skip to Main Content

ফিচার I প্যানডেমিক এডিশন

গত বছরের মতো এবারের ট্রেন্ডও মিনিমালিজমের নিয়ন্ত্রণে। তবে, দৃশ্যমান হচ্ছে বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব। থাকছে রঙের চমকও

সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হলেও অতিমারিতে ২০২০ এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। ফ্যাশন জগতে এসেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। সেটি শাপে বর হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এর দরকার ছিল। ২০২১ সালে মহামারির নতুন হুমকি আর নিউ নরমাল জীবনের কথা মাথায় রেখেই নতুন করে সেজেছে ফ্যাশন বিশ্ব।
রিভিউ ২০২০
আজকাল মানুষ টেকসই ফ্যাশন নিয়ে সচেতন। পোশাকশিল্পের অতিমারিজনিত বিপর্যয়ের কারণে নতুন করে উন্মোচিত হয়েছে স্লো ফ্যাশনের দ্বার। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার ফলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ডিজিটাল ফ্যাশনউইক। একে টেকসই ফ্যাশনেরই অংশ বলা যেতে পারে। কারণ, এটি পরিবেশবান্ধব। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এটি বন্ধ করা সম্ভব- তা এবার প্রমাণিত। ফ্যাশন উইকে অংশগ্রহণের জন্য এর সংশ্লিষ্টদের এক ভেন্যু থেকে অন্য ভেন্যুতে যাতায়াতে যানবাহনের যে পরিমাণ কার্বন নিঃসৃত হয়, সেটি পরিবেশের বেশ ক্ষতি করে।
পরিবেশের কথা চিন্তা করে ভবিষ্যতের ফ্যাশনউইকগুলো ভার্চ্যুয়ালি বেশি হবে- এমনটাই আশা করছেন পরিবেশবাদীরা।
প্রতিবছর প্রায় সব ফ্যাশন ইভেন্ট থেকে উঠে আসে সাজসজ্জার নতুন নতুন ধারা। গত বছর যেখানে এ ধরনের আয়োজন করাই ছিল চ্যালেঞ্জিং, সেখান থেকে যে খুব বেশি কিছু পাওয়া যাবে, তা বলা যায় না। প্রায় সব ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে বাড়িতেই। দীর্ঘ সময় ধরে গৃহযাপনে বাধ্য থাকায় পোশাক-আশাক হয়েছে মিনিমাল। আরামদায়কও। স্বাভাবিকভাবে সেসবই হয়েছে নতুন ট্রেন্ড। এসবের ভেতর রয়েছে লাউঞ্জওয়্যার, সোয়েটপ্যান্ট, টি-শার্ট, ঢোলা ম্যাক্সি ড্রেস, শিয়ার ড্রেস, কাফতান ইত্যাদি। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের বদৌলতে এসেছে ‘নিউ ফরমাল’ পোশাক। এগুলোর মধ্যে আছে ‘জুম টপ’, প্লেইন ক্যাজুয়াল শার্ট, টি-শার্ট। মাস্ক ট্রেন্ডের কথা না বললেই নয়। অতিমারির আগে কেউ কখনো ভাবতেই পারেনি, মাস্ক কখনো ফ্যাশন অনুষঙ্গ হতে পারে। জনপ্রিয় হয়েছে স্ক্রাঞ্চি, হেডব্যান্ড, আগ ফ্লাপ স্লিপার, স্নিকার।
নিউ হোপ ২০২১
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নারীরা পুরুষদের কর্মস্থলে যোগদানের পর বদলে যায় তাদের পোশাক। অফিসপাড়ায় তারা পরত স্যুট-স্কার্ট আর শিল্পকারখানায় জিনস ওভারঅল। যুদ্ধের ঠিক পরপরই ক্রিশ্চিয়ঁ দিওর হাজির হন নিজের ডেব্যু কালেকশন নিয়ে, যা ‘দ্য নিউ লুক’ নামে পরিচিতি পায়। এতে ছিল ফিগার হাগিং জ্যাকেট, ফিটেড ওয়েস্টস এবং এ-লাইন স্কার্ট আর গর্জাস গাউন। যুদ্ধের পর এই ফেমিনিন শিল্যুয়েট কালেকশন অনেক জনপ্রিয় হয় এবং সবাই এ ধরনের পোশাক পরা শুরু করে। এই বাস্তবতার পুনরাবৃত্তি হতে পারে- গত বছরের শেষের দিকে এমনটাই আভাস দিয়েছিলেন প্রবাল গুরুং, থাকুন পানিচগুল, ট্র্যাসি রিজের মতো ডিজাইনাররা। এ বছরের শুরু থেকে সব বড় ফ্যাশন ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। সেখানে প্রদর্শিত কালেকশন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেলিব্রিটি ও সাধারণ মানুষের পরিহিত পোশাক-আশাক এই ডিজাইনারদের ভবিষ্যদ্বাণীরই প্রতিফলন ঘটিয়েছে। আবারও ফ্যাশনউইক থেকে আসছে নতুন ট্রেন্ড। সবাই ধীরে ধীরে ট্রেন্ডের সঙ্গে মিশে ফ্যাশনেবল পোশাক পরা শুরু করছে। তবে কিছু জিনিস থাকছে ধ্রুব। দেখা যাক এবারের ট্রেন্ডগুলো-
সাসটেইনেবল ওয়ে
টেকসই ফ্যাশনের চর্চাটি আগের মতোই থাকছে। অনেক নামিদামি ডিজাইনার তাদের নতুন কালেকশন সাজাতে রিসাইকেল এবং আপসাইকেল পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী উচ্চমানের পোশাক ও বৈচিত্র্যময় অ্যাকসেসরিজ বানাচ্ছে। স্লো এবং সাসটেইনেবল ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা গত এক বছরে অনেক বেড়েছে, এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কালারস, প্রিন্ট ও প্যাটার্ন
পোশাকে রঙের বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে। একেক ফ্যাশনউইক থেকে একেক রং উঠে এসেছে। এগুলোর ভেতর আছে ভাইব্র্যান্ট রেড, মেলো ইয়েলো, বাবল গাম পিঙ্ক, মনোক্রোম (সাদা-কালো), প্যাস্টেল শেড, ক্যামেল টোন, ম্যাগনেটিক ম্যাজেন্টা, গ্লিটারি সিলভার, গোল্ড।
গ্রীষ্মের পোশাকের ধারায় ক্ল্যাসিক ফ্লোরাল প্রিন্ট থাকছে আগের মতো। গত কয়েক বছরের মতো থেকে যাচ্ছে টাইডাই। অ্যানিমেল প্রিন্টও কোথাও যাচ্ছে না এ বছর। তবে এখন দুই রঙের চেকারবোর্ড প্যাটার্ন বেশি চোখে পড়ছে। এতে ভূমিকা রেখেছে গত বছরের নেটফ্লিক্স হিট ‘দ্য কুইন’স গ্যামবিট’। এক প্রডিজি দাবাড়ুর জীবন নিয়ে বানানো টিভি সিরিজ থেকে অনুপ্রাণিত এই প্যাটার্ন সব ধরনের পোশাকেই দেখা যাচ্ছে।
কোরসেট ম্যানিয়া
গত দশকের শেষের কয়েকটি বছর আসি আসি করেও আগমন ঘটেনি কোরসেট ট্রেন্ডের। কিন্তু এ বছর হঠাৎ করে প্রায় সবাই এটি পরা শুরু করেছে। এর পেছনে আরেক নেটফ্লিক্স হিট ‘ব্রিজারটন’-এর ভূমিকা অনেক। এটি মুক্তির পর থেকে সার্চ ইঞ্জিনে কোরসেট নিয়ে খোঁজ বেড়ে গেছে। ইতালিয়ান লাক্সারি লঞ্জারি ব্র্যান্ড লে পার্লা সার্চ টার্মের শীর্ষ দশ এবং পিয়ার টু পিয়ার সোশ্যাল শপিং অ্যাপের ট্রেন্ডের পাঁচ নাম্বার অবস্থানে আছে কোরসেট। অনেক ফ্যাশন ডিজাইনার যেমন ভিভিয়েন ওয়েস্টউড, জ্য পল গতিয়ের এবং অতি সম্প্রতি ইসাবেল মারান্ট, জ্যাকেমুস সিমন পোর্ত এটি নিয়ে নিরীক্ষা করেছেন। এখন ক্ল্যাসিক কোরসেটের পাশাপাশি কোরসেট স্টাইল টপ, বেল্ট, নিটওয়্যার বেশ চলছে।
ক্রপ আপ!
নিউইয়র্ক টু প্যারিস, লন্ডন টু মিলান- সব ফ্যাশন উইকে ক্রপ টপ বেশ বড় একটা জায়গা করে নিয়েছে। ভারসাচি, দিওর, জ্যাকেমুস, আলবার্টা ফেরাত্তির রানওয়ে শো থেকে প্রিন্টেড ব্রালেট স্টাইল ক্রপটপগুলো বেশ নজর কেড়েছে। আরামদায়ক এবং লেয়ারিংয়ের সমূহ সুযোগ থাকার জন্য সবাই ট্রেন্ডটি লুফে নিয়েছে।
লুজেন আপ
লকডাউন সবাইকে আরামদায়ক পোশাকে অভ্যস্ত করেছে। তাই এ বছরও ফ্যাশনে ঢোলা পোশাকের আধিপত্য থাকছে। সোয়েটপ্যান্টের জায়গায় এসেছে ওয়াইড লেগ স্টেটমেন্ট প্যান্ট। এটিও আরামদায়ক, ঢোলা, তবে যথেষ্ট ফ্যাশনেবল। এর উইংম্যান হিসেবে আছে সফট ডেনিম ওয়াইড জিনস, ব্লেজার, স্যুট, বয়ফ্রেন্ড শার্ট (ওভারসাইজ)।
মিনি ভার্সেস ম্যাক্সি ড্রেস
মিডি ও ম্যাক্সি স্কার্টের পর আবার ফিরে এসেছে মিনি স্কার্ট। ওয়াইটুকের (ইয়ার অব টু থাউজেন্ড) আইকনিক পিস এখন প্রায় সবখানেই চলছে। অন্যদিকে ম্যাক্সি ড্রেসও নতুনভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে। লাউঞ্জওয়্যার পরে যারা একঘেয়েমিতে ভুগছেন, তাদের জন্য ডিজাইনাররা নিয়ে এসেছেন নানা নকশার ফ্লোয়ি কালার এবং প্রিন্টফুল ম্যাক্সি ড্রেস। তাদের মতে, সোয়েটপ্যান্ট, লাউঞ্জওয়্যার মন্দ নয়, তবে সব সময় পরে থাকার চেয়ে বিরক্তিকর কিছু হতে পারে না।
পাফি স্লিভ, রাফল নেকলাইন
আশির দশকের পাফি স্লিভ নিঃসন্দেহে এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। ডিজাইনাররা এটিরই অনেক সংস্করণ এনেছেন। টপ, গাউন, শার্ট ড্রেস- সব ধরনের পোশাকে এই স্লিভ ব্যবহৃত হচ্ছে। এর সঙ্গে সত্তর দশকের রাফল নেকলাইনও বেশ চলছে।
অ্যাকসেসরিজ
মাস্ক থাকবে, তবে আগের মতো জমকালো নয়। এবার কালো মাস্কের পালা। প্রাদা, ফেন্দি ছাড়াও কিছু ব্র্যান্ডের রানওয়ে শোতে দেখা গেছে ম্যাচিং গ্লাভস। তাই এটিও থাকছে এবারকার ট্রেন্ডে। জুতার ভেতর স্কয়ার টো স্যান্ডেল, হিল পরছে প্রায় সবাই। চুলের অনুষঙ্গে স্ক্রাঞ্চি, প্যাডেড হেডব্যান্ডের সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা প্রিন্টের সিল্কের স্কার্ফ বা বাবুশকা।
 ফাহমিদা শিকদার
মডেল: বর্ণ ও আয়শা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: মুক্তা
ছবি: জিয়া উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top