skip to Main Content

ফিচার I স্কিন মুড সুইং

হতে পারে আচমকাই। গরমে, বর্ষায় কিংবা শীতে। এমনকি দিন-রাতের যেকোনো সময়। ত্বকের ক্ষতিকর এই মর্জি সামলে ওঠার উপায় কী? লিখেছেন জাহেরা শিরীন

রোদে তেতে পুড়ে সারা মুখ ঘেমে-নেয়ে একাকার, পরমুহূর্তেই ঠান্ডা হাওয়ায় শুকিয়ে খটখটে। তেলতেলে ত্বক ফেসওয়াশ দিয়ে ধুতে না ধুতেই একেবারে মরুভূমি, আর ময়শ্চারাইজার মাখলেই আবার তেলের খনি। কারণ, ত্বকের মর্জিই ঠিক নেই। এখনকার আবহাওয়ার মতোই আনপ্রেডিক্টেবল। ঘন ঘন র‌্যাশ, অ্যাকনে, ইনফ্ল্যামেশন, লালচে ভাবের মাধ্যমে তার মুড সুইং জানান দিচ্ছে। কিন্তু পাত্তা না দিলে সমস্যা আরও বাড়বে। ত্বকের এমন দশার কারণটা তো বের করা চাই। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, ত্বক আসলে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তার ওপর যদি নিয়ম করে যত্নআত্তি না হয়, তাহলেই সেরেছে। অফিস আর সংসারের স্ট্রেস তো রয়েছেই। এসবের মাঝে রিল্যাক্সেশনটাও ঠিকঠাকমতো না হলে ত্বকের বারোটা বাজবে। তাই নিয়মিত যত্নে রাখতে হবে ত্বককে। বেসিক যত্নের পাশাপাশি মেনে চলতে হবে বাড়তি কিছু নিয়ম।
নাকের দুপাশ, থুতনি বা গালে কোনো রকম লালচে ভাব, ঘাম হলেই জ্বালাভাব কিংবা হঠাৎই ব্রণের বাড়াবাড়ি দেখলে বুঝে নিতে হবে, ত্বকের মুড ভালো নেই। যদিও হঠাৎ এসব লক্ষণ দেখা দেওয়ার পেছনে হরমোনাল কারণ থাকতে পারে। তবে দেখভাল করলে তো ক্ষতি কিছু নেই। মুখের নির্দিষ্ট কোনো অংশে চুলকানি বা ঘামাচির মতো ছোট ছোট র‌্যাশ হলেও বুঝতে হবে, ত্বকের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। এ ধরনের সমস্যা সাধারণত আবহাওয়া, কসমেটিক বা শারীরিক জটিলতার কারণে হয়। ত্বক সেনসিটিভ হলে এসবের প্রভাব আরও বেশি মাত্রায় পড়ে। কোনোভাবে ত্বকের প্রাকৃতিক ব্যালান্স বিগড়ে গেলেই ইরিটেটেড হয়ে পড়তে পারে। তাই সমস্যা কমাতে প্রথমেই সেই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা জরুরি। এ ছাড়া একদম সহজ কিছু নিয়ম মেনে চললে মুড সুইং আয়ত্তের মধ্যে থাকবে।
 ত্বক ঠান্ডা রাখতে পানির কোনো বিকল্প নেই। দিনে বেশ কয়েকবার মুখে পানির ঝাপটা দেওয়া প্রয়োজন। এতে ঘাম জমতে পারবে না। ঘামের জীবাণু র‌্যাশ, অ্যাকনের মতো সমস্যাও সৃষ্টি করবে না। তাই ঘামতে শুরু করলেই পানি দিয়ে মুখে ধুয়ে নেওয়া ভালো। তবে তোয়ালে দিয়ে মোছার বদলে এমনিই শুকাতে দিলে ত্বক আরও ভালো থাকবে।
 পানি ত্বকে প্রাণ ফেরায় বটে, কিন্তু গরম বা উষ্ণ পানি ব্যবহার করা যাবে না। ইরিটেটেড স্কিনে গরম পানির ব্যবহার আগুনে ঘি ঢালার মতোই; বরং সমস্যা দূর না হওয়া পর্যন্ত ঠান্ডা পানিই জুতসই।
 বরফ ঠান্ডা পানি থেকেও দূরে থাকতে হবে। নিয়মিত অতিরিক্ত ঠান্ডা পানির ব্যবহারে সর্দি-কাশির আশঙ্কা তো থাকছেই, ত্বকও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। আদর্শ হলো সাধারণ তাপমাত্রার খানিকটা নিচে। মুখ ধোয়ার জন্য সাধারণ পানি ব্যবহার করে, শেষবার মুখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেওয়া যেতে পারে।
 পরিষ্কার ত্বকে টোনার ব্যবহারের অভ্যাস করা যেতে পারে। ত্বক ঠান্ডা রাখবে, এমন প্রোপার্টিযুক্ত টোনার ব্যবহার ভালো। তাতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকলে তা আরও কার্যকর। ইরিটেটেড ত্বকে কটনপ্যাডে করে টোনার মাখা যাবে না। পুরো মুখে টোনার স্প্রে করে আঙুল দিয়ে চেপে চেপে মিশিয়ে নিতে হবে।
 টোনার ত্বক ভালোভাবে শুষে নিলে মাখতে হবে ময়শ্চারাইজার। কুলিং এফেক্ট দেবে এমন কোনো জেল বেসড প্রডাক্ট ব্যবহার করা যায়। না হলে অ্যালোভেরা জেল হাতের কাছে রাখা যেতে পারে।
 র‌্যাশ, লালচে ভাব, ইরিটেশন সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ ত্বকের আর্দ্রতা কমে যাওয়া। হাইড্রেশন লেভেল ব্যালান্স করতে কাজে লাগানো যেতে পারে হাইড্রেটিং শিট মাস্ক। এই ধরনের মাস্কে ওয়াটার কনটেন্ট বেশি থাকে। ব্যবহার করার ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে যদি মাস্ক ফ্রিজে রেখে নেওয়া যায়, ত্বক আরও আরাম পাবে।
 অ্যাকনের সমস্যা থাকলে ব্যবহার করা যায় চন্দনগুঁড়া এবং অ্যালোভেরার মিশ্রণ। রাতে ঘুমানোর আগে অ্যাকনের ওপর পুরু প্রলেপ দিয়ে নেওয়া যেতে পারে। নিয়মিত এর ব্যবহারে লালচে বা ফোলাভাব অনেকটাই কমে যাবে।
 দিনে কোনো এক সময়ে মুখে এক টুকরা বরফ নিয়ে চেপে চেপে ঘষা যেতে পারে। এতেও র‌্যাশের সমস্যা কমবে, ত্বক ঠান্ডা থাকবে।
 ঘরোয়া ফেসমাস্ক তৈরি করতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে প্রাকৃতিক সব উপাদান। ন্যাচারাল কুলার হিসেবে পরিচিত শসা, আলুর রস ইত্যাদি তালিকায় রাখা যায়। মাস্কের বেস হিসেবে থাকুক বেসন বা মুলতানি মাটি। সঙ্গে ব্যবহৃত হতে পারে মধু, হলুদ বা নিমের গুঁড়ার মতো অ্যান্টিসেপটিক উপাদান। আধঘণ্টা প্যাক মুখে মাখিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
 ত্বক ঠান্ডা রাখতে ক্লে বেসড ফেসমাস্ক অব্যর্থ। বেন্টোনাইট ক্লে বা কেওলিন ক্লের সঙ্গে গ্রিন টি লিকার আর কয়েক ফোঁটা ক্যামোমাইল অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করা যায় ত্বকে।
 ব্যবহৃত গ্রিন টি ব্যাগ ফেলে না দিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ এবং কোল্ড কমপ্রেশ হিসেবে তা ত্বকে ব্যবহার করা যায়।
 হাতের কাছে রাখা চাই ফেশিয়াল মিস্ট। একটু ঠান্ডা কোনো জায়গায় স্টোর করতে হবে সেটা। তবে ব্যবহার করার আগে তা যেন খুব ঠান্ডা না থাকে। রেডিমেড মিস্ট না কিনতে চাইলে বাড়িতে শসার রস, অ্যালোভেরা জেল এবং কয়েক ফোঁটা সুগন্ধি এসেনশিয়াল অয়েল নিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে রাখা যায়। দিনে দুবার স্প্রে করে নিলেই চলবে।
 ফেস মাস্ক ব্যবহারের সময় না থাকলে শসা, আলু, টমেটোর মতো কুলিং ইনগ্রেডিয়েন্ট থেঁতো করে আইস ট্রেতে জমিয়ে রাখতে হবে। মিক্সারে ব্লেন্ড না করাই ভালো, তাপে গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই আইস কিউব মুখে ঘষে নিলে বাড়তি জেল্লা আসবে।
 ফেসিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে চাইলে জোজোবা, রোজহিপ কিংবা ল্যাভেন্ডার অয়েল খুব কার্যকর।
 ইরিটেটেড ত্বকযত্নে এড়িয়ে চলতে হবে কিছু উপাদান। লেবুজাতীয় সাইট্রাস ফল রূপরুটিনে না রাখাই ভালো। দারুচিনি, লবঙ্গ বা এদের এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারও মানা। মাখা যাবে না মিন্ট, উইচহ্যাজেল বা টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েলও। বেকিং সোডা, চালের গুঁড়া বা যেকোনো ধরনের দানাদার স্ক্রাব এড়িয়ে যাওয়াই দরকার। কৃত্রিম সুগন্ধি আর অ্যালকোহল বেসড প্রডাক্ট ইরিটেটেড ত্বককে আরও স্পর্শকাতর করে তুলতে পারে।

মডেল: প্রেইরী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top