skip to Main Content

ফিচার I ছত্রাকমুক্তি

এতে আক্রান্ত খাবার মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাই জানা দরকার কেন এর উপদ্রব ঘটে এবং কীভাবে খাদ্যদ্রব্য নিরাপদ রাখা যায়

একে তো বাদলদিন, তার ওপর করোনা। বাসার বাইরে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। কখনো কখনো চলে লকডাউনের কড়াকড়ি। খাবারের দোকানের শাটার বন্ধ। ফলে নিত্যদিনের খাবার কেনা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। সামর্থ্যবানেরা তাই খাবার কিনে মজুত করছে ঘরে। কিন্তু জৈবমাত্রই পচনশীল। তা ছাড়া বর্ষার বিরূপ আবহাওয়া খাদ্যকে পচায় আরও দ্রুত।

বাংলাদেশে বর্ষা ঋতুতে আচার কিংবা পাউরুটিতে ছত্রাক পড়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে এটা ঘটে। ছত্রাকে আক্রান্ত হতে পারে দৈনন্দিন খাদ্যদ্রব্য। সেসব রান্না করে খাওয়ার ফলে শরীরে ঢুকছে বিষ। সম্প্রতি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এসে দাঁড়িয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। এর প্রকোপে প্রাণও নাশ হয়েছে অনেকের। সারা মাসের বাজার একবারে করতে গিয়ে বিষাক্ত ফাঙ্গাস বয়ে আনছেন অনেকে নিজের অজান্তেই। কদিন পরেই কাঁচা খাবারের রং, গন্ধ ও স্বাদ বদলে যায় অণুজীব কিংবা ছত্রাকের কারণে। তখন খাবার ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। ফলে অপচয় হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মজুত খাবারে ছত্রাক জমলে খাদ্যে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা বাড়ে। কেননা, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে খাবারে অ্যাসপারগিলাফ ফ্লেভাস নামের একধরনের ফাঙ্গাস উৎপন্ন হয়, যা থেকে তৈরি হয় আফলাটক্সিন। এটিই খাদ্যপণ্যের গায়ে জমে। এই উপাদান মানুষের শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। মূলত বর্ষায় আর্দ্রতার কারণে ঘরে বা দোকানে মজুত করা চাল, ডাল কিংবা আটায় সাদা অথবা ধূসর বর্ণের যে পদার্থ জমতে দেখা যায়, সেটিই আফলাটক্সিন। উপাদানটি বিষাক্ত। এই ছত্রাকযুক্ত খাবার দীর্ঘদিন ধরে খেতে থাকলে জিনগত সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে ক্যানসার বাসা বাঁধে। এর থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় একটিই—সিলিকা জেলের ব্যবহার। খাবার যে পাত্রে সংগ্রহ করা হয়, সেখানে খানিকটা সিলিকা জেল রেখে দিলে আফলাটক্সিন উৎপন্ন হতে পারে না, কিংবা সেই শঙ্কা কমে যায়। কারণ, এই জেল সংরক্ষণ পাত্রের ভেতরে থাকা আর্দ্রতা শুষে নেয়। ফলে ছত্রাকটি গজানোর জন্য অনুকূল পরিবেশ পায় না। এতে খাবারে ছত্রাক পড়তে পারে না।
সিলিকা জেল ছাড়া আফলাটক্সিন বিনষ্ট করতে অন্তত দুই শ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট ধরে পোড়াতে হয়। কিন্তু তাতে খাদ্যদ্রব্য পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। ফলে খাবার নষ্ট না করে ছত্রাক রোধের সহজ উপায় হতে পারে সিলিকা জেলের ব্যবহার। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও রান্নাঘরে রাখা বিভিন্ন মসলা, সবজি ছত্রাকে আক্রান্ত হতে পারে। তাই আর্দ্র মৌসুমে এসবের ওপর বাড়তি খেয়াল রাখা চাই। সবচেয়ে ভালো হয় সবজিগুলো খবরের কাগজে মুড়ে রাখলে। এই কাগজ সবজিগাত্র থেকে পানি শুষে নিয়ে আর্দ্রতা কমাবে। এরপর কাগজ থেকে বের করে সবজিগুলো জিপ-লক ব্যাগে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এতে ছত্রাকের হাত থেকে খাদ্যদ্রব্যকে সুরক্ষা সম্ভব হবে। ছত্রাকের কবল থেকে মসলা সুরক্ষিত রাখার তাগিদে সেগুলোকে মাঝেমধ্যে রোদে দেওয়া যেতে পারে। রোদ না মিললে কড়াইয়ে সামান্য টেলে সংরক্ষণ করা যাবে। ভালো হবে এয়ারটাইট কনটেইনার কিংবা বয়ামে মসলা সংরক্ষণ করলে। এতে ছত্রাক থেকে পুরোপুরি রেহাই মিলবে। চাল কিংবা ডালের ক্ষেত্রে খাদ্য দুটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কিংবা এ দুটি দ্রব্যে কর্পূর রেখে ছাতা পড়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়। পোকাও দূরে থাকে।
আর্দ্র আবহাওয়ায় ছত্রাকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় আচার। গ্রীষ্মের ফল দিয়ে তৈরি এই পদ অনেকেই বছরব্যাপী রেখে দিতে চায়। কিন্তু বর্ষা এলেই তাতে ছত্রাক পড়ে। তখন এত কষ্ট করে তৈরি আচারগুলো ফেলে দিতে হয়। এমনকি অনেক সাবধান থাকার পরও বর্ষায় এর কবল থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হয় না। ছত্রাক ধরলে তা বাড়তেই থাকে এবং খাবারটির রং, গন্ধ ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। ছত্রাক থেকে মুক্ত রাখতে খাবার রাখার বয়াম গরম পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে প্রথমেই। সবচেয়ে ভালো হয় কাচের বয়ামে আচার সংরক্ষণ করলে এবং রাখার আগে বয়ামের নিচে কিছু লবণ ছিটিয়ে নিলে। ভালো মানের সিরকা ব্যবহার করলে ছত্রাক আক্রমণের হার অনেকটাই কমে। তারপর ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তবু যদি এটি আবরণরূপে দেখা দেয়, তা তুলে ফেলে ওপরে চিনি ছড়িয়ে দিয়ে আচার সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তারপরও ছত্রাকের আশঙ্কা শতভাগ দূর হয় না। অনেক সময় খাবারের ছত্রাক খালি চোখে দেখা যায় না। ফলে খাদ্যদ্রব্য স্বাভাবিক মনে হলেও আসলে তা বিষাক্ত। টমেটো সস, পাউরুটি ও পনির—এই তিন পদে ছত্রাক খুবই দ্রুত ছড়ায়। এমনকি এসব খাবারের যেসব অংশ দেখে নিরাপদ মনে হয়, সেসব স্থানেও অতিক্ষুদ্র ছত্রাক থাকতে পারে। এসব ছত্রাক মাইকোটক্সিন তৈরি করে। এটি একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক, যা শরীরে প্রবেশ করলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতি টের পাওয়া যায় না। তবে বেশি দিন ধরে এগুলো খেতে থাকলে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। এ কারণে ছত্রাকে আক্রান্ত খাবার ফেলে দেওয়াই ভালো।

 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top