skip to Main Content
যেসব বিষয়ে আমরা উদাসীন

ঘড়ির কাঁটায় মুখ গুঁজে ছুটেই চলেছি সবাই। ২৪ ঘণ্টার আবর্তে যেসব কাজকর্ম করে যাচ্ছি, তার কিছু সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল, আবার কিছু সম্পর্কে বেখেয়াল। জীবাণু খালি চোখে দেখা যায় না। তাই বলে কি সারা দিনব্যাপী নিজের অজান্তেই জীবাণু বইয়ে বেড়াতে হবে? বিষয়টা তো আর এমন নয় যে আমার শরীর আমি যা খুশি তা-ই করব। অসুস্থ মানুষ তো সমাজের ওপরও প্রভাব ফেলে, নাকি? দৈনন্দিন কাজের ছোটখাটো বিষয়ে একটু সতর্ক থাকলেই শরীর সুস্থ রাখা যায়। পরিচ্ছন্নতা হচ্ছে শরীর সুস্থতার মূল চাবিকাঠি।

অঙ্গপ্রত্যঙ্গের খেয়াল

হাত: কম্পিউটারের কিবোর্ডে হাত বুলিয়ে যাচ্ছি, অসংখ্য হাত ঘুরে আসা টাকাপয়সা নিজেরাও ছুঁয়ে দিচ্ছি, ভাঁজ করে মানিব্যাগে ঢোকাচ্ছি। এসবের মধ্য দিয়ে জীবাণু এহাত থেকে ওহাত হচ্ছে। আমাদের চোখে ধরা পড়ছে না বলে এসব নোংরা সম্পর্কে আমরা বেখেয়ালি। এবার একটু সতর্ক হোন। খাওয়ার আগে, রান্নার আগে ও পরে কিংবা সোনামণিকে আদর করার আগে হাত দুটি ভালোভাবে ধুয়ে নিন। পশুপাখির গায়ে হাত বোলানোর পরও হাত ধুয়ে নিতে পারেন। হাঁচি-কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে ডিসপোসেবল গ্লাভসও ব্যবহার করতে পারেন।

দাঁত: দাঁতে ব্যথা, ক্ষয়ে যাওয়া কিংবা মুখে দুর্গন্ধ হওয়া শুধু যে ব্যক্তিগত শারীরিক সমস্যা, তা নয়। এটি সামাজিক সমস্যাও বটে। দৈনিক দুবার দাঁত ব্রাশ করুন। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করুন। অনেক সময় লিভারের সমস্যা থেকেও মুখে দুর্গন্ধ হয়। সে ক্ষেত্রে প্রচুর পানি ও তাজা ফল খান। বছরে দুবার দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পা: সারা ঘরে খালি পায়ে টো টো করে বিছানায় না ওঠাই ভালো। রাতে পা ভালোভাবে ধুয়ে ময়শ্চারাইজ করে তারপর বিছানায় যান। পা ঢাকা জুতা ব্যবহার করুন।

চুল: রুক্ষ, তৈলাক্ত কিংবা খুশকির সমস্যা, যে ধরনের চুলই হোক না কেন, প্রতিদিন ভালো করে চুল ধুয়ে নিন।  খুশকি দূর করতে নিয়মিত মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

গোসল ও ঘাম: আমাদের দেশের জলবায়ুতে দিনে দুবারও গোসল করতে কোনো বাধা নেই। শুধু যে অনিয়মিত গোসলের কারণে ঘামে দুর্গন্ধ হয় তা কিন্তু নয়, শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণেও ঘামে দুর্গন্ধ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

গোপনাঙ্গের যত্নআত্তি

গোপনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা শারীরিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরের ওই অংশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন শরীরের ভেতর প্রবেশ না করে।

যৌনাঙ্গের পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার তাগিদে অনেকেই ইন্টিমেটওয়াশ ব্যবহার করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

বাথরুমে ঢুকেই কিছু পরিমাণ পানি ঢেলে দেওয়া বা ফ্ল্যাশ করে নিন। এটি করলে বাথরুমের মেঝেতে থাকা জীবাণু দূর হবে এবং তা যৌনাঙ্গের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করবে না। হাইজিন রক্ষার্থে প্রথমে যৌনাঙ্গ তারপর মলদ্বার পরিষ্কার করে নেওয়াই ভালো।

ঋতুস্রাবের সময়ে: মাসের বিশেষ দিনগুলোতে শরীর যতই প্রতিকূলে থাকুক, হাইজিনের দিকে খেয়াল রাখলে যন্ত্রণা ও বিড়ম্বনা এড়িয়ে চলতে পারবেন। স্যানিটারি ন্যাপকিন ফ্লাশ করা অনুচিত। ডাস্টবিনে ফেলার আগে ন্যাপকিনটি কাগজে মুড়ে নেওয়াই শ্রেয়।

ন্যাপকিন ব্যবহারের ফলে যৌনাঙ্গের চারপাশে র‍্যাশ হতে পারে। এ জন্য যতটা সম্ভব শুকনা থাকার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল লোশন ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ন্যাপকিন বদলানো ও গোসল করা উচিত।

শারীরিক মিলনের সময়

নিজের পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি আপনার সঙ্গীর পরিচ্ছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখুন। চুম্বনের সময় ব্যাকটেরিয়াল আদান-প্রদানে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি না, তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন আছে। এ বিষয়ে চিকিৎসকেরা জানান, শারীরিক তরল আদান-প্রদানে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকলেও চুম্বনের ক্ষেত্রে মুখের স্যালাইভা আগত বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা কম।

যৌনমিলনের আগে উভয়েরই ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেওয়া উচিত হবে। শারীরিক সম্পর্কের পর উভয়েরই প্রস্রাব করা উচিত। প্রস্রাবের মাধ্যমে বাইরে থেকে আসা ব্যাকটেরিয়া শরীরের বাইরে চলে যায়।

শারীরিক সম্পর্কের পর গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করা উচিত। পানি দিয়ে গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন। ঋতুস্রাবের সময়ে যৌনমিলন এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা এড়ানো যায়।

বেড়াতে গিয়ে

অল্প দূরত্বে বেড়াতে গেলে বাথরুমে না গিয়েও পারা যায় কিন্তু দূরপাল্লার ভ্রমণে বাথরুম ব্যবহার করতেই হয়।  হাইজিন রক্ষা করতে সঙ্গে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল স্প্রে কমোডের ওপর স্প্রে করে নিন। এতে করে কিছুক্ষণের জন্য জীবাণু নিস্তেজ হয়ে পড়বে। তার মধ্যেই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলুন। স্প্রে না থাকলে কমোডের উপরের অংশ টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।

দূরপাল্লার ভ্রমণে মেয়েদের জন্য টয়লেটের সমস্যা বেশ গুরুতর। সুস্থ থাকতে স্কোয়াট পজিশনে বসেও কাজ সারতে পারেন। বেড়াতে গিয়ে বারবার বাথরুমের ঝক্কি পোহাতে হবে ভেবে পানি পান করা কমিয়ে দেবেন না।  সঙ্গে রাখুন অ্যান্টি সেপটিক লিকুইড, হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

ঘরের ভেতরেও জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। তাই ঘর সব সময় পরিষ্কার রাখুন, ধুলা যেন জমতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। জামাকাপড় কাচা, খাবারের পাত্র ও রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা স্বাস্থ্যরক্ষারই অংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top