skip to Main Content

অ্যাডভার্টোরিয়াল I জে কে ফরেন ব্র্যান্ডস

ডিজাইনার ব্রাইডাল অ্যান্ড গ্রুমস কালেকশনের জনপ্রিয় নাম জে কে ফরেন ব্র্যান্ডস। যাত্রা শুরু ২০১৩ সালে। ফয়সাল মৃত্তিক ও তার সহধর্মিণী মারিয়া মৃত্তিক একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এর সূচনা করেন। ব্র্যান্ডটির স্বত্বাধিকারী ফয়সাল জানান, ২০০৯ সালে ইংল্যান্ড থেকে পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফেরেন তিনি। স্বভাবতই তার বাবা-মায়ের প্রত্যাশা ছিল, তিনি পারিবারিক ব্যবসায় মন দেবেন। কিন্তু দেশে ফিরে মডেলিংয়ে যুক্ত হন ফয়সাল। তখন থেকেই ফ্যাশনের গ্ল্যামারাস জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পরিকল্পনা মাথায় আসে। ২০১১ সালে বিয়ের পর স্ত্রী মারিয়াকে নিয়ে যৌথভাবে শুরু করেন বাজার গবেষণা। বোঝার চেষ্টা করেন, কী ধরনের ব্যবসা তাদের জন্য উপযুক্ত। প্রথমে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার কথা ভাবলেও ফ্যাশন বা গ্ল্যামারাস জগতের সঙ্গে এর সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকায় সে পরিকল্পনা বাদ পড়ে।
২০১৩ সালে কিছু পাকিস্তানি ড্রেস সংগ্রহ করে সেগুলোর ফটোশুট করিয়ে নেন এই দম্পতি। উদ্দেশ্য—ক্রেতা চাহিদা যাচাই। ফেসবুক পেজে ছবিগুলো পোস্ট করার পর ভালো সাড়া পান। সেই শুরু। প্রথম দিকে পোশাক সংগ্রহের পাশাপাশি নিজেরা ডিজাইন করে বাজারের চাহিদা মেটাতেন। ক্রেতাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পেয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের ভাবনা শুরু হয়। ফলে ২০১৪ সালে স্টোর দেওয়ার জন্য খুঁজতে থাকেন উপযুক্ত জায়গা। পরের বছরের জানুয়ারিতে বনানীর একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসাকে এক ধাপ এগিয়ে নেন মৃত্তিক দম্পতি। ফয়সাল জানালেন, তার মায়ের দেওয়া ১৪ লাখ টাকাই ছিল এই ব্যবসার মূলধন।
মা-বাবার নামের আদ্যাক্ষর দুটি নিয়ে ব্র্যান্ডের নাম দিয়েছেন ফয়সাল। অর্থাৎ বাবা জুলহাশের ‘জে’ এবং মা কামরুন নাহারের ‘কে’। তাদের পারিবারিক ব্যবসা বিদেশসংশ্লিষ্ট, মানে আমদানি-রপ্তানিনির্ভর; সেখান থেকেই ‘ফরেন ব্র্যান্ডস’ জুড়ে দিয়েছেন। এভাবেই ব্র্যান্ডের নাম জে কে ফরেন ব্র্যান্ডস। দোকান নেওয়ার পর প্রথম তিন মাসে বেশ ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় স্ট্রাগল পিরিয়ড স্বল্প সময়ে পার করতে সক্ষম হন ফয়সাল ও মারিয়া। পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও চীন থেকে আমদানি করা ক্যাজুয়াল ড্রেস ও কসমেটিকস দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে বেড়েছে বৈচিত্র্য ও পরিসর। পুরোনোটি ছেড়ে বনানীতেই আরও ভালো লোকেশনে বড় একটি শোরুম দিয়েছেন তারা।
ফয়সাল মৃত্তিক জানালেন, প্রথম তিন মাসে সন্তানের ব্যবসায়িক সাফল্য দেখে জুলহাশ সিদ্ধান্ত নেন তাকে মূলধনে কিছুটা সহায়তা করার। ফয়সাল বলেন, ‘শুরুতে ব্যবসা দাঁড় করানোই বড় চ্যালেঞ্জ। মূলধন ও কর্মীর স্বল্পতার কারণে অনেক কাজ নিজেকেই করতে হয়েছে। রাত ৩-৪টা পর্যন্ত শোরুম ডেকোরেশন করানো, ঢাকা শহর ঘুরে বিভিন্ন জিনিস কেনার মতো নানা কাজ নিজেকেই সামলাতে হয়েছে।’ ২০১৫ সালে নতুন শোরুমে আসার পর কিছুটা ব্যবসায়িক ক্ষতির অভিজ্ঞতাও হয়। এর কারণ ছিল মূলত আমদানিনির্ভর পোশাক। প্রায় ১৫টি দেশ থেকে পোশাক আনতেন তিনি; যেমন মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে হিজাব, থাইল্যান্ড থেকে ছেলেদের পোশাক, চীন থেকে গাউন ও মেন্জ ওয়্যার। ভারত ও পাকিস্তান থেকে পোশাক আনা তো হতোই। এতে খরচ বেশি হয়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছিল। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে বেশ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই পড়তে হয়।
ভারতে এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে আয়োজনের সবকিছুতে মনোযোগ দেন ফয়সাল। সেই সঙ্গে লক্ষ করেন সেখানকার বিয়েতে পরিধেয় লেহেঙ্গা, শেরওয়ানিসহ নানা ধরনের পোশাক। সেখান থেকেই বিয়ের পোশাক নিয়ে ব্যবসার ভাবনা মাথায় আসে। দেশে ফিরে চার-পাঁচজন কর্মী নিয়ে একটি কারখানা গড়ে তোলেন। ফয়সাল নিজেই ডিজাইন করে লেহেঙ্গা তৈরির উদ্যোগ নেন। সফল হয় সেই উদ্যোগ। কারিগর ও লেহেঙ্গার সংখ্যা বাড়তে থাকে। করোনা অতিমারি থাবা দেওয়ার আগে কারখানায় কারিগরের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০। সেই সময় দেশের বাইরে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে জে কে ফরেন ব্র্যান্ডসের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্যে সিলেটের অনেকে থাকায় তারা দেশে এলে সিলেট থেকে ঢাকায় আসতেন জে কে ফরেন ব্র্যান্ডসের শোরুম ভিজিট করতে, জানালেন ফয়সাল। তাদের আকৃষ্ট করতে নিজের ডিজাইন করা ট্রেইল কাট লেহেঙ্গা তৈরি করেন, যা প্রতিষ্ঠানটির একটি সিগনেচার ড্রেস। ব্রাইডাল কালেকশনের পাশাপাশি জে কে ফরেন ব্র্যান্ডসের ছেলেদের পাঞ্জাবি রয়েছে চাহিদার শীর্ষে। ২০২০-২১ সালে করোনার কারণে একধরনের ক্রান্তিলগ্নের ভেতর দিয়ে গেলেও ব্র্যান্ডটি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
দেশের বাইরে জনপ্রিয়তা থাকায় অদূর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও আরব আমিরাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি দিয়ে ব্রাঞ্চ খোলার ইচ্ছে আছে প্রতিষ্ঠানটির। জে কে ফরেন ব্র্যান্ডস বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় ৩৬০ ডিগ্রি সলিউশন—দাবি করেন ফয়সাল মৃত্তিক। ইউনিকনেস নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গ্রুম কালেকশন নিয়ে কেউ চিন্তা করত না। আমি প্রথম এ নিয়ে ভাবা শুরু করি। বিয়ের মতো জীবনের এত বড় একটি মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে মূলত আকর্ষণীয় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ কালেকশনের জন্য জে কে ফরেন ব্র্যান্ডসে আস্থা রাখেন অনেকেই।’ আগামী বছর নাগাদ ব্র্যান্ডটিকে শপিং মল আকারে আত্মপ্রকাশ করানোর ইচ্ছার কথাও জানান সৃষ্টিশীল এই উদ্যোক্তা।

i ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: জে কে ফরেন ব্র্যান্ডসের সৌজন্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top