skip to Main Content

টেকসহি I বি বেটার

নিদেনপক্ষে সৌন্দর্যপণ্যের খরিদ্দার হিসেবে। নিজের নিরীক্ষায় থাকুক সৌন্দর্য অভ্যাসগুলোও। এমন ছোট ছোট পদক্ষেপ পাল্টে দিতে পারে পুরো বিউটি ইকো সিস্টেম

টেকসই তত্ত্ব প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলে। ইকো সিস্টেম রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পৃথিবীর মানুষদের সুস্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষায় সহায়তা করে।
বর্তমান সময়ের বৈশ্বিক প্রসাধনীর বাজার থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ৫৭১ দশমিক ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে ধারণা করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এই শিল্পে সবচেয়ে বেশি আয় হয় পারসোনাল কেয়ারের পণ্য থেকে। এই অগ্রগতিতে কনজ্যুমার বিহেভিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে মানুষ শুধু প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহারে ত্বকের যত্ন, সৌন্দর্য, উপকারিতা নিয়ে মনোযোগী নন; পাশাপাশি ভাবেন ব্যবহৃত প্রসাধনী ধরণীর জন্য কতটা ইতিবাচক, তা নিয়েও। কিনতে চাওয়া বিউটি প্রোডাক্টটি প্রকৃতির ক্ষতির কারণ হবে কি না, সে নিয়েও চলে হিসাব-নিকাশ।
মার্কেটপ্লেস আলিবাবা ডট কমের এক গবেষণায় জানা যায়, ৬৬ শতাংশ ক্রেতা সচেতনভাবে টেকসই প্রসাধনী খুঁজে থাকেন। আবার ৫৫ শতাংশ ক্রেতা পৃথিবীর প্রতি দায়বদ্ধ এমন ব্র্যান্ডের পণ্য বেশি দাম দিয়ে কিনতেও আগ্রহী। সেসব সৌন্দর্যপণ্যই বর্তমানে ক্রেতা আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে যা প্রাণিজগতের পেরেশানির কারণ হয় না। পরিবেশের ক্ষতিও করে না।
পৃথিবীর প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে সচেতন ক্রেতা হতে চাইলে সহজ কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি:
কাস্টমাইজেবল প্রোডাক্ট
বহুল ব্যবহৃত মেকআপ আইটেম আইশ্যাডো। যার প্যালেটে মেলে একাধিক রঙের সম্মিলন। কিন্তু সব রং কি ব্যবহার করা হয়? বেশির ভাগ সময়েই উত্তর আসবে, না। কারণ, ব্যক্তিভেদে সাজের চাহিদার ভিন্নতার কারণে সব রং ব্যবহারের আগ্রহ সেভাবে দেখা যায় না; বরং একই ধরনের শেড চোখ সাজায় বারবার। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগে সব রং সম্পূর্ণরূপে শেষ করতে দেখা যায় খুব কম মানুষকেই। শেষমেশ মেকআপ বর্জ্যে পরিণত হয় প্যালেটটি। টেকসই তত্ত্বে বিশ্বাসী ক্রেতা হতে চাইলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য যেমন কেনা উচিত নয়, তেমনি নষ্টও করা যাবে না। সমাধানের জন্য নিজের মতো করে আইশ্যাডো প্যালেট সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কাস্টমাইজেবল কালার প্যালেট তৈরি করার সুযোগ আছে এমন ব্র্যান্ডগুলো বেছে নেওয়া এ ক্ষেত্রে কার্যকর কৌশল হতে পারে।
প্যাকেজিংয়ে সচেতনতা
সৌন্দর্য প্রসাধনী প্যাকেজিং করতে প্লাস্টিক এখনো বহুল ব্যবহৃত উপাদান। বছরে ১২০ বিলিয়ন ইউনিট প্লাস্টিক প্রয়োজন হয় বিউটি ইন্ডাস্ট্রির। এই বিপুল পরিমাণের মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহার উপযোগী সম্ভব হয়। মাল্টি লেয়ারড বক্স, সেলোফেন এবং কমপ্লেক্স লিড অন্যতম বিউটি বর্জ্য। এগুলো শেষ পর্যন্ত সাগরের তলদেশে জমা হয় এবং সামুদ্রিক প্রাণীর জীবন, মানুষসহ অন্য প্রাণিকুলকেও হুমকিতে ফেলে। প্যাকেজিং বর্জ্য থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় এমন পণ্য বেছে নিতে হবে, যেগুলোর মোড়ক তৈরি করা হয়েছে কর্নস্টার্চ, সামুদ্রিক শৈবাল, বাঁশ, বালি থেকে উৎপন্ন সিলিকন, মোম, অ্যালুমিনিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করে। অথবা পোস্ট-কনজ্যুমার প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে।
আবার, আলাদা করে কোনো প্যাকেজিং ছাড়াও বিক্রি হতে পারে প্রসাধনী। উদাহরণে বলা যেতে পারে ইজি ব্র্যান্ডের মাসকারা। এই আই মেকআপ আইটেমের কোনো বাড়তি প্যাকেজিং নেই। মেডিকেল গ্রেড স্টেইনলেস স্টিলে তৈরি। ১০ হাজারের বেশিবার ধুয়ে নেওয়া যাবে এটি। টিউবটিতে প্লাস্টিক কম্পোনেন্টের পরিমাণ শূন্য।
বিউটি বর্জ্য পুনর্ব্যবহার
প্রসাধনীর মোড়কের বিভিন্ন ব্যবহারও ধরণীর জন্য ইতিবাচক হতে পারে। প্রসাধনী কোম্পানি মব সম্প্রতি চুক্তি করেছে প্যাক্ট নামের একটি সংস্থার সঙ্গে। এর কাজ ব্যবহৃত কসমেটিকসের প্যাকেজিং সংগ্রহ। যেসব প্যাকেজিংয়ের পুনর্ব্যবহার কষ্টসাধ্য, সেগুলোকে টেকসই সমাধানের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।
বহুল ব্যবহৃত ব্র্যান্ড ম্যাকের রয়েছে ‘টেক ব্যাক’ প্রোগ্রাম। এই বিউটি ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্য প্লাস্টিক বর্জ্য কমিয়ে আনা। যাতে পৃথিবীতে ভাগাড় তৈরি না হয়। ব্যবহৃত ছয়টি মেকআপ কনটেইনার ম্যাকের কাউন্টারে ফিরিয়ে দিলে একটি লিপস্টিক উপহার পাওয়া যাবে ব্র্যান্ডটির পক্ষ থেকে।
টেরাসাইকেল নামের একটি কোম্পানি যেকোনো বর্জ্য রিসাইকেল করে। এ জন্য তারা তৈরি করেছে একাধিক প্ল্যাটফর্ম। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ রুখতে কাজ করছে তারা। বেশ কিছু ব্র্যান্ড এরই মধ্যে পার্টনারশিপ করেছে এই সংস্থার সঙ্গে। আরবোন, নরডস্ট্রম, বিউটি সাইকেল, গার্নিয়ার, লকসিটান এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
প্রসাধনী পুনর্ব্যবহারের কার্যকর সব কৌশল পরিবেশের ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে। রিসাইকেল বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে পণ্যের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং প্যাকেজিংয়ে। তা ভালোভাবে খেয়াল করলেই চলবে।
ক্লিন অ্যান্ড ক্রুয়েলটি ফ্রি ফর্মুলা
প্রসাধনীতে ত্বক ও দেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান যেমন কাম্য নয়, তেমনি এগুলো পরিবেশের জন্য শঙ্কা সৃষ্টি করছে কি না, সে খোঁজও রাখা যেতে পারে সচেতন ক্রেতা হতে চাইলে। পণ্য তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জানাও জরুরি। ক্রুয়েলটি ফ্রি ফর্মুলায় তৈরি সৌন্দর্যপণ্যে নিশ্চিত হওয়া যাবে কোনো প্রাণী ‘টেস্টিং’-এর নামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
গ্রিন ওয়াশিং: আ বিগ নো
ক্রেতাকে ভুল তথ্য দেওয়া অপরাধই বটে। টেকসই তত্ত্বের নিয়ম মেনে প্রোডাক্টটি তৈরি হয়েছে, এমন তথ্য দিয়েই খালাস কোম্পানিগুলোকে এড়িয়ে চলা যেতে পারে। নয়তো শুধু পাবলিক রিলেশন ম্যাটেরিয়ালে লেখা শব্দের ফাঁদে আটকে যেতে হবে। পরিবেশের উপকার তো দূর, বরং ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে হবে এমনটা ঘটলে।
‘বেটার মেকআপ কনজ্যুমার’ হতে চাইলে ব্যবহৃত সৌন্দর্য প্রসাধনীটি যেন প্রকৃতির কোনো ক্ষতি না করে, তা নিয়ে থাকতে হবে সচেতন। ধরণীর প্রতি দায়িত্বশীল নয় এমন পণ্য সচেতনভাবে সরিয়ে রাখা যেতে পারে। বিরত থাকতে হবে প্লাস্টিক প্যাকেজিং থেকে।
সাসটেইনেবল ম্যাটেরিয়ালের মোড়ক, ক্লিন ইনগ্রিডিয়েন্ট, ক্রুয়েলটি ফ্রি ফর্মুলা আর রিফিল করার সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে সচেতনভাবে কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নিলে নিজের পাশাপাশি পরিবেশও সুন্দর থাকবে। অন্তত কোনো প্রকার ক্ষতির কারণ না হওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে।
 সারাহ্ দীনা
মডেল: জেনি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিল ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top