skip to Main Content

ফিচার I বালাইরোধী খাবার

জীবজগতে ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার ছড়াছড়ি। এসবের কবল থেকে রক্ষা করে মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম। এটি একটি প্রক্রিয়া, যা ঠিক রাখার জন্য বিশেষ কিছু খাবার জরুরি

শরীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে ইমিউন সিস্টেম। এটি তিন ধরনের- ইনেট, অ্যাডাপ্টিভ ও প্যাসিভ। এগুলো ঠিকমতো কাজ না করলে সামান্য অসুখেই মরণাপন্ন হতে হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের শরীরে রয়েছে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া। এসব অণুজীবের সঙ্গে আদিকাল থেকে মানুষকে অভিযোজিত ও টিকে থাকতে হয়েছে। তা ইমিউন সিস্টেমের কল্যাণে। প্রক্রিয়াটির সুরক্ষায় চাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এমন খাবার। এটিকে সক্রিয় রাখে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইম। উপাদানগুলো ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়ে, কোষের সুরক্ষা দেয়, সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। প্রধান অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো হচ্ছে বিটা ক্যারোটিন; ভিটামিন এ, সি, ই; লাইকোপেন; লুটেইন; সেলেনিয়াম ইত্যাদি।
ইমিউন গড়তে বিটা ক্যারোটিন খুব জরুরি। এটি ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়, যা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ভূমিকা রাখে। ভিটামিন বি-ও ভীষণ উপকারী। বিশেষত বি৬। এটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং বালাই সারাতে বি১২-ও কার্যকর। ইমিউন দুর্বল হলে নিয়মিত ভিটামিন সি গ্রহণ করা যেতে পারে। এটি দ্রুত রোগনাশী তন্ত্রের উন্নতি ঘটায়। শরীরে প্রয়োজনীয় মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট জমা করে রাখতে ভিটামিনটি নিয়মিত গ্রহণ জরুরি। ইমিউনের উন্নতি ঘটাতে পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দিনে ৯০ এবং নারীর ৮০ মিলিগ্রাম করে এটি দরকার। ভিটামিন ই-ও ইমিউনবান্ধব। এটি ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে পারে। প্রোটিনও রোগ প্রতিরোধে জরুরি উপাদান। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বাড়ায়, রোগ সারাইয়ে সাহায্য করে। মানবদেহের প্রতি কেজি ওজনের জন্য এক গ্রাম করে প্রোটিন নিয়মিত গ্রহণের পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। শ্বাসযন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্র সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় প্রোবায়োটিকস। কিছু খনিজও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যেমন দস্তা। এর সাপ্লিমেন্ট সর্দিজ্বরের সমস্যা দূর করতে কার্যকর।
এসব উপাদান পাওয়া যেতে পারে প্রতিদিনের খাবারে। যেমন রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল জীবাণু ধ্বংস করে। মিষ্টিআলুতে আছে প্রাকৃতিক চিনি, যা খুবই উপকারী। চা খাওয়া যেতে পারে। তবে দুধ ছাড়া। গ্রিন টি হলে ভালো। চলতে পারে মাশরুম। শরীরের ইনফেকশনজনিত রোগবালাই দূর করতে এর জুড়ি নেই। মাশরুমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংস করে। শরীরের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারে দই। এতে লাইভ অ্যাকটিভ কালচার নামের সাবস্টেন্স থাকে, যা মূলত উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এই অণুজীবগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ইমিউনের উন্নতিতে কাজ করে ওটস। আঁশজাতীয় খাবার হওয়ায় এটি শরীরের রোগবালাইয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে। চিকেন স্যুপও উপকারী। এর কারনোসিন নামের রাসায়নিক পদার্থ ভাইরাসজনিত জ্বরের সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অনন্য উৎস আদা। এটিও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কিছু ফল ইমিউন সিস্টেম সতেজ করে। যেমন তরমুজ। এতে গ্লুটাথায়োন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জীবাণু সংক্রমণে বাধা দেয়। আমলকীতে সি এবং গাজরে এ ভিটামিন আছে। এগুলো সংক্রমণের ঝুঁকি ও ইনফেকশনের আশঙ্কা দূর করে। মাছও উপকারী। এর ওমেগা ৩ ও ফ্যাটি অ্যাসিড ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে সাহায্য করে। শরীরের জন্য মধু ও দারুচিনিও উপকারী।
কাঠবাদামে প্রচুর ভিটামিন ই থাকে। এটি ঠান্ডার সমস্যা ও কাশি প্রতিরোধ করে। এর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরে শক্তি জোগায়। কাজুবাদাম জিঙ্কের উৎস। ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা কাটাতে, শারীরিক বিকাশ এবং টি-লিম্ফোসাইট অ্যাকটিভের জন্য জিঙ্ক জরুরি। এই বাদাম ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়ে এবং আক্রান্ত কোষের প্রতিরক্ষায় কাজ করে।
রসুন, আদাসহ অন্যান্য মসলার আছে ঋতুভিত্তিক বালাই দূর করার ক্ষমতা। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত অসুস্থতা সারায়। রান্নায়, স্যালাডে কিংবা কোনো পানীয়ের সঙ্গে এসব মসলা খাওয়া হলে শরীর অনেকটাই সুস্থ থাকে; সংক্রমণের আশঙ্কা কমে। যেমন মৌরি। তামা, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ ও সি, আয়রন, সেলেনিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের আকর এটি। মসলাটি ওষুধের মতোই কাজ করে। এর ভিটামিনগুলো গলার গুরুতর সমস্যা সারায়। ঠান্ডাজনিত অসুখ দূর করে।

রান্নায় মৌরি ব্যবহারে ফ্লু ও ভাইরাসজনিত অসুস্থতা থেকে রেহাই মেলে। উপকারী মসলা জাফরান। ঠান্ডা-কাশি দূর করতে এর এক চিমটি সামান্য গরম দুধে মিশিয়ে কপালে ম্যাসাজ করা যেতে পারে। রোগবালাই দূর করার বিস্ময়কর ক্ষমতা আছে হলুদে। ফ্লু থেকে রেহাই পেতে রাতে ঘুমের আগে হলুদমিশ্রিত এক গ্লাস দুধ পান করা যায়। এই মসলার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রপার্টিজ রেসপিরেটরি ট্রাক্ট ইনফেকশন এবং সর্দি-কাশির প্রকোপ কমায়। ইমিউন সিস্টেমের সতেজতায় রাখা যেতে পারে জায়ফল। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ঠান্ডাজনিত ব্যাধি থেকে সুরক্ষা দেয়। একই কাজ করে মেথি। ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে রেহাই দেয় গোলমরিচ। ঠান্ডার সমস্যা দূর করতে এটি উপকারী। চায়ের সঙ্গে এই মসলা মিশিয়ে খেলে কাশি দূর হয়। গলাব্যথাও সারে। গোলমরিচে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কফ বের করে দেয়।
করোনা-আতঙ্কে অস্থির পুরো বিশ্ব। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই যে মৃত্যু অবধারিত, তা নয়। ভালো ইমিউনের রোগীরা সুস্থ হচ্ছেন। করোনার পাশাপাশি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এ ঋতুতে অন্যান্য ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। এসব বালাই থেকে সুরক্ষিত থাকতে সাবধানতার পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে এমন খাবার খাওয়া যেতে পারে।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top