skip to Main Content

ফিচার I মেনজ স্টাইল ট্রাইব

প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি ফ্যাব্রিকেই গড়ে উঠবে আগামী ফ্যাশনের দুনিয়া। ফিরে আসবে পুরোনো কেতা। লিখেছেন সারাহ্ দীনা

অতিমারির বাস্তবতা মানুষকে পৃথিবী এবং প্রকৃতি নিয়ে ভাববার সুযোগ করে দিয়েছে। নিসর্গের প্রতি ভালোবাসা থেকে এসেছে স্টাইল ট্রাইব—‘দ্য নিউ ইকো ওয়ারিয়র’। ক্যানাবিস স্যাটিভা প্ল্যান্টের একটি প্রজাতির নাম হেম্প। নতুন ট্রাইবের মাঝে এই হেম্পের ফাইবার থেকে তৈরি পোশাক। ‘দ্য নিউ ইকো ওয়ারিয়র’-এর শুরুর দিকে উৎসাহ জোগায় একটি তথ্য। সেটি হচ্ছে, হেম্পের ফাইবারে তৈরি পোশাক ব্যবহারে বছরে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন টন কম কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদন করবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। এখন ট্রাইবটির জনপ্রিয়তার কারণ এর সাসটেইনেবল বায়ো কম্পাউন্ড। অরগানিক কটন নয় শুধু, ফ্যাব্রিকে আসবে পাল্প বিচ নামের সমুদ্রতটের উদ্ভিদ, ঘাস, গাছের পাতা ইত্যাদি। ডাই তৈরি হবে শেওলা ব্যবহারে। এই নতুনের কেতন ওড়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ আছে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণটি হচ্ছে, এসব উদ্ভিজ্জ উপাদান ব্যবহারের পরে ফিরে যাবে প্রকৃতিতেই। আবর্জনায় পরিণত হয়ে ধরিত্রী কিংবা নীল সমুদ্র—কোনোখানেই জঞ্জাল বাড়াবে না।
ইউক্যালিপটাসের পাতায় তৈরি ফাইবারের প্রডাক্ট ইতিমধ্যে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বে। এই ম্যাটেরিয়ালকে অভিহিত করা হয় ‘টেনসেল’ নামে। এটি তৈরিতে তুলনামূলক কম শক্তি দরকার। আবার, পানিও কম প্রয়োজন হয়। বলা যায় তৈরির পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব। একই সঙ্গে এটি সম্পূর্ণরূপে বায়োডিগ্রায়াবেল।
ফ্যাশন পরিবর্তনশীল। প্রযুক্তির ছোঁয়া ফ্যাশন কলেবরকে বাড়িয়ে তুলেছে। অগমেন্টেড রিয়েলিটি-ফ্যাশন ডিজিটালাইজেশনের একটি দুর্দান্ত রূপ। টেক স্যাভিদের মাধ্যমে ফ্যাশন জগতে নতুন ট্রাইব নিয়ে কাজ শুরু হয়। টেকনোলজির মাধ্যমে একটি ইমেজকে সুপার ইমপোজ করে নতুন লুক দেয়। ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির আনরিয়েল ফিলিং এখানে পাওয়া যায় না। ইউজারের ফ্যাশন সেন্স নিয়ে কাজ করা হয় এখানে। বাস্তব পৃথিবীর ফিলিং রেখে বিভিন্ন এলিমেন্ট যোগ হয়ে থাকে নতুন লুক তৈরি করতে। অগমেন্টেড রিয়েলিটিতে হাই টেক লুক তৈরি হয়। পোশাকের রং দেখা যায় স্লেট গ্রে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ফ্যাশন দুনিয়াতে আসতে পারে লক্ষ্যযোগ্য পরিবর্তন। সেখানে সবাই ক্লাউডে পছন্দের আউটফিট বেছে নিয়ে আপলোড করবে আর দর্শনকারীদের চোখের চশমাতে ভেসে উঠবে এ আর ফ্যাশন ডিজিটালাইজেশনের ইমেজ। অকল্পনীয় শোনাচ্ছে? ২০১৮ সালের লন্ডন ফ্যাশন উইকের কথা মনে আছে? এই আয়োজনের রানওয়েতে স্টিভেন টাই এ ধরনের টেক-ফ্যাশন তুলে ধরেছিলেন।
কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এই ফ্যাশন ট্রাইব। নরওয়েজিয়ান রিটেইলার কারলিংসের কাছ থেকে অর্ডার করা যাবে অগমেন্টেড রিয়েলিটি ফ্যাশন প্রডাক্ট। তাদের কাছ থেকে ট্রাউজার কিনে ডাউনলোড করতে হবে। ই-ফিটের মাধ্যমে নিজের ছবিতে ফিট করে ইমেজটাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দিলেই চলবে! নতুন পোশাকে দারুণ ফ্যাশনেবল হয়ে ওঠা যাবে।
ফিউচারস্টিক ফ্যাশনের আরও একটি ধারা যুক্ত হবে মেনজ স্টাইল ট্রাইবে। আলট্রা ইউটিলিটারিয়ান টাইটেলে এই ফ্যাশন ধারার অনুসারীরা নিজেদেরকে সব সময় সাজিয়ে তোলে এ ট্রাইবের সিগনেচার স্টাইলে। মাউন্টেইন ট্রেকিং, হাইকিং—এ ধরনের অভিযানের পোশাক থেকে এই ট্রাইবের ইন্সপিরেশন। আলট্রা ইউটিলিটারিয়ানদের ফ্যাশনভাবনার সব দিকেই পাওয়া যাবে অভিযানের ছোঁয়া। বলা যায়, অ্যাডভেঞ্চারের জন্য এরা তৈরি সব সময়। যদিও অভিযাত্রিক পোশাকেই তারা দারুণ পার্টি আর নাইট ক্লাবিং করে বেড়ায়।
পাতাগোনিয়া থেকে নেওয়া যেতে পারে ইকো ফ্রেন্ডলি মডিস টেকনিক্যাল ওয়্যার। এর সঙ্গে বটমে কার্গো ট্রাউজার আর বুট হলেই আলট্রা ইউটিলিটারিয়ান ট্রাইবে প্রবেশ ঘটবে।
মেনজ স্টাইল ট্রাইবের একটি ফোর-ডি প্রিন্টার্স। মলিকুলার লেভেলে নিয়ে কাজ করা হয় এই ধারার পোশাকে, তাই আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আউটফিটের চরিত্র এবং বৈশিষ্ট্যে আসে পরিবর্তন। আর্দ্রতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারার ক্ষমতার কারণে আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের মাপকাঠিতে এগিয়ে থাকবে। তাপমাত্রার ওঠানামার সঙ্গে পরিবর্তিত হবে এর গুণাবলি। তীব্র শীত কিংবা তপ্ততার চূড়ান্ত—সব সময়েই ফিট।
২০১৮তে অ্যাডিডাস সিলিকন ভ্যালির সঙ্গে টিম আপ করে প্রোটোটাইপ ফিউচার ক্রাফট তৈরির জন্য। প্রস্তুত হয় অ্যাডিডাস আলফা এজ ফোর ডি। প্রথম রানের ৫,৫০০ স্নিকার ৩০০ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। সাশ্রয়ী মূল্যে বাজার তৈরির পরে আসে এর দ্বিতীয় রান। ১০,০০০ ডলার করে মূল্য নির্ধারিত হয়। হাইটেক ফুটওয়্যারটির নতুন নতুন ভার্সন নিয়মিত আসছে। শপিং চেকলিস্টে রেখে দেওয়া যেতে পারে সেগুলো।
আভিজাত্য নিয়েও আছে মেনজ স্টাইল ট্রাইব। দ্য ড্যান্ডি এম কে টু। রয়্যাল থ্রি পিস স্যুট আবার ফিরছে ট্রেন্ডে। ফ্যাব্রিকে থাকবে ভেলভেট এবং উল। কালার প্যালেট থেকে সচেতনভাবে বাদ যাবে দুই কুইন বি! এরা হচ্ছে ব্ল্যাক এবং ব্লু! ফুটওয়্যারের ক্ষেত্রেও প্রকাশ পাবে সিগনেচার স্টাইল। হ্যান্ড মেইডেই তাই সই। সৃজনশীলতা আর যত্ন অনন্য করে তুলবে। টাই-এর ক্ষেত্রে এই ক্ল্যানের নজর থাকবে আলাদা করে। বিশেষত্ব প্রকাশ পাবে সেখানেও।
গুচির আলেজান্দ্রো মিশেল ফিরিয়ে এনেছেন এই ট্রেন্ড। গুড লুকিং মেনরা পলিশড লুকে হাজির হচ্ছেন আবারও। ষাট, সত্তর ও আশির দশকের তাক লাগানো ট্রেন্ড এ সময়েও মাতিয়ে তুলছে কেয়ারলেসলি কেয়ারফুল জেনারেশনকে।
স্টাইল ট্রাইবের ক্ষেত্রে গ্রামার মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। ফিউশন, মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ—এসবের পাশাপাশি স্টাইল ট্রাইবেও মনোনিবেশ করবেন স্টাইল ফ্রিকরা, এমনটাই ধারণা করা যাচ্ছে। নতুনত্বে আগ্রহ সব সময়ে। একই সঙ্গে নিজস্বতার প্রতি এ যুগের নাগরিকদের ভালোবাসাও বেশ তীব্র।
মডেল: হাসিন
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: চল ফ্যাশন
ছবি: ফারাবী তমাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top