skip to Main Content

বহুরূপী I দুধ দর্পণ

পুষ্টিকর পানীয় হিসেবে দুধ অনেকের বেশ প্রিয়। অনেকেই আবার এই তরল খাদ্য দেখলে নাক সিঁটকান! তবু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুধ পানের যে বিকল্প নেই, সে কথা বলাই বাহুল্য। তবে এরও রয়েছে রকমফের। আমাদের দেশে গরুর দুধেরই প্রচলন বেশি। বাণিজ্যিকভাবেও পাওয়া যায় এটি। খাদ্যনিরাপত্তার মান পূরণের জন্য পাস্তুরিত করার দরকার পড়ে। এ কারণে এই দুধে অন্যান্য ধরনের দুধের তুলনায় বেশি উচ্চ চর্বিযুক্ত উপাদান (প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ) রয়েছে। আরও রয়েছে বিশেষ ননিযুক্ত স্বাদ।
অন্যদিকে নন-ফ্যাট দুধ স্কিমড মিল্ক নামেও পরিচিত। এটি পুরো চর্বিহীন ভার্সন। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের গরুর দুধ চর্বি অপসারণের জন্য স্কিম করা হয়। এই প্রক্রিয়ার শেষ পরিণতি হলো পাতলা ও পানিযুক্ত দুধ। সাধারণত যারা স্বাদকে অগ্রাধিকার দেন, তাদের কাছে এটি বেশ পছন্দের।
কাঁচা দুধ হলো এমন এক ধরনের গরুর দুধ, যা অস্পৃশ্য থেকে যায়। হ্যাঁ, এ ধরনের দুধ পাস্তুরিত হয় না। বলা যেতেই পারে, গরম না করার ফলে এই দুধে রোগ সৃষ্টিকারী প্যাথোজেন থাকার ঝুঁকি রয়েছে। খাদ্য বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের কাঁচা দুধ পান না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি রাজ্য ছাড়া বাকি সব রাজ্যে এমন দুধ বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ। তবে অনেকের যুক্তি, এতে উপকারী পুষ্টি এনজাইম ও প্রোবায়োটিক রয়েছে, যা পাস্তুরিতের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; যদিও এসব দাবির সমর্থনে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বা ভিত্তি নেই। তাই আপনি যদি খাদ্যনিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীন হন এবং এর স্বাদ আপনার ভালো লাগে, তাহলে নিকটবর্তী দুগ্ধ খামার থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
বলে রাখা ভালো, দুধে ল্যাকটোজ অনেকেই সহ্য করতে পারেন না। দেখা যায়, ল্যাকটোজ দুধে প্রাকৃতিকভাবে উপস্থিত চিনি বমি-বমি ভাব, ডায়রিয়া, ফোলা ভাব এবং বদহজমের লক্ষণগুলোকে ট্রিগার করে। যারা দুধের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ উপভোগ করতে চান, অথচ ল্যাকটোজ দুধে উপস্থিত উপাদান হজম করতে পারেন না, তাদের জন্য ল্যাকটোজমুক্ত দুধ হতে পারে একধরনের আশীর্বাদ।
অন্যদিকে, আধুনিক বাটারমিল্কের সঙ্গে মাখনের কোনো সম্পর্ক নেই, যদিও অনেকেরই এ নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। অবশ্য অতীতে মাখন মন্থন করার পরে অবশিষ্ট থাকা মিষ্টি ক্রিম থেকে বাটারমিল্ক তৈরি করা হতো। তবে এই দুধের পণ্য এখন কেবল সম্পূর্ণ দুধ কিংবা কখনো কখনো গরুর নন-ফ্যাট দুধে চিনি ও লবণযোগে তৈরি করা হয়, যা পরে গাঁজন করা হয়। দুধ একবার গাঁজন হয়ে গেলে বাটারমিল্ক একটি তীব্র স্বাদযুক্ত ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ দুধে পরিণত হয়। আপনি ভাজা মাছ কিংবা মুরগি পছন্দ করলে এবং এগুলোর সঙ্গে কোনো সুপার ক্রিস্পি স্বাদ পেতে চাইলে বাটারমিল্কের চেয়ে ভালো বিকল্প আর কীই-বা হতে পারে!
আরও আছে কনডেন্সড মিল্ক। এটি একধরনের সম্পূর্ণ গরুর দুধ, যা ৬০ শতাংশ পানির উপাদান সরা না পর্যন্ত গরম করা হয়; তারপর প্রচুর পরিমাণে চিনি দিয়ে মিষ্টি করা হয়। এর ফলে তা এমন এক দুধের পণ্যে পরিণত হয় যা ঘন, ক্রিমি এবং ডেজার্ট রেসিপিগুলোতে ব্যাপক পরিসরে ব্যবহারযোগ্য। আমাদের দেশে চায়ের দোকানগুলোতে চা কিংবা কফি বানাতে কনডেন্সড মিল্কের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
এবার জানা যাক কাজু দুধের কথা। এটি ক্রিমি, পিচ্ছিল এবং প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি ধরনের দুধ। এই ধরনের উদ্ভিদভিত্তিক দুধ কাজু থেকে তৈরি করা হয়, যা সাধারণত পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। কাজু দুধ প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন, খনিজ ও উপকারী উদ্ভিদ যোগে পরিপূর্ণ। মিষ্টি এবং মিষ্টিহীন—উভয় প্রকারের কাজু দুধই কিনতে পাওয়া যায়। চাইলে অবশ্য বাড়িতেও বানিয়ে নেওয়া যায়। আর তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গরুর দুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
অনেকেই ওটমিলে দুধ যোগ করার কথা শুনেছেন, কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, ওটস থেকেও দুধ তৈরি করা যায়। ওট মিল্ক হলো দুধের একটি দুগ্ধমুক্ত বিকল্প, যা গ্লুটেন, বাদাম, সয়াসহ বেশির ভাগ সাধারণ অ্যালার্জেন থেকে মুক্ত। এটি তৈরি করতে শুধু পানির সঙ্গে যেকোনো ধরনের ওটস, বিশেষত রোলড ওটস মিশিয়ে তরলটি ছেঁকে নিতে হবে।
ওপরে উল্লেখ করা দুধগুলো ছাড়াও বহুল প্রচলিত অন্যান্য দুধের মধ্যে রয়েছে টোনড মিল্ক, ছাগলের দুধ, রাইস মিল্ক, হেম্প মিল্ক, নারকেলের দুধ, সয়া দুধ, বাদাম দুধ ইত্যাদি।

i ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top