skip to Main Content

ফুড বেনিফিটস I লালশাক

পুষ্টিমানে কোনো শাকই এর কাছাকাছি নয়। শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত স্বাস্থ্য রক্ষায় এর খনিজ ও ভিটামিনগুলো যথেষ্ট ফলদায়ক

বড়দের পাশাপাশি অনেক শিশু খেতে পছন্দ করে লালশাক। গর্ভাবস্থা থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয় এই খাদ্য। বয়স ত্রিশ হওয়ার পর শরীরের ভাঙন আটকায়। আয়ুও বাড়ায়। প্রতি ১০০ গ্রাম শাকে শর্করা থাকে ৪.৯৬ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ৫.৩৪ মিলিগ্রাম, স্নেহ ০.১৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.১৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪২.৯০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১১.৯৪ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ ১.০৬ মিলিগ্রাম। সবচেয়ে বেশি থাকে ক্যালসিয়াম। প্রতি ১০০ গ্রামে ৩৭৪ মিলিগ্রাম। যেখানে পুঁইশাকে থাকে ১৬৪ মিলিগ্রাম, মুলাশাকে ২৭.৯০ মিলিগ্রাম, পালংশাকে ৭৯ মিলিগ্রাম এবং ডাঁটাশাকে ৮০ মিলিগ্রাম। বাড়ন্ত শিশুদের শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন বেশি। এই উপাদানের অভাবে শিশুর দৈহিক গঠন দুর্বল হওয়া ছাড়াও হাঁটাচলায় বিলম্ব হয়। রিকেটেও আক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে শিশুর হাড় নরম ও দুর্বল হয়। পা বেঁকে যেতে পারে। শরীরের বৃদ্ধি থেমে যাওয়া, হাড়ে যন্ত্রণা, কপাল বড় হওয়া, ঘুমের ব্যাঘাত, পেশি জড়িয়ে যাওয়া- এসবই রিকেট রোগের লক্ষণ। লালশাকের ক্যালসিয়াম এসব থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় ভাত কিংবা খিচুড়িতে এই পাতা যোগ করা যেতে পারে। সাদা ভাত রঙিন করে বলে এটি শিশুদের সহজেই আকৃষ্ট করে।
দাঁতের সুস্থতা নিশ্চিত করে লালশাক। এর মূল দিয়ে দাঁত মাজা যায়। এরপর লবণ পানি দিয়ে কুলকুচা করলে হলুদ ভাব কাটে। মাড়ির রক্তপাত বন্ধ করতে পারে শাকের নির্যাস। এ উদ্দেশ্যে সমপরিমাণ পানির সঙ্গে পাতার রস মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগানো যেতে পারে। এই মিশ্রণ দিয়ে গড়গড়া করলে গলার সমস্যা দূর হয়। গর্ভবতীদের দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের জোগান দিতে পারে লালশাক। প্রসূতি অবস্থায় এই মৌল প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২০০০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন হয়। ৫০০ গ্রাম করে লালশাক খেলেই চাহিদা মেটে। সদ্য মায়েদের জন্য এটি বেশ উপাদেয় ও উপকারী।
বয়স বাড়লে অস্টিওপোরেসিস নামের রোগ বাসা বাঁধতে পারে। এটি অস্থিক্ষয়জনিত অসুস্থতা। ভঙ্গুর হওয়া ছাড়াও হাড়ের শক্তি কমে যেতে পারে। ঋতুস্রাব বন্ধের পর এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। নিরাপদ থাকতে চাইলে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করা দরকার। লালশাকের অন্যান্য উপাদান শরীরের নানাবিধ বালাই দূর করে। এমনকি ক্যানসার সারায়। শাকের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি শরীরের টক্সিক দূর করে। এতে ক্যানসার কোষের জন্ম স্থগিত হয়। কিডনির রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে পারে লালশাক। গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গ পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি সচল রাখতে পারে খাদ্যটি। উপকারী এ শাক নিয়মিত খেলে কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ে। পাশাপাশি রক্তে থাকা ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেয়। এই শাকের ভিটামিন এ ও সি চোখের জন্য ভালো। দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। রেটিনার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চোখের সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করে। শাকের আয়রন রক্তশূন্যতা রোধ করে। লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অ্যানিমিয়া নিরাময় হয়। দুই আঁটি শাক পিষে রস সংগ্রহ করে এক চামচ লেবুর রস এবং এক চামচ মধুযোগে নিয়মিত খেলে শরীরে কখনোই রক্তের অভাব হয় না বলে কথিত আছে। এ কারণে গর্ভবতীদের লালশাক খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা।
লালশাকের আরেকটি উপকারী উপাদান হচ্ছে ফাইবার। আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় পেটের রোগের দাওয়াই হিসেবে কাজ করে খাবারটি। বদহজমের আশঙ্কা কমায়। বাওয়াল মুভমেন্ট ঠিক রাখে। এ ছাড়া শাকের ফাইবার হার্ট সুস্থ রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে। শরীরের স্থূলতা কমায়। শাকে উপস্থিত উপাদানগুলো শরীরে ঢোকার পর বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। ফলে ক্ষুধা কমে। এভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে লালশাক। এটি জ্বরেরও পথ্য। এতে আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত ভাজি করা লালশাক খাওয়ালে ধীরে ধীরে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। সাপে কামড়ালে আক্রান্ত স্থানে লালশাকের পাতা বেটে মেখে দেওয়া যেতে পারে। এতে বিষের প্রভাব কমে। বিভিন্ন অঙ্গে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়াও প্রতিরোধ হতে পারে। ডায়রিয়া উপশমের জন্য খাওয়া যেতে পারে এটি। অ্যাকজিমা চিকিৎসাতেও লালশাকের ব্যবহার আছে। এ খাদ্য বিভিন্ন চর্মরোগ সারায়। এটি খেলে শুষ্ক চুলকানি ও ফুসকুড়ি প্রতিকার হয়। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা পেতে, আলঝেইমারস প্রতিরোধে এবং মস্তিষ্কের সুরক্ষা দিতে পারে লালশাক।
শরীরের অভ্যন্তর ছাড়াও উপরিভাগের যতেœ উপকারী লালশাক। অনেকের ত্বকই তৈলাক্ত। বাজারে নানা রকম প্রসাধনী মেখেও পরিত্রাণ না পেলে নিয়মিত লালশাক খাওয়া যেতে পারে। এতে তৈলাক্ত ভাব দূর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ব্ল্যাক হেডসও লুপ্ত হয়। ত্বক থেকে বয়সের ছাপ মুছে দিতে দৈনিক লালশাক রাখা যেতে পারে পাতে। চুলের সুরক্ষায়ও এটি উপযোগী। গোড়া মজবুত করে মিনারেল ও পুষ্টি জোগায়। এ উদ্দেশ্যে পাতা ও লবণ একসঙ্গে পিষে পেস্ট তৈরি করা যেতে পারে। এর থেকে রস সংগ্রহ করে তা চুলের গোড়ায় মেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেললে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এই রস সপ্তাহে দু-তিন দিন ব্যবহার করলে উপকার মেলে। চুল পড়ে যাওয়া সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। মাথা আঁচড়ালে, এমনকি হাত দিলেও চুল উঠে আসে। পরিণতিতে টাক পড়ে। এর থেকেও মুক্তি দিতে পারে লালশাক। ফলিকলের পতন রোধ করে টাক সমস্যা থেকে রেহাই দেয় এটি। এ ছাড়া চুল রুক্ষ ও মলিন হয়ে যাওয়া রোধ করে।
অনেকের নখ ভাঙে। ফলে হাত লুকিয়ে চলতে হয়। নখের ভঙ্গুরতা থেকেও সুরক্ষা দেয় এই শাক। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
তবে লালশাক খাওয়ার বেলায় কিছু সতর্কতা জরুরি। এটি অ্যাসিডিটি ঘটাতে পারে। এ জন্য খাবারটি সকাল কিংবা রাতে না খেয়ে দুপুরে খাওয়াই ভালো। এ সময় খেলে হজমে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা কম। কথিত আছে, তা ছাড়া কোনো শাকই রাতে খাওয়া ঠিক নয়।

 শিবলী আহমেদ
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top