skip to Main Content

কুন্তলকাহন I হারবাল হেয়ার পোশন

ম্যাজিক পোশন বললে একচুলও বাড়িয়ে বলা হবে না! প্রকৃতির প্রচ্ছন্ন ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা পরখে এর থেকে ভালো উপায় আর কী হতে পারে

১০০% অর্গানিক, হোমমেড হারবাল হেয়ার পোশন। কখনো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক কন্ডিশনার তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়, কখনো ডিআইওয়াই ড্রাই শ্যাম্পু তৈরিতে অনবদ্য। উপাদানের পুরোটাই প্রকৃতিপ্রাণিত। প্রক্রিয়া সারা হয় রাসায়নিক মুক্ত উপায়ে, ঘরোয়া পন্থায়। যেগুলোর মধ্যে কোনোটার প্রণালি নানি-দাদিদের পরম্পরা থেকে প্রাপ্ত, কোনোটা একদমই হাল আমলের, ইনস্টা ফিড আর টিকটকে ট্রেন্ডিং। কিন্তু প্রকরণ যেমনটাই হোক, সবেতেই একটা জিনিস সর্বজনীন—প্রকৃতির প্রাধান্য। চারপাশের পরিবেশ থেকে সংগৃহীত সব উপাদান, তাতেই তৈরি ফোক টাস্টিক হোমমেড হারবাল হেয়ার পোশনগুলো।
পাশ্চাত্যে হারবাল পোশন হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় কর্ডিয়াল। এটি মূলত বোটানিক্যালি ইনফিউজড অ্যালকোহলিক বেভারেজ। মূলত পানের জন্য তৈরি করা হয় এই পোশন। ল্যাটিন কর্ডিয়ালিস থেকে প্রাপ্ত শব্দ কর্ডিয়ালের অর্থ ‘অব দ্য হার্ট’ অর্থাৎ হৃদয়ের। এটি পানে হৃদয়ে একধরনের উষ্ণতা তৈরি হয় বলেই বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। কর্ডিয়ালে মূলত নানা ধরনের ফল অথবা ভেষজের সঙ্গে মেশানো হয় সুইটনার। ব্র্যান্ডি বা বারবনের মতো উপাদেয় স্বাদের অ্যালকোহল এই পোশনের অন্যতম উপাদান; যা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা গেলে পাঁচ বছর অব্দি ভালো থাকে।
পাশ্চাত্যে উপহার হিসেবে কর্ডিয়ালের আদান-প্রদানের প্রথাও বেশ প্রচলিত। তবে শুধু পানীয় হিসেবে নয়, ভেষজ গুণাবলির কারণেও এটি দারুণ জনপ্রিয়। পাশ্চাত্যে ফল মানেই অফিশিয়াল গোল্ডেনরড সিজন। পীতাভ বাদামি বা অ্যাম্বার রঙের এ ভেষজ দেশের ফুলের দোকানগুলোতে তোড়া সাজানোর কাজে বহুল ব্যবহৃত হলেও এর ভেষজ গুণাবলি হয়তো অনেকেরই অজানা।
নর্থ আমেরিকায় দারুণ জনপ্রিয় গোল্ডেনরড এবং নাশপাতির কর্ডিয়াল রেসিপি। এ জন্য প্রয়োজন হয় এক কাপ ফ্রেশ কুচি করে নেওয়া গোল্ডেনরড ফুল। আর যদি শুকনা ফুল নেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে অর্ধেক কাপই যথেষ্ট। সঙ্গে আরও দেওয়া হয় দুই আউন্স কুচি করে নেওয়া নাশপাতি, দারুচিনির একটি টুকরা, পরিমাণমতো অ্যালকোহল আর স্বাদ অনুযায়ী মধু। আট আউন্স পরিমাণের একটি ক্যান জারের তিন-চতুর্থাংশে পুরে নেওয়া হয় গোল্ডেনরড, নাশপাতি আর দারুচিনির টুকরা। তারপর অ্যালকোহল ঢেলে দেওয়া হয় যেন দুই ইঞ্চি নিচে ডুবে থাকে সব উপাদান। পার্চমেন্ট পেপার দিয়ে জারের মুখ বন্ধ করে তারপর ঢাকনা দিয়ে আটকে দেওয়া হয় মুখ। তিন থেকে চার সপ্তাহ অব্দি শীতল, অন্ধকার জায়গায় এই জার রেখে দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে জার ঝাঁকিয়ে নেওয়া হয়, যেন সব উপাদান একসঙ্গে মিশে যায়। চার সপ্তাহ পর একটি পরিষ্কার চিজক্লথে পুরো মিশ্রণ ঢেলে সম্পূর্ণ তরলটুকু সংগ্রহ করে নেওয়া হয়। এর সঙ্গে মেশানো হয় স্বাদমতো মধু। তারপর একটি পরিষ্কার গ্লাস জারে সংস্করণ করা হয় এই কর্ডিয়াল। সাত আউন্সের মতো তৈরি হয় এই প্রক্রিয়ায়। রাতের খাবারের পর সাধারণত সার্ভ করা হয় কর্ডিয়াল। শুধু আনন্দ উদযাপনেই নয়, এটি পানে দেহের রক্তসঞ্চালন ত্বরান্বিত হয় বলে প্রমাণ রয়েছে। তাই চুল বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে এর নামডাক বেশ।
হারবাল শ্যাম্পু
সম্পূর্ণ রাসায়নিক মুক্ত এই শ্যাম্পু চুলের যত্নে দারুণ উপকারী। তবে হাতের কাছে থাকতে হবে প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রথমেই প্রয়োজন পড়বে লিকুইড ক্যাস্টাইল সোপ। শ্যাম্পু তৈরির বেজ হিসেবে। আর হার্ব বেছে নিতে হবে চুলের প্রয়োজন অনুসারে। মাথায় খুশকি অথবা স্ক্যাল্পের সমস্যা কমাতে ক্যামোমাইল দারুণ কার্যকর। এটি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সহায়ক। ক্যালেন্ডুলাকে বলা হয় অল-অ্যারাউন্ড হার্ব। স্ক্যাল্পকে প্রাকৃতিকভাবে কন্ডিশন করে জোগায় জরুরি পুষ্টি। আর রোজমেরিতে রয়েছে ন্যাচারাল হেয়ার গ্রোথ ফর্মুলা। এটি স্ক্যাল্পের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়, হেয়ার ফলিকলের সুস্থতা বজায় রাখে। শ্যাম্পু তৈরির জন্য একটা পাত্রে পছন্দ অনুযায়ী হারবাল চা নিতে হবে তিন টেবিল চামচ। এর ওপর এক কাপ ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দিতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে রুম টেম্পারেচারে আসা অব্দি। তারপর চা ছেঁকে নিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে আধা কাপ ক্যাস্টাইল সোপের সঙ্গে। এতে বিশ ড্রপের মতো এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে। জোজোবা বা আরগান অয়েল এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো। এই শ্যাম্পু একটি বোতলে নিয়ে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা যাবে সপ্তাহখানেক।
কফি হেয়ার কালার
চুলের কোনো ক্ষতি না করেই ধূসরতা কমাতে সহায়ক এই হেয়ার কালার। শুধু প্রয়োজন পড়বে এক কাপ স্ট্রং কফি অথবা এক্সপ্রেসো। সঙ্গে মেশাতে হবে কন্ডিশনার, কফির গুঁড়া আর অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার। এই মিশ্রণ পরিষ্কার ভেজা চুলে মাখিয়ে নিতে হবে। ঘণ্টাখানেক পর ভালো করে ধুতে হবে। ভালো ফলের জন্য পরপর কয়েকবার এই প্রক্রিয়ায় চুল রাঙিয়ে নেওয়া যায়।
হারবাল হেয়ার রিনজ
চুলের পিএইচ ব্যালেন্সের বারোটা বেজে গেছে? এ ক্ষেত্রে জাদুকরি এ হেয়ার পোশন। পাঁচ ভাগ পানির সঙ্গে এক ভাগ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে তা দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এতে মাথার ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স সুরক্ষিত থাকবে, বাড়বে উজ্জ্বলতা, নেতিয়ে পড়া ভাব কাটবে, সঙ্গে দূর হবে খুশকিও। শ্যাম্পুর পর চুল ধুয়ে নেওয়া যায় এই ভিনেগার মেশানো পানিতে। অথবা স্প্রে করে নিলেও মিলবে ভালো ফল।
হারবাল ড্রাই শ্যাম্পু
মনে হতে পারে, কোনোভাবেই বাসায় বসে এটা তৈরি সম্ভব নয়। কিন্তু ধারণা ভুল। হাতের কাছে গুটি কয়েক উপাদান থাকলে বাসায় বসেই তৈরি করা সম্ভব কার্যকর ড্রাই শ্যাম্পু। তাই এখন শুধু বেবি পাউডারে ভরসা না রাখলেও চলবে। যাদের চুল হালকা রঙা অর্থাৎ লাইট অথবা মিডিয়াম ব্লন্ড কিংবা ধূসর, তারা অ্যারারুট অথবা কর্নস্টার্চের সাহায্য নিতে পারেন। মিডিয়াম বা ডার্ক ব্রাউন চুলের জন্য আনসুইটেন্ড কোকো পাউডার মিশিয়ে নেওয়া যায় এর সঙ্গে। আর কালো চুলের জন্য অ্যারারুট আর কর্নস্টার্চের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া যায় সামান্য অ্যাকটিভেটেড চারকোল। তারপর কাবুকি ব্রাশের সাহায্যে চুলের গোড়ায় অ্যাপ্লাই করে নেওয়া যায় এগুলো। ড্রাই শ্যাম্পুর মতোই কাজে দেবে।

 অর্চনা সাহা
মডেল: আয়শা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top