skip to Main Content

ফিচার I বর্ষায় খাবারের ভালোমন্দ

স্যাঁতসেঁতে এই মৌসুমে বেছে নিতে হয় এমন খাবার, যেগুলো স্বাস্থ্যবান্ধব। কেননা বদলে যাওয়া প্রকৃতি শরীরে ঘটায় পরিবর্তন। খাদ্য নির্বাচনে তা মানতে হয়

এ ঋতুতে বাড়ে জীবাণুর প্রকোপ। তা খাবারে ভর করে ঢোকে মানবদেহে। ফলে এই সময়ে খাবারে কিছু বাছবিচার দরকার। আবার ওসব জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়ে এমন খাবারও আছে, যা বর্ষার খাবার হিসেবে দারুণ উপকারী।
বাইরে করোনাভাইরাসের পাশাপাশি বর্ষার রোগবালাই। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। চাই সতর্কতা। সব ক্ষেত্রে, এমনকি খাবারেও। এ ঋতুতেই ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বেশি সক্রিয় থাকে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন অণুজীববিজ্ঞানীরা। এসব জীবাণু সুযোগ পেলেই শরীরে বাধায় সর্দি, জ্বর, কাশি ও পেট খারাপ। ডেঙ্গু ও চিকেন পক্সের প্রকোপও বাড়ে। তা ছাড়া এ ঋতুতে ঠান্ডা জ্বর হলে তা করোনা নাকি অন্য কোনো জীবাণু, সেটা পরীক্ষা না করে উপায় নেই। ফলে হাঁচি-কাশি দিলেই মনে চিন্তা বাড়ে, যা শরীরের ওপরেও প্রভাব ফেলে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ বরাবরই ভালো। তাই খাদ্য নির্বাচনে বিশেষভাবে সতর্ক হতে হয় এই স্যাঁতসেঁতে মৌসুমেই। কিছু খাবার এড়িয়ে যাওয়া যেমন ভালো, তেমনি কিছু খাদ্য আছে, যা খেলে বর্ষায় স্বাস্থ্যবিষয়ক দুশ্চিন্তা কমতে পারে।
আকাশ কিছুটা মেঘলা হলে কিংবা সামান্য বৃষ্টি ঝরলেই অনেকের ভাজাপোড়া খাওয়ার বাসনা জাগে। অথচ এমন আবহাওয়ায় এসব খাবার খেতে নিষেধ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মুচমুচে ভাজা খাদ্য গ্রহণ এবং চা পানে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এ সময় বাতাসে বাড়তি আর্দ্রতা থাকে। ফলে কড়া ভাজা খাবার সহজে হজম হতে চায় না। যদি খেতেই হয়, তবে বাড়িতে ভাজা পদটিই নিরাপদ। কেননা বাইরের ভাজা খাবার পাকস্থলীতে অতিরিক্ত চাপ ফেলে। এতে হজমের সমস্যা হয়, যা স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলে। তা ছাড়া বর্ষার আবহাওয়ায় শরীর আর্দ্র থাকে। তাই অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেলে বদহজমের আশঙ্কা থাকে। এমনকি চটপটি ফুচকাও এ ঋতুর জন্য উপযোগী খাবার নয়। ঝাল থেকে দূরে থাকাই ভালো। এ সময় শাক খেতেও বারণ রয়েছে। এর কারণ হলো শাক মূলত খোলা জায়গায় জন্মে। বর্ষার কারণে শাকের পাতা, লতা, কান্ড ইত্যাদি স্থান হয়ে ওঠে পোকামাকড়ের ঘরবসতি। শুধু তা-ই নয়, এ ঋতুতে কিছু কিছু পতঙ্গ শাকের পাতায় ডিমও পাড়ে। যদিও ভালোভাবে ধুয়ে নিলে সেসব শাক খাওয়া যায়, কিন্তু এসব পতঙ্গ এবং এদের ডিম খুব সহজে দূর হয় না। ফলে ঝুঁকি থেকেই যায়। এই ঝুঁকি থেকে রেহাই পেতে বর্ষায় শাক এড়িয়ে যাওয়া ভালো।

কেননা, এসব পোকামাকড় জীবাণুর বাহক, যা শাকের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে রোগ বাধাতে পারে। ওসব অণুজীব পাকস্থলীর জন্য বিপজ্জনক। এমনকি ডায়রিয়া কিংবা ফুড পয়জনিংও হতে পারে। তবে একান্তই যদি শাক খাওয়া লাগে, তাহলে রান্নার আগে শাকে লবণ মেখে কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোমতো ধুয়ে নিলেই বিপদ অনেকটা এড়ানো যাবে। এড়িয়ে চলতে হবে সামুদ্রিক মাছও। বর্ষায় চিংড়ি ও কাঁকড়া মেলে। কিন্তু এই ঋতুতে এ দুটি প্রাণীর খাদ্য উপযোগিতা কম। খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমন আবহাওয়ায় সামুদ্রিক যেকোনো মাছ পরিহার করা উত্তম। তবু কেউ খেতে চাইলে ভালো করে ভেজে খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে যে ভাজা খাবারও বর্ষার জন্য উপযোগী নয়।
বর্ষা ঋতুতে ফল খেতে বাধা না থাকলেও কেটে রাখা ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ঘুরে বেড়ানো জীবাণু কাটা ফলের গায়ে বসে যায়। তারপর খাদ্য হিসেবে তা পেটে গিয়ে শরীরে নানান রোগবালাই তৈরি করে। ঠিক একই কারণে বাইরে বানানো ফলের রস না খাওয়াই উত্তম। তবে বাড়িতে ফল এনে রস বের করে ঝটপট খেয়ে ফেললে ক্ষতি নেই। এই ঋতুতে ফলের রসের পাশাপাশি কুলপি, ঘোল, আখের রস কিংবা দই জাতীয় খাবার থেকে নিজেকে সামলে রাখলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো যায়। এই মৌসুমে কোল্ড ড্রিঙ্কস করা ক্ষতিকর। এটি পান করলে শরীরে খনিজের পরিমাণ কমে যায়। ফলে উৎসেচকগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এতে হজমে সমস্যা তো হয়ই, এমনকি পাকস্থলীতে ইনফেকশনও হতে পারে। সব ধরনের বাসি খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। কেননা সেগুলো বর্ষার জীবাণুর আঁতুড়ঘর। তা ছাড়া কোনো খাবারই কাঁচা খাওয়া ঠিক হবে না। রান্না না করে খেলে তাতে জন্ডিস ও টাইফয়েডের আশঙ্কা বাড়ে। তবে রান্না করা খাবারটি রেখে দিয়ে বারবার গরম করে খাওয়া ঠিক হবে না। ঘন ঘন খাবার গরম করলে তাতে খুব দ্রুত জীবাণু বাসা বাঁধে। রান্নার পর তাই দ্রুত খাবার খেয়ে শেষ করে ফেলতে হবে। এক বেলার রান্না অন্য বেলার জন্য রেখে দেওয়া এবং তা খাওয়া অন্তত এই ঋতুতে স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তা ছাড়া বর্ষায় যেটির দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে, সেটি হলো পানি পান। এ সময় পানিবাহিত জীবাণু বাড়ে। ফলে পানি ফুটিয়ে পান করলেই নিরাপদ থাকা যাবে।
তবে বর্ষার উপযোগী খাবারের তালিকা সংক্ষিপ্ত নয়। এ ঋতুতে জীবাণুর ছড়াছড়ি আছে বটে, কিন্তু এমন কিছু খাবার আছে, যেগুলো ওসব ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সঙ্গে লড়ে। ফলে বর্ষা ঋতুতে খাবারের তালিকায় ওসব খাবার রাখলে স্বাস্থ্য বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যেতে পারে। যেমন গরম স্যুপ। এটি নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, খাবারটি ঠান্ডা লাগা থেকে রেহাই দেয়। তা ছাড়া শরীরে পানির পরিমাণ বজায় রেখে সুস্থতা নিশ্চিত করে। ওপরে চা পানে বিরত থাকার কথা বলা হলেও এই আবহাওয়ায় হারবাল চা বেশ উপকারী। তা ইনফ্লুয়েঞ্জা কাটায়। তা ছাড়া হজমশক্তিও বাড়ায়। ভাজাপোড়া বাদ দিয়ে বর্ষায় শুকনা খাবার বেশি বেশি খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীর ঝরঝরে হবে। খাওয়া যেতে পারে ভুট্টা। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা বর্ষার বালাই থেকে রেহাই দেবে। এ ঋতুর রোগ থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত খালি পেটে রসুন খাওয়া যেতে পারে। এটি অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে। পাতে রাখা যেতে পারে লেবু। এর ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস সর্দি-কাশির সমস্যা দূর করে। তা ছাড়া ফুসফুস পরিষ্কার রেখে হাঁপানি কমায়। বর্ষায় শ্বাসকষ্ট কমাতে মধুও বেশ ফলপ্রদ। পান করা যেতে পারে ডাবের পানি। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ মানলে বর্ষায় রোগবালাই থেকে নিস্তার মিলতে পারে। তবে স্বাস্থ্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে চলাই ভালো।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top