skip to Main Content

ফিচার I মেনোপজ?

মানেই ফুলস্টপ নয়। ফুরিয়ে যাওয়া নয়; বরং জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। বয়স হয়েছে বলে ত্বকের পরিচর্যা বন্ধ করে
দেওয়া যাবে না!

৪০-এর মধ্যে মেনোপজ হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে টাইমফ্রেমটা ৫০ বছরে গিয়েও ঠেকে। এ সময় নারীদের স্বাভাবিক মেনুস্ট্রুয়াল সাইকেল বা মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়াই মূলত মেনোপজের সবচেয়ে বড় লক্ষণ। মানে, হরমোনের হিসাব-নিকাশ এলোমেলো হয়ে যাওয়া। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে ত্বকের ওপর। এতে ত্বকের শুষ্কতা বাড়ে, দেখা দেয় ডিহাইড্রেশন। লোমকূপ বড় হয়ে যায়, বাড়তে শুরু করে এডাল্ট অ্যাকনেও। ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, এর মূল কারণ মেনোপজকালীন ত্বকের মেটাবলিজম ক্ষমতা কমে যাওয়া। ত্বকের স্বাভাবিক সক্ষমতা সীমিত হওয়া। সাধারণত বয়স বিশ থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে থাকলে নতুন ত্বককোষ সৃষ্টি হয় ২৮-৩৫ দিনের মধ্যে। ত্রিশ পেরোলেই উৎপাদনের গতি মন্থর হতে শুরু করে। ৪০ থেকে ৫০ দিন অব্দি সময় লেগে যায় মাঝেমধ্যে। এ ছাড়া মেনোপজ মানেই ত্বকে কোলাজেন উৎপাদনকারী হরমোন ওয়েস্ট্রোজেন উৎপাদনের মাত্রা কমে যাওয়া। ফলে দেহে পর্যাপ্ত কোলাজেন তৈরি হতে পারে না। এতে ত্বক হারাতে শুরু করে তারুণ্যোজ্জ্বল টান টান ভাব আর পেলবতা। চোখের চারপাশের সূক্ষ্মরেখা ও হাসির ফলে সৃষ্ট মুখের স্মাইল লাইন বেশি দৃশ্যমান হয়। সমীক্ষা বলছে, মেনোপজ শুরুর প্রথম পাঁচ বছরেই ডার্মাল কোলাজেনের এক-তৃতীয়াংশ হারিয়ে যায়। এরপর প্রতিবছর ২% করে তা কমতে থাকে। ফলে ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ব্যাহত হয়। ত্বক পাতলা হতে শুরু করে।
বিপদ এখানেই শেষ নয়! মেনোপজ নিয়ে ধারণা থাকলেও এটি যে মূলত তিন ধাপের একটি প্রক্রিয়া, তা অনেকেরই অজানা। পেরিমেনোপজ, মেনোপজ ও পোস্টমেনোপজ। পেরিমেনোপজ শুরু হয় মেনোপজাল পিরিয়ডে প্রবেশের ৮-১০ বছর আগে। তখন থেকেই দেহে এস্ট্রোজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। আর পোস্টমেনোপজ স্থায়ী হয় মেনোপজের পর, দশকে দশকে। এস্ট্রোজেন ডেফিশিয়েন্সি আর ত্বকের নানা রকম পরিবর্তন তখন অবশ্যম্ভাবী। মেনোপজ পিরিয়ডে ত্বকের সবচেয়ে বড় সমস্যা শুষ্কতা। কারণ, এ সময় এস্ট্রোজেন লেভেল কমতে থাকে, কমে যায় সিবাম উৎপাদনের হার।
এ ছাড়া ত্বকের প্রাকৃতিক হায়ালুরনিক অ্যাসিড হ্রাস পায় দ্রুত। তাই ত্বকচর্চা হওয়া চাই এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে। এ সময় ফোমিং, সোপ বেসড ক্লিনজারগুলো এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলেন ডার্মাটোলজিস্টরা। এর বদলে নন-সোপ, ক্রিমি কনসিসট্যান্সির কোমল ক্রিম ক্লিনজারগুলোই বেশি জুতসই। ময়শ্চারাইজ করতে হবে ত্বক নিয়ম করে। শুষ্কভাব সারাতে সেরামাইড, গ্লিসারিন অথবা হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ এমলিয়েন্ট রিচ অয়েল বেসড ময়শ্চারাইজার মেনোপজকালীন ত্বকযত্নে খুব কার্যকর। ট্রান্সএপিডার্মাল আর্দ্রতা হারানোর প্রতিরোধে দারুণ দাওয়াই। যাদের শুষ্ক ত্বকের সঙ্গে সঙ্গে রোজাশিয়া আর একজিমার মতো ত্বকসমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য ফ্র্যাগরেন্স ফ্রি, কোমল পণ্যগুলো বেছে নেওয়ার পরামর্শ। যাদের ত্বক বেশি স্পর্শকাতর তারা রেটিনল আর পেপটাইডের বদলে বেছে নিতে পারেন বাকুচিওলের মতো প্রাকৃতিক বিকল্পগুলো। এতে ত্বক পেলব মসৃণ থাকবে। মেনোপজের সময় শুধু সৌন্দর্যপণ্য ব্যবহারে শুষ্কতা না-ও সারতে পারে, সে ক্ষেত্রে হরমোনাল ফ্ল্যাকচুয়েশন ঠেকাতে নজর দিতে হবে খাবারের দিকে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ উপাদান যেমন- আমলকী, কমলা, ব্রকলি, বেরি, পেঁপে কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার যেমন স্যামন আর ওয়ালনাটও রাখা যেতে পারে নিয়মিত খাদ্যের তালিকায়। এগুলোতে আরও মিলবে ভিটামিন ই-এর মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের টেক্সচারকে সুরক্ষিত রাখবে।
মেনোপজের সময়কার ত্বক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘অ্যাকনে’। ত্বক পাতলা এবং শুষ্ক হয়ে যায় বিধায় এডাল্ট অ্যাকনে বাড়ে এ সময়। পেরিমেনোপজ পর্যায়ে এ সমস্যা খুবই সাধারণ। এগুলো সারাইয়ে তাই হওয়া চাই বিশেষ যত্নশীল। ত্রিশ বছর বয়সের আগে ব্যবহৃত অ্যাকনে কন্ট্রোল বিউটি প্রডাক্ট মেনোপোজাল পিরিয়ডে একদমই কার্যকর নয়; বরং বেছে নিতে হবে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি আর রেটিনল সমৃদ্ধ ব্রণ সারাইয়ের সৌন্দর্যপণ্য। যেগুলো ত্বককোষ উৎপাদনের হারকে ত্বরান্বিত করবে। বন্ধ হয়ে যাওয়া লোমকূপগুলো খুলে দিয়ে রাখবে ভেতর থেকে জীবাণুমুক্ত।
মেনোপজে ত্বকের আরেকটি বড় সমস্যা বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখার প্রকোপ। এ ক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্টরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন রেটিনয়েড অথবা রেটিনল ফর্মের টপিক্যাল ভিটামিন এ ব্যবহার করার জন্য। টপিক্যাল ভিটামিন সি-ও কম যায় না এ ক্ষেত্রে। তবে দিনের বেলায় ব্যবহার করা যাবে না এর কোনোটিই। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাখতে হবে নিয়ম মেনে। রেটিনয়েড বা রেটিনলে স্পর্শকাতরতা তৈরি হলে ব্যবহার করা যায় এগুলোর প্রাকৃতিক বিকল্প বাকুচিওল। ভিটামিন সি কোলাজেন বুস্টিংয়ে সহায়তা করবে, বাঁচাবে অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকে।
এ ছাড়া মেনোপজে সানস্ক্রিন ব্যবহার আবশ্যকীয়। এ সময় ত্বক পাতলা হয়ে যায় বলে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই একে সুরক্ষিত করতে সানস্ক্রিন সেরা সমাধান। লেবেলে ‘ব্রড স্পেকট্রাম’ লেখা এসপিএফ ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিনগুলো বেছে নিতে হবে।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: সামিরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top