skip to Main Content

রূপরসদ I ওভারনাইট

রাতারাতি সুন্দর! তা-ও সম্ভব। জুতসই উপকরণের সঠিক প্রয়োগে

সমস্যা তো আর বলে-কয়ে আসে না। হোক তা রোজকার দিনের ঝুটঝামেলা কিংবা বিনা নিমন্ত্রণে উড়ে এসে জুড়ে বসা অ্যাকনে। এহেন আকস্মিক সব সমস্যার চটজলদি সমাধান সম্ভব না করা গেলেও রাতারাতি ত্বক আর চুলের রূপ বদলে দেওয়া যায়ই। সঠিক টোটকা কাজে লাগালে এ ধরনের সমস্যা বাগে আনা কষ্টসাধ্য নয়। প্রয়োজন শুধু জুতসই উপকরণ আর রাতভর বিশ্রাম।
অ্যাকনে
রাত পেরোলেই বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান, এ সময় হঠাৎ ত্বকে ব্রণ উঁকি দেওয়া; এ সম্পর্কে নিশ্চুপ নারীর সংখ্যা হাতে গোনা। ক্রিম, ক্লিনজার, তেল, ফেসপ্যাক—কিছুতেই শায়েস্তা না হয়ে বরং হিতে বিপরীত হবার আশঙ্কাও বাড়ে কখনো কখনো। সঙ্গে বিরক্তি। এ ধরনের ব্রণকে বাগে আনার টোটকা রয়েছে ঘরের ওষুধের বক্সে। অ্যাসপিরিন। ভেঙে গুঁড়া করে কয়েক ফোঁটা পানিতে মিশিয়ে অ্যাকনের ওপর মাখিয়ে নিতে হবে। পুরু প্রলেপ করে। তবে এর আগে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া চাই। যেন ক্রিম, তেল বা ঘামের ছিটেফোঁটাও না থাকে। এভাবেই ঘুমাতে হবে। সকালে ব্রণের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অ্যাসপিরিন না থাকলে ফ্লোরাইড টুথপেস্টও কাজে দেয় অনেক সময়। তবে হরমোনাল সমস্যা, ক্রনিক কিংবা সিস্টিক অ্যাকনের ক্ষেত্রে এই টোটকা কাজ না-ও করতে পারে। যাদের মাঝেমধ্যে এক-আধটা অ্যাকনে দেখা দেয়, তাদের জন্য এ টোটকা অব্যর্থ।
ব্ল্যাকহেডস
এ সমস্যায় খুব একটা কাঠখড় পোড়ানোর দরকার পড়ে না। গোড়াতেই এর সমাধান করতে এবং দীর্ঘদিনের ব্ল্যাকহেডস থেকে মুক্তি চাইলে এক রাতই যথেষ্ট। দরকার শুধু বেকিং সোডা, মধু আর খানিকটা মুলতানি মাটি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার দশ মিনিট আগে বেকিং সোডা ও মধু মিশিয়ে তা ব্ল্যাকহেডসের ওপর পুরু করে মাখিয়ে রাখতে হবে পাঁচ মিনিট। তারপর সার্কুলার মোশনে ঘষতে হবে। পরে হালকা উষ্ণ পানিতে ধুয়ে মুখ মুছে সামান্য পানিতে গোলা মুলতানি মাটি মাখিয়ে নিতে হয়। এটি ত্বকের লোমকূপ বন্ধে সাহায্য করবে। এভাবেই থাকতে হবে সারা রাত। সকালে মুখ ধুয়ে নিলেই চলবে।
নির্জীবতায়
ফ্যাকাশে ত্বকে রাতারাতি জেল্লা ফিরিয়ে আনার জাদুকরি সব ওভারনাইট ফেসপ্যাক রয়েছে। বাসায় বানিয়ে নেওয়াও কঠিন কিছু নয়। দুই টেবিল চামচ দুধের সঙ্গে এক টেবিল চামচ হলুদবাটা বা হলুদগুঁড়া মিশিয়ে মুখে মাখিয়ে রাখতে হবে সারা রাত। অথবা দুই টেবিল চামচ দুধে ৮ থেকে ১০টা আমন্ড দিয়ে বেটে তা মাখা যেতে পারে। সারা রাত রেখে পরের দিন সকালে ধুয়ে নিলেই চলবে। দুধের পরিবর্তে টমেটোর রস, মধু কিংবা পাতিলেবুর রস মেশালেও ভালো ফল পাওয়া যাবে। চেষ্টা করতে হবে এই মাস্ক ব্যবহারের পরদিন ত্বকে যেন রোদ কম লাগে। তাতে জেল্লা দীর্ঘস্থায়ী হবে।
ঠোঁট ফাটা
খসখসে, ফাটা, ফ্যাকাশে ঠোঁটও রাতারাতি নরম আর গোলাপি করে তোলা সম্ভব। সাধারণত শরীরে আর্দ্রতার অভাব হলে এই সমস্যা বাড়ে। ওষ্ঠের ওপর মৃতকোষের আস্তরণ জমে এবং খসখসে, ফ্যাকাশে দেখায়। এটি সমাধানের মোক্ষম অস্ত্র মৃত কোষ সরিয়ে ঠোঁটকে আর্দ্রতা দেওয়া। প্রথমে যেকোনো তেল কিছুক্ষণ মাখিয়ে রেখে টিস্যুর সাহায্যে মুছে গুঁড়া চিনি দিয়ে ভালোভাবে ঘষতে হবে। মিনিট দশেক সার্কুলার মোশনে ঘষার পর ধুয়ে ঠোঁট ভেজা থাকা অবস্থায় নরম তোয়ালে দিয়ে ঘষে নিতে হবে। এতে মৃতকোষ সরে যাবে। এরপরের কাজটা একদমই সহজ। যেকোনো ঘন ক্রিম (অ্যান্টিসেপটিক ক্রিমের মতো পুরু হলে সবচেয়ে ভালো) এবং পেট্রোলিয়াম জেলি একসঙ্গে অল্প গরম করে গলিয়ে সেটা ওষ্ঠের ওপর সরাসরি পুরু করে মাখিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। সকালে উঠে টিস্যু দিয়ে আলতো করে মুছে লিপবাম মাখিয়ে নিতে হয়।
শুষ্ক ত্বক
রুক্ষ ত্বকের কারণও আর্দ্রতার অভাব। শুষ্ক ত্বকে প্রাণ ফেরাতে রাতে ঘুমানোর আগে মাইল্ড স্ক্রাবিং করে অ্যালোভেরা জেল ও যেকোনো পছন্দের ফেশিয়াল অয়েলের মিশ্রণ ম্যাসাজ করে নেওয়া যেতে পারে। সকালেই দেখা যাবে শুষ্কতা গায়েব। অ্যালোভেরা জেল ছাড়াও দুধের সর ও মধুর মিশ্রণ ভালো ফল দেবে। সারা রাত মাখিয়ে রাখলে ত্বক অনেক নরম ও মসৃণ হয়ে উঠবে।
পাফি আইজ
শারীরিক সমস্যা, হজমে গন্ডগোল, ঘুমের ঘাটতি, ব্লটিং ইত্যাদি নানা কারণে পাফি আইজ হতে পারে। অনেকের মুখ আর চোখের গঠনের কারণেও এই সমস্যা হয়। কারণ যা-ই হোক, চেষ্টা করতে হবে ঘুমের অভাব পূরণ করতে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান জরুরি, নইলে কোনো সমাধানই কার্যকর হবে না। পাফি আইজ কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় কোল্ড কম্প্রেস। ব্যবহৃত গ্রিন টি ব্যাগ ফেলে না দিয়ে ফ্রিজে দিন দুয়েক রেখে দিতে হবে। রাতে শুতে যাওয়ার আগে ঠান্ডা টি ব্যাগ চোখের ওপর রাখতে হয়, ১৫ থেকে ২০ মিনিট। সকালে ঘুম থেকে উঠেও এই পদ্ধতি রিপিট করতে হবে। ফোলা ভাব কমবে এতে।
সানট্যান
রোদে পোড়া ত্বকের দশা ফেরাতে কার্যকর বেসন, পাতিলেবু ও আলুর রসের মিশ্রণ। রাতে মুখ পরিষ্কার করে এই মিশ্রণ মেখে ঘুমাতে যেতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে অর্ধেক কাটা টমেটো মুখে ভালোভাবে ঘষে আগের রাতে মাখা বেসন তুলে ফেলতে হয়। এতে সদ্য পড়া ট্যান সহজে উঠে আসবে, তবে পুরোনো পোড়া দাগের ওপর এটা ততটা কার্যকর নয়। তাই ট্যান পড়লে তা চটজলদি তুলে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।
রেজর বার্ন
ওয়াক্সিংয়ের পরিবর্তে শেভিং করলে ত্বকে রেজর বার্নের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে অব্যর্থ দাওয়াই অ্যালোভেরা জেল আর নারকেল তেল। আলাদাভাবে রেজর বার্নের ওপর মাখিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই র‌্যাশ, ইনফ্লামেশন কমতে শুরু করবে।
খুশকি
রাতারাতি খুশকি তাড়ানো যতই অসম্ভব মনে হোক, এমন অনেক উপকরণ রয়েছে, যা খুব কম সময়ে এই সমস্যা দূর করতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম অ্যাপেল সিডার ভিনেগার। সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে তুলায় নিয়ে থুপে থুপে স্ক্যাল্পে মাখতে হবে। এভাবে সারা রাত রেখে দিতে হয়। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ছাড়া কোনো মেডিকেটেড মাউথওয়াশও ব্যবহার করা যেতে পারে। দুটোই চটজলদি খুশকি তাড়ানোর পক্ষে দারুণ কার্যকর।
ত্বক ও চুলের এ সমস্যাগুলোর প্রায় প্রতিটিরই কেমিক্যাল বিকল্প এখন সহজলভ্য। যেমন: অ্যাকনে প্যাচ, সুদিং ক্রিম, ডিট্যান প্যাক, রিজুভিনেটিং ফেসপ্যাক ইত্যাদি। তবে হাতের নাগালে থাকা প্রাকৃতিক উপকরণের ব্যবহার কম কার্যকর নয়। এতে ফল প্রায় একই রকম পাওয়া যায়, সঙ্গে ত্বকের বাড়তি উপকারও মেলে।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: মৌসুম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top