skip to Main Content

ফুড বেনিফিট I হাড়াহার

গবাদিপশুর হাড় কেউ খান, কেউবা ফেলে দেন। তবে খেলে উপকারই মেলে। তা ছাড়া হাড় দিয়ে এমন সব পদ তৈরি হয়, যা মাংস দিয়ে সম্ভব নয়। সেসব রসনার স্বাদ মাংসের চেয়ে একদম ভিন্ন। পুষ্টিমানও বেশি। কোরবানির ঈদ মানেই মাংসের রেসিপির ছড়াছড়ি। হাড় দিয়ে নতুন নতুন পদের এক্সপেরিমেন্টও বাদ যায় না। যেমন বুটের ডাল দিয়ে হাড়যুক্ত মাংস, নেহারি, স্যুপ ইত্যাদি।
গরুর হাড় এবং সেটি দিয়ে তৈরি পদের স্বাস্থ্যগুণ অনেক। তাতে মিনারেলের পাশাপাশি ভিটামিনও মেলে। থাকে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেশিয়াম। তা ছাড়া এসব পদ সেলেনিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, কপার, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও বি৬ এর উৎস। এসব উপাদান শরীরের ভেতরের ও বাইরের নানা রোগ সারাতে পারে। বিশেষ করে হাড় দিয়ে তৈরি স্যুপ। পদটিতে কন্ডিশনাল অ্যামাইনো অ্যাসিডও থাকে, যা শরীরে উৎপন্ন হয় না। ফলে খাবার থেকেই গ্রহণ করতে হয়। হাড়যোগে তৈরি স্যুপে চার ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড মেলে: আরজিনিন, গ্লুটামিন, গ্লিসাইন ও প্রোলিন। এগুলো ইমিউন ফাংশন, অন্ত্রের কাজ, মগজের ক্ষমতা বাড়ানো ও ডিটক্সের জন্য দরকারি।
অনেকেরই হজমে সমস্যা থাকে। ঈদের সময় বেশি মাংস খাওয়ার কারণেও পেটের পীড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। হজমে সমস্যা থাকলে নিয়মিত এক কাপ করে হাড়ের স্যুপ খেলে স্বস্তি লাভ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে বদহজম সম্পূর্ণভাবেই আরোগ্য হয়। অন্ত্রে ছিদ্র থাকাও খুব ঝুঁকিপূর্ণ। স্যুপের জেলাটিন এই সমস্যা সারাতে পারে। এমনকি ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ফাঁপা সমস্যাও দূর হয়। বেশি মাংস খাওয়ার পর অনেকেই এ ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে। ফলে এই উৎসবে মাংসের পদের পাশাপাশি হাড়ের কিছু পদও রাখা যেতে পারে, যা স্বাদে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি রোগের পথ্য হিসেবেও কাজ করবে।
চলছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। তা ছাড়া আবহাওয়াও বদলে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে সর্দিকাশির মতো রোগবালাই। ভাইরাসজনিত ঠান্ডা থেকে রেহাই দিতে পারে হাড়ের স্যুপ। খাবারটি সাইনাস ও শ্বাসনালি পরিষ্কার রাখে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যেতে পারে হাড়ের স্যুপ। অস্থিসন্ধির ব্যথানাশে পদটি উপকারী। হাড়ের স্যুপে থাকে গ্লুকোসামিন। এই উপাদান অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে কার্যকর। এ ছাড়া স্যুপ খেলে হাড় শক্তিশালী হয়। এটি অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে।
অনিদ্রা রোগের পথ্য হতে পারে হাড়ের স্যুপ। এতে থাকা গ্লিসাইন ঘুমের উন্নতি ঘটায়। এসব ছাড়াও হাড়ের রসে থাকা কোলাজেন ত্বককে দৃঢ় ও উজ্জ্বল করে। তারুণ্য ধরে রাখে। বলিরেখার সমস্যা এড়িয়ে বুড়িয়ে যাওয়ার লাগাম টেনে ধরতে সারা বছর পরিমিতভাবে খাওয়া যেতে পারে হাড়ের স্যুপ। মুটিয়ে যাওয়াও কমাতে পারে পদটি। স্থূলতার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া দূর করে ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে হাড়ের স্যুপ। খাবারটি খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে।
পশুর হাড়ের ভেতর মজ্জা থাকে। সেটির ভালো ও মন্দ- উভয় দিকই আছে। যেমন হাড়ের মজ্জা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে জানা যায়। সে ক্ষেত্রে নেহারি তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত গবাদির পায়া দিয়ে তৈরি হয় পদটি। যেটির ভেতর মজ্জা থাকে। যা শরীরের শ্বেত রক্তকণিকা বাড়ায়। তা ছাড়া থাকে অ্যালকাইলগ্লিজেরল যৌগ। উপাদানটি রক্তকোষের ভারসাম্য বজায় রাখে। তা ছাড়া অস্থিমজ্জা শরীরের আয়রনের জোগান দেয় বলে জানা যায়। ফলে নারীদের জন্য খাদ্যটি বেশ উপাদেয়। তবে অতিরিক্ত মজ্জা খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই স্যালাড কিংবা রুটি সহযোগে তা খাওয়াই ভালো। এতে কোলেস্টেরলের ঝুঁকি এড়িয়ে হৃদ্রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। আমাদের দেশ অবশ্য রুটি দিয়েই হাড়ের স্যুপ কিংবা নেহারি খাওয়ারই চল। স্যুপ, নেহারি কিংবা ডাল- গরু ছাড়াও কোরবানির অন্যান্য পশুর হাড় দিয়েও তা তৈরি করা যায়। কিন্তু যেহেতু হাড় প্রোটিন, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম ও ফ্যাটের আধার, তাই শরীরে কোনো রোগবালাই থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই পদগুলো খাওয়া নিরাপদ হবে।

 আল নাহিয়ান
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top