skip to Main Content

ফিচার I আপ্যায়নের শহরে

লিসবনে পর্তুগিজদের খাবার তো মেলেই, লাতিন আমেরিকা আর আফ্রিকার ডিশেও উদরপূর্তি করা যায়। পর্তুগাল ঘুরে সেখানকার খাবারের স্বাদ ও ঐতিহ্য নিয়ে লিখেছেন তানভির অপু

বলা হয়ে থাকে ‘লিসবন গুপ্তরহস্যের শহর’। পর্তুগালের রাজধানী। প্রতিদিনই যেন সেজে ওঠে অনন্য রূপে; প্রাণময় আর পরিচ্ছন্ন এ শহরের তাজা হাওয়া শান্তি এনে দেয়।
ফিনল্যান্ডে তখন প্রচ- শীত। সেখান থেকে পৌঁছে যাই লিসবনে। আবহাওয়া বেশ অনুকূলে টের পেয়ে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। হোটেলে ব্যাগ রেখে বেরিয়ে পড়ি কাছের কোনো ট্র্যাডিশনাল খাবারের দোকানের খোঁজে। একটা ব্রাজিলিয়ান দোকানে ঢুকলাম। পর্তুগিজরা অনেক বছর লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকা শাসন করেছে; ফলে এই দুই অঞ্চলের অনেকেরই বসবাস লিসবনে।
প্রথমে নিই চিজ পটেটো, সঙ্গে একটা মাছের ডিশ। যেহেতু বাঙালি, ভাতে-মাছে না হলে চলে না। ভাত নিলাম। মাছ তো আগেই নেওয়া হলো, ল্যাম্বও নিলাম। এখানকার সব রেস্টুরেন্টে একধরনের ঘরোয়া পরিবেশ আছে, যা মনে প্রশান্তি নিয়ে আসে।
শহরটা খাবারের জন্য বেশ আকর্ষণীয় বটে। ঐতিহ্য ধরে রাখার ব্যাপারে এ শহর যত্নশীল বলে মনে হলো। ষোড়শ শতাব্দী থেকে এখন পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাফেগুলো। এগুলোর কফি সবচেয়ে মজার। সঙ্গে কড মাছের কাটলেট। কফির বৈশিষ্ট্য হলো স্ট্রং ফ্লেভার। খুব স্মুদি আর সুস্বাদুও বটে। সঙ্গে কড কাটলেটের উপস্থিতি যেন আলাদা একটা জগৎ তৈরি করে দেয়।
কড ফিশ নিয়ে এখানকার মানুষের বেশ একটা ঘোর আছে। সেনা শাসনামল শুরু হবার পর, ১৯২৬ সালের দিকে এখানে মাংসের দাম বেড়ে যায়। এই বাস্তবতায় প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ধীরে ধীরে মানুষ কড মাছের অনুরক্ত হয়ে পড়ে।
এখানকার বেশির ভাগ খাবারের মূল উপাদান সামুদ্রিক মাছ। প্রায় সব খাবারে রয়েছে আলুর ব্যবহার। তবে মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বিন আর সবজি থাকে। রঙ অবিকৃত রেখেই এসবের প্রিপারেশন হয়। পর্তুগিজদের রঙপ্রীতি তাদের খাবারেও দেখা যায়।
এখানে ক্যানটিন ডো আজিজ বেশ পরিচিত রেস্তোরাঁ, মোজাম্বিকুই (পর্তুগিজ খাবারের নাম) এবং কিছুটা ইন্ডিয়ান ব্লেন্ডের জন্য। এর মেনুতে লেখা থাকে খাবারটার সে দেশে আসার ইতিহাস, সঙ্গে শেফের একটা ছোট্ট ছোঁয়ার গল্প। এই খাবারের ঘ্রাণ জিভে জল এনে দেয়। আর স্বাদ তো অসাধারণ।
আগেই বলা হয়েছে, এখানকার মানুষের কড মাছের প্রতি আকর্ষণ আছে, তাই তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারও এই মাছ দিয়ে তৈরি।
মেরিন্ডিনা ডো আরকো এমন এক রেস্তোরাঁ, যেখানে বসার জায়গা পাওয়া বেশ কঠিন। তবে অপেক্ষার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেওয়ার মতো ডিশ এখানে রয়েছে। বাকালাও কোয়েন এমন একটা ডিশ। তবে তা খাওয়ার একটা নিয়ম এখানে আছে। খাওয়ার সময় একটু অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিতে হয়।
লিসবনের রেস্তোরাঁগুলোর বেশির ভাগ গড়ে উঠেছে রাস্তা ঘেঁষে। কিংবা রাস্তায় এগুলোর বসবার জায়গা। রেস্তোরাঁর মালিক নিজের বাড়ির নিচে তৈরি করেন খাবারের দোকান।
এখানকার রাতের রেস্তোরাঁ অন্য রকমের পরিবেশনা নিয়ে হাজির হয়। খাবারের পাশাপাশি তখন থাকে সংগীতের পরিবেশনা। মূলত নিজেদের ঐতিহ্যবাহী গান গাওয়া হয়ে থাকে। এ ধরনের গানকে বলা হয় ফাডো। খালি গলায় তা গাওয়া হয়। তাল মিলিয়ে সবাই তাতে কমবেশি অংশ নেয়। ভোজনও চলতে থাকে।
লিসবনের যেকোনো রেস্তোরাঁয় ঢুকলে প্রথমেই জলপাই সস আর পাউরুটি দিয়ে আপ্যায়নের রীতি রয়েছে। এর স্বাদ ভোজনের ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়। এটা দেওয়া হয় সৌজন্য হিসেবে। এটা যে খেতে হবে, এমন নয়। তবে না খেলে পস্তাবেন।
পর্তুগালের এই শহরে এসে সবচেয়ে ভালো লেগেছে তাদের আতিথেয়তা। এখানকার মানুষ খুব আন্তরিক। যেখানে গিয়েছি, সেখানেই সাদরে গৃহীত হয়েছি। ফলে কখনো মনে হয়নি আমি অপরিচিত কোনো এক শহরে ঘুরতে এসেছি। আটলান্টিক পারের এই শহরে এসে আমি ডাবও খেয়েছি। ইউরোপের কোনো শহরে এই অভিজ্ঞতা হয়নি। লিসবনের ডাবের স্বাদ এখন মুখে লেগে আছে।

অনুলিখন: জুনেদ আহমাদ মুহতাসীম মিশাল
ছবি: লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top