skip to Main Content

টেকসহি I দূষণরোধী

মেট্রোপলিটনে বসবাসের মাশুল এখন দিতে হচ্ছে ত্বককেও। সুরক্ষিত রাখতে বিশেষজ্ঞদের চোখ বিশেষায়িত সৌন্দর্যপণ্যে

এত এত স্কিন কেয়ার টেকনিক আর শত শত প্রোডাক্টের ব্যবহার। বাদ পড়ছে না ডায়েট, এক্সারসাইজ—কোনো কিছুই। তবু ত্বকের কাঙ্ক্ষিত সেই জেল্লা যেন ছোঁয়াই যায় না। কিন্তু কেন? সমস্যার মূলোৎপাটন করতে চোখ যখন জানালার বাইরে যাবে, একটু খেয়াল করলেই মিলবে উত্তর। চারপাশের ধুলোবালি দিয়ে ঢাকা পৃথিবীটা শুধু যে পরিবেশে প্রভাব ফেলছে, তা নয়; ত্বককেও ম্লান করে দিচ্ছে।
বাইরে বেরোনো মানেই প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ। ধুলোবালি আর ধোয়ার চাদর; সঙ্গে নানা রকম দূষণের দোর্দণ্ডপ্রতাপ। এগুলো এড়ানো অসম্ভবই বটে। অ্যান্টিপল্যুশন স্কিন কেয়ারে মিলতে পারে সমাধানসূত্র।
দৃশ্যপট দূষণ
বাইরের ধুলাবালি, ময়লা, যানবাহন থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়া, বাতাসে ভেসে বেড়ানো প্লাস্টিকের ন্যানো-পার্টিকেল, কেমিক্যাল—সবকিছুর সংমিশ্রণই আসলে দূষণ। শুধু তা-ই নয়, মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ থেকে বের হওয়া ব্লু রে আর ইউভি রশ্মি ছাড়াও হেভি মেটাল থেকে বের হওয়া রশ্মি—সবই দূষণের মধ্যে পড়ে। একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, কীভাবে প্রতিদিন ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ত্বক এই দূষণের সম্মুখীন।
দূষণের দৌরাত্ম্যে
ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, দূষণ ত্বকের এপিডার্মিসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বুড়িয়ে যাওয়া ত্বরান্বিত করে, অর্থাৎ খুব সহজে ত্বক তারুণ্যোজ্জ্বল ভাব হারায়, দেখা দেয় বলিরেখার ছাপ। এ ছাড়া এপিডার্মিস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্বক সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ফলাফল—অ্যালার্জি আর র‌্যাশ দেখা যেতে পারে। ধুলোবালি আর ময়লা লোমকূপ ভরাট করে ফেলতে পারে। ফলে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইট হেডস দেখা দেয়। এ ছাড়া ত্বক মলিন হয়ে পড়ে এবং ত্বকের স্বাভাবিক রং বদলে যেতে থাকে। ত্বকে আর্দ্রতার মাত্রা কমে যাওয়ায় বিভিন্ন রকমের চর্মরোগ দেখা দেয়।
প্রতিকার ও প্রতিরোধে অ্যান্টিপল্যুশন
সবচেয়ে ভালো হতো ধুলোবালির এই আবহাওয়া ছেড়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতে পারলে। সবুজে ঘেরা কোনো এক জায়গায় বুকভরে নিশ্বাস নেওয়ার পাশাপাশি আগেকার দিনের মতো প্রাকৃতিক সব উপাদানে সৌন্দর্যচর্চা সারতে পারলে। কিন্তু ‘আগের দিন বাঘে খেয়েছে’ বলে কথা! তাই বলে কি অবস্থার পরিবর্তন হবে না?
অ্যান্টিপল্যুশন স্কিন কেয়ার এ ক্ষেত্রে হতে পারে সমাধান। মূলত ত্বকে পরিবেশদূষণকারী উপাদানগুলোর ক্ষতির প্রভাব রুখতে বিশেষায়িত যত্ন নেওয়া হয় এই রূপচর্চায়। তৈরি করা হয় প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল। ত্বকের এপিডার্মিসে যেন দূষণ কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে, তাই নিয়ে কাজ করে অ্যান্টিপল্যুশন স্কিন কেয়ার।
শহর বা গ্রাম—বসবাস যেখানেই হোক, পরিবেশদূষণের হাত থেকে বাঁচার যেন উপায় নেই। শুধু বৈরী আবহাওয়ার জন্যই ত্বকে দেখা দিতে পারে ব্রণ, একজিমা, রোজাশিয়া। অ্যান্টিপল্যুশন স্কিন কেয়ার রুটিন ত্বকের উপরিভাগকে সুরক্ষা দিয়ে ত্বককে ভেতর থেকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
পৃথক পরিচর্যা
মানুষভেদেই ত্বকের ধরন আলাদা। আর সেই সঙ্গে সমস্যাগুলোও ভিন্ন। তাই একই স্কিন কেয়ার রুটিন সবার জন্য প্রযোজ্য হবে, এমনটা মনে করলে চলবে না। তৈলাক্ত স্বাভাবিক বা স্পর্শকাতর ত্বকের ধরন অনুযায়ী ব্যবহার করা চাই অ্যান্টিপল্যুশন স্কিন কেয়ার রুটিন। এ ছাড়া যে অঞ্চলে বসবাস, সেখানকার পরিবেশ বুঝেও ত্বকের সঠিক পরিচর্যার রুটিন সেট করতে হবে।
ক্লিনজিংয়ের বিকল্প নেই
ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিতে হবে সঠিক ক্লিনজার। সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে পণ্যটি যেন ডিপ ক্লিনজিংয়ে পারদর্শী হয়। ত্বকের গভীরের ধুলোবালি আর ময়লা পরিষ্কার করতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জমে থাকা অতিরিক্ত মেকআপ, ধূলিকণা পরিষ্কার করে ত্বককে প্রাণবন্ত করে তোলাই এর মূল লক্ষ্য।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরসা
বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন সি, ই এবং এ যুক্ত প্রসাধনী বেছে নেওয়া যেতে পারে। প্রতিদিনই যাদের ত্বক সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি কিংবা ইলেকট্রনিকসের ব্লু রে-এর সঙ্গে যুদ্ধ করে, তাদের জন্য এই ধরনের পণ্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প হতে পারে। এটি ত্বককে ক্ষতিকর রশ্মিগুলোর বিরুদ্ধে নিউট্রালাইজ করে রাখে, আর তাই ত্বকের উপরিভাগ ক্ষতির সম্মুখীন হয় না।
বাড়তি যত্নে এপিডার্মিস
রূপচর্চায় বেছে নিতে হবে এমন কিছু, যা ত্বকের ওপরের লেয়ারকে শক্তিশালী রাখে। যাদের ত্বকের এপিডার্মিস যতটা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, তাদের ত্বক ভেতর থেকেও ততটা প্রাণবন্ত। এ ক্ষেত্রে হায়ালুরনিক অ্যাসিড, সেরামাইড, নিয়াসিনামাইড সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ত্বকের সুরক্ষায় থানকুনি, অ্যালোভেরা, নিমপাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো পূর্ববর্তী ক্ষতি যেমন সারিয়ে তোলে, তেমনি দূষণ থেকেও ত্বক রাখে সুরক্ষিত।
শুধুই সানস্ক্রিন
ত্বক পুড়ে যাওয়া থেকেই কেবল বাঁচায় না, বরং সূর্য থেকে আসা আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকেও সুরক্ষিত রাখে। অসময়ে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রুখতে অবশ্যই বাইরে বের হওয়ার আগে এসপিএফ ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা চাই। বছর পাঁচেক পর তফাতটা আলবত চোখে পড়বে।
ডিটক্স মাস্ক
কনসেপ্ট একটু নতুন হলেও দূষণ রোধে মাস্কগুলো অসাধারণ ভূমিকা রাখছে। ত্বককে ডিটক্সিফাই করতে মিনারেল ক্লে মাস্ক, ফ্রুট মাস্কগুলো সবচেয়ে বেশি কার্যকর। যাদের প্রতিদিনই বাইরে কাজ করতে হয়, তারা এই ডিটক্স মাস্কগুলো ব্যবহার করতে পারেন; রাতারাতি না হলেও ফলটা চোখে পড়বেই।
এক্সফোলিয়েশনে সুরাহা
ত্বককে চটজলদি প্রাণবন্ত দেখাতে এক্সফোলিয়েটরের জুড়ি নেই। ত্বকের ধরন বুঝে পছন্দমতো বেছে নিতে হবে। স্পর্শকাতর ত্বকের অধিকারীরা এক্সফোলিয়েটর হিসেবে বেছে নিতে পারেন চালের গুঁড়া অথবা কমলার খোসার পাউডারকে। এই প্রক্রিয়ায় ত্বকে জমে থাকা ময়লা বা ধূলিকণা খুব সহজে দূর হয়ে যায়।
মাথায় রাখা চাই, কোনো স্কিন কেয়ার রুটিনই শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না দূষণ থেকে। তবে দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে পারবে। ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককে সারাতে সহায়তা করবে।

 বিদিশা শরাফ
মডেল: মাইশা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: র নেশন
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top