skip to Main Content

ফিচার I আমাজন

প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের একটি। আয়তনের দিক থেকে অঞ্চলটি বাংলাদেশের প্রায় ৩৭ গুণ। পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের ২০ শতাংশ উৎপাদিত হয় এখান থেকেই। লিখেছেন মোহাম্মদ বোরহান উদ্দীন

এই বিশাল বনাঞ্চল ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলে পরিচিত। একে নিয়ে রহস্যেরও শেষ নেই।
আমাজন শব্দের অর্থ ‘নারী যোদ্ধা’। এটি একটি গ্রিক শব্দ। পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা বিশ্বাস করত, বিশাল এ বনের মধ্যেই কোথাও লুকিয়ে আছে ‘এলডোরাডো’ নামের এক গুপ্ত শহর। তাদের ধারণা, এর পুরোটাই স্বর্ণে মোড়ানো এবং এ শহর পাহারা দেয় বিশেষ এক শ্রেণির নারী যোদ্ধারা।
গ্রিক মিথ থেকে এমন কল্পনার উদ্ভব। সোনায় মোড়ানো এ শহরের সন্ধান করেছিল পর্তুগিজ, স্প্যানিশ ও ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রীরা। প্রতিযোগিতামূলক এই অভিযানের পরেও আজও এই কাল্পনিক শহরের খোঁজ মেলেনি। পায়নি নারী যোদ্ধাদেরও।
৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার কিংবা ২১ লাখ বর্গমাইলের সর্বমোট নয়টি দেশে বিস্তৃতি নিয়ে গড়ে উঠেছে, প্রাকৃতিক রহস্যের সবচেয়ে বড় আধার আমাজন। এই জঙ্গলের সবচেয়ে বড় অংশ ব্রাজিলের আয়ত্তে রয়েছে। মোট বনভূমির প্রায় ৬০%। পেরুর রয়েছে ১৩%। অন্যদিকে কলম্বিয়ার সীমানায় আছে প্রায় ১০%। এ ছাড়া সুরিনাম, ফ্রেঞ্চ গায়ানা, বলিভিয়া ও ইকুয়েডরের সীমানা ছুঁয়ে গেছে এই বন।
আমাজনের বুকজুড়ে আছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী, যার নামও আমাজন। দৈর্ঘ্যরে দিক দিয়ে নীল নদ প্রথম হলেও আমাজনই সবচেয়ে বেশি পানি ধারণ এবং প্রবাহিত করে। আন্দিজ পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন এই নদী অনেক ঘুরে ঘুরে মিলেছে আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে। এই নদীর রয়েছে অসংখ্য শাখানদী। সেগুলোর দৈর্ঘ্যও কম নয়। এসব নদী জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আমাজনের বুকজুড়ে। এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিচিত্র প্রজাতির প্রাণী। এগুলের বেশির ভাগ আজও অচিহ্নিত।
আমাজন মহাজঙ্গলে রয়েছে ৩ মিলিয়ন প্রজাতির কীটপতঙ্গ, ১৩ হাজার প্রজাতির পাখি, ৪০০ প্রজাতির সরীসৃপ। ৪২৮ প্রজাতির উভচর এবং ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। এ ছাড়া হাজারো প্রজাতির অজানা জীব-অণুজীব।
রয়েছে ৪০ হাজার প্রজাতির গাছ। সেগুলোর কোনো কোনোটি শতাধিক ফুট উঁচু। আর এত ঘন যে ডালপালা ভেদ করে সূর্যরশ্মি এখানকার মাটিতে পৌঁছাতে পারে না। ওষুধের ২৫-৩০ ভাগ কাঁচামাল আসে এই মহাজঙ্গল থেকে। একে ঘিরে রয়েছে মানুষখেকো গাছের গল্পও।
আমাজনকে রেইনফরেস্টও বলা হয়। রেইনফরেস্ট হলেও প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনেকের মতে আমাজন মূলত প্রায় তিন হাজার বছর আগে মানুষের তৈরি একটি ফলবাগান। বনাঞ্চলটির ৬/৭ ফুট গভীরে একধরনের কালো মাটি (টেরা পেট্রা) পাওয়া গেছে। এ মাটির দীর্ঘস্থায়ী উর্বরতা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের থেকে বেশি। কাঠ কয়লা, মাছের কাঁটা, হাড়ের গুঁড়া আর নাম না জানা নানা উপাদানে তৈরি। এই কালো মাটির রহস্য বিজ্ঞানীরা এখনো উদ্ধার করতে পারেননি। মনে করা হয়, এর রসায়ন জানা গেলে এই পৃথিবীকে কখনোই খাদ্য সমস্যায় ভুগতে হবে না।
আদিবাসীরা এই কালো মাটির বানানো বাগান থেকে অল্প সময়ে নিজেদের খাদ্যের পূর্ণ চাহিদা মিটিয়ে নিত। এটা তারা এমন এক পর্যায়ে নিয়ে এসেছিল যে সামান্য পরিশ্রমের মাধ্যমে খাদ্যের সংস্থান নিশ্চিত করে, বাকি সময়টা তারা শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় ব্যয় করত। জঙ্গলের কিছু অংশে খননকার্যের ফলে এই তথ্য আর অবিশ্বাস্য নয়, বরং প্রমাণিত।
আমাজনের বুকে যে গোলাকার এবং চারকোনা আকারের স্থাপনার কথা বেশ কয়েক বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন, সেগুলো তৈরি করা এত সহজ কর্ম নয়। জ্যামিতিক জ্ঞান থাকলেই কেবল এই স্থাপনাগুলো তৈরি করা সম্ভব। সেখানকার আদিবাসীরা ধারণ করে আছে আমাজনের এই জটিল ইকোসিস্টেমের মিলিয়ন বছর ধরে গড়ে ওঠা নিজস্ব জ্ঞান। আমাজন মহাজঙ্গলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ৩৫০-এর বেশি নৃগোষ্ঠী। তারা চাষাবাদ, মাছ শিকার এবং পশু শিকার করে বেঁচে আছে শত শত বছর ধরে।
১৮৯৪ সালে এই জঙ্গল বিপন্নতার সম্মুখীন হয়েছিল। কমান্ডার কার্লোস আমাজনের প্রাচীন মানবগোষ্ঠী ম্যাস্কো পিরোদের ওপর চালায় হত্যাযজ্ঞ। ভূমি অধিকার নিয়ে খুবই সংবেদনশীল ছিল তারা। কমান্ডার কার্লোসের হাত থেকে যারা বাঁচতে পেরেছিল, তারা আমাজনের গভীরে চলে যায়।
ব্রাজিলের রুনিয়া প্রদেশের গহিন জঙ্গলে দেখা মিলেছিল ওই আদিবাসীদের একমাত্র জীবিত প্রতিনিধির। তিনি ‘দ্য ম্যান অব হোল’ নামে পরিচিত। আমাজনের গহিন অরণ্যেই খড়, কাঠ এবং গাছের পাতা দিয়ে বানানো ঘরে তিনি বাস করতেন। ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম ব্রাজিলের সরকারি সংস্থা ‘ফুনাই’ এই রহস্য মানবের অস্তিত্ব দাবি করে। এর প্রমাণস্বরূপ একটি ফুটেজও প্রকাশ করা হয়।
২০১৯ সালে আমাজনে বেশ কিছু অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে; যা এযাবৎকালে হওয়া সবচেয়ে বড় পরিসরের দাবানল। ব্রাজিলের অংশের প্রায় ৭৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি জায়গায় দাবানলের এ ঘটনা ঘটে। এতে এখানকার অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top