skip to Main Content

ফিচার I শ্বেতপ্রভা

কনের রঙচঙে সাজ এখন সাদায় ম্রিয়মাণ। কেননা রঙটির রয়েছে স্বাভাবিক আভিজাত্য এবং পুরো সাজকে আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষমতা। বিশ্বব্যাপী এখন তাই শুভ্রতার জয়জয়কার। লিখেছেন সারাহ্ দীনা

সাদা মানেই সব সময় সাদামাটা কিংবা সাধারণ নয়। ফ্যাশনদুনিয়ায় অজস্র রঙের ছড়াছড়ির মধ্যেও এটি আছে তার চিরন্তন রূপে। সাদা তাই রহস্যময়। নয়তো এমন দারুণ চমক বিশ্বব্যাপী আর কোন রঙ ছড়ায়? কিন্তু রঙের যে পুঁথিগত অর্থ, সেখানে সাদা বদলে গেছে অঞ্চলভেদে। পাশ্চাত্যে রঙের কদর প্রশ্নাতীত। প্রথায় রূপ নিয়েছে সাদার ব্যবহার। শুরুটা সম্ভবত ১৮৪০-এ। কুইন ভিক্টোরিয়া লেইস আর স্যাটিনের মিশেলে তৈরি শুভ্র গাউন পরে প্রিন্স অ্যালবার্টের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন। সেই থেকে সাদা পোশাকই কনেসাজের অংশ। ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মারকেলের গায়েও আইভরি রঙ বিয়ের পোশাক দেখেছি আমরা। সাদার সতেজতা এত বছরেও বদলায়নি।
সাদা রঙের বিয়ের পোশাকের সেভাবে কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি আজও। যদিও শেড যোগ হয়েছে কয়েকটি। আইভরি, ক্রিম, অফ হোয়াইট জায়গা করে নিয়েছে। মূল কিন্তু সেই সাদাতেই। উপমহাদেশেও রঙটি দারুণভাবে এসেছে। এ জোয়ার সাম্প্রতিককালের। ঠিক সাদা না হলেও সাদার গা ঘেঁষে গেছে সেলেব কনেদের বিয়ের পোশাক। প্রিয়াংকা চোপড়াকে দেখা গেছে এমন লেসের ড্রেসে গাঁটছড়া বাঁধতে। দীপিকা-রণবীরের বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় জোড় বেঁধে সাদা সোনালির আবেশ মুগ্ধ করেছে। দীপিকার ভারী সোনালি পাড়ের সাদা শাড়ি জুড়ে ছিল ভরপুর ঐতিহ্যের পরশ। তামিলদের বিয়েতে সোনালি পাড়ের সাদা শাড়ির ধারা চলচ্চিত্রের হাত ধরে পৌঁছে গেছে আমাদের দেশেও। বাজার ঘুরলে তাই এমন রঙ মিশেলের শাড়ি পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে বিয়ের আয়োজন শেষ হয় কয়েক দিনে। আর কিছু না হলেও হলুদ, বিয়ে আর বউভাতের আয়োজন করা হয়। কয়েক বছর আগেও বিয়ের কনের পোশাকের ক্ষেত্রে সাদা রঙ এড়িয়ে যাওয়া হতো। কেননা রঙটি ছিল বৈধব্যের প্রতীক। ভাবনায় এসেছে পরিবর্তন। বিয়ের কনে মানেই টুকটুকে লাল বউ নয়। সাদাতেও দারুণ কনে। শাড়ির সঙ্গে সঙ্গে বিয়ের ড্রেস লাইনে লেহেঙ্গা, সারারা এসেছে। এসবেও রঙটি জমকালো। সাদা জমিনে একই রঙের অলংকরণ স্বমহিমায় উজ্জ্বল। এর সঙ্গে মেটাল রঙ বাড়িয়ে তোলে মোহনীয়তা। যেন জ্বলজ্বলে হীরে। সাদা রঙের পোশাকে জমকালো অলংকরণ আভিজাত্য এনে দেয়। জারদৌসি বিয়ের পোশাকের অলংকরণে প্রধান একটি মাধ্যম। যেকোনো রঙের সুতা এবং ম্যাটেরিয়ালস এই রঙে উজ্জ্বল। কিন্তু সাদায় যখন সাদা বসে তখন তা অপূর্ব। বিয়েতে এ রঙের পোশাকে এমব্রয়ডারি ও জারদৌসি বেশ ট্রেন্ডি।
বিয়ের শাড়ির ক্ষেত্রে আমাদের দেশে বেনারসির চাহিদা সব থেকে বেশি। জামদানিপল্লিতে সাদা জামদানি পাওয়া যায় বিভিন্ন নকশায়। সোনা, রুপা আর তামা রঙ সুতার কাজে সাজানো হয় সাদা জমিনের বেনারসি। কিন্তু সাদা জমিনে একই রঙের সুতার সেলফ মায়াময় আবহ তৈরি করে। কনের রূপ জামদানিতেও দৃশ্যমান। বেনারসির পরেই আসে জামদানির কথা। সাদায় মোটিফের জমকালো ব্যবহার শাড়িটিকে দৃষ্টিনন্দন করে। বিয়েতে উচ্চ কাউন্ট সাদা জামদানি বেছে নিলে অনুষঙ্গ ছাড়াই সম্ভব গর্জাস লুক।
দেশের ওয়েডিং ফ্যাশন বাজার জমজমাট এখন। গেল কয়েক বছরে কলেবর বেড়েছে। সারা বছর ধরেই এখন বিয়ের পোশাক তৈরি করেন ডিজাইনাররা। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ অব্দি বেশি চাহিদা থাকে বিয়ের পোশাকের। বাজার ঘুরেই অনায়াসে কিনে নেওয়া যায় বিয়ের পোশাক। কিন্তু ডিজাইনার ওয়্যারের স্বাদ সেখানে অনুপস্থিত। নকশার নান্দনিকতায় চাই বিশেষজ্ঞের চিন্তাশীল ভাবনা এবং দক্ষ হাতের ছোঁয়া। বাংলাদেশে ওয়েডিং ড্রেস ডিজাইনারদের মধ্যে হুমায়রা খান অগ্রগণ্য। তিনি বর্তমানে বিয়ের পোশাকে সাদার ট্রেন্ড সম্পর্কে বলেন, ‘এখনকার ধারা আগের চেয়ে ভিন্ন। ভাবনা, জীবনদর্শন- সবখানেই এসেছে পরিবর্তন। নিজেকে গুরুত্ব দিতে শিখেছে মানুষ। ধার করা জৌলুশের থেকে নিজস্বতায় উজ্জ্বল হওয়ার চেষ্টা বেড়েছে। বিয়ের পোশাকে সাদার ব্যবহার নিয়ে কথা বলতে গেলে এ বিষয়গুলোও মাথায় রাখতে হবে। উজ্জ্বল গাঢ় রং তার নিজস্বতাকে প্রকট করে। পরিধানকারীর সৌন্দর্য এতে বিঘ্নিত হয়। কিন্তু সাদা নিজের দ্যুতিতে কনেকেও আলোকিত করে তোলে। সাদায় ম্লান হয় না, বরং পরিস্ফুটিত হয় সুন্দরতা। সাদার প্রতি তাই কনেদের নির্ভরতা বাড়ছে।’ ব্রাইডসমেডসের ধারণা আমাদের দেশে অতি দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে। কনের বোনের পোশাকের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়। তার বন্ধুরাও কম যায় না। সবাই মিলে মিলিয়ে পোশাক পরার চল এসেছে। কখনো রঙ মিলিয়ে কিংবা একদমই বিপরীত রঙে দারুণ তার বন্ধুরা। এখন বিয়েতে কনের মায়ের পোশাক গুরুত্বপূর্ণ। বরের মায়ের ক্ষেত্রেও তাই। দুই বেয়াইন মিল রেখে পোশাক বেছে নেওয়ার উদাহরণ কম নয়। সাদা এখানেও জনপ্রিয়। বিয়ের কনে মানে লজ্জাবনত- এ ধারণা থেকে মুক্ত এখনকার সমাজ। কনে এখন ইচ্ছা করলেই নিজের মতো করে বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন। প্রথাগত পোশাকের পরিবর্তে সাদায় শোভিত হয়ে তিনি অনুষ্ঠানস্থলের সর্বত্রই নজরকাড়া। আরও একটি বিষয় পোশাকের সঙ্গে গয়নার মেলবন্ধন। কারণ, অলংকার বিয়ের সাজে অপরিহার্য। হোক তা অল্প কিংবা বেশি। সাদা পোশাকে গয়না ঢাকা পড়ে না, বরং উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। তাই বলা যায়, রঙটি নিজে তো বটেই, এর বাইরের সবকিছুই স্বমহিমায় মূর্ত করে। সাদা তাই বিকল্পহীন।
সাদা পোশাক পরা কনের মেকআপ সহজ ও সুন্দর। এতে স্বাধীনতাও পাওয়া যায় রঙ প্রয়োগে। লিপস্টিক টকটকে লাল যেমন হতে পারে, তেমনি ন্যুড শেডেও বাহবা পাবে। কনের স্কিন টোনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে মেকআপ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সৌন্দর্য বিশ্বে ন্যাচারাল বিউটি এখন জায়গা করে নিয়েছে। মেকআপে ডিটেইলিং আজকাল গুরুত্বপূর্ণ। এমনটি সাদা পোশাকেই বেশি জুতসই।

মডেল: সাদিয়া, মায়িশা ও মৌসুম
ওয়্যারড্রোব: হুমায়রা খান
জুয়েলারি: স্পার্কেল
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top