skip to Main Content

ফিচার I তপঃ তনুশ্রী

কুর্তি-কামিজ বা শাড়ির মতো সনাতন পোশাকে তন্বী দেখানোর নিমিত্তে। কেনাকাটায় হওয়া চাই কৌশলী

স্লিম দেখানো কি শুধুই ওজন কমানোর ওপর নির্ভর করে? ফ্যাশনগুরুদের মতে, পোশাকের ফ্যাব্রিক, রং, কাট, দেহের গড়ন—এ সবকিছুর ওপরই নির্ভর করে পরিপূর্ণ লুক। সহজ কিছু উপায়ে এথনিক ওয়্যারে নিজেকে স্লিম দেখানো সম্ভব। কী সেগুলো?
দেহের কাঠামো অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করতে হবে প্রথমে। যাদের বুক ও কোমরের অংশ চওড়া, কিন্তু কোমরের নিচের অংশ এবং পা অপেক্ষাকৃত পাতলা গড়নের, তাদের খোলা বা চওড়া আকৃতির নেকলাইনের পোশাক বেছে নিতে হবে। এতে করে কোমর অপেক্ষাকৃত কম চওড়া দেখাবে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভারী ডিজাইনের না পরে কিছুটা হালকা পোশাক পরলেও দেহের অবয়ব অতটা দৃশ্যমান হবে না। এর সম্পূর্ণ বিপরীত গড়নের হলে? যেমন যাদের বুক-কাঁধ সরু, কোমর অপেক্ষাকৃত ছোট, কিন্তু এর নিচের অংশ প্রশস্ত, তাদের এমন আকৃতির পোশাক বেছে নিতে হবে, যাতে শরীরের ওপরের অংশই বেশি হাইলাইটেড হয়। দেহের গড়ন যদি এমন হয়, তবে ভারসাম্য ধরে রাখতে বর্গাকার বা বোট নেকলাইন যুক্ত পোশাক বেছে নেওয়া যেতে পারে।
দেহের গড়নের পর এথনিক ওয়্যার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো পোশাকের ফ্যাব্রিক। নিজেকে স্লিম দেখাতে চাইলে অবশ্যই স্প্যানডেক্স, ম্যাট জার্সি বা ভারী স্টার্চযুক্ত সুতির মতো শক্ত প্রকৃতির বডি-হাগিং কাপড় পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে হবে। এ ধরনের কাপড়ে দেহের আকার আকৃতি আরও স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। এর পরিবর্তে শিফন, জর্জেট, সিল্ক, স্যাটিন কিংবা হালকা পলি-কটনের মতো ফ্যাব্রিক বেছে নেওয়া যায়। এ ধরনের কাপড় শরীরে আঁকড়ে থাকবে না, বরং স্বাচ্ছন্দ্যে-স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় কুর্তির কথা। টাইট কিংবা শরীরের সঙ্গে লেগে থাকা কুর্তির বদলে কিছুটা ঢিলেঢালা, লম্বা গোছের কুর্তি বেছে নিলে তা দেহের গড়ন বদলে দেবে। দেখতে তুলনামূলক স্লিমও লাগবে।
ফ্যাব্রিকের পরই যে বিষয়ে কৌশলী হতে হবে, তা হলো পোশাকের রং। স্লিম দেখাতে হলে হালকা রঙের বদলে বেছে নেওয়া যায় গাঢ় রং। এগুলো দেহের অতিরিক্ত কার্ভ লুকিয়ে ফেলতে পারে নিমেষেই। কালার প্যালেটের সবচেয়ে গাঢ় রং হওয়ায় এথনিক ওয়্যারের প্রধান রং হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে কালোকেই। স্লিম দেখানোর পাশাপাশি কালো এনে দিতে পারে আভিজাত্যের ছোঁয়া। তবে কালো যদি কোনো অনুষ্ঠান বা পরিবেশের সঙ্গে মানানসই না হয়, তাহলে এরও কিছু বিকল্প রয়েছে। বেছে নেওয়া যায় গাঢ় বেগুনি, পান্না সবুজ, চকোলেট ব্রাউন, নেভি ব্লু, রুবি পিঙ্ক, বারগ্যান্ডি, মেরুন—এ ধরনের কিছু রং।
এথনিক ওয়্যারে নিজেকে স্লিম দেখাতে চাইলে কুঁচি দেওয়া পোশাক না পরাই ভালো। কুঁচি বা অতিরিক্ত ঘেরযুক্ত পোশাক দেহে অতিরিক্ত ভারিক্কি ভাবের সৃষ্টি করে। স্লিম দেখাতে হলে হালকা বা ঢেউ খেলানো কাটের পোশাক বেছে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফ্যাব্রিক নির্বাচনের দিকে মনোযোগ জরুরি। বেছে নেওয়া যায় স্যাটিন বা সিল্কজাতীয় কাপড়। বাস্ট এরিয়া তুলনামূলক ভারী হলে ফোলানো বা কুঁচি দেওয়া হাতার পোশাক পরা থেকে বিরত থাকা চাই। বেছে নিতে হবে সোজা-লম্বা কাটের হাতা। সালোয়ারের ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যায় প্যান্ট কাট। স্লিম দেখানোর আরেকটি উপায় হতে পারে প্যানেল-কাট। লেহেঙ্গা হোক কিংবা আনারকলি—পোশাকে যত বেশি প্যানেল থাকবে, ততই দেহের গড়ন দেখাবে লম্বাটে। এতে ঢাকা পড়বে দেহের অতিরিক্ত ভারিক্কি ভাবও!
পোশাকের কাট ও রঙের পাশাপাশি এর প্রিন্টের ওপরও নির্ভর করে সেই পোশাকে স্লিম দেখাবে, নাকি স্থূল। প্রথমে জেনে নিতে হবে কোন প্রিন্ট দৃষ্টিতে কীভাবে কাজ করে। অনুভূমিক রেখা এবং বড় আকৃতির প্রিন্টের পোশাকে পরিধানকারীর আকার আরও চওড়া ও খাটো দেখাবে। অন্যদিকে উল্লম্ব লাইন এবং জটিল ও ছোট আকৃতির প্রিন্টে পরিধানকারীকে অপেক্ষাকৃত পাতলা ও লম্বা দেখাবে। পোশাকের প্রিন্ট নিয়ে নিরীক্ষা করার আগে নিজের দেহের গড়নকে কয়েকটি অংশে ভাগ করতে হবে। বক্ষ যদি প্রশস্ত এবং কোমরের অংশ পাতলা গোছের হয়, তাহলে এমন পোশাক বেছে নিতে হবে, যার ওপরের ও নিচের অংশ আলাদা। এ ক্ষেত্রে ওপরের অংশটি হতে পারে প্রিন্ট ছাড়া এবং গাঢ় রঙের, নিচের অংশটি প্রিন্টের। আবার দেহের গড়ন যদি এর ঠিক বিপরীত হয়, অর্থাৎ বাস্ট এরিয়া তুলনামূলক পাতলা ও কোমর ভারী গোছের হলে পোশাক নির্বাচনে এমন কিছু বেছে নিতে হবে, যার শুধু ওপরের অংশে প্রিন্ট রয়েছে। এমনকি পোশাকের ডিজাইন নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কিছুটা কৌশলী হলে এথনিক ওয়্যারে স্লিম দেখানো বেশ সহজ। যেসব পোশাকের পুরোটা জুড়ে ভারী কাজ করা কিংবা জরি জড়ানো থাকে, সেসব পোশাকে পরিধানকারীকে তুলনামূলক স্থূল দেখায়। তাই স্লিম দেখাতে বেছে নিতে হবে এর বিপরীত ধাঁচের পোশাক।
এথনিক ওয়্যারের কাট, রং, প্রিন্ট তো ঠিক হলো; স্লিম অবয়ব ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ গয়না ও অ্যাকসেসরিজও। ব্রেসলেট, ঘড়ি এবং মসৃণ চুড়ির মতো অনুষঙ্গ ব্যবহারে বাহু স্লিম দেখাবে। এথনিক ওয়্যার যেহেতু এমনিতেই কিছুটা ভারী গোছের পোশাক, এর সঙ্গে তাই ভারী নেকপিস পরা থেকে বিরত থাকাই ভালো। বরং গলায় কিছু পরার বদলে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কানে ভারী অলংকার পরা যেতে পারে। এতে গলার অংশটা লম্বা দেখা যাওয়ায় পুরো অবয়বটিই স্লিম দেখাবে। তবে, অনেকের গলা এবং কলারবোনের গড়ন বেশ সরু ও পাতলা। সে ক্ষেত্রে কলারবোন আরও আকর্ষণীয় দেখানোর জন্য পরে নেওয়া যেতে পারে চোকার। এতে স্লিমের পাশাপাশি দেখাবে রুচিশীলও। পরিবর্তন আনা যেতে পারে চুলের সাজেও। স্লিম দেখাতে চাইলে খোঁপা বা শক্ত করে চুল না বেঁধে এলোকেশ ভালো। এতে সম্পূর্ণ অবয়বের পাশাপাশি চেহারার আকৃতিও কিছুটা লম্বাটে দেখাবে।
সবশেষে যে অনুষঙ্গ পুরো লুকই বদলে দিতে পারে, তা হলো জুতা! এথনিক ওয়্যারের সঙ্গে ফ্ল্যাট বা চপ্পল ধাঁচের জুতা পরলে পা তুলনামূলক খাটো দেখায়। এর বদলে ২ থেকে ৪ ইঞ্চি উঁচু হিল পরলে সহজেই পায়ের দৈর্ঘ্য কিছুটা লম্বা দেখাবে। এতে পুরো অবয়বেই চলে আসবে একটা স্লিম ভাব!

i সাদিয়া আফরিন শায়লা
মডেল: অন্তরা ও অ্যানি
ওয়্যারড্রোব: তাগা
জুয়েলারি: বাটারফ্লাই বাই তিতলি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: হাদী উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top