skip to Main Content

কভারস্টোরি I স্মৃতিপ্রাণিত

ফিরে এসেছে পুরোনো দশকের বিউটি ট্রেন্ড। এ বছর তাতেই মুগ্ধতা। মজেছেন হাল আমলের ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার, বিউটিউবার এবং টিকটকাররা। জেন জেড এখন জেনারেশন এক্স আর মিলিনিয়ালদের উদ্ভাবিত মেকআপে মত্ত। জানাচ্ছেন জাহেরা শিরীন

পুরোনো দিনের কথাই বটে। ষাট, আশি আর নব্বইয়ের দশক। সে সময় দারুণ জনপ্রিয়তা পায় বেশ কিছু বিউটি ট্রেন্ড। পরবর্তী অনেক বছর ধরে দাপটের সঙ্গে টিকেও থাকে। এত দিন পর, ২০২১-এ এসেও যে তখনকার সৌন্দর্যভাবনা উত্তাপ ছড়াবে, তা হয়তো কল্পনা করা যায়নি। নতুনত্ব আর বৈচিত্র্য খুঁজে বেড়ানোর ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেও যে সুন্দর সেজে ওঠা যায়, তা প্রমাণেরই বছর। পুরোনোর প্রেরণায় সাজে সৌন্দর্য সঞ্চারের মোক্ষম সময়। সেই সংকেত সৌন্দর্যবিশ্বের সর্বত্র।
সৌন্দর্যে ষাট
গেল বছর পিনটারেস্টের বোর্ডে হঠাৎ ঝলক মিলেছিল দশক পুরোনো এ মেকআপ ট্রেন্ডের। কিন্তু ২০২১-এ অফিশিয়াল হয়েছে সৌন্দর্যবিশ্বে ষাটের দাপট। জানা গেছে, বছরজুড়ে এর রাজত্ব থাকবে। শুরুটা হয়েছে ইতিমধ্যেই। আমেরিকান তারকা সংগীতশিল্পী আরিয়ানা গ্র্যান্ডের বরাতে। সম্প্রতি রিলিজ হয়েছে তার নতুন অ্যালবাম পজিশনের টাইটেল ট্র্যাক। সেই মিউজিক ভিডিওতে আরিয়ানকে দেখা গেছে দশক পুরোনো মেকআপে। ষাটের আইকনিক মড ক্যাট আই লুকের সঙ্গে নজর কেড়েছে তার ভলিউমনাস হেয়ারস্টাইল। এর পরপরই এ বছর সৌন্দর্যবিশ্বে ষাটের অবস্থান আরও পোক্ত হয়েছে বলেই ধারণা সবার। টিকটকাররা রীতিমতো লুকটি রিক্রিয়েটের রেকর্ড গড়ে তুলেছে এরই মধ্যে। শুধু কি তাই! জনপ্রিয় তারকাদের সাজে এখন ষাটের সুস্পষ্ট আভাস। জেনিফার লোপেজ এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ড শোর জন্য এ তারকাকে দেখা গেছে ষাটের ফ্লোটিং কাট ক্রিজ আই মেকআপ লুকে। পুরোনো এ দশকের দাপট থাকবেই বা না কেন! বছরটাই তো আইমেকআপের। করোনাক্রান্ত সময়ে বাকি চেহারা যখন প্রোটেকটিভ মাস্কের পরতে ঢাকা, আইমেকআপ নিয়ে নিরীক্ষার এখনই তো মোক্ষম সময়। আর সে সুযোগেই ট্রেন্ডে ফিরেছে ষাট।
ষাটের দশকের পুরোটাই ছিল আত্মপ্রকাশ, সংগীত আর যুক্তি নিয়ে মেতে থাকার সময়। এগুলো থেকেই অনেকাংশে অনুপ্রাণিত তখনকার মেকআপ। এ ছাড়া টুইপির মতো পপস্টারও সে সময় অনুকরণীয় ছিলেন। যাদের মাধ্যমে এমন সব আইকনিক বিউটি ট্রেন্ডের উদ্ভব হয়, যেগুলো আজ অব্দি চর্চার বিষয়। মড ক্যাট আই লুক, নেগেটিভ স্পেস লাইনার বা ফ্লোটিং আইলাইনার- নাম যেটাই হোক, ষাটে আলোচনায় ছিল আইমেকআপের এ কৌশল। তালিকায় পাওয়া যায় জিওম্যাট্রিক আইলাইনারের নামও। এ ছাড়া ডো আইড ল্যাশ আর ব্রাইট ব্লক আইশ্যাডো ছিল ষাটের সেরা মেকআপ ট্রেন্ড। ২০২১-এ ফিরেছে এগুলো। তবে কৌশলে পরিবর্তন এসেছে খানিকটা। বেড়েছে রঙের ব্যবহার। দ্য বোল্ডার দ্য বেটার।
ষাটের লাইনার লুক ছিল ক্ল্যাসিক। কিন্তু নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ। ড্রামাটিক ইয়েট ডায়নামিক। স্মোকি স্টাইলে যেমন সেরে নেওয়া সম্ভব ছিল, তেমনি সোজাসাপ্টা নিউট্রাল ভাইবেও নজরকাড়া। যেমনটাই বেছে নেওয়া হোক না কেন, চোখজোড়াকে নিমেষেই বড় দেখাতে যথেষ্ট। আইমেকআপকে আরও খোলতাই করে তুলতে অতুলনীয়। করেও নেওয়া যায় সহজে, যদি সঠিক কৌশল জানা থাকে তবেই। সফট ফ্লোটিং লাইনার লুকের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন পড়বে নরম ম্লান রঙা আইশ্যাডো। এ ক্ষেত্রে জুতসই ক্রিমঘেঁষা রংগুলো। সফট শিমারি শেডগুলোও ব্যবহৃত হতে পারে। আইলিড অর্থাৎ চোখের পাতার পুরোটাজুড়ে মেখে নিতে হবে। ব্রাও বোনের ওপর অব্দি। ছোট ফ্লাফি ব্রাশ দিয়ে আউটওয়ার্ড স্ট্রোকে। তারপর একটি গাঢ় বাদামি অথবা নিউট্রাল শেড নিয়ে চোখের ভাঁজ অর্থাৎ ক্রিজের ওপরের অংশে বুলিয়ে নিতে হবে। তৈরি করতে হবে সাটল আউটওয়ার্ড ফ্লিক। আরও ডিফাইনড ফ্লোটিং লাইনের জন্য। তবে এতেও থাকতে পারে এ দশকের টুইস্ট। সে ক্ষেত্রে নিউট্রালের বদলে বোল্ড রঙের ব্যবহার হতে পারে ক্রিজে। তা ব্যক্তিপছন্দের ওপরই নির্ভরশীল। তারপর একটা ফ্ল্যাট লাইনার ব্রাশে ডিপ ব্রাউন আইশ্যাডো নিয়ে ফিলাইন উয়িং এঁকে নিতে হবে চোখের ওপরের পাতার লাইন ঘেঁষে। ব্রাশের বদলে আইপেনসিলও ব্যবহার হতে পারে এ ক্ষেত্রে। শেপের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। লাইন যেন চোখের ভেতরের কোণ থেকে চিকন হয়ে বাইরে উইংয়ের দিকে এসে চওড়া হয়ে যায়। উইং শেষ প্রান্ত থেকেই লাইনটা আবার চোখের ভেতরের কোণের দিকে টেনে আনতে হবে। তবে ক্রিজের ওপর দিয়ে। তারপর লাইনটা স্মাজ করে দিতে হয়। এমনভাবে যেন চোখের বাইরের কোণে লাইনটা গাঢ় থাকলেও মাঝ বরাবর এসে হালকা হতে শুরু করে। ফ্লোটিংয়ে আইমেকআপ সারতে হবে ল্যাশে বেশি করে মাসকারা মেখে। সঙ্গে কমপ্লিমেন্টারি ন্যুড লিপ থাকলে তো কেয়া বাত! ডিপসেট আইয়ের জন্য এই লুক পারফেক্ট। চোখ যদি হুডেড হয় বা আমন্ড শেপের হয়, সে ক্ষেত্রে দুটো সুপার কনট্রাস্টিং আইশ্যাডো কালার বেছে নেওয়ার পরামর্শ মেকআপ আর্টিস্টদের। এতে করে ফ্লোটিং ক্রিজ আরও সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। আইলুকে অনন্যতা যোগে ষাটের গ্রাফিক লাইনার লুকের তুলনা হয় না। এ ক্ষেত্রেও লাইনের পুরুত্ব, দৈর্ঘ্য আর রং নিয়ে খেলার সুযোগ থাকবে এ বছর। ক্ল্যাসিক লুকের জন্য আইলাইনের রেগুলার উইংয়ের সঙ্গে চোখের পাতার ভাঁজ বা ক্রিজ বরাবর বাড়তি একটা একক ফ্লোটিং লাইন জুড়ে নিলেই চলবে। তবে লাইনটা হতে হবে শার্প এবং ডিফাইনড। আরও এক্সপেরিমেন্টাল লুক চাইলে আইলাইনারের টান হতে পারে অসম। এমনকি লাইন চোখের পাতার কোথায় টানা হবে, তা নিয়েও নিরীক্ষা চলতে পারে মনমতো। তবে জিওম্যাট্রিক ফ্লোটিং লাইনার লুকের জন্য প্রাইমিং মাস্ট। কারণ, লাইন স্মাজ হয়ে গেলে দেখতে ভালো দেখাবে না এই আইমেকআপ। তাই প্রথমেই আইশ্যাডো প্রাইমার মেখে নিতে হবে চোখের পাতায়। অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ডের। তারপর কনসিল করে সেটিং পাউডার দিয়ে ম্যাটিফাই করে নিতে হবে। আর লাইনারও হওয়া চাই লং লাস্টিং ফর্মুলার। বোল্ড লাইন আঁকা যাবে তাহলে। ইন্ক পেন লাইনার অথবা লিকুইড লাইনার- দুটো দিয়েই এই লুক তৈরি করে নেওয়া সম্ভব। মাত্র শার্প করে নেওয়া পেনসিল দিয়ে প্র্যাকটিস সেরে নিতে পারবেন বিগিনার মেকআপপ্রেমীরা।
ষাটের থেকে অনুপ্রাণিত সহজ এবং চটজলদি লুক চাই? বোল্ড ব্লক আইশ্যাডো দারুণ অপশন। শুধু জুতসই রঙের আইশ্যাডো বেছে নিতে হবে, যা হতে হবে উজ্জ্বল এবং আই পপিং। তারপর ঘন ব্রিসলের আইমেকআপ ব্রাশ নিয়ে তাতে আইশ্যাডো মাখিয়ে চেপে চেপে বসিয়ে দিতে হবে চোখের পাতায়। সে ক্ষেত্রে আগে থেকে প্রেপিং সেরে নিতে পারলে ভালো। ব্রাইট কালারের কনসিলার মেখে নেওয়া যেতে পারে। এর ওপর পছন্দসই রঙের লিকুইড আইশ্যাডো দিয়ে তারপর পাউডার আইশ্যাডো দিতে পারলে চোখজোড়া আরও সুন্দর দেখাবে। ষাটের মতো লুক চাইলে সেমি সার্কুলার শেপে দিয়ে নিতে হবে আইশ্যাডো। পরতে হবে প্রচুর মাসকারা। আপার ও লোয়ার ল্যাশে। কারণ, ড্রামাটিক আইল্যাশেই পূর্ণতা পায় ষাটের উচ্ছ্বাস। আইল্যাশ কার্লার দিয়ে কার্ল করে নিলে আরও সুন্দর দেখাবে আইমেকআপ। পরে নেওয়া যেতে পারে ফলস আইল্যাশও।
আশির আভাস
নতুন বছরে আনকোরা সব ট্রেন্ডে মজে ওঠে মানুষ, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২১ এ ক্ষেত্রে একদমই আলাদা। করোনার এই সময়টায় যেন পুরোনোতেই স্বস্তি খুঁজে বেড়াচ্ছেন সবাই। সৌন্দর্যবিশ্বও এর বাইরে নয়। তাই তো আশির দশক অনুপ্রাণিত সব মেকআপ টেকনিকের দিকে প্রবল ঝোঁক সৌন্দর্যসচেতনদের। আইমেকআপে উজ্জ্বল শেড আর নানা ধরনের টেক্সচার নিয়ে খেলাই এখন জনপ্রিয় মেকআপপ্রেমীদের কাছে। যাতে কখনো যুক্ত হচ্ছে মেটালিকের উজ্জ্বলতা, আবার কখনো ওয়েট লুকের সিক্ততা সঞ্চার করছে সৌন্দর্য।
মাস্কে মুখ ঢাকা? তাতে কী! রেট্রো রেড, নিওন আর গ্লসি বোল্ড লিপের জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে একদম ন্যুড লিপেও সমানতালে নজর কাড়ছেন মেকআপ অনুরাগীরা। সবেতেই যেন আশির আভাস। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ মিলেছে এ বছরের ভার্চ্যুয়াল রানওয়ে আর রেড কার্পেটে। পালাবদলের খেলায় আশির সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঙ্ক মেকআপের দেখা মিলেছে ইতিমধ্যেই। মেকআপ আর্টিস্ট আরনেস্টো ক্যাসিলাসের বরাতে। তিনি এ বছরের গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য আমেরিকান তারকা সংগীতশিল্পী ডোজা ক্যাটকে সাজিয়েছিলেন দশক পুরোনো পাঙ্ক মেকআপের অনুপ্রেরণায়। শার্প ইনটেন্স আইব্রাওয়ের সঙ্গে আপওয়ার্ড মোশনের ব্ল্যাক স্মোকি আই, ল্যাশে কয়েক লেয়ারের মাসকারা নজর তো কাড়বেই। পুরো লুককে কমপ্লিমেন্ট করেছে ডোজার মুলেট হেয়ারস্টাইল। সেলিব্রিটি মেকআপ আর্টিস্ট আরনেস্টোর মতে খুব বেশি পারফেক্ট ফিনিশের প্রয়োজন নেই এই লুকে। মেসি, গ্র্যাঞ্জি আই লুক তৈরিই মূল উদ্দেশ্য। তাতেই সুস্পষ্ট এইটিজের ম্যাজিক। তবে ব্ল্যাক স্মোকি আই বাড়াবাড়ি মনে হলে, ব্রাউন ব্যবহারের অপশনও রয়েছে। জিভাঁশে ফল ২০২১-এর শো সেটাই বলছে। তবে ইনটেন্স লং, থিক, ব্ল্যাক আইলাইনারের টান থাকতেই হবে। আর সেটা মাল্টিডাইমেনশনাল হলে তো কথাই নেই। আশির দশকে পুরো চোখের চারপাশজুড়ে করা স্মোকি আইজও ছিল পাঙ্কের প্রতীক। এ বছর শ্যানেলের ফল উইন্টার শোতে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই আইমেকআপ। মজার বিষয় হলো, আশির পাঙ্ক শুধু কালোতেই আটকে ছিল না। ছিল আইপপিং রঙের ব্যবহার। আর সেটাই রিক্রিয়েট করা হয়েছে ভারসাচির ফল উইন্টার ২০২১-এর রানওয়েতে। ব্রাইট পিঙ্ক, সঙ্গে নীলের সমন্বয়ে সৃষ্ট আইমেকআপ প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার। অন্যদিকে বোল্ড ম্যাজেন্টা আর ইলেকট্রিক ব্লু দিয়ে সৃষ্ট বোল্ড গ্রাফিক আইলাইনারে সুস্পষ্ট ছিল আত্মবিশ্বাস, সাহস আর ব্যক্তি সৌন্দর্যের স্বাধীনতা। ঠিক আশির দশকের মতো। তবে যারা স্মোকির মতো ড্রামাটিক লুকে স্বচ্ছন্দ নন, তাদের জন্যও রয়েছে অপশন, আশির প্যাস্টেল আইশ্যাডো লুক এ ক্ষেত্রে আদর্শ। বেছে নেওয়া যেতে পারে পিঙ্ক, ইয়েলো আর অরেঞ্জের মতো দিলখুশ করে দেওয়া রংগুলো। একটা কালার দিয়ে যেমন চোখের পাতা রাঙানো যেতে পারে, তেমনি ডুয়াল বা মাল্টিটোনে প্যাস্টেল আইশ্যাডো লুকও মন্দ দেখাবে না। তবে ডুয়াল টোন বা মাল্টিকালার আই লুকের সময় কমপ্লিমেন্টারি শেডগুলো বেছে নিতে হবে। যেমন বার্ন্ট অরেঞ্জ অথবা পিঙ্কের সঙ্গে নেভি, পার্পলের সঙ্গে গোল্ড, পিঙ্কের সঙ্গে ইয়েলো ইত্যাদি। আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেশনের আগে সেরে নেওয়া চাই প্রাইমিং। আর প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে ব্লেন্ডিং। এতে করে আইশ্যাডোর রং আরও সুন্দর করে ফুটে উঠবে চোখের পাতায়। আর সিঙ্গেল শ্যাডোতে স্বচ্ছন্দ হলে সবচেয়ে সহজ উপায় ব্লুর যেকোনো শেড বেছে নেওয়া। কারণ, আশির দশকে এর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে; যা ২০২১-এ আবার ফিরেছে ট্রেন্ডে। কোবাল্ট ব্লু থেকে উজ্জ্বল টারকোয়েজ ব্যবহার হতে পারে নীলের যেকোনো শেড। চোখের রং আর স্কিন টোনের সঙ্গে মানিয়ে। এ ক্ষেত্রেও ভালোভাবে ব্লেন্ডিং অপরিহার্য। তবেই সৌন্দর্য ফুটে উঠবে শতভাগ। সবশেষে কয়েক কোটের মাসকারা দিয়ে নিলেই চলবে। এ বছর আশির অনুপ্রেরণায় আইশ্যাডোর টেক্সচার নিয়েও নিরীক্ষার সুযোগ থাকছে। ম্যাট, শিমার বা গ্লস- বেছে নেওয়া যাবে যেকোনোটিই। হাতে সময় কম! কিন্তু মেকআপে এইটিজের ম্যাজিক্যাল টাচ চাই? কালারফুল আইপেনসিলই যথেষ্ট। শুধু লোয়ার ল্যাশ লাইনে গাঢ় করে রেখা টেনে নিতে হবে। কোবাল্ট ব্লু, পার্পল, ইয়েলোর মতো রঙের আইপেনসিল দিয়ে। সঙ্গে ল্যাশ লিফটিং মাসকারার পরত। ব্যস! রঙের ছটা থাকতে পারে আইল্যাশেও। এটাও আশিরই ট্রেন্ড। কালারড মাসকারা দিয়ে আইল্যাশ রাঙিয়ে নেওয়া। কোবাল্ট ব্লু আর বার্গেন্ডি রংগুলো এ ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে। ঠোঁটের রং নিয়েও বেশ নিরীক্ষা হয়েছিল আশির দশকে। বোল্ড লিপের দাপটটাই বেশি দেখা গেছে। আনট্র্যাডিশনাল সব শেডে। যেমন- অরেঞ্জি কোলার রেড, পিচ, হট পিঙ্কের মতো রঙে। ২০২১-এর হট ফেবারিটের তালিকায় ইতিমধ্যেই শীর্ষস্থান এদের দখলে। এইটিজের অনুপ্রেরণায় সাজতে চাইলে নজর দিতে হবে মেকআপের বেজের দিকেও। ফুল কাভারেজ ফাউন্ডেশন ব্যবহৃত হতো তখন, ফ্ললেস দেখাতে। আর সেই নিখুঁত ত্বকে এঁকে নিতে হবে বিউটি মার্ক। আশির দশকে ঠোঁটের ওপর ছোট একটা তিল এঁকে নেওয়ার চল খুব জনপ্রিয় ছিল। ২০২১-এও তেমনটাই হবে বলে ধারণা করছেন মেকআপ আর্টিস্টরা। মজার ব্যাপার হলো, সম্প্রতি টিকটকে দারুণ ট্রেন্ডিং মাইপ্যারেন্টস লুক চ্যালেঞ্জটি। যাতে টিকটকাররা তাদের মায়েদের আশির দশকের লুক বুকের অনুপ্রেরণায় সেজে উঠছেন। করছেন মেকআপ। লুক রিক্রিয়েট করার এই চ্যালেঞ্জ তারকারাও বেশ আগ্রহের সঙ্গেই অংশ নিচ্ছেন। এ বছর আশির দশকের মেকআপ ট্রেন্ডের শীর্ষে উঠে আসার এটাও একটা কারণ বলে ধারণা করছেন সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞরা।
নব্য নব্বই
সময়ের চাকা যতই ঘুরুক, পেরিয়ে যাক বছর, কিছু ট্রেন্ড কোনো দিন পুরোনো হওয়ার নয়। নব্বই দশকের বিউটি ট্রেন্ডগুলো ঠিক তেমনই। ব্যক্তিত্ব আর স্টাইল যেমনই হোক না কেন, সবার সঙ্গে মানানসই কিছু না কিছু মিলেছে এ সময়টাতে। এ দশকেই বিশ্ব দেখেছে অনন্য সব সৌন্দর্য কৌশল আর পণ্যের আবিষ্কার। শুধু শিমারিং আইশ্যাডো দিয়েই কী করে নজরকাড়া লুক তৈরি করা যায় কিংবা আদি টোনগুলোর ব্যবহারে হয়ে ওঠা যায় আকর্ষণীয়, তা-ই দেখিয়েছে নব্বই। ফেশিয়াল কনটুরিংয়েরও চর্চা বেশ বাড়ে বছরটাতে। লিপস্টিকের ফর্মুলা নিয়ে নিরীক্ষাও জনপ্রিয় ছিল। কেয়ারফ্রি। মনোক্রোমেটিক, ওভার দ্য টপ, সাটল- নানান নামের, নানান কৌশলের নব্বইয়ের মেকআপ বেশ জোর জানান দিয়েই ফিরছে ২০২১-এ। পিনটারেস্ট থেকে টিকটক- সবেতেই ট্রেন্ডিং এখন মিলেনিয়ালদের মেকআপ টেকনিক।
নব্বই ছিল সুপারমডেলদের দশক। নাওমি ক্যাম্পবেল, সিন্ডি ক্রফোর্ডদের লুক থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার সময়। এখনকার মতো নয় একদমই। ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার কিংবা টিকটকারদের দাপট তখন শুরু হয়নি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, দশক পুরোনো সেই ট্রেন্ড থেকেই প্রভাবিত হচ্ছে এই প্রজন্মের মেকআপ ম্যানিয়াকরা। কী বিশেষত্ব ছিল নব্বইয়ে? মেকআপ গুরু ববি ব্রাউনের মতে, মেকআপের মাধ্যমে সবার এক রকম হয়ে ওঠার প্রবণতা ছিল না সে সময়, যা এখন খুব জনপ্রিয়। তখনকার মেকআপপ্রেমীরা অনুপ্রেরণা নিতেন বটে, হুবহু তেমন সাজতেন না কখনোই; বরং ক্রিয়েটিভিটির মাধ্যমে মেকআপ লুককে নিজের মতো করে নিতেন। নব্বইয়ের জাদু ছিল সেখানেই।
মিনিমাল মেকআপের চর্চা তো কয়েক বছর ধরেই বেশ ট্রেন্ডিং। এ বছরও বেশ দাপটের সঙ্গে থাকবে এ সাজকৌশল। যার শুরুটা হয়েছিল ৯০-এ। কেট মস বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন সে মন্ত্র। বেয়ারলি দেয়ার এ মেকআপের মূল সূত্র ছিল ‘লেট স্কিন বি স্কিন’ অর্থাৎ ত্বককে ত্বকের মতো থাকতে দেওয়া। পুরো মুখজুড়ে মেকআপের মুখোশ তৈরি না করে শুধু খুঁতগুলো ঢাকার ব্যবস্থা করা। মুখের ত্বকের সঙ্গে মানানসই ফাউন্ডেশন আর কনসিলার দিয়ে। নব্বইয়ের ব্যাপারটা বেশ কঠিন ছিল, অতশত শেডের মেকআপ প্রডাক্ট মিলত না। কিন্তু এখন মিনিমাল মেকআপ লুক তৈরি তুলনামূলকভাবে সহজ। তাই ২০২১-এ জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে মেকআপ টেকনিক। নব্বইয়ের ম্যাট মেকআপও ফিরেছে ট্রেন্ডে। বেজ থেকে শুরু করে আইশ্যাডো, চিকবোন, লিপস্টিক- সবেতেই এ ফর্মুলার জনপ্রিয়তা বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে মেকআপ বেজ ম্যাটিফাই করতে এবং হোয়াইট কাস্ট এড়াতে ট্র্যাডিশনাল ফেস পাউডারের বদলে টিন্টেড ফিনিশিং পাউডার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন মেকআপ আর্টিস্টরা। মনোক্রোমেটিক মানেই নব্বই। চোখ, মুখ, ঠোঁটে একই রঙের আভা। অল ব্রাউন লুকটাই সে সময় বেশি জনপ্রিয় ছিল। ঠোঁটে ম্যাট ব্রাউন লিপস্টিক বরাবরই এই দশকের ট্রেন্ড। মিলেনিয়ালদের মোস্ট ফেবারিট। এ বছর ইতিমধ্যেই তারকা থেকে শুরু করে ইনফ্লুয়েন্সারদের বিউটি বক্সে ঢুকে গেছে ব্রাউন। ম্যাটে স্বচ্ছন্দ নন যারা, তাদের জন্যও থাকছে নব্বইয়ের অনুপ্রেরণা। স্যাটিন ফিনিশের লিপস্টিক দিয়ে ফ্রস্টেড লিপ লুক তৈরি করে নেওয়াই যেতে পারে নব্বইয়ের মতো করে। আরও ইনটেন্স লুক চাইলে লিপস্টিক মাখানোর পর ঠোঁটের ওপর হাইলাইটার মেখে নিলেও মন্দ দেখাবে না। এ ছাড়া গেল কয়েক বছরের মতো লিপ গ্লসের ট্রেন্ডে গা ভাসাতে চাইলে সমস্যা নেই। শুধু লিপলাইনার দিয়ে ঠোঁটের চারপাশ আউটলাইন করে নিলেই তৈরি নব্বইয়ের পারফেক্ট লিপ লুক।
নব্বইয়ের রেড লিপস অবসেশনও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। গ্লসি থেকে ম্যাট- সবেতেই সমান সুন্দর এ শেডের লিপ কালার। হোক সেটা ১৯৯৭ এর গিউয়েন স্টিফানির আইকনিক মিউজিক অ্যাওয়ার্ড লুক কিংবা ২০২১ এ রিয়ানার স্টেটমেন্ট রাঙা ঠোঁটের সাজ। তবে লালে ঠোঁট সাজানোর আগে এক্সফোলিয়েট করে নেওয়া জরুরি। তারপর ময়শ্চারাইজ করে, লিপলাইনার দিয়ে আউটলাইন টেনে মাখতে হবে লিপস্টিক, ফুলার লুকের জন্য। ঠোঁটের সাইডগুলোতে কনসিলার মেখে নিতে হবে পারফেক্ট শেপের জন্য। আইমেকআপে গ্লিটারের রমরমা ছিল নব্বইয়ে। জেনিফার লোপেজের বরাতে। এ বছরও তা থাকবে বিউটি ট্রেন্ডে। সঙ্গে ওয়াটার লাইনে কাজলের টান। আরও ড্রামাটিক লুকের জন্য নাইনটিজের গ্রাঞ্জি আই লুক হতে পারে চমৎকার অপশন। আইপেনসিল দিয়ে আপার ও লোয়ার লিডে লাইন টেনে স্মাজ করে নিতে হবে। ব্লেন্ডিং এখানে সবচেয়ে জরুরি। আইলুক কমপ্লিট করতে পারফেক্ট প্লাকড আইব্রাও থাকা জরুরি। সেটাকে সাজাতেও হবে সঠিক উপায়ে। লাইট স্ট্রোকের সাহায্যে আইব্রাওয়ের ফাঁকাগুলো পূরণ করে আঁচড়ে নিতে হবে। ন্যাচারাল আর্চ শেপে। ডিফাইনড লুকের জন্য। সবশেষে বডি শিমার মেখে­ নেওয়া চায়। এ ক্ষেত্রে শিমারিং বডি অয়েল বা পাউডার খুব ভালো অপশন। মাখা চাই গলা, বুকে আর কাঁধে। ব্যস! তৈরি পারফেক্ট নাইনটিজ বেব লুক!

কভার: অভিনেতা আরিফিন শুভ ও অভিনেত্রী তানিয়া বৃষ্টি
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: টুয়েলভ
জুয়েলারি: স্পার্কেল
ছবি: জিয়া উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top