skip to Main Content

সেলুলয়েড I ২০০১: আ স্পেস ওডিসি

নির্মাণ: ১৯৬৮
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ২৯ মিনিট
নির্দেশনা: স্ট্যানলি কুব্রিক
প্রযোজনা: স্ট্যানলি কুব্রিক, ভিক্টর লিন্ডন
কাহিনি: আর্থার সি ক্লার্কের ছোটগল্প ‘দ্য সেন্টিনেল’-এর ছায়ায়
চিত্রনাট্য: স্ট্যানলি কুব্রিক, আর্থার সি ক্লার্ক
অভিনয়ে: কেইর ডেলাই, গ্যারি লকউড, উইলিয়াম সিলভারস্টোন প্রমুখ
চিত্রগ্রহণ: জিওফ্রি আন্সওর্থ
সম্পাদনা: রে লাভজয়

বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যুগান্তকারী সিনেমাগুলোর মধ্যে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে স্ট্যানলি কুব্রিক পরিচালিত ‘২০০১: আ স্পেস ওডিসি’ ছবিটির নাম। মানুষের অগ্রযাত্রা, মহাবিশ্ব, মহাকাশ, অস্তিত্ববাদ, মানুষ ও মহাজগতের আন্তঃসম্পর্ক, প্রযুক্তি ও তার সীমাবদ্ধতা, জন্ম-মৃত্যু এবং এসবের নান্দনিক বিমূর্ততাকে ঘিরে ১৯৬৮ সালে নির্মিত এই চলচ্চিত্র মূলত বিজ্ঞান, অস্তিত্ব, কল্পনা ও নান্দনিকতার মিশেল।
আর্থার সি ক্লার্কের ছোটগল্প ‘দ্য সেন্টিনেল’-এর ভাবনা এই ছবির প্লট নির্মাণের উৎস হিসেবে কাজ করেছে। স্বয়ং আর্থার সি ক্লার্কও যুগ্মভাবে। এই গল্পটা হলো এমন, একদিন মহাজাগতিক এক বস্তু আবিষ্কৃত হয় চাঁদের। বস্তুটা নাকি বহুকাল মহাজগতে একটি সিগন্যাল ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং এটি চাঁদে স্থাপন করেছে ভিনগ্রহের প্রাণীরা। ওই বস্তু মানুষের কাজকারবার সম্পর্কে তার সিগন্যাল দিয়ে মহাজগতের অন্যান্য প্রাণকে অবগত করছে।
এই ছবি মোট চারটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশের নাম, ‘দ্য ডন অব ম্যান’। এই অংশ আদিম মানুষের জীবনসংগ্রাম এবং তার মধ্যে থেকে উদ্বর্তনের। এই প্রক্রিয়ায় মনোলিথ নামে একটি বস্তুকে হাজির করেন পরিচালক। যেটি গোটা ছবির নিয়ন্ত্রক এবং যা মানুষ ও মহাজগতের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রকও বটে। এই মনোলিথ হচ্ছে পাথরের পিলার। এর সংস্পর্শে এসে আদিম মানুষের দৈনন্দিন ঘটনাপ্রবাহে রূপান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। মৃত পশুর হাড় থেকে অস্ত্রের ব্যবহার শেখে আদিম মানুষ। বাসস্থান থেকে উৎখাত হওয়া আদিম মানুষের একটি গোষ্ঠী পাল্টা প্রত্যাঘাত করে অন্য গোষ্ঠীপতিকে ওই হাড় দিয়ে। বিজয়ের স্বাদ পেয়ে ওই হাড় আকাশে ছুড়ে মারে আদিম মানুষ। ম্যাচকাটে ওই হাড় রুপালি পর্দায় হয়ে ওঠে একটি স্পেসশিপ।
পরবর্তী অংশটি শিরোনামহীন। ওই অংশ মার্কিন মহাকাশবিজ্ঞানী ড. হেউড ফ্লয়েডের নেতৃত্বে নভোচারীদের চাঁদে যাওয়ার কাহিনি। মনে রাখা দরকার, এই ছবির পরেই মার্কিনদের চন্দ্রাভিযানের বিষয়টি ঘটেছিল। যদিও তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যা হোক, এই অংশে মনে হয়, চাঁদে যাওয়া মানুষের কাছে খুবই সহজ ব্যাপার হয়ে উঠেছে। হেউড ফ্লয়েড চাঁদে যাচ্ছেন ওই মনোলিথের সন্ধানে, যা আদিম মানুষের অভিযোজনে সাহায্য করেছিল। এবং ওই বস্তুটিকে চাঁদেও নাকি রেখে দিয়েছে এলিয়েনরা। চাঁদে যাওয়ার পর মনোলিথকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে রেডিওঅ্যাকটিভ এক শব্দ শুরু হয়। যার জেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন মহাকাশবিজ্ঞানীরা।
ছবির তৃতীয় অংশটি হলো জুপিটার মিশন। চন্দ্রাভিযানের আঠারো মাস বাদে এই মিশন। এই অংশে ডেভ বোম্যান এবং ফ্রাঙ্ক পোল বাদে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হ্যাল-৯০০০ নামক একটি কম্পিউটার। কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একসময় বিভ্রান্ত হয় এই মিশনে। ডেভ ও বোম্যান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর আস্থা রাখতে না পেরে কম্পিউটারটিকে বন্ধ করে দিতে চান। এর পরিণতিতে মহাকাশে হারিয়ে যেতে হয় ফ্রাঙ্ক পোলকে। আর কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন সুপার কম্পিউটারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিদ্রোহ করেন ডেভ বোম্যান।
শেষাংশ ‘জুপিটার অ্যান্ড বিহাইন্ড ইনফিনিটি’। জুপিটারে যেতে গিয়ে মহাজগতের স্থান-কালহীন অংশে ঢুকে পড়েন ডেভ বোম্যান। সময় ও স্থানের বহুমাত্রিক যাত্রার মধ্য দিয়ে উপস্থিত হন শান্ত-শীতল একটি ঘরে। সেখানে বৃদ্ধ অবস্থায় নিজের অপরকে আবিষ্কার করেন তিনি। যে অপর আবার তার চেয়েও বৃদ্ধ মৃত্যুপথযাত্রী এক তৃতীয় সত্তার সন্ধান দেয়। আর ডেভ দেখেন মনোলিথকে। মনোলিথ ভেদ করে দেখা যায় আলোর বলয়ের ভেতর এক নবজাতক এগিয়ে আসছে পৃথিবীতে। এভাবে পুনর্জন্মের ভাবনা রেখে ছবিটি শেষ হয়। মহাকাব্যিকভাবে মানুষ ও মহাজগতের মধ্যকার সম্পর্কের সূত্রে এক অব্যক্ত শক্তির ভাবনা তৈরি হয় দর্শকের মনে।
মিনিম্যালিস্ট অভিনয়, কাব্যিক সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং, সেট, সাউন্ড এই ছবিকে সিনেমার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠত্বের তালিকায় রেখেছে। সঙ্গে দারুণভাবে কাজ করেছে মহাকাশ অভিযানের পোশাক পরিকল্পনা এবং কিছু কিছু অংশের রূপসজ্জা।

 অতনু সিংহ

কুইজ
১। মহাকাশে কে হারিয়ে যান?
ক। ডেভ বোম্যান খ। ফ্রাঙ্ক পোল গ। হেউড ফ্লয়েড
২। ছবিটি কত সালে বানানো হয়েছে?
ক। ১৯৯৮ খ। ২০০১ গ। ১৯৬৮
৩। চাঁদে অভিযান কার নেতৃত্বে হয়েছে এই ছবিতে?
ক। হেউড ফ্লয়েড খ। নিল আর্মস্ট্রং গ। ডেভ বোম্যান
গত সংখ্যার বিজয়ী

১। হুমায়রা সুবাহ, মিরপুর, ঢাকা।
২। সৈয়দ শাফিন হক শান, ধানমন্ডি, ঢাকা।
৩। সৈয়দা সাহিবা সাবরিন আশা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top