skip to Main Content

দৃশ্যভাষ্য I ক্রুশবিদ্ধ পোশাকের আর্তনাদ

আদিগন্ত ঝুলে আছে নানা শেডের লাল পোশাক, যেন ক্রুশবিদ্ধ যিশু! কানাডার মানিটোবা প্রদেশের রাজধানী উইনিপেগে। বৈষম্যমূলক সহিংসতার শিকার আদিবাসী নারীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এই ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনী। কমলা পোশাকও জায়গা পেয়েছে তাতে; বিশেষ করে, কানাডায় রেসিডেন্সিয়াল স্কুল সিস্টেমের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহানো শিশুদের স্মরণে।
দেশটিতে রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের সূচনা ঊনবিংশ শতাব্দীতে, মূলত পাশ্চাত্যের জীবনধারার সঙ্গে বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর লোকজনকে অভ্যস্ত করার উপায় হিসেবে। এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বাড়ি ও বাবা-মায়ের কাছ থেকে তুলে আনা হতো, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জোর করেই; আর তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হতো নিষেধাজ্ঞা। চুল ছোট করে কেটে ফেলা হতো তাদের। ঐতিহ্যগত পোশাকের বদলে পরতে বাধ্য করা হতো ইউনিফর্ম। এমনকি আসল নাম পাল্টে রাখা হতো কোনো ইউরো-ক্রিশ্চিয়ান নাম। শারীরিক এবং কখনো কখনো যৌন নিপীড়নের শিকারও হতে হতো তাদের। সম্প্রতি কানাডার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বেভারলি ম্যাকলাচলিক এই প্রক্রিয়াকে অভিহিত করেছেন সাংস্কৃতিক গণহত্যা হিসেবে।
১৯৯৬ সালে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বশেষটির দরজা শেষবারের মতো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে, কালে কালে দেড় লাখের বেশি শিশুকে এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষা নিতে হয়েছিল। ২০০৯ সালে গঠন করা একটি ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন জানায়, ওই সব স্কুলে দুর্ব্যবহার, অবহেলা, অসুখ কিংবা দুর্ঘটনার কারণে প্রাণহানি ঘটেছিল অন্তত ৪ হাজার ১০০ শিক্ষার্থীর।
এই সিস্টেমের স্কুলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টিতে পরিণত হয়েছিল ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত কামলুপস স্কুল, যেখানে শত শত আদিবাসী শিশুকে ভর্তি করা হয়েছিল। স্কুলটি ১৯৭৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০২১ সালের মে মাসে সেখানে গ্রাউন্ড-পেনেট্রেটিং রাডার ব্যবহারের মাধ্যমে চালানো এক জরিপে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষ অতীত। কামলুপসের জমিনে মাটিচাপা অবস্থায় শনাক্ত হয় ২১৫ জন শিশু-কিশোরের মৃতদেহের অস্তিত্ব। তাতে আরও একবার সমালোচনার বিষয়ে পরিণত হয় ওই শিক্ষাব্যবস্থা।
ক্রুশবিদ্ধ সারি সারি পোশাকের এই ছবি কানাডিয়ান ফটোজার্নালিস্ট অ্যাম্বার ব্রাকেনের তোলা। উত্তর আমেরিকায় আদিবাসী মানুষদের মর্মস্পর্শী জীবনচিত্র ক্যামেরাবন্দি করার জন্য তিনি খ্যাত। রেসিডেন্সিয়াল স্কুল সিস্টেমের ট্রমা কীভাবে আদিবাসীদের মনে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে ছাপ ফেলে যাচ্ছে, তা নিয়ে বিশেষ এক ব্যক্তিগত প্রকল্পের কাজ করছিলেন তিনি। ছবিটি সেই প্রকল্পেরই অংশ। ‘কামলুপস রেসিডেন্সিয়াল স্কুল’ বিষয়বস্তুর এই ছবি তাকে গেল বছর এনে দিয়েছে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রবর্তিত সর্বোচ্চ মর্যাদাকর ‘দ্য ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অব দ্য ইয়ার’ অ্যাওয়ার্ড। আর দুনিয়াজুড়ে পরিণত হয়েছে বিশ্বায়নের দোহাইয়ে ঐতিহ্য নিধনের নির্মম ইতিহাসের লুকায়িত সত্যের প্রতীকে।

 লাইফস্টাইল ডেস্ক
সূত্র: ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top