skip to Main Content

ফুড বেনিফিটস I নোনা মাখন

এই আহার্যের জাদুকরি গুণের শেষ নেই। রোগবালাই সারাইয়ে, সুস্বাস্থ্যে, সৌন্দর্যে এটি তুলনাহীন

কৃষিবিপ্লবের পর মানুষের খাদ্যতালিকায় নতুন নতুন খাবার যোগ হতে থাকল। এর দুই হাজার বছর মতান্তরে চার হাজার বছর পর মেসোপটেমিয়ার বাসিন্দারা গবাদিপশুর দুধ থেকে আজব এক পদ আবিষ্কার করল; যা খাওয়া যায়, মাথায়ও দেওয়া যায়। শীত থেকে বাঁচতে ত্বকে মাখা যায় আবার কুপির জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। শুধু তা-ই নয়, এটি ছিল ত্বকের ক্ষতস্থানের ওষুধ। পদটির নাম মাখন। এর রেসিপি মানুষ লিখিত আকারে পেয়েছে সাড়ে চার হাজার বছর আগে। মাটির ফলকে।
বর্তমানে সকালের নাশতায় রুটির উপর লেপে খাওয়া ছাড়া মাখনের অন্য ব্যবহার নেই বললেই চলে। অন্যান্য উপাদানের যোগ-বিয়োগে এর আরও অনেক শাখাপদের উদ্ভব হয়েছে। নোনা মাখন সেসবের একটি। ইংরেজিতে যাকে বলে সল্টেড বাটার। এতে প্রতি ১০ গ্রামের ৮০ মিলিগ্রামই থাকে লবণ।
মানুষের শরীরে দৈনিক ৩ গ্রাম লবণ প্রয়োজন। তবে ৫ গ্রামের বেশি খাওয়া অস্বাস্থ্যকর। এই বিবেচনায় পরিমাণমতো নোনা মাখন খেতে বাধা নেই। লবণ ছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম মাখনে রয়েছে ৭১৭ ক্যালরি, চর্বিসম্পৃক্ত ৭৩০ ক্যালরি, চর্বি ৮১ গ্রাম, কোলেস্টেরল ২১৫ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬৮৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ০.১ গ্রাম, প্রোটিন ০.৮ গ্রাম। কিছু ভিটামিন এ, সি, ডি, ই ও কে২ আছে। অ্যাকটিভেটর এক্স, আয়োডিন, সেলেনিয়াম, লেসিথিন এবং লরিক অ্যাসিডও মেলে। এসব উপাদান আমাদের শরীরে কী কাজে আসে? অ্যাকটিভেটর এক্স শরীরে প্রবেশ করে খনিজ শোষণে সহায়তা করে। ফলে ক্ষুধা কমে। মাখনের ভিটামিন কে২ প্রোস্টেট ক্যানসার সারায়। এটি চর্বিকে দ্রবণীয় করে। করোনারি হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি কমায়। নারীদের প্রজননক্ষমতা বৃদ্ধিতেও মাখন কার্যকর। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাজটি করে মাখনের লিনোলিক অ্যাসিড। এটি শরীরের বিপাকে সুপ্রভাব ফেলে। মাখনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি র‌্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
মগজ ও স্নায়ুকে উন্নত করে মাখন। অনেকে মাখনের স্যাচুরেটেড ফ্যাটকে অস্বাস্থ্যকর মনে করেন। কিন্তু গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, এর মধ্যে এমন কিছু আছে যা বেশ স্বাস্থ্যকর। সম্পৃক্ত চর্বি শরীরে ভালো এইচডিএল বাড়ায়। এটাই মগজ ও নার্ভ উন্নত করে। বিশেষ করে শিশুদের। হাড় ও অস্থিসন্ধির সুস্থতায় মাখনের ভূমিকা আছে। অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধের পাশাপাশি আর্থ্রাইটিস নিরাময় করে দুগ্ধজাত এ খাবার। মাখনে ক্যালসিয়াম থাকায় তা হাড় ও দাঁতের জন্য ভালো। মাখন কাজ করে চোখের রোগ সারাইয়েও। উচ্চমাত্রায় বিটা ক্যারোটিন থাকায় চোখের সুস্থতায় এ খাবার কাজে লাগে। চোখের ছানি, মেকুলার ডিজেনারেশনের আশঙ্কা কমায়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হচ্ছে, মাখন বাতের ব্যথা কমাতে সক্ষম।
প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা রূপচর্চায় মাখন ব্যবহার করত। এখনো মাখনের ফেসপ্যাক ব্যবহৃত হয়। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। ত্বক শুষ্ক হোক কিংবা তৈলাক্ত, মাখনের ফেসপ্যাক উভয় ক্ষেত্রেই সুরক্ষা দেবে। তবে এ জন্য অন্য পদও মেশাতে হবে। যেমন আম।
মাখনের সঙ্গে পাকা আম মেশালে যে ফেসপ্যাক তৈরি হয়, তা শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এটি ত্বক আর্দ্র রাখে। আম ও মাখন, দুটোতেই ভিটামিন রয়েছে। তাই এটি রোদে পোড়া দাগ দূর করে। আরেকটি ফেসপ্যাক হচ্ছে মাখনের সঙ্গে স্ট্রবেরি। তারুণ্য ধরে রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। এটি ত্বকে বলিরেখা পড়া রোধ করে। তা ছাড়া দাগ ও ব্রণ দূর করে। এতে শসা ও লেবুর রস মেশালে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। ত্বক আর্দ্র রাখতে মাখনের সঙ্গে পাকা কলা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে মাখতে পারেন। ময়শ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে এটি। মধু যোগে মাখন ব্যবহার করলে ত্বক স্নিগ্ধ, কোমল ও দীপ্তিময় হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ দূর হবে। কোলাজেন তৈরি করে ত্বক পুনর্গঠনে সহায়তা করে মাখন।
শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সুরক্ষা ছাড়াও মাখনের আরও কিছু ব্যতিক্রমী কার্যকারিতা আছে। যেমন আঠা দূর করতে। আঠা দিয়ে কাজ করার সময় তা হাতে আটকে যেতে পারে। মাখন মেখে ভালো করে ঘষে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিলে আঠা উঠে যাবে।
মাছ কাটাকুটির পর হাত থেকে গন্ধ দূর করতে এটি ব্যবহার করা যায়। সামান্য মাখন হাতে মেখে ঘষে ধুয়ে নিন। গন্ধ দূর হবে। কেক কাটার সময় ছুরিতে ধার না থাকলে তাতে সামান্য মাখন লেপে নিলেই কাজ হয়ে যাবে। স্বর্ণের অলংকার পরিষ্কারক হিসেবেও মাখনের ব্যবহার আছে। নরম ব্রাশে মাখন নিয়ে তা দিয়ে গয়না ঘষলে স্বর্ণের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই ক্যাপসুল গিলতে পারেন না। গলায় আটকে যায়। ক্যাপসুলে একটু মাখন মেখে নিলে তা পিচ্ছিল হবে। ফলে গিলতে কষ্ট হবে না। পনির সংরক্ষণে কাজে লাগে মাখন। পনিরের উপর মাখনের প্রলেপ দিয়ে ফ্রিজে রাখলে তা দীর্ঘ সময় ভালো থাকে। নুডলস ও পাস্তা ঝরঝরে করতে রাঁধুনিরা মাখন ব্যবহার করেন। সেদ্ধ করার সময় পাত্রে কিছুটা মাখন ছেড়ে দিলে নুডলস ও পাস্তা জড়ো হয়ে যাবে না। আঙুলে আংটি আটকে গেলে কিংবা কবজি থেকে চুড়ি খুলে ফেলার ক্ষেত্রে মাখন ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া পেশাদার শেফরা খাবারে স্বাদ ও গন্ধ বাড়াতে এবং অ্যাসিডিটি কমানোর জন্যও মাখন ব্যবহার করেন।
 শিবলী আহমেদ
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top