেত্রে রেসারদের প্রথম পছন্দ ছিল কম্পিটিশন সোয়েটার, উজ্জ্বল সব রঙের উল দিয়ে তৈরি ক্লোজ ফিটিং এসব সোয়েটারে এমব্রয়ডারি করে লেখা থাকত মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড অথবা ক্লাবের নাম। ফেল্ট লেটারে। সে সময় এসব কম্পিটিশন সোয়েটার হয়ে ওঠে ব্যাজ অব অনারের মতো। মোটরসাইকেল রেসার এবং তাদের ক্লাবের জন্য। আজ অব্দি ভিনটেজপ্রেমীদের কাছে এগুলো দারুণ জনপ্রিয়।
পরবর্তীকালে গতি বাড়তে শুরু করে এই যানবাহনের। ফলে প্রতিরক্ষামূলক পোশাকের চাহিদা বাড়তে থাকে। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে পুরু চামড়ার হর্সহাইড মিলিটারি ওভারকোট, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত হতো। ১৯২৮ সালে ইরভিং স্কট নামের নিউইয়র্কে বসবাসরত একজন জ্যাকেট প্রস্তুতকারক মোটরসাইক্লিংয়ের উপযোগী প্রথম লেদার জ্যাকেট তৈরি করেন। নাম দেন পারফেক্টো, তার পছন্দের সিগার কোম্পানির নামে। সাড়ে পাঁচ ডলারের সেই ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট মোটরসাইক্লিংয়ের আরেক নাম হয়ে ওঠে। এক্সপোসড জিপ ক্লোজার, কলারে র‌্যাপ ডিটেইল আর ওয়েস্ট বেল্টযুক্ত ছিল জ্যাকেটগুলো। পারফেক্ট ফিট আর সহজে খোলা যায় বলে রাইডারদের মাঝে দারুণ গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। পপ কালচার স্টেপলে পরিণত হয় এই মোটো জ্যাকেট যখন হলিউড হার্টথ্রব মারলন ব্র্যান্ডোকে তার সুপারহিট ফিল্ম ওয়াইল্ড ওয়ানে (১৯৫৩) পারফেক্টো পরতে দেখা যায়। রাতারাতি কুলনেসের প্রতীক হয়ে ওঠা এই জ্যাকেট নিয়ে কাজ শুরু করেন ডিজাইনার ইউভ সেইন্ট লরেন। ষাটের দশকে। পরবর্তীকালে একই পথে হাঁটেন জন পল গতিয়ের। আশির দশক থেকে কালেকশনে যোগ হওয়া লেদার জ্যাকেট এখন মেলে এই হাউসে। সেই সময় শুধু বাইকার নয়; রকার, পাঙ্ক, রেবেল—সবার মধ্যেই জনপ্রিয়তা পায় এই জ্যাকেট।
ইংল্যান্ডে মোটরসাইক্লিং মানেই বিরূপ আবহের জন্যও প্রস্তুত থাকা। সে ক্ষেত্রে লেদার জ্যাকেট শারীরিক সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত হলেও বৃষ্টিমুখর আবহাওয়ার জন্য জুতসই নয়। ফলে ১৯৩৫ সালে জে বারবার অ্যান্ড সন্স প্রথম তৈরি করে ওয়াটারপ্রুফ ওয়্যাড-কটন-জ্যাকেট। শুধু মোটরসাইক্লিস্টদের জন্য। চার পকেটবিশিষ্ট এই জ্যাকেটে আপার লেফট অ্যাঙ্গেল বিশেষভাবে ম্যাপের জন্য তৈরি। সিক্ত আবহাওয়া থেকে সুরক্ষা দিতে বেশ দ্রুতই মোটরসাইক্লিস্টদের প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে এ জ্যাকেট। ১৯৪৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে হাজির হয় বেলস্টাফ। বাজারে নিয়ে আসে আইকনিক ওয়্যাড কটন ট্রায়ালমাস্টার। চেগুয়েভারা থেকে স্টিভ ম্যাককুইন, ইউওয়ান ম্যাকগ্র্যাগরদের পরনে দেখা যায় ক্ল্যাসিক এসব বাইকার জ্যাকেট।
মোটরসাইক্লিস্টদের মাস্ট হ্যাভ লিস্টে বরাবরই নাম থাকবে ইঞ্জিনিয়ার বুটের। শুরুটা হয়েছিল ১৯২৮ সালে। চিপেওয়ো আর ওয়েস্ট কোস্ট শু কোম্পানি এই ফুটওয়্যারের প্রথম দিককার উৎপাদনকারী। প্রথম দিকে শুধু আমেরিকান রেইল রোডের ইঞ্জিনিয়ারদের পায়ে দেখা গেলেও চল্লিশের দশকে মোটরসাইক্লিস্টদের মাঝে এর জনপ্রিয়তা বাড়ে। আজ অব্দি ক্ল্যাসিক বাইকার লুকের জন্য এক জোড়া ব্ল্যাক ইঞ্জিনিয়ার বুট লাগবেই।
মোটো স্টাইলকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে দারুণ ভূমিকা ছিল আইকনিক আমেরিকান অভিনেতা মারলন ব্র্যান্ডোর। ১৯৫৩ সালের ক্ল্যাসিক দ্য ওয়াইল্ড ওয়ান চলচ্চিত্রে পর্দায় তাকে দেখা গিয়েছিল জনি স্ট্র্যাবলারের চরিত্রে। সেবারই প্রথম বাইকার গ্যাংয়ের কনসেপ্ট সবার সামনে আসে। পুরোদস্তুর পঞ্চাশের বাইকার লুক পর্দায় ফুটিয়ে তোলেন ব্র্যান্ডো। কালো চামড়ার স্কট পারফেক্টো জ্যাকেট, ব্লু জিনস আর ইঞ্জিনিয়ার বুটে; যা অনুপ্রাণিত করে কিশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের স্টাইলিংকে। টন-আপ বয়জ নামে পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করেন মোটরসাইক্লিস্টরা।
ষাটের দশকে মোটরসাইকেল ক্লাবগুলোতে ইউনিফর্মে যুক্ত হয় লেদার ভেস্ট। দ্য কাট নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। ক্লাবগুলো তাদের নাম ছাড়াও নানা রকম প্রতীক জুড়ে দিত এসব ভেস্টে। ব্যাডঅ্যাস লুকের জন্য আজ অব্দি গো টু গার্মেন্ট ব্ল্যাক লেদার ভেস্ট। মেইনস্ট্রিম ফ্যাশনের অংশ হয়ে ওঠা মোটো ফ্যাশনে আশির দশকে মন্দা ভাব দেখা দেয়। কাওয়াসাকি নিনজার মতো স্পোর্ট বাইকগুলোর কল্যাণে সাধারণ বাইকাররাও তাদের পছন্দের রেসারের মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে শুরু করেন। পরতে শুরু করেন অদ্ভুত সব আকারের আর জিগজ্যাগ দেওয়া ডে গ্লো লেদার জ্যাকেট। সত্তরে পাঙ্ক মিউজিক প্রভাবিত করে পারফেক্টো লেদার জ্যাকেটকে।
২০০০ সালে আশির মন্দা কাটিয়ে ওঠে মোটো ফ্যাশন। স্কট আর বেলস্টাফের মতো ক্ল্যাসিক মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলো পারফেক্টো আর ট্রায়ালমাস্টারের আধুনিকায়নে কাজ শুরু করে। ফলে নতুন প্রজন্মের কাছেও এর কদর বাড়ে। সেই সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেলভেজ ডেনিম আর হেরিটেজ বুট। আর যদি ২০২২ এ ফ্ল্যাশ ফরোয়ার্ড করা যায়, তাহলে দেখা যাবে, বাইকার জ্যাকেট ফ্যাশনে সব থেকে এগিয়ে। আলেক্সান্ডার ম্যাককুইন থেকে ক্লোয়ে, কিংবা সিমন রোশা থেকে অ্যালায়া—সবার কালেকশনে এর উপস্থিতি নজর কাড়বেই। ম্যাককুইন আর ক্লোয়েতে পঞ্চাশের মারলন ব্র্যান্ডোর কুলনেসের সঙ্গে আজকের ফ্যাশনিস্তাদের ফ্যাশন অ্যাসথেটিক মিলিয়ে তৈরি হয়েছে একেকটি পিস। শুধু বাইকার জ্যাকেট নয়, বাইকার মোটিফ নিয়েও কাজ হচ্ছে ডিজাইনারদের ডেরায়। দিওর আর বালমাঁর মতো বাঘা বাঘা ব্র্যান্ড তাদের কালেকশনে যোগ করছে মোটোক্রস মোটিফ। জ্যাকেট, ড্রেস এমনকি অ্যাকসেসরিজেও। মোটোক্রস প্যাডিংয়ের সঙ্গে নারীসুলভ সিলুয়েটের ব্যবহারে আজকের বাইকার চিককে পুনঃসঙ্গায়িত করার প্রচেষ্টা সুস্পষ্ট। সাম্প্রতিক সময়ে আইডি কাভার স্টার রোজালিয়ার লেটেস্ট অ্যালবাম ‘মোটোমামি’তেও বাইকার ফ্যাশনের সুস্পষ্টতা।
তবে এই ট্রেন্ডের উপস্থিতি নজরে আসে বেশ কয়েক সিজন আগে থেকেই। লুই ভিতোঁর অটাম উইন্টার ২০ থেকে সেলিনের স্প্রিং সামার ২০২২ মেনজওয়্যার শোতে প্রদর্শিত মোটোক্রস জ্যাকেট—সবেতেই যেন আভাস ছিল মোটো ফ্যাশনের উত্থানের। ভিনটেজের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইকনিক সব মোটো পিস আবার ফিরেছে ট্রেন্ডে। ব্যালেন্সিয়াগার মোটরসাইকেল ব্যাগ এখন হয়ে উঠেছে এসেনশিয়াল অ্যাকসেসরিজ আইটেম। বালমাঁর বাইকার জিনসও থাকছে এ তালিকায়। বাইককোর ট্রেন্ড নিয়ে মেতে উঠছে গোটা ফ্যাশনবিশ্ব। ভিনটেজ আর নস্টালজিয়া প্রাণিত এই ধারা হয়ে উঠেছে ২০২২ সালের অন্যতম ফ্যাশন ট্রেন্ড। তবে লেদার জ্যাকেট, গ্রাফিক টি-শার্টের মতো মোটো এসেনশিয়ালগুলোর সাম্প্রতিক নকশায় ডিজাইনার ভাইব কম, বরং কালেকশন দেখে মনে হতে পারে, সরাসরি বাইকিং শপ থেকে তুলে আনা হয়েছে পিসগুলো। হালের ওয়াইটুকে ফ্যাশনের সঙ্গেও দারুণ খাপ খাওয়া এ ট্রেন্ড ভাঙছে চিরাচরিত লিঙ্গবৈষম্য। রানওয়ে থেকে রেড কার্পেটে। ফল ২০২২ সিজনের কালেকশনে বাইকার চিক লুক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রচুর মোটো জ্যাকেট। হেড টু টো ডেনিম আর জিপার ডিটেইলস। তবে যারা আরও একধাপ এগিয়ে, তাদের জন্যও ছিল চমক। মোটোক্রস প্রটেকটিভ গিয়ারের মতো দেখাতে বডিস দেখা গেছে বালমাঁ আর দিওরের প্রদর্শনীতে। অপেরা গ্লাভস পরনেও দেখা গেছে মডেলদের। সুতীক্ষè তবে নমনীয়—দুটোকে একই সঙ্গে প্রকাশের প্রয়াস ছিল ডিজাইনার ব্র্যান্ডগুলোর। ফলাফল ডেলিকেট ব্ল্যাক মিনি ড্রেসের সঙ্গে ইউটিলিটারিয়ান গ্লাভসের স্টাইলিং চোখে পড়েছে দিওরের শোতে। জাপানিজ ডিজাইনার জুনাইয়া ওয়াতানার সৃষ্টিতেও একই চমক। লেদার জ্যাকেট যা বলগাউন স্কার্টের রূপ নিয়ে নেয়। আর আলেক্সান্ডার ম্যাককুইনের শোতে দেখা গেছে মোটো জ্যাকেট আর ফ্লোয়ি স্কার্টের জমাটি জোড়। তবে রোজালিয়ার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ও সমালোচিত অ্যালবাম মোটোমামি এই ট্রেন্ডের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। রোজালিয়ার ডিজাইনার জ্যাকব জিলের মতে, প্রতিদিন পরার উপযোগী বাইকার ফ্যাশন ট্রেন্ড। পুরোটাই টেক্সচার আর মিক্সিং ম্যাটেরিয়ালের জাদু। কারণ, একই পোশাকে বিভিন্ন মুড তৈরিই মূল লক্ষ্য। লেদার জ্যাকেট থেকে বাইকার হেলমেট আর হাইওয়ে রেডি সানগ্লাস দিয়ে অনায়াসেই তৈরি করে নেওয়া যায় বাইককোর ট্রেন্ড। অন কিংবা অফ রোডের জন্য।
হেড টু টো লেদার
হোক তা স্ট্যাপলেস ড্রেস কিংবা মোটোক্রস রেডি প্যান্ট আর জ্যাকেট, বাইকার ফ্যাশনে মাস্ট হ্যাভ ম্যাটেরিয়াল হচ্ছে লেদার। শতভাগ খাঁটি, নকল কিংবা হাল আমলের মাশরুম বেসড। চামড়ায় মোড়ানো পোশাক থাকতেই হবে সংগ্রহে। এমনকি এই ট্রেন্ড হারিয়ে গেলেও লেদার জ্যাকেট বরাবরই ক্ল্যাসিক স্টেপল।
ফেমিনিন টাচ
চামড়ার টাফনেসের বৈপরীত্যে ফেমিনিন শিলুয়েট টেক্সচার আর কালার যোগের পরামর্শ স্প্যানিশ ডিজাইনার জিল জ্যাকবের। এতে সফটনেস এবং সেনসুয়ালিটি যোগ হবে লুকে। এ ক্ষেত্রে লাইলাক এবং লাল রং থাকবে সবচেয়ে এগিয়ে। যেমন একটা সিল্কের স্লিপ ড্রেস অথবা লেইসি কোনো টপের ওপর যদি লেদার ট্রেঞ্চ কোট চড়িয়ে নেওয়া যায়, স্টাইল কোশেন্ট বাড়বেই।
বুট বুস্ট
জ্যাকবের মতে ওভারসাইজড বুট হচ্ছে বাইকার চিক লুক তৈরির সবচেয়ে সহজ উপায়। কুল, চাঙ্কি সাইজের বুট যেকোনো লুক পাল্টে দিতে যথেষ্ট। তবে এ ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট নয়, হাই ফর্ম বুট কিন্তু ট্রেন্ডি থাকবে বছরজুড়ে।
স্পিড প্রুফ সানগ্লাস
মোটো লুককে সম্পূর্ণ করতে এর জুড়ি নেই। ধুলাবালি থেকেও বাঁচায় এই স্পোর্টি ব্ল্যাক সানগ্লাসগুলো। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, চোখে পরে নেওয়া যায় অনায়াসে যেকোনো সময়ে কিংবা আয়োজনে।
হ্যান্ডি ব্যাগ
২০০০ সালের দিকে দারুণ জনপ্রিয়তা পায় ব্যালেন্সিয়াগার মোটরসাইকেল ব্যাগ। ওয়াইটুকে ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে ব্যাগের ক্রেতা বেড়েছে। মোটো স্টাইলের সঙ্গে দারুণ জুতসই। সম্পূর্ণ লেদারে তৈরি এসব ব্যাগের কোনোটা ক্রসন্ট শেপের কাগোল ব্যাগ আবার কোনোটা ইজি টু ওয়্যার। লোগোলেস, রিল্যাক্সড স্ট্রাকচারের ব্যাগ। তবে তাতে অ্যান্টিক ব্রাস হার্ডওয়্যার, ছোট-বড় স্টাড, মেটালিক ট্রিম কিংবা লেদারের টাসেল থাকতে হবেই। ফিয়ারলেস ফ্যাশনেবল লুকের জন্য।
শ্যানেল, ব্যালেন্সিয়াগা, আলেক্সান্ডার ম্যাককুইন, আলাইয়াসহ অনেক বাঘা বাঘা ব্র্যান্ডই বুঝিয়ে দিয়েছে, কনটেম্পরারি বাইকার ফ্যাশন এখন ট্রেন্ডে। আর এর রূপ এখন দুটি। প্রথমটি ওয়াইটুকে আর জাপানিজ অ্যানিমে অনুপ্রাণিত। উপস্থাপিত হয়েছে ডিজেলের শোতে। যেখানে বেল্টেড মিনিস্কার্টকে কুয়িল্টেড ডেনিম জ্যাকেট আর মোটরবাইক জ্যাকেট দিয়ে পরা হয়। আর অন্যটিতে নারীসুলভ কমনীয়তার সুস্পষ্টতা। সিমন রোসার শোতে তাই বাইকার স্টাইলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে টুল আর পার্লের অ্যাকসেসরিজ। আর সেইন্ট লরেন্টের শোতে স্লিপ ড্রেসের সঙ্গে পরা হয়েছে ওভারসাইজড লেদার জ্যাকেট।
তাই মোটো ফ্যাশনের ক্ল্যাসিক কনসেপ্টে অটল থাকবেন, নাকি কনটেম্পরারি পথে হাঁটবেন—এর পুরোটাই ফ্যাশন-সচেতনদের ব্যক্তিগত পছন্দ। অপশনের কিন্তু কমতি নেই।

মডেল: অভিনেতা মুশফিক আর ফারহান ও অভিনেত্রী সুনেরাহ্
মেকওভার: পারসোনা
মোটরবাইকস: র‌্যানকন মোটরবাইকস লিমিটেড সুজুকি বাংলাদেশ
ওয়্যারড্রোব: র নেশন
ফ্যাশন ডিরেকশন ও স্টাইলিং: মাহমুদুল হাসান মুকুল
ছবি: জিয়া উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top