skip to Main Content

সেলুলয়েড I বিজয়া

কাহিনি, চিত্রনাট্য, পরিচালনা: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
অভিনয়ে: জয়া আহসান, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায়, লামা হালদার প্রমুখ
সংগীত: ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য
সিনেমাটোগ্রাফি: সৌভিক বসু
সম্পাদনা: শুভজিত সিংহ
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট
রিলিজ: ২০১৯

গত সংখ্যায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত বিসর্জন ছবি নিয়ে আলাপ হয়েছিল। সেই ছবির সিক্যুয়েলে নির্মিত হয়েছে বিজয়া । ছবিটি আপাতত পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পেয়েছে। কিছুদিন পর বাংলাদেশেও মুক্তি পাবে। বিসর্জনের চরিত্রগুলোর পরিণতিকে ঘিরে বিজয়ার ন্যারেটিভ। বিসর্জন ছবির মতোই এর অন্দরে প্রেম, বিচ্ছেদ, বেদনার দিকগুলো রয়েছে। আর ছবির মর্মে বয়েছে বাংলা ভাগ ও বাঙালির দ্বিখন্ডিত হয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক বেদনা। তা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বেদনাও বটে। তবে বিচ্ছেদের এই ঐতিহাসিক আলাপের মধ্যেই পুনর্মিলনের কাঙ্ক্ষা, প্রস্তুতি ও তার বাস্তবিক প্রচেষ্টাগুলোকে এই ছবির চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে সফলভাবে চিহ্নিত করেছেন পরিচালক কৌশিক। যদিও তা ঘাত-প্রতিঘাত ও সামাজিক বাস্তবতাবর্জিত নয়। সে কারণেই বিসর্জন-এর পর বিজয়া মূলধারার বাংলা চলচ্চিত্রে আরেকটি সিরিয়াস সিনে-উদ্যোগ। বিচ্ছেদের পর পুনর্মিলন এবং এর পরিণতি এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ। বিসর্জন-এর শেষে পদ্মাকে ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে যেতে হয়েছিল নাসির আলিকে। পদ্মার বিয়ে হয়েছিল গণেশ মন্ডলের সঙ্গে। এমনকি একটি পুত্রসন্তানও জন্ম দিয়েছিলেন পদ্মা। তার নাম মন্টু।
বিসর্জন-এর গল্প যেখানে শেষ হয়েছিল, বিজয়া র ন্যারেটিভ সেখান থেকে শুরু। প্রথমেই দেখানো হলো- বাংলাদেশের শ্রীপুরের সেই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গণেশ মন্ডলের শরীর ভালো নয়। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে স্ত্রী পদ্মা গণেশকে নিয়ে কলকাতায় আসেন চিকিৎসার জন্য। সঙ্গে গণেশের বন্ধু লাউ। কলকাতার চিকিৎসকও বলে দেন শরীর ভালো নয়। কলকাতায় পদ্মার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে যায় নাসির আলির। গণেশ মন্ডলের চিকিৎসা হচ্ছে যে হাসপাতালে, সেখানেই ওষুধের দোকানে কাজ করে নাসির। পদ্মার জন্য জমিয়ে রাখা ভালোবাসা আর অতীত দিনের কৃতজ্ঞতা থেকে পদ্মা ও গণেশ মন্ডলের পাশে এসে দাঁড়ায় নাসির। কিন্তু চিকিৎসক জানিয়ে দেন, গণেশ মন্ডল সুস্থ হবেন না! করা যাবে না তার অস্ত্রোপচারও। তার অবর্তমানে স্ত্রী ও সন্তানের কী হবে, সেটা ভেবে চিন্তিত গণেশ চান নাসির ও পদ্মার পুরোনো সম্পর্ক আবার জীবন্ত হয়ে উঠুক। তবে শেষমেশ তা হয়ে ওঠে না। কলকাতা ছেড়ে চলে যান পদ্মা। গল্পের শেষ মোটামুটি এখানেই। তবে এই ছবি দেখার জন্য বিসর্জন দেখাটা জরুরি। কারণ, নইলে চরিত্রগুলোকে ও ঘটনাক্রমকে ঠিকভাবে উপভোগ করা যাবে না। এটা বিজয়া র ক্ষেত্রে দুর্বলতাও বটে। যা হোক, বিসর্জন-এর ন্যারেটিভের কথা দু-এক লাইনে স্মরণ করা যাক। একদিন সকালে বাংলাদেশের শ্রীপুরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে নদীর ধারে অসুস্থ অবস্থায় এক অচেনা মানুষকে পড়ে থাকতে দেখে কষ্ট হয়েছিল পদ্মার। ফলাফল কী হতে পারে তা চিন্তা না করেই সেদিন অসুস্থ নাসির আলিকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। সামাজিক অসম্মানের হাত থেকে বাঁচতে অপরিচিত যুবককে দাদা পাতিয়ে পাশে থেকেছিলেন। ভালোবাসতেও সময় নেননি। তিনি যাতে নিরাপদে দেশে ফিরে আসতে পারেন, তার জন্য গ্রামের প্রভাবশালী মানুষ গণেশ মন্ডলকে বিয়েও করেছিল পদ্মা।
এই ছবিতেও অভিনয়ের দিক থেকে গণেশ মন্ডলের চরিত্রে কৌশিক আর পদ্মার চরিত্রে জয়া অনবদ্য। আগের ছবিতে নাসির আলি চরিত্রে আবীর চট্টোপাধ্যায়ের নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ কম ছিল। কিন্তু এই ছবিতে ওই চরিত্র বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেই মতো আবীর তার অভিনয়ে শতভাগ সফল। ফের লাউয়ের চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন লামা হালদার। এই ছবির গান অসামান্য। চিত্রনাট্যে বিসর্জনের ছায়া প্রবল হলেও সেটি সফল। সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং- এগুলো যথাযথ। আর রূপসজ্জা ও সাজসজ্জার ব্যাপারে বলতে হয় চিত্রনাট্যের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পৃক্ত।
‘বিসর্জন-এর পর বেশ কিছু সময় বয়ে গেছে। তার ছাপ পড়েছে প্রতিটি চরিত্রের চেহারায়। গণেশ মন্ডলের সেই চাকচিক্য আর নেই। পদ্মা সংসারী। নাসির আলি কলকাতায় চাকরিরত শহুরে যুবক। এসব ব্যাপার পোশাক ও রূপসজ্জায় সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। তবে এই ছবিতে বাংলাদেশকে মিস করবে দর্শক, যা ছিল বিসর্জনের অলংকার। আর লক্ষ্মীকে এই ছবিতে দেখা যায় না। সে নাকি আত্মহত্যা করেছে। এই ছবি পুনর্মিলনের হলেও শহর, ব্যস্ততা, টানাপোড়েন, সম্পর্কের ঘাত-প্রতিঘাত ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে মর্মস্পর্শী হয়ে উঠছে।

I অতনু সিংহ

কুইজ
১। বিসর্জনের কোন চরিত্রটি বিজয়ায় অনুপস্থিত?
ক। লাউ খ। লক্ষ্মী গ। মন্টু
২। বিজয়ায় নাসির আলি কী পেশার সঙ্গে যুক্ত?
ক। ব্যবসা খ। চিকিৎসা গ। ফার্মেসিতে চাকরি
৩। কলকাতায় পদ্মা এলেন কেন?
ক। গণেশের চিকিৎসায় খ। নাসিরের সঙ্গে দেখা করতে
গ। পর্যটনে
গত সংখ্যার বিজয়ী

১. ঐশী জাহান, বাড্ডা, ঢাকা।
২. পারভীন দীপু, ধানমন্ডি, ঢাকা।
৩. অর্পিতা দাস, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top